দিল্লি থেকে গরিব উচ্ছেদের পর এবার কুকুর উচ্ছেদ নিয়ে সমালোচনা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২: ২২
Thumbnail image

আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে ভিভিআইপি অতিথিদের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সে জন্য এবার দিল্লি থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রাস্তার কুকুর। সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনায় সম্প্রতি কয়েক হাজার মানুষকে দিল্লি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এবার কুকুর সরানো শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে পশুপ্রেমী ও প্রাণী অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করছেন, কুকুরগুলোকে নিষ্ঠুরভাবে ধরা হচ্ছে এবং খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেগুলোকে আটকে রাখা হচ্ছে। 

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাণী অধিকারকর্মী ও প্রাণী কল্যাণের জন্য কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার অভিযোগ, গলায় ফাঁস ব্যবহার করে কুকুরগুলোকে ধরা হচ্ছে। দূরবর্তী কোনো আশ্রয়ে অমানবিক অবস্থায় রাখা হচ্ছে এদের। 

দক্ষিণ দিল্লির মাসুদপুরে পৌর করপোরেশন চালিত একটি আশ্রয় ও বন্ধ্যাকরণ কেন্দ্রের বাইরে দুই কুকুরপ্রেমীর সঙ্গে কথা বলেন এনডিটিভির প্রতিনিধি। তাঁরা বলেন, শুধু সম্মেলনের এলাকা থেকে নয়, কাছাকাছি অন্যান্য এলাকা থেকেও কুকুর সরানো হচ্ছে। কুকুরগুলোকে নিকটস্থ এলাকার কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে নয় বরং অনেক দূরে ফেলে আসা হচ্ছে। 

দিল্লি পৌর করপোরেশন বলছে, তারা আটক করা কুকুরগুলোকে ১২ সেপ্টেম্বর ছেড়ে দেবে। এরপরও অভিযোগ কেন জানতে চাওয়ায় কুকুরপ্রেমী সাহিল বলেন, ‘যে উপায়ে কুকুরগুলোকে তুলে নেওয়া হয়েছে তা অবৈধ। কুকুর ধরার জন্য তারা ফাঁস ব্যবহার করেছে। এ ধরনের অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এই আশ্রয়কেন্দ্রে একটি বয়স্ক কুকুর আছে যেটিকে আমি চার দিন ধরে নিয়ে যেতে চাচ্ছি, কিন্তু আমাকে দেওয়া হচ্ছে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ফ্যান বা পানি ছাড়া একটা বয়স্ক কুকুর কীভাবে থাকবে? আমি একটা ভিডিও পোস্ট করেছি, যেখানে দেখা যাচ্ছে কুকুরগুলোকে মূত্র মিশ্রিত পানি দেওয়া হচ্ছে। আমরা তিন দিন ধরে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি যেন আমাদের অন্তত কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর অনুমতি দেয়, তারা তা-ও দিচ্ছে না।’ 
 
সাহিল বলেন, কুকুরগুলোকে দেখার জন্য দুই ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময় তাঁদের কুকুরগুলোকে কোনো খাবার বা পানি দিতে নিষেধ করা হয়। 
 
উপস্থিত আরেক কুকুরপ্রেমী গুঞ্জন আশ্রয়ের বাইরে টানানো এক বিজ্ঞপ্তি দেখান। সেখানে লেখা ছিল, ছবি বা ভিডিও ধারণ নিষেধ। গুঞ্জন বলেন, ‘পৌর করপোরেশন এমন নির্দেশ অপারেশন থিয়েটারে দিলে মানা যায়, কিন্তু পুরো আশ্রয়কেন্দ্রে কেন এমন নির্দেশ দেওয়া হবে? তাদের যদি কিছু লুকানোর না থাকে, তবে কেন আমাদের ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে দিচ্ছে না? তারা কেন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারছে না।’ 

সম্প্রতি দিল্লি পৌর করপোরেশনের এক বৈঠকে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় কুকুর ধরায় সহযোগিতা করার প্রস্তাব দেন। 

গুঞ্জন বলেন, ‘কুকুরগুলোকে যদি জাল ব্যবহার করে ধরা হতো, তবে আমাদের আপত্তি থাকত না বরং সমর্থন করতাম। এ বিষয়গুলো স্বচ্ছভাবে করা যেত। ওই বৈঠকের পর পৌর করপোরেশন একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কিন্তু পরে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। আমাদের বোকা বানিয়ে পুরো কাজটা অবৈধভাবে করা হয়। তারা বয়স্ক কুকুরগুলোকে ধরে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে না নিয়ে অনেক দূরে নিয়ে ফেলে আসে।’ 
 
দিল্লি পৌর করপোরেশন এখনো এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি। 
 
গত মঙ্গলবার হাউস অব স্ট্রে অ্যানিমেল এবং হ্যাপি টেইলস ফাউন্ডেশনের প্রায় ২০ জন কর্মী দিল্লির মেয়র শেলি ওবেরয়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে করপোরেশনের রাস্তার কুকুর তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেন। 

দিল্লি পৌর করপোরেশন বলছে, জরুরি প্রয়োজনে কুকুরগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এগুলোকে আবার আগের জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত