লেবাননে হামলায় ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ প্রয়োগ করছে ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ৩৬

লেবাননে গত সোমবার থেকে অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে নারী, শিশুসহ প্রায় ৮০০ মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)। গাজার পর লেবাননে হামলার ঘটনায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। 

সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা। তবে এমন আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সেনাবাহিনীকে লেবাননের ‘হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি’ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান সামরিক অভিযানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার হচ্ছে ‘যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম’ এবং পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার হচ্ছে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য, যার মধ্যে আয়রন ডোম এবং উন্নত প্রযুক্তির লেজার সিস্টেম রয়েছে।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় দেশটিতে অন্তত ৯২ জন নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহ নিশ্চিত করেছে, বৈরুতের দক্ষিণের একটি ভবনে বিমান হামলায় তাদের ড্রোন ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ সুরুর নিহত হয়েছেন।

হামলার তীব্রতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশ লেবাননে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি শুরুতে আশার আলো দেখিয়েছিল, যখন জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত ড্যানি ড্যানন বলেছিলেন, তাঁর দেশ যেকোনো প্রস্তাবের ব্যাপারে উদার মনোভাব পোষণ করে। তবে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলি রাজনীতিবিদেরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কে পৌঁছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল তার লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত লেবাননে অভিযান চালানো বন্ধ করবে না। এর মাঝে একটি লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে আনা।

হামলা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নেতানিয়াহুর এমন বক্তব্য সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস বলছে, ওয়াশিংটনের উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করেই সামনে আনা হয়েছে।

নিউইয়র্কে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার তাঁর বক্তব্যে লেবাননে চলমান সংঘাত সমাধানের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তখন তা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে মসজিদ পর্যন্ত কিছুই বাদ যায়নি তাদের হামলা থেকে। সরকারি হিসাবে, এ পর্যন্ত গাজায় ৪১ হাজার ৫৩৪ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। একই সময়ে আহত হয়েছে ৯৬ হাজারের বেশি মানুষ। গাজায় চলমান এই আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর নতুন করে বৈরিতা দেখা দেয়। 

গাজায় হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করে দলটি। হামলার মুখে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যায় সেখানকার প্রায় ৭০ হাজার বাসিন্দা। অন্যদিকে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, লেবাননে গত সোমবার থেকে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আরও ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।

আইডিএফ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সারা দিন দক্ষিণ লেবানন ও পূর্বাঞ্চলের বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে তারা। এ ছাড়া সিরিয়া-লেবানন সীমান্তেও আক্রমণ চালানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো, হিজবুল্লাহর অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করা।

ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হারজি হালেভি বুধবার বলেছেন, লেবাননে বিমান হামলার মাধ্যমে ‘শত্রুদের ভূমিতে’ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রবেশের পথ তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল টমার বার স্থল অভিযানে সহায়তার জন্য তাঁর বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

কাতারের পক্ষ থেকে লেবাননে হামলা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশটির সরকারের মুখপাত্র মাজেদ-আল-আনসারি বলেছেন, লেবানন থেকে তাঁরা ভয়াবহ তথ্য পাচ্ছেন। এমন ঘটনা ঘটছে, যেখানে পুরো পরিবারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এ ধরনের নৃশংসতা গাজা উপত্যকায়ও চালানো হয়েছিল।

লন্ডনে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। তিনি বলেন, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে এ সংকটের কূটনৈতিক সমাধান এখনো সম্ভব।

লয়েড অস্টিন বলেন, ‘ইসরায়েল বলছে, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের বাসিন্দাদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে আনা। আমার বিশ্বাস, এই কাজ কূটনীতিক উপায়ে খুব দ্রুততার সঙ্গে করা যাবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত