Ajker Patrika

কী আছে সিন্ধু লিপিতে, অর্থ উদ্ধারে ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক
সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন হাজার বছরের পুরোনো শহর মহেঞ্জোদারো। ছবি: এএফপি
সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন হাজার বছরের পুরোনো শহর মহেঞ্জোদারো। ছবি: এএফপি

মাছ, মাথাহীন মানবাকৃতি, বাগানের নিড়ানির মতো সারিবদ্ধ রেখা—পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মহেঞ্জোদারোর হাজার বছরের পুরোনো বাড়িগুলোর দেয়ালে আঁকা এসব চিত্র। দেখে কাঁচা হাতে আঁকা অর্থহীন কিছু ছবি মনে হলেও এগুলো মূলত প্রাচীন লিপি। এত বছর পরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এগুলোর অর্থ।

কয়েক হাজার বছরের পুরোনো একটি উন্নত সভ্যতার রহস্য লুকিয়ে আছে এই লিপির মধ্যে। এই রহস্য নিয়ে যেমন আছে তীব্র বিতর্ক, সেই সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের স্বার্থও। এমনকি এই লিপির পাঠোদ্ধার করতে গিয়ে অনেক গবেষক প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন। বহু ক্ষমতাবান লিপির নিজের চাহিদা মতো অর্থ করার জন্য নগদ অর্থের পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন।

সম্প্রতি, সিন্ধু উপত্যকার এই লিপির অর্থ উদ্ধারে বিশাল অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। দুর্বোধ্য এসব লিপির অর্থ বের করতে পারলেই দেওয়া হবে ১০ লাখ ডলার।

কিন্তু কী এমন আছে হাজার বছরের পুরোনো এই লিপিতে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাচীন এই লিপির অর্থ উদ্ধার করতে পারলে প্রাগৈতিহাসিক যুগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই লিপি নিয়ে গবেষণা করছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক রাজেশ পি. এন. রাও। তিনি বলেন, ‘এই লিপি যদি পড়া সম্ভব হয়, তাহলে ব্রোঞ্জ যুগের একটি সভ্যতার সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। মনে করা হয়, এই বিশাল সভ্যতায় লাখ লাখ মানুষ বসবাস করত, যেখানে ছিল উন্নত নগর-পরিকল্পনা, মানসম্মত ওজন ও পরিমাপ ব্যবস্থা এবং বিস্তৃত বাণিজ্যপথ।’

এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই লিপির ব্যাখ্যা সিন্ধু উপত্যকার মানুষের পরিচয় ও তাদের বংশধরদের সম্পর্কে কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, আধুনিক ভারতের বিতর্কিত শিকড় ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী নিয়ে চলমান (আর্য–অনার্য) রাজনৈতিক বিতর্কেরও অবসান ঘটাতে পারে এই লিপি। সেকারণেই এর অর্থ উদ্ধারে এত তৎপর ক্ষমতাসীনেরা।

অধ্যাপক রাও আরও বলেন, ‘এই লিপির অর্থ উদ্ধার হলে জানা যাবে এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা আসলে কারা। যারা এই সভ্যতার উত্তরাধিকার তারাই প্রথম উন্নত নগর-পরিকল্পনা, চমকপ্রদ বাণিজ্য ব্যবস্থা ও সমুদ্রপথে বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিচালনা করেছিল। সুতরাং, ওই জনগোষ্ঠীর জন্য এটি নিঃসন্দেহে খুব গর্বের বিষয়। আর এ কারণেই এই লিপির অর্থ উদ্ধার নিয়ে এত তোড়জোড়।’

১৮৭৫ সাল প্রথম প্রকাশিত হয় এই লিপির নমুনা। এরপর থেকেই এই লিপির ব্যাখ্যা খুঁজছেন গবেষকেরা। কিন্তু এত বছরেও কেন সম্ভব হলো না সিন্ধু লিপির রহস্য উদ্‌ঘাটন? গবেষকেরা বলছেন, বিশ্লেষণের জন্য যথেষ্ট নমুনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার শিলালিপি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া, যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে সেগুলোও আকারে খুব ছোট, মাত্র এক ইঞ্চি মাপের শিলার গায়ে চার থেকে পাঁচটি প্রতীক আঁকা।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখনো পর্যন্ত রোসেটা শিলার মতো কোনো দ্বিভাষিক নিদর্শন পাওয়া যায়নি, যেখানে সিন্ধু লিপির সঙ্গে অন্য কোনো পরিচিত ভাষার অনুবাদ থাকতে পারে। এ ছাড়া, সিন্ধু সভ্যতার শাসকদের কোনো নামও পাওয়া যায়নি, যেখানে মিসরীয় লিপিতে ক্লিওপেট্রা ও টলেমির মতো ব্যক্তিদের নাম পাওয়া গেছে।

তবে এত দীর্ঘদিনের গবেষণার পর কিছু বিষয়ে একমত হতে পেরেছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশির ভাগের ধারণা, লিপিটি ডান দিক থেকে বাঁ দিকে লেখা হতো এবং এই লিখন পদ্ধতি ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হতো—যেমন, বাণিজ্য পণ্যের চিহ্নিতকরণে। কিছু চিহ্নের অর্থ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন গবেষকেরা।

কিন্তু রোসেটা শিলার মতো কোনো নিশ্চিত প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত এসব ব্যাখ্যা অনুমানই থেকে যাবে।

যদিও সিন্ধু লিপির নিশ্চিত অর্থ আজও উদ্ধার সম্ভব হয়নি, তবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মধ্য দিয়ে সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা গেছে। মহেঞ্জোদারোর মতো নগরের নমুনা থেকে জানা যায়, সিন্ধু সভ্যতার ভবনগুলো আধুনিক ইউরোপ–আমেরিকার মতো গ্রিড নকশায় নির্মিত ছিল, ছিল উন্নত পয়োনিষ্কাশন ও পানি ব্যবস্থাপনা।

১৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিন্ধু সভ্যতার পতন ঘটে। সিন্ধু সভ্যতার পতনের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেন অনেক গবেষক। ধারণা করা হয়, অনিয়মিত বৃষ্টি আর তীব্র খরার কারণে এই অঞ্চল ছেড়ে পার্শ্ববর্তী ছোট ছোট গ্রামে চলে যায় বাসিন্দারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত