ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
পার্থিব জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহ তাআলা মানুষকে ধন-সম্পদ দান করেছেন। সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা, মানুষ কেবল এসবের ব্যবহারকারী। তাই আল্লাহ কাউকে সম্পদ দেন, আবার কাউকে সম্পদ না দিয়ে পরীক্ষা করেন। ধনীদের সম্পদের মধ্যে গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষের অধিকার রয়েছে। তাই দান-সদকা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা মুমিনের কর্তব্য। তবে দান হতে হবে মহানবী (সা.)-এর বাতলানো পদ্ধতিতে। অন্যথায় তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না।
হালাল সম্পদ দান করা
হালাল সম্পদ থেকে দান-সদকা করা আবশ্যক। কারণ, আল্লাহ হালাল ও পবিত্র বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা যা উপার্জন করো এবং যা আমি তোমাদের জন্য জমিতে উৎপন্ন করি, তা থেকে পবিত্র বস্তু ব্যয় করো।’
(সুরা বাকারা: ২৬৭)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম) এমনকি অবৈধ আয় থেকে দান করলে তা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপের মাধ্যমে আয় করে তা দিয়ে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে বা তা দান করে বা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, আল্লাহ তা একত্র করে জাহান্নামে ছুড়ে মারবেন।’ (সহিহুত তারগিব)
উত্তম সম্পদ দান করা
নিজের পছন্দের সম্পদ দান করে দিলে সওয়াব বেশি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কখনোই কল্যাণ লাভ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে দান করবে।’ (সুরা আল ইমরান: ৯২)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘আর সেখান থেকে নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প কোরো না, যা তোমরা নিজেরা গ্রহণ করো না চোখ বন্ধ না করে। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাবমুক্ত ও চির প্রশংসিত।’ (সুরা বাকারা: ২৬৭)
আওফ ইবন মালেক (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) একদিন লাঠি হাতে মসজিদে প্রবেশ করেন। এ সময় মসজিদে নিকৃষ্ট মানের খেজুর ঝোলানো ছিল। তিনি লাঠি দিয়ে খেজুরে আঘাত করে বললেন, ‘দানকারী এর চেয়ে ভালো খেজুর দান করতে পারত। এর কারণে কিয়ামতে দানকারীকে নিকৃষ্ট ফল খেতে হবে।’ (আবু দাউদ)
যে ব্যক্তি পাপের মাধ্যমে আয় করে তা দিয়ে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে বা তা দান করে বা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, আল্লাহ তা একত্র করে জাহান্নামে ছুড়ে মারবেন। (সহিহুত তারগিব)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করা
কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান-সদকা না করলে তা কবুল হয় না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কাজের প্রাপ্য নির্ধারিত হয় নিয়ত অনুসারে, আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ (বুখারি)। তিনি আরও বলেন, ‘তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে দেওয়া হবে। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে (খাবার) তুলে দাও, তারও।’ (বুখারি)
গোপনে দান করতে উৎসাহ
প্রকাশ্য ও গোপন উভয়ভাবে দান করা যায়। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে এমনভাবে দান করা উত্তম, যাতে ডান হাত দান করলে বাঁ হাত না জানে। তবে লৌকিকতা পরিহার করে অন্যকে উৎসাহিত করতে প্রকাশ্যে দান করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি সদকা প্রকাশ করো, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন করে দরিদ্রদের দাও, তাহলে তা-ও তোমাদের জন্য উত্তম এবং তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেবেন। আর তোমরা যে আমল করো, আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত।’ (সুরা বাকারা: ২৭১) তবে জাকাত ও অন্যান্য ফরজ সদকা প্রকাশ্যে করা উত্তম।
প্রকৃত হকদারকে দান করা
দান-সদকা গ্রহণ করতে পারে এমন ব্যক্তিকে দান করলে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি গ্রহীতাও উপকৃত হয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘(অনাত্মীয়) গরিব-মিসকিনকে দান করলে তাতে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়, আর আত্মীয় গরিবকে দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। একটি দানের, অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার।’ (ইবনে মাজাহ)
যৌবনেই দান করা
দান-সদকা করার ইচ্ছা করলে তা দ্রুতই করা উচিত। এক সাহাবি মহানবী (সা.)কে উত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘সুস্থ ও কার্পণ্য অবস্থায় দান করো, যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করো এবং ধনী হওয়ার আশা করো। সদকা করতে এ পর্যন্ত বিলম্ব করবে না, যখন তোমার প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে।’ (বুখারি)
দান করে খোঁটা না দেওয়া
দান-সদকা করে খোঁটা দিলে তার সওয়াব বাতিল হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদকা বাতিল কোরো না। ওই ব্যক্তির মতো, যে তার সম্পদ ব্যয় করে সুনাম কুড়ানোর জন্য এবং বিশ্বাস করে না আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি।’ (সুরা বাকারা: ২৬৪)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না। যে দান করে খোঁটা দেয়, যে মিথ্যা শপথ করে ক্রয়-বিক্রয় করে এবং যে পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে।’ (মুসলিম)
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
পার্থিব জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহ তাআলা মানুষকে ধন-সম্পদ দান করেছেন। সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা, মানুষ কেবল এসবের ব্যবহারকারী। তাই আল্লাহ কাউকে সম্পদ দেন, আবার কাউকে সম্পদ না দিয়ে পরীক্ষা করেন। ধনীদের সম্পদের মধ্যে গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষের অধিকার রয়েছে। তাই দান-সদকা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা মুমিনের কর্তব্য। তবে দান হতে হবে মহানবী (সা.)-এর বাতলানো পদ্ধতিতে। অন্যথায় তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না।
হালাল সম্পদ দান করা
হালাল সম্পদ থেকে দান-সদকা করা আবশ্যক। কারণ, আল্লাহ হালাল ও পবিত্র বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা যা উপার্জন করো এবং যা আমি তোমাদের জন্য জমিতে উৎপন্ন করি, তা থেকে পবিত্র বস্তু ব্যয় করো।’
(সুরা বাকারা: ২৬৭)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম) এমনকি অবৈধ আয় থেকে দান করলে তা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপের মাধ্যমে আয় করে তা দিয়ে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে বা তা দান করে বা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, আল্লাহ তা একত্র করে জাহান্নামে ছুড়ে মারবেন।’ (সহিহুত তারগিব)
উত্তম সম্পদ দান করা
নিজের পছন্দের সম্পদ দান করে দিলে সওয়াব বেশি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কখনোই কল্যাণ লাভ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে দান করবে।’ (সুরা আল ইমরান: ৯২)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘আর সেখান থেকে নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প কোরো না, যা তোমরা নিজেরা গ্রহণ করো না চোখ বন্ধ না করে। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাবমুক্ত ও চির প্রশংসিত।’ (সুরা বাকারা: ২৬৭)
আওফ ইবন মালেক (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) একদিন লাঠি হাতে মসজিদে প্রবেশ করেন। এ সময় মসজিদে নিকৃষ্ট মানের খেজুর ঝোলানো ছিল। তিনি লাঠি দিয়ে খেজুরে আঘাত করে বললেন, ‘দানকারী এর চেয়ে ভালো খেজুর দান করতে পারত। এর কারণে কিয়ামতে দানকারীকে নিকৃষ্ট ফল খেতে হবে।’ (আবু দাউদ)
যে ব্যক্তি পাপের মাধ্যমে আয় করে তা দিয়ে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে বা তা দান করে বা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, আল্লাহ তা একত্র করে জাহান্নামে ছুড়ে মারবেন। (সহিহুত তারগিব)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করা
কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান-সদকা না করলে তা কবুল হয় না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কাজের প্রাপ্য নির্ধারিত হয় নিয়ত অনুসারে, আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ (বুখারি)। তিনি আরও বলেন, ‘তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে দেওয়া হবে। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে (খাবার) তুলে দাও, তারও।’ (বুখারি)
গোপনে দান করতে উৎসাহ
প্রকাশ্য ও গোপন উভয়ভাবে দান করা যায়। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে এমনভাবে দান করা উত্তম, যাতে ডান হাত দান করলে বাঁ হাত না জানে। তবে লৌকিকতা পরিহার করে অন্যকে উৎসাহিত করতে প্রকাশ্যে দান করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি সদকা প্রকাশ করো, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন করে দরিদ্রদের দাও, তাহলে তা-ও তোমাদের জন্য উত্তম এবং তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেবেন। আর তোমরা যে আমল করো, আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত।’ (সুরা বাকারা: ২৭১) তবে জাকাত ও অন্যান্য ফরজ সদকা প্রকাশ্যে করা উত্তম।
প্রকৃত হকদারকে দান করা
দান-সদকা গ্রহণ করতে পারে এমন ব্যক্তিকে দান করলে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি গ্রহীতাও উপকৃত হয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘(অনাত্মীয়) গরিব-মিসকিনকে দান করলে তাতে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়, আর আত্মীয় গরিবকে দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। একটি দানের, অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার।’ (ইবনে মাজাহ)
যৌবনেই দান করা
দান-সদকা করার ইচ্ছা করলে তা দ্রুতই করা উচিত। এক সাহাবি মহানবী (সা.)কে উত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘সুস্থ ও কার্পণ্য অবস্থায় দান করো, যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করো এবং ধনী হওয়ার আশা করো। সদকা করতে এ পর্যন্ত বিলম্ব করবে না, যখন তোমার প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে।’ (বুখারি)
দান করে খোঁটা না দেওয়া
দান-সদকা করে খোঁটা দিলে তার সওয়াব বাতিল হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদকা বাতিল কোরো না। ওই ব্যক্তির মতো, যে তার সম্পদ ব্যয় করে সুনাম কুড়ানোর জন্য এবং বিশ্বাস করে না আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি।’ (সুরা বাকারা: ২৬৪)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না। যে দান করে খোঁটা দেয়, যে মিথ্যা শপথ করে ক্রয়-বিক্রয় করে এবং যে পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে।’ (মুসলিম)
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
পূর্ণ ধৈর্য ধারণ করে ইসলামের মহত্ত তুলে ধরার বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যাদের ওপরে কোনো বিপদ এলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমরা ফিরে যাব।
৩ ঘণ্টা আগেদুনিয়ার সফরের শেষ গন্তব্য মৃত্যু। মৃত্যু এক অপ্রিয় সত্য, যা সুনিশ্চিত অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)
১ দিন আগেএকজন মুমিনের জন্য তার জীবনকে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত করা এবং ইসলামে যা কিছু নিষিদ্ধ, তা ত্যাগ করা আবশ্যক। হাদিস শরিফে এটাকে উত্তম ধার্মিকতা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন...
২ দিন আগেআসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
৩ দিন আগে