ইসলাম ডেস্ক
আমাদের সমাজে অনেক কথা হাদিস হিসেবে প্রচলিত আছে, যা আসলে হাদিস নয়। এর মধ্যে অনেক কথার সঙ্গে হাদিসের দূরতম সম্পর্কও নেই। তবে কিছু কিছু কথা অন্যান্য সহিহ্ হাদিসের মর্মের কাছাকাছি পাওয়া যায়। উভয় ধরনের কথাই হাদিস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে নাজায়েজ।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছে করে আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (বুখারি: ১১০; মুসলিম: ০৩)
তাই মিথ্যা, বানোয়াট ও জাল হাদিস বলা থেকে বিরত থাকা সবার কর্তব্য। বহুল প্রচলিত ১০টি জাল হাদিস নিয়ে একটি আলোচনা তুলে ধরা হলো—
১. দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ
জন্মভূমিকে ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এটি মানুষের মহৎ গুণ। নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা, মায়া-মমতা এবং আন্তরিক টান থাকা ইসলামবিরোধী নয়। বরং মহানবী (সা.)-এর জীবনেও দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে আমাদের সমাজে প্রচলিত ‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’ কথাটি মহানবী (সা.)-এর হাদিস নয়। হাদিস বিশারদ আল্লামা সাগানি একে জাল হাদিস বলেছেন। (রিসালাতুল মাওযুআত: ৭) মোল্লা আলি কারি বলেছেন, ‘হাফেজে হাদিসদের কাছে এর কোনো ভিত্তি নেই।’ (আল-মাসনু: ৯১)
২. দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জন করো
জ্ঞান অর্জন করা ইসলামে ফরজ। কখনো তা ফরজে আইন, কখনো ফরজে কিফায়া। কোরআন-হাদিসে বিভিন্নভাবে জ্ঞানচর্চায় উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। জ্ঞানার্জনের কোনো শেষ নেই। শেখার কোনো বয়স নেই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান আহরণ করে যাওয়াই বিবেকের দাবি। তবে সমাজে প্রচলিত ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ করো’ কথাটি হাদিস নয়; বরং এটি প্রবাদ ও উপদেশবাণী। হাদিস বিশারদ শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ বলেন, ‘এটি হাদিস নয়। বরং এটি প্রবাদ।’ (কিমাতুজ জামান ইনদাল উলামা: ৩০)
৩. যার পীর নেই তার পীর শয়তান
ধার্মিক ও মুত্তাকি ব্যক্তিদের পরামর্শে জীবনযাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে ইসলাম। পবিত্র কোরআনেও নেককারদের সান্নিধ্য গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবে এ সম্পর্কিত কথা ‘যার পীর নেই তার পীর শয়তান’—এটি হাদিস নয়। হাফেজ বাদায়ুনি নিজামুদ্দিন আউলিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘যার পীর নেই তার পীর শয়তান—এটি কি রাসুল (রা.)-এর হাদিস?’ তিনি বললেন, ‘না, এটি বুজুর্গদের কথা।’ (ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ: ৫৯)
তাই এ কথার ওপর ভিত্তি করে পীরের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা ফরজে আইন দাবি করা ভুল। তবে ধর্মীয় বিষয়ের পণ্ডিত ও নেককার বান্দাদের সান্নিধ্যের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করাও মারাত্মক ভ্রান্তি। (ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৫ / ২৩৬-২৩৮)
৪. পৃথিবী ষাঁড়ের শিঙের ওপর
অনেকেই হাদিস হিসেবে বলেন, ‘পৃথিবী একটি পাথরের ওপর। পাথরটি একটি ষাঁড়ের শিংয়ের ওপর। যখন ষাঁড় শিং হেলায়, তখন পাথর নড়ে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীও কেঁপে ওঠে। আর এটিই ভূমিকম্প।’ এটি হাদিস নয়। মহানবী (সা.) এ কথা বলেছেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই। ইবনুল কাইয়িম ও আবু হাইয়ানসহ অনেক মুহাদ্দিস একে জাল ও অবান্তর বলেছেন। (আলমানারুল মুনিফ: ৭৮; আল-ইসরাইলিয়াত ওয়াল-মাওযুআত: ৩০৫)
৫. মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা
লোকমুখে প্রচলিত আছে, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথাবার্তা বলবে, আল্লাহ তাআলা তার ৪০ বছরের নেক আমল বরবাদ করে দেবেন।’ হাদিস হিসেবে মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ হলেও এটি হাদিস নয়। আল্লামা সাগানি ও আল্লামা কাউকাজি একে জাল হাদিস বলেছেন। মোল্লা আলি কারি, আজলুনি ও শাওকানি এই মতে সমর্থন দিয়েছেন। (আল-মাসনু: ১৮২; আল-মাওজুআতুল কুবরা: ১১৭) এ বিষয়ে প্রায় কাছাকাছি অর্থের আরও কিছু জাল হাদিস সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
এর অর্থ এই নয় যে মসজিদে দুনিয়াবি কথাবার্তা বলা যাবে; বরং তা ইসলামের দৃষ্টিতে নাজায়েজ। তবে কোনো ধর্মীয় কাজে অথবা অপারগতার কারণে বিশ্রাম নিতে মসজিদে গেলে প্রয়োজনে দুনিয়াবি কথা বলা যাবে। মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে বিষয়টি প্রমাণিত। (সহিহ্ বুখারি: ১ / ৬৩-৬৫; রদ্দুল মুহতার: ১ / ৬৬২)
৬. মুমিনের উচ্ছিষ্ট ওষুধ
‘মুমিনের উচ্ছিষ্ট ওষুধ’—এ কথা মানুষের মুখে হাদিসে হিসেবে প্রচলিত। অথচ এটি হাদিস নয়। মোল্লা আলি কারি বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে এর কোনো ভিত্তি নেই।’ (আল-মাসনু: ১০৬) আল্লামা নাজমুদ্দিন গাযযি বলেছেন, ‘এটি হাদিস নয়।’ (কাশফুল খাফা: ১ / ৪৫৮)
তবে মানুষের উচ্ছিষ্ট পবিত্র। তা খাওয়া জায়েজই নয়; বরং প্রশংসনীয়ও। হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে আমি ও খালিদ ইবনে ওয়ালিদ মাইমুনা (রা.)-এর কাছে গেলে তিনি পাত্রে করে আমাদের জন্য দুধ নিয়ে এলেন। রাসুল (সা.) দুধ পান করলেন। আমি তাঁর ডান দিকে ছিলাম এবং খালিদ বাম দিকে। তিনি আমাকে বললেন, ‘আগে পান করার অধিকার তোমারই, তবে তুমি ইচ্ছা করলে খালিদকে আগে দিতে পারো।’ আমি বললাম, ‘আপনার উচ্ছিষ্ট পানে আমি কাউকে প্রাধান্য দিতে পারি না।’ (তিরমিজি: ৩৬৮৪)
৭. নখ কাটার বিশেষ নিয়ম
প্রচলিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ডান হাতের তর্জনী থেকে নখ কাটা শুরু করে বৃদ্ধাঙ্গুলে শেষ করতেন। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুল থেকে শুরু করে বৃদ্ধাঙ্গুলে শেষ করতেন।’ এটি মহানবী (সা.)-এর হাদিস নয়। নখ কাটার নির্দিষ্ট নিয়ম ও দিনের ব্যাপারে তাঁর কোনো হাদিস পাওয়া যায় না। ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, ‘নখ কাটার নিয়ম সম্পর্কে কোনো প্রমাণিত হাদিস নেই।’ (ফাতহুল বারি: ১০ / ৩৫৭) আল্লামা সাখাবি ও হাফেজ ইরাকিও একই মত দিয়েছেন। (মাকাসিদুল হাসানা: ৩৬২; ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকিন: ২ / ৪১১)
তবে মহানবী (সা.) যেহেতু সব ভালো কাজই ডান দিক থেকে শুরু করতেন, তাই নখ কাটার ক্ষেত্রেও ডান দিক থেকে শুরু করা মুস্তাহাব। এর বাইরে অন্য কোনো নিয়ম হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়।
৮. আলেমগণ বনি ইসরায়েলের নবীর সমতুল্য
প্রচলিত আছে, ‘আমার উম্মতের আলেমগণ বনি ইসরায়েলের নবীর মতো।’ এ কথাটি হাদিস হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। যারকাশি, দারেমি, ইবনে হাজার, সুয়ুতি, মোল্লা আলি কারি, শাওকানিসহ অসংখ্য মুহাদ্দিস একে ভিত্তিহীন বলেছেন। (আত-তাযকিরা: ১৬৭; আ-মাকাসিদুল হাসানা: ৩৪০; আ-দুরাদুর মুনতাসিরা: ১৪৩)
তবে এই হাদিসের মর্মের কাছাকাছি কয়েকটি সহিহ্ হাদিস পাওয়া যায়। যেমন মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ।’ (আবু দাউদ: ৩১৫৭; তিরমিজি: ২৬০৬)
৯. আজানের সময় কথা বললে ইমান থাকবে না
আজানের সময় মুমিনের করণীয় হলো, মনোযোগ দিয়ে আজান শোনা এবং আজানের জবাব দিয়ে দোয়া পড়া। এ কথা সহিহ্ হাদিস থেকে প্রমাণিত। তবে সমাজে প্রচলিত, ‘যে ব্যক্তি আজানের সময় কথা বলবে, তার ইমান চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’ বা ‘যে ব্যক্তি আজানের সময় কথা বলবে, তার ৪০ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে’— এই জাতীয় কথা হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়। আল্লামা সাগানি এগুলোকে জাল হাদিস বলেছেন। (রিসালাতুল মাওযুআত: ১২)
১০. আজান-ইকামতে আঙুলে চুমো খাওয়া
আজান-ইকামতের সময় রাসুল (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে অনেককে তর্জনীতে চুমো খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে দিতে দেখা যায়। এ আমলটি মূলত মুসনাদে দায়লামির একটি জাল হাদিসের ওপর ভিত্তি করে মানুষ চর্চা করে। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি বলেছেন, ‘মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে রাসুল (সা.)-এর নাম শুনে আঙুলে চুমো খাওয়া এবং তা চোখে মুছে দেওয়া সম্পর্কিত যত বর্ণনাই আছে, সবই জাল ও বানোয়াট।’ (তাইসিরুল মাকাল: ১২৩) হাদিসগুলো শুধু জালই নয়; অন্য কোনো সহিহ্ হাদিস থেকেও আমলটি প্রমাণিত নয়। তাই এই কাজ পরিহার করা উচিত।
সূত্র: মাওলানা মুতীউর রহমান রচিত ‘এসব হাদিস নয়’ প্রথম খণ্ড
আমাদের সমাজে অনেক কথা হাদিস হিসেবে প্রচলিত আছে, যা আসলে হাদিস নয়। এর মধ্যে অনেক কথার সঙ্গে হাদিসের দূরতম সম্পর্কও নেই। তবে কিছু কিছু কথা অন্যান্য সহিহ্ হাদিসের মর্মের কাছাকাছি পাওয়া যায়। উভয় ধরনের কথাই হাদিস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে নাজায়েজ।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছে করে আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (বুখারি: ১১০; মুসলিম: ০৩)
তাই মিথ্যা, বানোয়াট ও জাল হাদিস বলা থেকে বিরত থাকা সবার কর্তব্য। বহুল প্রচলিত ১০টি জাল হাদিস নিয়ে একটি আলোচনা তুলে ধরা হলো—
১. দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ
জন্মভূমিকে ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এটি মানুষের মহৎ গুণ। নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা, মায়া-মমতা এবং আন্তরিক টান থাকা ইসলামবিরোধী নয়। বরং মহানবী (সা.)-এর জীবনেও দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে আমাদের সমাজে প্রচলিত ‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’ কথাটি মহানবী (সা.)-এর হাদিস নয়। হাদিস বিশারদ আল্লামা সাগানি একে জাল হাদিস বলেছেন। (রিসালাতুল মাওযুআত: ৭) মোল্লা আলি কারি বলেছেন, ‘হাফেজে হাদিসদের কাছে এর কোনো ভিত্তি নেই।’ (আল-মাসনু: ৯১)
২. দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জন করো
জ্ঞান অর্জন করা ইসলামে ফরজ। কখনো তা ফরজে আইন, কখনো ফরজে কিফায়া। কোরআন-হাদিসে বিভিন্নভাবে জ্ঞানচর্চায় উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। জ্ঞানার্জনের কোনো শেষ নেই। শেখার কোনো বয়স নেই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান আহরণ করে যাওয়াই বিবেকের দাবি। তবে সমাজে প্রচলিত ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ করো’ কথাটি হাদিস নয়; বরং এটি প্রবাদ ও উপদেশবাণী। হাদিস বিশারদ শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ বলেন, ‘এটি হাদিস নয়। বরং এটি প্রবাদ।’ (কিমাতুজ জামান ইনদাল উলামা: ৩০)
৩. যার পীর নেই তার পীর শয়তান
ধার্মিক ও মুত্তাকি ব্যক্তিদের পরামর্শে জীবনযাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে ইসলাম। পবিত্র কোরআনেও নেককারদের সান্নিধ্য গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবে এ সম্পর্কিত কথা ‘যার পীর নেই তার পীর শয়তান’—এটি হাদিস নয়। হাফেজ বাদায়ুনি নিজামুদ্দিন আউলিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘যার পীর নেই তার পীর শয়তান—এটি কি রাসুল (রা.)-এর হাদিস?’ তিনি বললেন, ‘না, এটি বুজুর্গদের কথা।’ (ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ: ৫৯)
তাই এ কথার ওপর ভিত্তি করে পীরের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা ফরজে আইন দাবি করা ভুল। তবে ধর্মীয় বিষয়ের পণ্ডিত ও নেককার বান্দাদের সান্নিধ্যের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করাও মারাত্মক ভ্রান্তি। (ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৫ / ২৩৬-২৩৮)
৪. পৃথিবী ষাঁড়ের শিঙের ওপর
অনেকেই হাদিস হিসেবে বলেন, ‘পৃথিবী একটি পাথরের ওপর। পাথরটি একটি ষাঁড়ের শিংয়ের ওপর। যখন ষাঁড় শিং হেলায়, তখন পাথর নড়ে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীও কেঁপে ওঠে। আর এটিই ভূমিকম্প।’ এটি হাদিস নয়। মহানবী (সা.) এ কথা বলেছেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই। ইবনুল কাইয়িম ও আবু হাইয়ানসহ অনেক মুহাদ্দিস একে জাল ও অবান্তর বলেছেন। (আলমানারুল মুনিফ: ৭৮; আল-ইসরাইলিয়াত ওয়াল-মাওযুআত: ৩০৫)
৫. মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা
লোকমুখে প্রচলিত আছে, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথাবার্তা বলবে, আল্লাহ তাআলা তার ৪০ বছরের নেক আমল বরবাদ করে দেবেন।’ হাদিস হিসেবে মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ হলেও এটি হাদিস নয়। আল্লামা সাগানি ও আল্লামা কাউকাজি একে জাল হাদিস বলেছেন। মোল্লা আলি কারি, আজলুনি ও শাওকানি এই মতে সমর্থন দিয়েছেন। (আল-মাসনু: ১৮২; আল-মাওজুআতুল কুবরা: ১১৭) এ বিষয়ে প্রায় কাছাকাছি অর্থের আরও কিছু জাল হাদিস সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
এর অর্থ এই নয় যে মসজিদে দুনিয়াবি কথাবার্তা বলা যাবে; বরং তা ইসলামের দৃষ্টিতে নাজায়েজ। তবে কোনো ধর্মীয় কাজে অথবা অপারগতার কারণে বিশ্রাম নিতে মসজিদে গেলে প্রয়োজনে দুনিয়াবি কথা বলা যাবে। মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে বিষয়টি প্রমাণিত। (সহিহ্ বুখারি: ১ / ৬৩-৬৫; রদ্দুল মুহতার: ১ / ৬৬২)
৬. মুমিনের উচ্ছিষ্ট ওষুধ
‘মুমিনের উচ্ছিষ্ট ওষুধ’—এ কথা মানুষের মুখে হাদিসে হিসেবে প্রচলিত। অথচ এটি হাদিস নয়। মোল্লা আলি কারি বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে এর কোনো ভিত্তি নেই।’ (আল-মাসনু: ১০৬) আল্লামা নাজমুদ্দিন গাযযি বলেছেন, ‘এটি হাদিস নয়।’ (কাশফুল খাফা: ১ / ৪৫৮)
তবে মানুষের উচ্ছিষ্ট পবিত্র। তা খাওয়া জায়েজই নয়; বরং প্রশংসনীয়ও। হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে আমি ও খালিদ ইবনে ওয়ালিদ মাইমুনা (রা.)-এর কাছে গেলে তিনি পাত্রে করে আমাদের জন্য দুধ নিয়ে এলেন। রাসুল (সা.) দুধ পান করলেন। আমি তাঁর ডান দিকে ছিলাম এবং খালিদ বাম দিকে। তিনি আমাকে বললেন, ‘আগে পান করার অধিকার তোমারই, তবে তুমি ইচ্ছা করলে খালিদকে আগে দিতে পারো।’ আমি বললাম, ‘আপনার উচ্ছিষ্ট পানে আমি কাউকে প্রাধান্য দিতে পারি না।’ (তিরমিজি: ৩৬৮৪)
৭. নখ কাটার বিশেষ নিয়ম
প্রচলিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ডান হাতের তর্জনী থেকে নখ কাটা শুরু করে বৃদ্ধাঙ্গুলে শেষ করতেন। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুল থেকে শুরু করে বৃদ্ধাঙ্গুলে শেষ করতেন।’ এটি মহানবী (সা.)-এর হাদিস নয়। নখ কাটার নির্দিষ্ট নিয়ম ও দিনের ব্যাপারে তাঁর কোনো হাদিস পাওয়া যায় না। ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, ‘নখ কাটার নিয়ম সম্পর্কে কোনো প্রমাণিত হাদিস নেই।’ (ফাতহুল বারি: ১০ / ৩৫৭) আল্লামা সাখাবি ও হাফেজ ইরাকিও একই মত দিয়েছেন। (মাকাসিদুল হাসানা: ৩৬২; ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকিন: ২ / ৪১১)
তবে মহানবী (সা.) যেহেতু সব ভালো কাজই ডান দিক থেকে শুরু করতেন, তাই নখ কাটার ক্ষেত্রেও ডান দিক থেকে শুরু করা মুস্তাহাব। এর বাইরে অন্য কোনো নিয়ম হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়।
৮. আলেমগণ বনি ইসরায়েলের নবীর সমতুল্য
প্রচলিত আছে, ‘আমার উম্মতের আলেমগণ বনি ইসরায়েলের নবীর মতো।’ এ কথাটি হাদিস হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। যারকাশি, দারেমি, ইবনে হাজার, সুয়ুতি, মোল্লা আলি কারি, শাওকানিসহ অসংখ্য মুহাদ্দিস একে ভিত্তিহীন বলেছেন। (আত-তাযকিরা: ১৬৭; আ-মাকাসিদুল হাসানা: ৩৪০; আ-দুরাদুর মুনতাসিরা: ১৪৩)
তবে এই হাদিসের মর্মের কাছাকাছি কয়েকটি সহিহ্ হাদিস পাওয়া যায়। যেমন মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ।’ (আবু দাউদ: ৩১৫৭; তিরমিজি: ২৬০৬)
৯. আজানের সময় কথা বললে ইমান থাকবে না
আজানের সময় মুমিনের করণীয় হলো, মনোযোগ দিয়ে আজান শোনা এবং আজানের জবাব দিয়ে দোয়া পড়া। এ কথা সহিহ্ হাদিস থেকে প্রমাণিত। তবে সমাজে প্রচলিত, ‘যে ব্যক্তি আজানের সময় কথা বলবে, তার ইমান চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’ বা ‘যে ব্যক্তি আজানের সময় কথা বলবে, তার ৪০ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে’— এই জাতীয় কথা হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়। আল্লামা সাগানি এগুলোকে জাল হাদিস বলেছেন। (রিসালাতুল মাওযুআত: ১২)
১০. আজান-ইকামতে আঙুলে চুমো খাওয়া
আজান-ইকামতের সময় রাসুল (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে অনেককে তর্জনীতে চুমো খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে দিতে দেখা যায়। এ আমলটি মূলত মুসনাদে দায়লামির একটি জাল হাদিসের ওপর ভিত্তি করে মানুষ চর্চা করে। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি বলেছেন, ‘মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে রাসুল (সা.)-এর নাম শুনে আঙুলে চুমো খাওয়া এবং তা চোখে মুছে দেওয়া সম্পর্কিত যত বর্ণনাই আছে, সবই জাল ও বানোয়াট।’ (তাইসিরুল মাকাল: ১২৩) হাদিসগুলো শুধু জালই নয়; অন্য কোনো সহিহ্ হাদিস থেকেও আমলটি প্রমাণিত নয়। তাই এই কাজ পরিহার করা উচিত।
সূত্র: মাওলানা মুতীউর রহমান রচিত ‘এসব হাদিস নয়’ প্রথম খণ্ড
আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিচিত্ররূপে সৃষ্টি করেছেন। গায়ের রঙে যেমন রয়েছে ভিন্নতা, তেমনই মন-মেজাজেও বিচিত্রতা স্পষ্ট।
৬ ঘণ্টা আগেপ্রত্যেক মুসলমানের চূড়ান্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও একান্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে জান্নাতের মেহমান হওয়া। কেননা জান্নাত অনন্ত সুখ, শান্তি ও অসংখ্য নিয়ামতের জায়গা। আল্লাহ তাআলা নিজেই জান্নাতের দিকে বান্দাদের ডেকেছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ শান্তির ঘরের দিকে ডাকছেন।’ (সুরা ইউনুস: ২৫)
১ দিন আগেসংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির বরাত দিয়ে গালফ নিউজ জানিয়েছে, ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস জমাদিউল আউয়ালের চাঁদ দেখা যাবে আগামী ৩ নভেম্বর। এই চাঁদ দেখার সঙ্গে রমজান শুরুর ব্যাপারে পূর্বাভাস পান জ্যোতির্বিদেরা।
২ দিন আগেপ্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জন্য মহান আল্লাহর পরীক্ষা। দুর্যোগের সময় মুমিনের বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে এসেছে। এখানে কয়েকটি করণীয় বিষয় তুলে ধরা হলো—
২ দিন আগে