Ajker Patrika

ধর্ম ফিরিয়ে আনতে হোয়াইট হাউসে ‘বিশ্বাসের দপ্তর’ খুলছেন ট্রাম্প

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৫৮
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ঈশ্বর তাঁকে রক্ষা করেছেন। এখন মনে হচ্ছে, তিনি ঈশ্বরের সেই ঋণ শোধ করছেন ক্রমশ বেশি রক্ষণশীল ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। এর সর্বশেষ প্রমাণ হিসেবে তিনি হোয়াইট হাউসে একটি ফেইথ অফিস বা ‘বিশ্বাসের দপ্তর’ খোলার নির্দেশ দিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনবার বিবাহিত এই বিলিয়নিয়ার গত শুক্রবার এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে একটি বিশ্বাসের দপ্তর খোলা হবে। এটি পরিচালনা করবেন টেলিভিশনে ধর্মপ্রচারক ব্যক্তিত্ব পলা হোয়াইট। তিনি ট্রাম্পের আধ্যাত্মিকতা বিষয়ক উপদেষ্টাও।

এর এক দিন আগে গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির অধীনে একটি টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘নিপীড়ন’ নির্মূল করা। ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকজন সদস্য নিয়োগ করেছেন, যাদের খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ অন্যতম।

এসব সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে, ধর্মের প্রতি যার অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই অনিশ্চিত ও অস্পষ্ট ছিল। তবে তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেন একজন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক ছিলেন। ট্রাম্প খুব কমই গির্জায় যান। তিনি প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চে দীক্ষা নিলেও পরে নিজেকে ‘কোনো সম্প্রদায়ভুক্ত নন’ বলে উল্লেখ করেন।

এ ছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগও আছে। তিনি এক পর্নো তারকার মুখ বন্ধ রাখতে অর্থ দেওয়ার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। কেবল তা-ই নয়, নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি ৬০ ডলার মূল্যের ট্রাম্প-ব্র্যান্ডের বাইবেলও বিক্রি করেছেন। তবুও ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিষ্টানেরা ২০২৬ সালের মতোই তাঁকে সমর্থন দিয়েছে।

প্রথম দফার প্রেসিডেন্সিতেও ট্রাম্প ধর্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি একবার হোয়াইট হাউসের কাছের একটি গির্জার সামনে বাইবেল হাতে ছবি তুলেছিলেন। ঠিক এখানেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করেছিল। এ ছাড়া, তিনি ওভাল অফিসে ইভাঞ্জেলিক্যাল নেতাদের নিয়ে প্রার্থনাসভাও করেছিলেন।

কিন্তু এবার ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি প্রকৃত অর্থেই ধর্মীয় জাগরণ অনুভব করেছেন। ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প বলেছেন, পেনসিলভানিয়ার বাটলার শহরে নির্বাচনী সমাবেশে এক বন্দুকধারীর গুলিতে কানের কাছে আঘাত পাওয়ার পর থেকে তিনি আরও বেশি ধর্মপরায়ণ হয়ে উঠেছেন। গত বৃহস্পতিবার ক্যাপিটল হিলে একটি প্রার্থনাসভায় তিনি বলেন, ‘এটি আমার মধ্যে কিছু একটা বদলে দিয়েছে। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম, কিন্তু এখন এটি আরও গভীরভাবে অনুভব করি।’

তবে এ পরিবর্তন তাঁকে তাঁর উদ্বোধনী প্রার্থনাসভার বিশপ ম্যারিয়ান বাড্ডিকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখেনি। বিশপ ট্রাম্পকে অভিবাসী ও এলজিবিটিকিউ প্লাস ব্যক্তিদের প্রতি ‘দয়া’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হোয়াইট হাউসে যেসব ব্যক্তি ট্রাম্পকে ঘিরে রেখেছেন, তাঁরাও অনেক কিছু ইঙ্গিত করেন।

তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের যোগসূত্র রয়েছে নিউ অ্যাপোস্টলিক রিফর্মেশন চার্চের সঙ্গে। এটি একটি খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, তারা সরকার ও সমাজের নিয়ন্ত্রণকে খ্রিষ্টানদের হাতে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে।

রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের স্পিকার মাইক জনসনেরও এই আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। পলা হোয়াইটও এই মতাদর্শের সঙ্গে জড়িত। তিনি ট্রাম্পের নতুন ‘বিশ্বাসের দপ্তর’ পরিচালনা করবেন।

শপথ নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর অংশগ্রহণে একটি বিশাল গর্ভপাতবিরোধী মিছিলে ভিডিও বার্তা পাঠান এবং একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এসব আদেশ ট্রান্সজেন্ডার অধিকার ও গর্ভপাতের মতো উদারনৈতিক বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে গেছে।

এই সপ্তাহে ক্যাপিটলে প্রার্থনাসভায় ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল বিশেষভাবে ধর্মের ভূমিকাকে সামনে আনার পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধর্ম ফিরিয়ে আনতে হবে। আসুন ঈশ্বরকে আমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত