Ajker Patrika

চাকরি হারিয়ে সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিল পরিবারটি

অনলাইন ডেস্ক
লিসা এবং তাঁর পরিবার। ছবি: সিএনবিসি
লিসা এবং তাঁর পরিবার। ছবি: সিএনবিসি

হংকংয়ের ক্যাথে ড্রাগন এয়ারলাইনসে ১৪ বছর ধরে পাইলট হিসেবে কাজ করছিলেন লিসা রোজারিওর স্বামী জেরোন। ২০২০ সালের অক্টোবরে জেরোন চাকরি হারান। এই ঘটনাটি তাঁদের জীবনে একটি বড় ধাক্কা হয়ে এসেছিল।

বৃহস্পতিবার সিএনবিসি জানিয়েছে, করোনা মহামারির সময় হংকং-ভিত্তিক সংস্থা ‘ক্যাথে প্যাসিফিক’ হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল। এমনকি সংস্থাটি তাদের আঞ্চলিক এয়ারলাইনও বন্ধ করে দিয়েছিল।

এ অবস্থায় জেরোনের চাকরি চলে যাওয়ার পর লিসা এবং তাঁর পরিবার হংকং ছেড়ে নেদারল্যান্ডসে ফিরে আসে। এটাই জেরোনের দেশ। তবে সেখানে বেশি দিন না থেকে তাঁরা একটি নৌকা নিয়ে অজানা সমুদ্রে পাল তোলেন।

বিমান চালালেও জেরোন একজন দক্ষ নাবিকও বটে। মূলত মহামারি থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতেই পরিবারটি সমুদ্রে ভাসার পরিকল্পনা করেছিল। পাশাপাশি ভ্রমণ ও জীবনযাপনের নতুন পথ খোঁজাও ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এ জন্য তারা তাদের নেদারল্যান্ডসের বাড়িটি বিক্রি করে দেন এবং একটি সেকেন্ডহ্যান্ড মনোহাল নৌকাও কেনেন।

সমুদ্রজীবন শুরু করার পর পরিবারটি প্রথমে ফ্রান্স, পরে স্পেন ও পর্তুগাল ভ্রমণ করে এবং একসময় তারা সার্ডিনিয়ায় পৌঁছায়। শীতকাল কাটায় সিসিলিতে এবং পরবর্তী গ্রীষ্মে তারা গ্রিসে চলে যায়।

তবে ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাঁদের ভ্রমণও সাময়িকভাবে থেমে গিয়েছিল।

লিসার দুই সন্তান নৌকায় বসেই পড়াশোনা করত। ৫২ ফুট লম্বা সুইডেনে নির্মিত নৌকাটিই ছিল তাদের ঘর-বাড়ি। ব্রিটেনের একটি স্কুল থেকে মাসিক অ্যাসাইনমেন্ট ও রিপোর্ট কার্ড পেত তারা। আর লিসাই তাদের পড়াতেন।

লিসা বলেন, ‘হোম স্কুলিংয়ের সময় আপনি ঠিক সেই বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে পারেন, যেগুলো আপনার সন্তান দুর্বল। এতে সময়ও লাগে কম।’

নৌকায় থাকার ফলে পরিবারটি বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ এবং পানির বিল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। সমুদ্রের পানি পানের উপযোগী করতে তারা একটি ওয়াটার মেকার ব্যবহার করত। এ ছাড়া তারা সৌরশক্তি সংরক্ষণের জন্য লিথিয়াম ব্যাটারি এবং বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি উইন্ড জেনারেটর ব্যবহার করত। তারা সমুদ্র তীরবর্তী স্থানীয় বাজারগুলো থেকে থেকে সহজলভ্য খাবার কিনত।

লিসা প্রথমে ভাবতেন, সমুদ্রে তারা খুব একাকিত্ব অনুভব করবেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, সমুদ্রের প্রশান্তিকে পরিবারের সবাই মিলে তারা উপভোগ করতে শিখে গেছেন। তবে নৌকার মধ্যে ব্যায়াম করা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

এই নৌকাটিই তাঁদের বাড়ি-ঘর। ছবি: সিএনবিসি
এই নৌকাটিই তাঁদের বাড়ি-ঘর। ছবি: সিএনবিসি

যেহেতু সমুদ্রের জীবন, তাই প্রাকৃতিক আবহাওয়ার ওপরই তাদের সবকিছু নির্ভর করত। একবার তাদের নৌকাটি প্রায় তিন মিটার উঁচু ঢেউয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও এমনটির উল্লেখ ছিল না। তবে সে যাত্রায় তাদের ২৫ টনের নৌকাটি অক্ষতই ছিল।

লিসা বলেন, ‘সমুদ্রের মাঝখানে, যেখানে কোনো জমি দেখা যায় না, সেই সময়টিই সবচেয়ে সুন্দর।’

তিনি জানান, তারা কত কত সূর্যাস্ত কিংবা জ্যোৎস্নায় আলোকিত রাতে বিমোহিত হয়ে গেছেন তার কোনো হিসেব নেই। শুধু তাই নয়, এমনও কিছু সময় আছে, যখন সামুদ্রিক জীবজগৎ থেকে বিচ্ছুরিত আলোও নতুন এক পৃথিবীকে হাজির করে চোখের সামনে।

সৈকতের জীবন লিসাকে শিখিয়েছে, অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তবে সেসব মুহূর্তে কীভাবে নিজেকে সামলে নিতে হয় এবং অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে হয়, তাও শিখেছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত