পিএইচডি করেও জুস বিক্রি করছেন যুবক, দিল্লি নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের এ কেমন পরিণতি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ২০: ২৯
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফলের রস বিক্রি করছেন মাকসুদ আহমেদ গানাই। ছবি: আল-জাজিরা

গাড়ির দরজা খুলে ৩ নারী বেরিয়ে আসতেই হাঁক ছাড়লেন কাশ্মীরের যুবক মাকসুদ আহমেদ গানাই। তিনি ডেকে উঠলেন, ‘আসুন ম্যাডাম, প্লিজ আসুন, কাশ্মীরের টাটকা আপেলের জুস পান করুন।’

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্য থেকে আসা ওই তিন নারী যাচ্ছিলেন মূলত পেহেলগাম উপত্যকায়। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ওই উপত্যকাটি পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। যাত্রাপথে তাঁরা হুগাম নামে একটি এলাকায় বিরতি নিয়েছিলেন।

পেহেলগাম থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরের ওই হুগাম এলাকারই বাসিন্দা মাকসুদ আহমেদ গানাই। প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল ৭টায় তিনি বাড়ি থেকে বের হন এবং রাস্তার পাশে জুসের দোকানটি খুলে বসেন। যাত্রাপথে বিরতি নেওয়া পর্যটকেরা তাঁর কাছে আশীর্বাদের মতো। কারণ এই দোকানের আয় দিয়েই তিনি সংসার চালান। সংসারে তাঁর মা ও স্ত্রী ছাড়াও ৬ বছরের এক পুত্র রয়েছে।

দুঃখজনক বিষয় হলো—যাদের আশায় মাকসুদ সারা দিন রাস্তার পাশে বসে থাকেন এবং জুস পান করিয়ে কিছু আয় করেন, সেই সব পর্যটকের চেয়ে তাঁর যোগ্যতাও কোনো অংশে কম নয়। কারণ তিনি একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পেয়েই আয়ের জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে বর্তমানে অর্থনৈতিক হতাশা স্পষ্ট। কারণ অসংখ্য শিক্ষিত যুবক সেখানে চাকরি খুঁজে পেতে সংগ্রাম করছে। যদিও ২০১৯ সালে এই অঞ্চলটিতে সমৃদ্ধির আশ্বাস দিয়ে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল নয়াদিল্লি। এর আগে স্বায়ত্তশাসিত ছিল এই রাজ্যটি।

কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতেই প্রতিবেদনটিতে উদ্ভিদবিদ্যায় পিএইচডিধারী ৩৮ বছর বয়সী মাকসুদ আহমেদ গানাইয়ের দুর্দশার উদাহরণ টানা হয়েছে। অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে এক দশকের অভিজ্ঞতা থাকলেও গত পাঁচ বছরে অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও একটি চাকরি নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। গানাইয়ের অবস্থাটি কাশ্মীরের একটি বৃহত্তর সংকটকে প্রতিফলিত করে, যেখানে বেকারত্বের হার বেড়ে এখন ১৮.৩ শতাংশ হয়েছে। রাজ্যটির বেকারত্বের এই হার ভারতের জাতীয় হারের দ্বিগুণ।

দেখা গেছে, সমৃদ্ধির আশ্বাস দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করার নেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যটিতে ১০ লাখেরও বেশি যুবক বেকার হয়ে গেছে। ফলে গানাইয়ের মতো ব্যক্তিরা ফলের রস বিক্রি করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় তাঁর দোকানের সামনে দিয়ে প্রায় সময়ই তাঁর ছাত্ররা যখন হেঁটে যায়, তখন তিনি বিব্রতবোধ করেন।

গানাইয়ের মতো আরও অসংখ্য শিক্ষিত কাশ্মীরি একই ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। গানাইয়ের স্ত্রী রুবিয়াও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে কাজ খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। ভারত সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ফলে কাশ্মীরের অনেক চাকরিতেই এখন ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে কাশ্মীরের চাকরিপ্রার্থী স্থানীয় যুবকেরা আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা এই অর্থনৈতিক অসুবিধাগুলোকে আরও জটিল করে তুলেছে। যেন এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত