Ajker Patrika

বহু কাঙ্ক্ষিত ‘সাদা শক্তির’ বিপুল ভান্ডার পাওয়ার আশা বিজ্ঞানীদের

এই সুইস আল্পসের নিচেও বিপুল পরিমাণ হোয়াইট হাইড্রোজেন থাকতে পারে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: সিএনএন
এই সুইস আল্পসের নিচেও বিপুল পরিমাণ হোয়াইট হাইড্রোজেন থাকতে পারে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: সিএনএন

পর্বতশ্রেণির নিচেই বিশাল পরিমাণে ‘হোয়াইট হাইড্রোজেন’ বা প্রাকৃতিক হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, বিশুদ্ধ এই জ্বালানি আহরণ করা সম্ভব হলে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে হোয়াইট হাইড্রোজেন ব্যাপক মনোযোগ পাচ্ছে। কারণ এটি জীবাশ্ম জ্বালানির টেকসই বিকল্প হতে পারে। যদিও কয়েক দশক আগে পর্যন্তও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন না, পৃথিবীর ভূত্বকের গভীরে এত বিশাল পরিমাণ হাইড্রোজেন থাকতে পারে।

বৃহস্পতিবার সিএনএন জানিয়েছে, বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন হোয়াইট হাইড্রোজেন কীভাবে তৈরি হয় এবং কোথায় পাওয়া যেতে পারে তা বোঝার জন্য। তবে নতুন এক গবেষণায়, বিজ্ঞানীদের একটি দল কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে টেকটোনিক প্লেটগুলোর গতিবিধি বিশ্লেষণ করেছেন এবং কোথায় হোয়াইট হাইড্রোজেন উৎপন্ন হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে তা চিহ্নিত করেছেন।

গবেষণাটি সম্প্রতি ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে—পিরেনিজ, ইউরোপীয় আল্পস ও হিমালয়ের মতো পর্বতমালাগুলোতে হোয়াইট হাইড্রোজেন উৎপন্ন হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

হাইড্রোজেন দীর্ঘদিন ধরেই সবুজ জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে, বিমান ও স্টিল শিল্পের মতো জ্বালানির উচ্চ-চাহিদাসম্পন্ন খাতগুলোর জন্য। তবে বর্তমানে উৎপাদিত হাইড্রোজেনের বেশির ভাগই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হয়, যা পরিবেশ দূষণের মূল কারণগুলোর একটি। সেই কারণেই হোয়াইট হাইড্রোজেন খুবই সম্ভাবনাময়। এর প্রাকৃতিক উৎস থাকায় এটি সম্পূর্ণভাবে কার্বনমুক্ত জ্বালানি হতে পারে।

হোয়াইট হাইড্রোজেনের প্রতি বিজ্ঞানীদের আগ্রহ প্রথম বাড়তে শুরু করেছিল ১৯৮৭ সালে মালিতে এক আকস্মিক দুর্ঘটনার মাধ্যমে। সেখানে এক শ্রমিক একটি কূপের ধারে ধূমপান করছিলেন এবং তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। পরে জানা যায়, ওই কূপটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হাইড্রোজেনের উৎস ছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর ২০১১ সালে কূপটি আবারও উন্মুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই এই কূপ থেকে একটি গ্রামকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে হোয়াইট হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও বাণিজ্যিকভাবে এটি ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খনন করা যায়নি।

ভূত্বকের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হোয়াইট হাইড্রোজেন তৈরি হয়। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হলো ‘সার্পেন্টিনাইজেশন’। এই প্রক্রিয়ায় পানির সঙ্গে আয়রন-সমৃদ্ধ শিলার বিক্রিয়ার ফলে হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়। সাধারণত এসব শিলা ভূগর্ভে থাকে এবং পানির সংস্পর্শে আসে না। তবে ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে কোটি কোটি বছরে এগুলো ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি উঠে আসে।

বিজ্ঞানীদের মতে, পর্বতশ্রেণির নিচে প্রচুর পরিমাণে এ ধরনের শিলা রয়েছে। ফলে এসব স্থানে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন উৎপন্ন হতে পারে। পিরেনিজ, ইউরোপীয় আল্পস এবং হিমালয়ের কিছু অংশে এই শিলাগুলোর অস্তিত্বও পাওয়া গেছে। এটি হোয়াইট হাইড্রোজেন পাওয়ার সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করছে।

এখন মূল প্রশ্ন হলো—এসব স্থান থেকে হোয়াইট হাইড্রোজেন বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন করা সম্ভব হবে কিনা। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন, ভূগর্ভের কাছাকাছি থাকা শিলাগুলোতে কৃত্রিমভাবে পানি প্রবাহিত করে হাইড্রোজেন উৎপাদন সম্ভব হয় কিনা।

গবেষকেরা আশা করছেন, তাঁদের নতুন গবেষণা হোয়াইট হাইড্রোজেনের সম্ভাব্য বড় উৎস চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতে জ্বালানি শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারবে। তবে এটির বাণিজ্যিক উৎপাদনে পৌঁছাতে আরও কয়েক দশক সময় লাগতে পারে। গবেষণা দলের সদস্য ফ্রাঙ্ক জোয়ান বলেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিক কোনো চমকপ্রদ সমাধানের আশা করতে পারি না। তবে এটি সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি বিপ্লবের অংশ হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত