ভিনদেশে পরবাসে /নিউইয়র্কে অনেক বাংলাদেশি ভয়ে কাজে যাচ্ছেন না

মনিজা রহমান, নিউইয়র্ক থেকে
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৪০
Thumbnail image
ক্ষমতা গ্রহণের পরই অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে একের পর এক আদেশ জারি করছেন ট্রাম্প। এতে শঙ্কায় পড়েছেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীরা। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিরা প্রধানত ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক। গাজা যুদ্ধে বাইডেনের নীতির কারণে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেই সমর্থন ধরে রাখতে পারেনি দলটি। তবে অনেকে রাগ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিলেও তাঁর শপথের পর অভিবাসনবিরোধী নীতির কারণে এখন বেশির ভাগ ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট এবং আতঙ্কিত। সম্ভবত এর আগে কোনো প্রেসিডেন্টের শপথের পর এমন ভীতিকর পরিস্থিতি দেখা যায়নি।

পরপর তিন মেয়াদে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান এবং জর্জ বুশের শাসনামলের সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত ছিল গালফ ওয়ার। আমেরিকানদের মতো বাংলাদেশি অভিবাসীরাও চেয়েছিলেন, এরপর যেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট আসে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯২ সালে বিল ক্লিনটন জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে যান। তিনি তাঁর উদার নীতি দিয়ে নাগরিকদের মন জয় করেন। এরপর আবারও রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ছেলের প্রেসিডেন্ট হওয়া এবং নাইন-ইলেভেনের মতো ঘটনা ঘটে। আবারও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। তবে ২০০৮ সালে এসে পরিস্থিতি বদলে যায় বারাক ওবামার কারণে। তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে অভিবাসীরা আবার রাজনীতিতে আগ্রহী হয়। সেই স্বপ্নে আবারও ফাটল ধরে ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর। এর দুই বছর পর আমি নিউইয়র্কে আসি। দেখতে পাই, নিউইয়র্কে বাংলাদেশিরা নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। আমেরিকার রাজনীতি বিষয়ে তাদের সচেতনতা ও আগ্রহ বাড়ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি আমেরিকার গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কে আসে। কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়ালেখার মধ্য দিয়ে তারা আরও দৃঢ়ভাবে নিজেদের পদরেখা নিউইয়র্কের কংক্রিটে শক্তিশালী করে তোলে। তাদের কণ্ঠ সোচ্চার হয়। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে আরও সচেতন হয়। মেয়র, কংগ্রেস সদস্য, সিনেটর ও নির্বাচিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিতি বাড়ে।

এবারের নির্বাচনে দেখা গেল, গাজা নিয়ে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অমানবিক কার্যকলাপ ও মেক্সিকোর সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্ক নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের মধ্যে ভারত বিরোধিতা বেড়ে যায়। এরপর ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন দেওয়া মুসলমানরা প্রায় সরাসরি মুখ ঘুরিয়ে নেন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ভোটব্যাংকে পরিণত হন এখানকার বাংলাদেশিরা। তাঁর পাওয়া পপুলার ভোটে বাংলাদেশিদের একটা অবদান আছে।

কিন্তু ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি প্রথমেই যে ১০টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, সেগুলোর মধ্যে দুটি বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটি হলো, অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়া, অন্যটি হলো, জন্মসূত্রে নাগরিক সুবিধা বাতিল করা। দ্বিতীয়টি এরই মধ্যে আদালত আটকে দিয়েছেন। তবে এরপরও বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে সোমবার থেকে একটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকে এরই মধ্যে আত্মগোপনে। অনেকের কাজে যাওয়া বন্ধ।

আরও একটি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশিরা চিন্তিত; তা হলো হাজার হাজার বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয়সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আবেদন করেছেন। এসব আবেদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি কমিউনিটিভিত্তিক ব্যবসায়ও প্রভাব ফেলবে বলে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত