Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাতেই গঠিত ইইউ, ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ শিগগির: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গঠিতই হয়েছিল তাঁর দেশকে ঠকানোর জন্য। আর তাই তিনি ইইউর ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। গতকাল বুধবার তাঁর প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি বলেন, শিগগিরই এই নতুন শুল্কের বিস্তারিত ঘোষণা করা হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, ‘দেখুন, সত্য কথা বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাতেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত হয়েছিল। এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য এবং তারা খুব ভালো কাজ করেছে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে যে, এখন আমি প্রেসিডেন্ট।’ এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং খুব শিগগিরই তা ঘোষণা করব। এটি হবে ২৫ শতাংশ।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ‘অযৌক্তিক’ বাণিজ্য বাধার বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় ও তাৎক্ষণিক’ প্রতিক্রিয়া জানানোর অঙ্গীকার করেছে। এই জোট যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, আগামী সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দুই বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার কানাডা ও মেক্সিকোর ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

ট্রাম্প এই বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি। তবে গাড়ি নির্মাতাদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, শুল্ক সবার জন্য ‘সাধারণভাবে’ প্রযোজ্য হবে। তিনি বলেন, ‘এটি গাড়ি এবং অন্যান্য সবকিছুর ওপরই প্রযোজ্য হবে।’

ইউরোপীয় কমিশনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘অবাধ ও ন্যায্য বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক বাধার ক্ষেত্রে—বিশেষ করে যখন শুল্ক ব্যবহার করা হয় আইনসম্মত ও বৈষম্যহীন নীতিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য—ইউরোপীয় ইউনিয়ন দৃঢ় ও তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। ইউরোপীয় ব্যবসা, শ্রমিক এবং ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা সব সময় প্রস্তুত।’

ট্রাম্প এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, তবে তিনি বারবার কানাডা ও মেক্সিকোর ক্ষেত্রে এই শুল্ক কার্যকর করার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিয়েছেন। এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প তাঁর শুল্ক হুমকির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, বিদেশি গাড়ি, ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর চিপের ওপর আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুল্ক আরোপ করা হবে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এ সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, ট্রাম্পকে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ থেকে বিরত রাখতে এবং চীনের ওপর মনোযোগ দিতে রাজি করাতে পেরেছেন।

বৈঠকের পর ফক্স নিউজকে মাখোঁ বলেন, ‘একই সময়ে আপনি (ট্রাম্প) চীন ও ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ করতে পারেন না। আমি আশা করি, আমি তাঁকে বোঝাতে পেরেছি।’

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদি সদস্য দেশগুলোর রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করে, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।

এ মাসের শুরুতে ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছিল, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা ইউরোপীয় ব্যবসা, শ্রমিক ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় অযৌক্তিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দোনাল্দ তুস্ক বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও নির্বোধ’ শুল্ক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য যা কিছু করা সম্ভব, তা করতে হবে।

অনেক অর্থনীতিবিদ এবং এমনকি রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম—যেমন দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সতর্ক করেছে যে, ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে। তবে গতকাল বুধবার ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সম্পাদকীয়র সমালোচনা। এই সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ট্রাম্পের শুল্কনীতি উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ট্রাম্প লেখেন, ‘এই যুক্তি সম্পূর্ণ ভুল’ এবং দাবি করেন, ‘এই শুল্কের কারণে বিশাল পরিমাণ অটোমোবাইল উৎপাদন মিশিগানে স্থানান্তরিত হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত