Ajker Patrika

মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতের কয়েক শ বিলিয়ন ডলার অপচয় কমাবেন মাস্ক, আশা ট্রাম্পের

ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, ইলন মাস্ক মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতের অপচয়গুলো ধরিয়ে দেবেন। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, ইলন মাস্ক মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতের অপচয়গুলো ধরিয়ে দেবেন। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) বা সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগ ইলন মাস্কের নেতৃত্বে পেন্টাগনের কয়েক শ বিলিয়ন ডলারের প্রতারণা ও অপচয় ধরিয়ে দেবেন। এর ফলে মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতে অপ্রয়োজনীয় কয়েক শ বিলিয়ন ডলার ব্যয় কমবে।

ট্রাম্প গতকাল রোববার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজের সাংবাদিক ব্রেট বেয়ারের সঙ্গে সুপার বৌল উপলক্ষে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারের একটি অংশে ট্রাম্প জানান, তিনি মাস্ককে সরকারি ব্যয় পর্যালোচনার জন্য বিভিন্ন বিভাগ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি খুব দ্রুতই, হয়তো আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে বলব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে নজর দিতে। তারপর আমি বলব, চলুন সামরিক বাহিনী দেখি। সামরিক খাতে কী ঘটছে, তা খতিয়ে দেখি।’ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সরকারি বিভাগ পেন্টাগন সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কয়েক বিলিয়ন, এমনকি কয়েক শ বিলিয়ন ডলারের প্রতারণা ও অপচয় শনাক্ত করব।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেট বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে দেশটির বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের (১ লাখ কোটি) কাছাকাছি। সামরিক খাতে এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের বেশির ভাগই বিভিন্ন অস্ত্র নির্মাণ প্রকল্প, প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর পরিচালনা ও কর্মীদের বেতন কাঠামোর মধ্যে পড়ে।

গত বছরের ডিসেম্বরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৮৯৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করেন, যা চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাজেটের একটি বড় অংশ অনিয়ম ও অদক্ষতার কারণে অপচয় হয়।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও টেসলা-স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক বর্তমানে বিশেষ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। ট্রাম্প তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে। এর অংশ হিসেবে, মাস্কের নেতৃত্বে ডিওজিই বিভিন্ন সরকারি সংস্থার গোপন নথি ও তথ্যভান্ডারে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে। মাস্কের টিম চাইছে, সরকারি কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে কর্মসংখ্যা, ব্যয় ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ করতে।

তবে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক ও সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, এই প্রচেষ্টা আইনবিরুদ্ধ হতে পারে এবং এতে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট পার্টি ও সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নগুলো বলছে, মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি পেন্টাগনের মতো জটিল ও সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের জন্য যথেষ্ট দক্ষতা রাখে না। তারা আশঙ্কা করছে, মাস্কের নেতৃত্বাধীন দল অত্যন্ত সংবেদনশীল ও শ্রেণিবদ্ধ সামরিক তথ্যের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

এ ছাড়া মাস্কের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, স্পেসএক্স, টেসলা ও অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে বহু বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে যুক্ত রয়েছে। ফলে তাঁর নিরীক্ষা ও খরচ কমানোর পরিকল্পনায় স্বার্থ সংঘাতের প্রশ্ন উঠতে পারে।

পেন্টাগনের বাজেট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—উভয় দলই একাধিকবার প্রতিরক্ষা ব্যয়ে অদক্ষতা ও অপচয়ের সমালোচনা করেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ গতকাল রোববার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসির মিট দ্য প্রেসে বলেন, পেন্টাগনের ক্রয় ও নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিশাল সুযোগ’ আছে।

ওয়াল্টজ বলেন, ‘ওখানে সবকিছুর খরচই অনেক বেশি, সময়ও অনেক বেশি লাগে, অথচ সৈন্যদের জন্য যা সরবরাহ করা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ খাতে প্রচুর অনিয়ম রয়েছে, যা একেবারে বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। এটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার।’

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত রিপাবলিকানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেলেও ডেমোক্র্যাটরা কড়া সমালোচনা করছে। রিপাবলিকানদের দাবি, পেন্টাগনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে মাস্কের মতো সফল উদ্যোক্তার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, প্রতিরক্ষা বিভাগের ক্রয় প্রক্রিয়া দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কার করা জরুরি এবং সামরিক ব্যয় কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।

তবে ডেমোক্র্যাটদের আশঙ্কা, মাস্কের প্রচেষ্টায় জাতীয় নিরাপত্তার তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, তিনি নিজেই প্রতিরক্ষা বিভাগের বড় ঠিকাদার, ফলে স্বার্থ সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এমন উদ্যোগ নেওয়া বেআইনি হতে পারে।

ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, ইলন মাস্কের নেতৃত্বে পরিচালিত এই নিরীক্ষায় প্রতিরক্ষা ব্যয়ে বড় ধরনের অপচয় ও প্রতারণা ধরা পড়তে পারে। তবে এটি সরকারি প্রশাসন ও সামরিক খাতের জন্য কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখার নামে মাস্কের দল যদি ‘গোপন তথ্যভান্ডারে অনধিকার প্রবেশ ঘটায়’ তাহলে বিষয়টি কংগ্রেস ও আদালতের বিবেচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ব্যাপক কাটছাঁটের উদ্যোগ পেন্টাগনের কার্যকারিতার ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিষয়টি এখন কেবল রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত