Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্র শুল্কারোপের পর এশিয়ায় তেল বিক্রিতে নজর মেক্সিকোর

মেক্সিকো উপসাগরে একটি তেলের রিগ। ছবি: সংগৃহীত
মেক্সিকো উপসাগরে একটি তেলের রিগ। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করায় মেক্সিকো সিটি জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য এশিয়ার বাজারে নজর দিয়েছে। মেক্সিকোর রাষ্ট্র পরিচালিত জ্বালানি কোম্পানি পেমেক্স তেল বিক্রির জন্য এশিয়া, বিশেষ করে চীন এবং ইউরোপের সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেক্সিকোর এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ট্রাম্প এ সপ্তাহে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কানাডার অপরিশোধিত তেলে ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক রাখা হলেও মেক্সিকো তেলে রাখা হয়েছে ২৫ শতাংশ শুল্ক।

শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তেল রপ্তানি আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৪৪ শতাংশ কমে প্রতিদিন ৫ লাখ ৩২ হাজার ৪০৪ ব্যারেল প্রতিদিনে নেমে আসে, যা বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

মেক্সিকোর বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র হলেও আগে থেকেই দেশটি কিছু অপরিশোধিত তেল ইউরোপ ও এশিয়ায় পাঠাত। বাজার বিশ্লেষণী সংস্থা কেপলারের তথ্য অনুসারে, ইউরোপের বাইরে মেক্সিকোর তেলে অন্যতম গন্তব্য ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ায়।

গত বছর, পেমেক্স প্রতিদিন ৮ লাখ ৬ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করেছে, যার ৫৭

সরকারি ওই কর্মকর্তা বলেছেন, পেমেক্স যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বাজারে সম্ভাব্য নতুন ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে। আলোচনাগুলো বাণিজ্যিকভাবে সংবেদনশীল হওয়ায় তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেছেন, ‘ভালো বিষয় হলো, ইউরোপ, ভারত এবং এশিয়ায় মেক্সিকোর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। হেভি ক্রুড ও পেমেক্স ক্রুডের চাহিদা আছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, সম্ভাব্য চীনা ক্রেতারা প্রাথমিক আলোচনায় ‘অত্যন্ত আগ্রহী’ ছিলেন এবং ‘চাহিদাই নির্ধারণ করবে কীভাবে মেক্সিকোর তেলের গতিপথ বদলাবে।’

পেমেক্সের বাণিজ্যিক বিপণন শাখা পিএমআই কোমার্সিও ইন্টারন্যাশিওনালের দুটি সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে যে, শুল্কের মুখে পেমেক্সের উৎপাদিত জ্বালানির জন্য চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং এমনকি জাপান উপযুক্ত বাজার হবে। এমনকি পরিবহন খরচ বেশি হলেও।

এক ট্রেডার (যারা কোনো একটি নির্দিষ্ট পক্ষের কাছ থেকে তেল কিনে অন্য পক্ষের কাছে বিক্রি করেন) লিখেছেন, এশিয়ার দেশগুলো হয়তো কেবল যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো থেকে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল গ্রহণ করত, সেই পরিমাণ নিতে পারবে। কারণ, এশিয়ার দেশগুলোতে যে ধরনের রিফাইনারি বা পরিশোধনাগার পরিচালিত হয়, সেগুলোকে অবশ্যই মেক্সিকোর অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম হতে হবে।

সপ্তাহ ধরে ট্রেডাররা অনুমান করছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত জ্বালানি কোম্পানিটি (পেমেক্স) তার যুক্তরাষ্ট্রের ক্লায়েন্টদের শুল্কের মুখে ধরে রাখতে ছাড় দেবে কিনা। তবে সরকারি কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে এমন ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে বর্তমান চুক্তিগুলো এই মাসে শেষ হওয়ার পর জাহাজগুলো সম্ভবত এশিয়া এবং ইউরোপে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা চুক্তি বাতিল করার বিষয়ে আলোচনা করেনি।

ট্রেডিং আর্মের (মধ্যবর্তী ক্রেতা-বিক্রেতাদের সংগঠন) দুটি সূত্রও নিশ্চিত করেছে যে, রপ্তানিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে ছাড় দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। মেক্সিকো জ্বালানি তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষ দেশ। কিন্তু মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত দেশটির বেশির ভাগ তেলক্ষেত্রগুলোই অনেক পুরোনো। সাম্প্রতিক সময়ে বিগত চার দশকের মধ্যে দেশটির জ্বালানি উৎপাদন সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে।

মেক্সিকোর দুর্বল রিফাইনারি সিস্টেম এবং দস বোকাস বন্দরে নতুন ৩ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল প্রতিদিন ক্ষমতাসম্পন্ন ওলমেকা রিফাইনারির চালু হতে বিলম্ব হওয়ার কারণে দেশটি অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করলেও পরিশোধিত গ্যাসোলিন এবং ডিজেল আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে, যার বেশির ভাগ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে।

ব্যাপক তেল উৎপাদন ও পরিশোধ খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ছাড়া মেক্সিকোকে ভবিষ্যতে অপরিশোধিত তেলও আমদানি করতে হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত