Ajker Patrika

৬২০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি না দিলে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা নয়: হামাস

গাজায় ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির অনুষ্ঠানস্থলে হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা। ছবি: এএফপি
গাজায় ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির অনুষ্ঠানস্থলে হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে তারা তাদের জন্য নির্ধারিত জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে ইসরায়েল ৬২০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি না দিয়ে চুক্তির লঙ্ঘন করেছে। ইসরায়েল যতক্ষণ এই ফিলিস্তিনিদের মুক্তি না দেবে ততক্ষণ কোনো আলোচনা হবে না।

তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস নেতা মাহমুদ মারদাবি গতকাল রোববার বলেছেন, ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা তেল আবিবের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না বলে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তির প্রথম ধাপে শনিবার ইসরায়েলের ৬২০ বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। এর বিনিময়ে হামাস ছয়জন ইসরায়েলি বন্দীকে ছেড়ে দেয়। তবে ইসরায়েলি সরকার মুক্তি বিলম্বিত করে। কারণ, হিসেবে তারা বলেছে, মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলি বন্দীদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া ছিল ‘অপমানজনক’।

হামাস নেতা মাহমুদ মারদাবি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ছয়জন ইসরায়েলি বন্দীর বিনিময়ে যে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে চুক্তি হয়েছে, তাদের ছাড়া পর্যন্ত (ইসরায়েলি) শত্রুর সঙ্গে কোনো মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আলোচনা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের অবশ্যই শত্রুকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে।’

রোববার ভোরে হামাস ইসরায়েলের এই বিলম্বকে যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তির ‘লঙ্ঘন’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।

এদিকে, একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তাঁর দেশ ফের গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে প্রস্তুত। রোববার এক সামরিক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে তাঁরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে চান, তবে অন্য উপায়েও তা নিশ্চিত করা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে পুনরায় তীব্র লড়াই শুরু করতে প্রস্তুত।’

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল গোষ্ঠীটিকে ধ্বংস করার ঘোষণা দেয় এবং গাজায় আগ্রাসন শুরু করে। এই আগ্রাসনে অঞ্চলটিতে ৪৮ হাজারে বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

রোববার নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা হামাসের অধিকাংশ সংগঠিত বাহিনীকে ধ্বংস করেছি, কিন্তু কোনো ভুল বোঝাবুঝি যেন না হয়—আমরা পুরোপুরি আমাদের যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করব, তা আলোচনার মাধ্যমে হোক বা অন্য উপায়ে।’

ইসরায়েলের যুদ্ধের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে—হামাসকে পরাজিত করা এবং ২০২৩ সালের হামলায় অপহৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা অন্যতম। বর্তমানে ৬২ জন জিম্মি গাজায় রয়ে গেছেন, যাদের মধ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী ৩৫ জন মারা গেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, তিনি এই সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন যাতে যুদ্ধবিরতির ‘প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানো যায়।’ তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে ও সেটি সম্পন্ন করতে আমরা যথেষ্ট সময় পাব।’

গাজার যুদ্ধের পাশাপাশি, ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরে তার সামরিক অভিযান আরও তীব্র করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা উত্তর পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে একটি ট্যাংক ডিভিশন পাঠাবে, যা গত ২০ বছরে এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো ট্যাংক মোতায়েনের ঘটনা। এটিকে তারা তাদের ‘সম্প্রসারিত অভিযানের’ অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গাজা যুদ্ধবিরতি শুরুর পরপরই পশ্চিম তীরে একটি বড় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সামরিক অভিযানের কারণে জেনিন এবং অন্যান্য শরণার্থীশিবির থেকে ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, তিনি সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন ‘আগামী এক বছর ধরে ফিলিস্তিনি শিবিরগুলোতে অবস্থান করতে এবং বাসিন্দাদের ফিরে আসা ও সন্ত্রাসবাদ পুনরুত্থান ঠেকাতে।’

লেবেক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির গোয়েন্দা প্রধান মাইকেল হোরোভিটজ বলেন, পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন ‘যুদ্ধবিরতির জন্য খুবই স্পর্শকাতর সময়ে’ ঘটছে। তিনি উল্লেখ করেন, নেতানিয়াহু দেশীয় চাপে রয়েছেন। তাঁর যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে এবং তিনি হয় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করবেন বা তার কট্টর-ডানপন্থী জোট সরকারের পতনের ঝুঁকি নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতিসংঘে চিঠি লিখলেন মোগল সম্রাটের বংশধর, সুরক্ষা চাইলেন আওরঙ্গজেবের সমাধির

সেভেন সিস্টার্সে বিনিয়োগ টানতে বিশেষ সম্মেলন আয়োজন করছে ভারত

কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে

আফ্রিকা থেকে পিঁপড়া যাচ্ছে ইউরোপে, কেনিয়ার বিমানবন্দরে জব্দ কয়েক লাখ

কফিশপে মারধরের শিকার সেই তরুণীর খোঁজ মিলেছে, থানায় জিজ্ঞাসাবাদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত