মায়ের কবরের ওপর ঘুমায় ৮ বছরের জইন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ৫০
৮ বছর বয়সী জইন মান্না। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

দুই মাস আগে মায়ের মৃত্যুর পর থেকে প্রতি রাতেই গাজার একটি কবরস্থানে রাত কাটাচ্ছে ৮ বছর বয়সী শিশু জইন মান্না। প্রতিদিন সে তার মায়ের কবরের ওপর শুয়ে ঘুমায়। কারণ মাকে অনুভব করার জন্য এখন এটিই তার একমাত্র উপায়।

আমিরাত-ভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, দুই মাস আগে গাজার নুসিরাত শরণার্থীশিবিরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এতে শ্বাসের সঙ্গে বিষাক্ত গ্যাস শরীরে প্রবেশ করলে একদিন পরই মারা যান জইনের মা ৩৭ বছর বয়সী সানা মান্না।

মায়ের কবরের ওপর কেন ঘুমাচ্ছ—এই প্রশ্নের জবাবে দ্য ন্যাশনালকে জইন বলেছে, ‘মায়ের জড়িয়ে ধরার কথা আমার খুব মনে পড়ে। তাই আমি তার কবরে ঘুমাতে যাই।’

জইন আরও বলে, ‘যখন আমি মার কবরে ঘুমাই, চুমু খাই, তখন মনে হয়, মা আমার হৃদয়ে প্রবেশ করেছেন।’

যুদ্ধ শুরুর আগে জইনের বাবা ইউসেফ মান্না একজন শেফ ছিলেন। দ্য ন্যাশনালকে তিনি জানিয়েছেন, শুরুর দিকে একবার জইনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাকে তার মায়ের কবরের ওপর আবিষ্কার করা হয়।

ইউসেফ আরও জানান, মায়ের সঙ্গে জইনের খুব ভাব ছিল। মনে হতো যেন, দুটি শরীরের মধ্যে তাদের একটিই আত্মা ছিল।

তবে গাজার অনেক মানুষ জইনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ সে দেইর আল বালাহের কাছাকাছি একটি কবরস্থানে ঘুমায়। এখানে হঠাৎ করে যে কোনো সময় ইসরায়েলের গোলা বর্ষণ হতে পারে। পাশাপাশি সেখানে কিছু হিংস্র কুকুরও রয়েছে।

এদিকে কবরস্থানে ঘুমালেও জইনের মধ্যে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই। তার বিশ্বাস, তার মা তাকে রক্ষা করবেন।

মা-বাবা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে জইন। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
মা-বাবা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে জইন। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

বাবা ইউসেফ জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ছেলেকে কবরস্থানে যেতে বাধা দিতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে একটি ছেলেকে তার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আসতে পারি? আমি তাকে কী আশ্বাস দিয়ে আটকাব? তার মা-ই তার আত্মা।’

ইউসেফ আরও জানান, জইনের মায়ের কিডনিতে সমস্যা ছিল। চার ভাইবোনের মধ্যে জইন ছিল সবচেয়ে ছোট। মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে তার এতটাই দুশ্চিন্তা ছিল যে, বড় হয়ে সে ডাক্তার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

বাবার ফোনে মায়ের দুটি ছবি সেভ করে রেখেছে জইন। ছবি দুটি সে এমনভাবে ফোনে সেট করেছে যে, ফোনটি লক করা থাকলে মায়ের ভ্রুকুটি করা একটি ছবি দেখা যায়। আর লক খুলে ফেললেই মায়ের একটি হাসি মুখ ভেসে ওঠে স্ক্রিনে।

ফোনটি হাতে নিয়ে জইন প্রায় সময়ই তার মায়ের সঙ্গে কথা বলার ভান করে। লক করা অবস্থায় সে তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে—ভ্রুকুটি করবে না বলছি।

তারপরই ফোনটি আনলক করে জইন এবং তার মা স্ক্রিনে হেসে ওঠেন।

যুদ্ধে নিজেদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেলে জইনের পরিবার গাজার উত্তর দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এখন তারা গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত দেইর আল বালাহতে একটি তাঁবুতে বাস করে। তাদের আশ্রয়টি জইনের মায়ের কবরস্থান থেকে আধা কিলোমিটার দূরে।

ইউসেফ জানান, তাঁরা এখন যে তাঁবুটিতে আছেন, সেটি তাঁর চার সন্তান, ভাই এবং চার ভাতিজার জন্য খুব ছোট। তাই তিনিও প্রায় সময়ই বাইরে ঘুমান। শীত পড়তে শুরু হওয়া তাঁদের পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হতে চলেছে।

ইসরায়েলের হামলায় গাজার শিশুদের ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবরে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৫ হাজারের বেশি শিশু বাবা কিংবা মা কিংবা বাবা-মা উভয়কেই হারিয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৩ হাজার ৪০০ ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে প্রবেশ করে ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করার পর থেকেই এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত