Ajker Patrika

মৃত্যুদণ্ডেও নির্বিকার পাঁচ নারীর হত্যাকারী মার্কিন যুবক

জেফেন জেভার। ছবি: সংগৃহীত
জেফেন জেভার। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি ব্যাংকে ঢুকে পাঁচ নারীকে হত্যা করার জন্য জেফেন জেভারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২৭ বছর বয়সী জেভারের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার সময় হাইল্যান্ডস কাউন্টি কোর্টের বিচারক অ্যাঞ্জেলা কাউডেন বলেন, ‘ঈশ্বর আপনার আত্মার প্রতি সদয় হোন।’

তবে রায় ঘোষণার সময় জেভার কোনো আবেগ প্রকাশ করেননি।

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ফ্লোরিডার সেব্রিংয়ে অবস্থিত সানট্রাস্ট ব্যাংকে ঢুকে জেভার তাঁর শিকারদের মেঝেতে শুয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ওই নারীরা মেঝেতে শুয়ে পড়লে তিনি তাঁদের মাথায় গুলি করেন। মৃত্যুর আগে নারীরা জেভারের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন।

রায় ঘোষণার সময় বিচারক কাউডেন জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা, পরিকল্পনা এবং ভুক্তভোগীদের আতঙ্কের মাত্রা পর্যালোচনা করে তাঁর পক্ষে অপরাধীকে কম শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেভারের আইনজীবীরা তাঁর মাথার টিউমার, মানসিক অসুস্থতা এবং কারাগারে ধর্মের প্রতি তাঁর অনুরাগ-সহ ২৪টি কারণ দেখিয়ে শাস্তি কমানোর চেষ্টা করেছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা আগে জেভার তাঁর এক সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে টেক্সট মেসেজে কথা বলেছিলেন। সে সময় একটি মেসেজে তিনি লেখেন, ‘এটা আমার জীবনের সেরা দিন।’

তবে কেন দিনটিকে তিনি সেরা বলেছিলেন, তা জানাননি সাবেক প্রেমিকাকে। ঘটনার ১৫ মিনিট আগে তিনি লিখেন, ‘আমি আজ মরতে যাচ্ছি।’

এরপর তিনি ব্যাংকের পার্কিং লট থেকে একটি ভয়ংকর বার্তা পাঠান। তিনি লিখেন, ‘আমি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমি সব সময়ই মানুষ হত্যা করতে চেয়েছিলাম। এবার চেষ্টা করব এবং দেখব কী হয়। খবরের শিরোনাম হওয়ার জন্য তৈরি থাকো।’

দুই সপ্তাহ ধরে বিচারপ্রক্রিয়া শেষে গত জুন মাসে একটি জুরি সভা ৯-৩ ভোটে জেভারের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সুপারিশ করেছিল।

জানা যায়, জেভারের গুলিতে নিহত নারীরা ছিলেন—সিনথিয়া ওয়াটসন (৬৫), মরিসল লোপেজ (৫৫), আনা পিনন (৩৮), দেব্রা কুক (৫৪) ও জেসিকা মন্টাগু (৩১)। এর মধ্যে মারিসল লোপেজের মেয়ে কিয়ারা লোপেজ আদালতে জেভারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার মা আপনাকে হাসিমুখে ব্যাংকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি এর প্রতিদান দিলেন তাঁকে হত্যা করে। আপনি আমাকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছেন। যেদিন আপনি মারা যাবেন, আমি সেই দিনটি উদ্‌যাপন করব। আপনি চিরকালই একজন হত্যাকারী, কাপুরুষ এবং মূল্যহীন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত থাকবেন।’

দেব্রা কুকের স্বামী মাইকেল কুক বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি জেভারের প্রতি একটুও সহানুভূতিশীল নই।’

জেভারের প্রধান আইনজীবী জেন ম্যাকনিল বিচারকের কাছে তার মক্কেলের জন্য আজীবন কারাদণ্ডের আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘এই মামলাটি শেষ করার একমাত্র উপায় হলো আজীবন কারাদণ্ড। এতে পরিবার ও সমাজ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।’

জেভার ২০১৮ সালে ফ্লোরিডার সেব্রিং শহরে পা রেখেছিলেন। এর আগে ২০১৪ সালে তাঁর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলিশকে জানিয়েছিলেন, জেভার তাঁর সহপাঠীদের ক্ষতি করতে চান। পরে তাঁর মা তাঁকে মানসিক চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেন।

২০১৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জেভার। কিন্তু তিন মাস পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। সাবেক প্রেমিকার দাবি অনুযায়ী, একবার তাঁকে জেভার বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া হলো মানুষ হত্যা করার বৈধ উপায়।’

২০১৮ সালে জেভার ফ্লোরিডার একটি কারাগারে প্রশিক্ষণার্থী গার্ড হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন। তবে দুই মাস পর, গুলি কেনার পরদিনই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।

উল্লেখ্য, ফ্লোরিডার নতুন আইনে কোনো জুরি সভা ৮-৪ ভোটের ব্যবধান হলেই মৃত্যুদণ্ড সুপারিশ করতে পারে। ২০১৮ সালে একটি স্কুলে হামলায় ১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ৯-৩ ভোটের পরও মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় এই আইনটি সংশোধন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতিসংঘে চিঠি লিখলেন মোগল সম্রাটের বংশধর, সুরক্ষা চাইলেন আওরঙ্গজেবের সমাধির

সেভেন সিস্টার্সে বিনিয়োগ টানতে বিশেষ সম্মেলন আয়োজন করছে ভারত

কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে

বাংলাদেশিদের জীবন ধ্বংসকারী সমস্যা মোকাবিলায় গণতন্ত্র-নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ: যুক্তরাষ্ট্র

আফ্রিকা থেকে পিঁপড়া যাচ্ছে ইউরোপে, কেনিয়ার বিমানবন্দরে জব্দ কয়েক লাখ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত