Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্যযুদ্ধের ‘শেষ দেখে ছাড়বে’ চীন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ২১: ১১
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে চীনও। দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা মুরগি, গরুর মাংস, শূকরের মাংস ও সয়াবিনের ওপর ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঘোষণা দিয়েছেন—চীন যে কোনো বাণিজ্য যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।

আজ মঙ্গলবার চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরপরই পাল্টা ব্যবস্থা নেয় চীনও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এই বিষয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিচ্ছি, ভয় দেখানো বন্ধ করে সহযোগিতার পথে ফিরে আসতে।’

বিবিসি জানিয়েছে, চীনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা মুরগি, গরুর মাংস, শূকরের মাংস ও সয়াবিনের ওপর ১০-১৫ শুল্ক আগামী ১০ মার্চ থেকেই কার্যকর হবে চীনে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বাজারের জন্য নেতিবাচক হবে এবং ফসলের দামও কমতে পারে। চীন সহজেই অন্য দেশ থেকে এসব কৃষিপণ্য সংগ্রহ করতে পারবে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত ৩০ শতাংশ সয়াবিন চীনেই রপ্তানি করা হয়।

চীন অবশ্য স্পষ্ট করেছে যে, তারা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আচরণের সঠিক উপায় চাপ প্রয়োগ, ভয় দেখানো বা হুমকি দেওয়া নয়।’

তবে চীন এখন পর্যন্ত মার্কিন পণ্যে ২০১৮ সালের মতো কড়া শুল্ক আরোপ করেনি। সেবার ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চীন মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল দেশটি। কিন্তু এবার তা ২০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। চীন উত্তেজনা না বাড়িয়ে প্রশমিত করতে চায় বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের ফোনালাপের পরিকল্পনা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। চীনের অর্থনীতি ইতিমধ্যে দুর্বলতার মধ্যে রয়েছে। দেশটির বাড়ির দাম কমছে, যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও কম। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় বাণিজ্য যুদ্ধ এসব সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই মুহূর্তে বেইজিং চায় জনগণের ব্যয় বৃদ্ধি পাক, যাতে অর্থনীতিতে গতি আসে। কিন্তু নতুন শুল্ক চাপ দেশটির অর্থনৈতিক শঙ্কা আরও বাড়াবে।

তবে চীন একে কৌশলগত সুযোগ হিসেবেও দেখছে। ট্রাম্প প্রশাসন যখন তার মিত্রদের সঙ্গেও শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি করছে, তখন চীন বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছে। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে একটি ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ‘বদমাশ’ দেশ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। এতে বোঝা যাচ্ছে, বেইজিং বাণিজ্য যুদ্ধে নতুন মিত্র খুঁজছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব মঞ্চে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে।

বিশ্বব্যাপী যখন ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তখন চীন নিজেকে বিকল্প শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। এই বাণিজ্য যুদ্ধ কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে একদিকে বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত থাকা এবং অন্যদিকে আলোচনার দরজা খোলা রাখার চীনের কৌশল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত