কমলা না ট্রাম্প: কাকে ভোট দেবেন আরব মার্কিনিরা, কী বলছে জরিপ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ০৪
Thumbnail image
আরাব মার্কিন ভোটারেরা কাকে ভোট দেবেন তা নিয়ে অনেকটাই দ্বিধাবিভক্ত। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ আরব বিশ্বের দেশগুলো থেকে যাওয়া। ২০২০ সালের মার্কিন জরিপ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে ৩৫ লাখই আরব বিশ্বের দেশগুলোর বংশোদ্ভূত। অর্থাৎ, এদের সবাই মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে যাওয়া।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেসব প্রভাবক নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে, সেগুলোর মধ্যে আরব ভোটার উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং মধ্যপ্রাচ্য-সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আরব ভোটাররা অন্যতম নিয়ামকের ভূমিকা পালন করবেন।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ১ শতাংশ আরব ভোটার মার্কিন নির্বাচনে ১০০ ভাগ প্রভাব বিস্তার করবে। আরব বিশ্বের ২২টি দেশ থেকে যাওয়া এসব ‘আরব’ ভোটারের মধ্যে অনেকগুলো বিষয়ে ঐক্য আছে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও ঐতিহাসিক যোগসূত্র তাদের মধ্যে অনেক পুরোনো।

গত অক্টোবর মাসে আরব নিউজ ও ব্রিটিশ জরিপ সংস্থা ইউগভ একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে সব আরব আমেরিকান ভোটারই বেশ কিছু বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ। বিশেষ করে গাজা ও লেবাননে গত এক বছরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর জন্য বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের পারফরম্যান্সে মার্কিন আরব ভোটাররা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।

জরিপে দেখা গেছে, আরব মার্কিন ভোটাররা এবার নজিরবিহীন সংখ্যায় ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা আজকের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এই সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে যে, আরব আমেরিকানরা দুই প্রধান প্রার্থীর মধ্যে কাকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে বিভক্ত। এ কারণেই আরব আমেরিকান ভোটারদের মন জয় করতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছেন হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নির্বাচনী প্রচারণার লড়াই এতটাই হাড্ডাহাড্ডি ছিল যে, আরব আমেরিকানদের বৃহৎসংখ্যক বসবাসকারী গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেটগুলোতে তাদের ভোট যেন সোনার খনির মতো হয়ে উঠেছে। রোববার ডেট্রয়েটে এক অনুষ্ঠানে হ্যারিস বলেন, ‘আরব আমেরিকান সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ও স্বার্থকে প্রতিনিধিত্বকারী অনেক নেতার সমর্থন পেয়ে আমি গর্বিত।’

কমলা হ্যারিস নির্বাচনী প্রচারণার সময় বারবার যে কথাটি বলেন তার পুনরাবৃত্তি করেছেন। বিশেষ করে, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে—এই অভিযোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছেন তিনি। গত রোববার তিনি বলেন, ‘নিরীহ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা মেনে নেওয়া যায় না।’

আরব নিউজ-ইউগভ জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি আরব-আমেরিকানদের যে ঐতিহাসিক সমর্থন ছিল তা কমে গেছে। গত অক্টোবরে মিশিগানের ফ্লিন্টে আরব-আমেরিকান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন হ্যারিস। সে সময় অনেক নেতাই হ্যারিসের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন।

ট্রাম্প ও কমাল উভয় শিবিরই জানে যে, সাতটি সুইং স্টেটের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য মিশিগান সবচেয়ে বেশি প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে বলে মনে হচ্ছে। গত শুক্রবার অঙ্গরাজ্যটির ২ লাখ আরব-আমেরিকান ভোটারকে আশ্বস্ত করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, তিনি তাদের পাশে আছেন।

এদিকে, মিশিগানের মহাসড়কগুলোতে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের পক্ষ থেকে টাঙানো বিলবোর্ডে দেখা গেছে, ট্রাম্প নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পক্ষে এবং হ্যারিসকে ইসরায়েলের সমর্থক হিসেবে তুলে ধরেছেন। তবে সমালোচকেরা একে ট্রাম্পের ‘অবাস্তব কল্পনা’ বলে মনে করছেন। কারণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পুরো কার্যকালই ছিল ইসরায়েলপন্থী। ভোটাররা এই প্রচারণায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন না।

মিশিগানের আরব মুসলিম অধিকার গোষ্ঠী আমেরিকান মুসলিম এনগেজমেন্ট অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক রেক্সিনালদো নজারকো বলেন, ‘আমরা তাঁর (ট্রাম্পের) প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অন্ধ নই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত