ড. আলি আস-সাল্লাবি
পবিত্র কোরআনে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন পাখির আলোচনা এসেছে। আল্লাহর নবী সোলায়মান (আ.)-এর রাজত্বকালের হুদহুদ পাখির গল্প সেসবের একটি। গল্পটিতে রয়েছে সংবাদ সংগ্রাহক ও পরিবেশকদের জন্য বিরাট শিক্ষা। হুদহুদের গতি, বুদ্ধিমত্তা, সুষ্ঠু-নির্মোহ সংবাদ সংগ্রহ এবং নিখুঁত উপস্থাপন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যোগাযোগের দক্ষতা ও গতি বিবেচনায় হুদহুদ কবুতরের চেয়ে সেরা। এটি অন্যতম দ্রুতগতির পাখি এবং উড়াল দেওয়ার ক্ষেত্রে তার দলবদ্ধতার প্রয়োজন পড়ে না। আত্মরক্ষার কৌশল ভালোই রপ্ত আছে; ক্ষুধা-তৃষ্ণায় দমে যায় না। বুদ্ধিমত্তা ও ধূর্ততায় তার জুড়ি মেলা ভার। এ কারণেই হয়তো সব প্রাণীর ভাষা জানা সোলায়মান (আ.) হুদহুদকে নিজের সংবাদদাতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
সুরা নামলের ২০ থেকে ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা হুদহুদ পাখির এ ঘটনা তুলে ধরেন। তাতে হুদহুদের সংবাদ সংগ্রহ, উপস্থাপনা ও পরিবেশনশৈলী দেখে মনে হয়, পাখিটি সাধারণ কোনো হুদহুদ ছিল না। বরং বিশেষ গুণ ও ক্ষমতাসম্পন্ন হুদহুদ পাখি ছিল। তার কর্মকাণ্ডে সংবাদকর্মীদের জন্য রয়েছে চমৎকার সব শিক্ষা। এখানে কয়েকটি শিক্ষা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
কৌতূহলোদ্দীপক শিরোনাম
গল্পে আমরা দেখি, কৌতূহলোদ্দীপক ও আকর্ষণীয় শিরোনামে সে কথা শুরু করেছে, যা সাংবাদিকতার জন্য অনন্য শিক্ষা। সে বলেছে, ‘আপনি যে খবর মোটেও জানেন না তা আমি অনুপুঙ্খ জেনে এসেছি এবং সাবা জাতি থেকে সুনিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি।’ সে দ্রুতই চমৎকার এক ভূমিকা দিয়ে কথা শুরু করেছে। ফলে সোলায়মান (আ.) তা শুনতে কৌতূহলী হয়ে পড়েন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।
সাজানো বিষয়কাঠামো
বিষয়কাঠামো গোছালো হওয়ার ব্যাপারে বোদ্ধা সাংবাদিকেরা বেশ জোর দেন। হুদহুদ তা তো করেছেই, সঙ্গে পঞ্চেন্দ্রিয় ও বুদ্ধিমত্তারও প্রয়োগ করেছে। যেমন—সাবার শাসক বিলকিস একজন নারী, তাঁর ও তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে শাসক-শাসিতের সম্পর্ক বিদ্যমান, তিনি সাবা অঞ্চলের একচ্ছত্র অধিপতি এবং তাঁর রাজ্যে প্রয়োজনীয় সবকিছুই আছে ইত্যাদি সে দেখেশুনে বুঝতে পেরেছে। আর শয়তান তাদের সৎপথ থেকে বিরত রেখেছে এবং এ কারণেই তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হচ্ছে না ইত্যাদি কথা তাকে বুদ্ধি খাটিয়েই বের করতে হয়েছে।
গল্পের চরিত্রে বৈচিত্র্য
গল্পের চরিত্রে বৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই গল্পেও বেশ কিছু বৈচিত্র্য আমরা দেখতে পাই। প্রথমে সোলায়মান (আ.) হুদহুদকে সন্ধান করে পান না। আবার হুদহুদ তাঁর সামনে এসে বড় খবরটি দেয়। এরপর সাবার রানির কথার অবতারণা করে। তার সম্প্রদায়ের সূর্যের উপাসনার কথা আলোচনা করে। এভাবে গল্পে বৈচিত্র্য আসে।
অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে সংযম
গল্পে গভীর দৃষ্টি দিলে দেখি, সোলায়মান (আ.) হুদহুদকে অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শন করেছেন। প্রথমে তিনি বললেন, ‘কী ব্যাপার, হুদহুদকে তো দেখছি না।’ এরপর অভিযোগের সুরে বললেন, ‘সে কি অনুপস্থিত?’ এরপর পর্যায়ক্রমে কঠোর শাস্তি থেকে লঘু শাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। কঠিন শাস্তি, এরপর জবাই, এরপর কারণ দর্শিয়ে ক্ষমাপ্রাপ্তির কথা বলেছেন। সুতরাং প্রতিশোধ নয়, সংশোধন ও ক্ষমাই সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।
সংবাদকর্মীর আত্মরক্ষার কৌশল
সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো বিপদের মুখোমুখি হলে তা থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশলও সংবাদকর্মীর জানা থাকা চাই। হুদহুদ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা করেছে। শুরুতেই সে সোলায়মান (আ.)কে
চমকে দিয়ে বলেছে, ‘আপনি যে খবর মোটেও জানেন না, তা আমি অনুপুঙ্খ জেনে এসেছি’। এর মাধ্যমে সে হজরত সোলায়মান (আ.)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তার অনুপস্থিতির যথাযথ কারণ শুনতে বাধ্য করেছে।
মার্জিত শব্দচয়ন
গল্পে হুদহুদ চমৎকার শব্দচয়ন করে কথা বলেছে। আয়াতের ‘আহাততু’ ও ‘নাবা’ শব্দদ্বয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ‘ইহাতা’ ধাতুর অর্থ অনুপুঙ্খ জানা, যেখানে কোনো ফাঁকফোকর নেই। আর ‘নাবা’ শব্দটি আরবিতে অধিক নির্ভরযোগ্য খবরকে বলা হয়। খবর নির্ভরযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে এ রকম শব্দের ভূমিকা ব্যাপক।
ঘটনার চিত্রায়ণ
সংবাদে ঘটনার যথাযথ চিত্রায়ণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সংলাপ, চারপাশের অবস্থার বিবরণ এবং বিভিন্ন সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা গল্পটিকে জীবন্ত করে তুলেছে। হুদহুদ সাবা রাজ্যের জীবন্ত বিবরণ হাজির করল। সোলায়মান (আ.) তাদের জন্য চিন্তিত হলেন এবং তাদের আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য চিঠি দিলেন।
সংক্ষেপে উপস্থাপন
কম শব্দে বেশি কথা বুঝিয়ে দেওয়া এবং বাহুল্য বর্জন করাও একটি দক্ষতা। হুদহুদ তা ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছে। খুব অল্প শব্দে সে বেশ বড় ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে। যেমন সে বলেছে, ‘তাকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে’।
লেখক: লিবিয়ান ইতিহাসবিদ ও ইসলামি চিন্তক
আল জাজিরা আরবি থেকে সংক্ষিপ্ত অনুবাদ: ইজাজুল হক
পবিত্র কোরআনে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন পাখির আলোচনা এসেছে। আল্লাহর নবী সোলায়মান (আ.)-এর রাজত্বকালের হুদহুদ পাখির গল্প সেসবের একটি। গল্পটিতে রয়েছে সংবাদ সংগ্রাহক ও পরিবেশকদের জন্য বিরাট শিক্ষা। হুদহুদের গতি, বুদ্ধিমত্তা, সুষ্ঠু-নির্মোহ সংবাদ সংগ্রহ এবং নিখুঁত উপস্থাপন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যোগাযোগের দক্ষতা ও গতি বিবেচনায় হুদহুদ কবুতরের চেয়ে সেরা। এটি অন্যতম দ্রুতগতির পাখি এবং উড়াল দেওয়ার ক্ষেত্রে তার দলবদ্ধতার প্রয়োজন পড়ে না। আত্মরক্ষার কৌশল ভালোই রপ্ত আছে; ক্ষুধা-তৃষ্ণায় দমে যায় না। বুদ্ধিমত্তা ও ধূর্ততায় তার জুড়ি মেলা ভার। এ কারণেই হয়তো সব প্রাণীর ভাষা জানা সোলায়মান (আ.) হুদহুদকে নিজের সংবাদদাতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
সুরা নামলের ২০ থেকে ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা হুদহুদ পাখির এ ঘটনা তুলে ধরেন। তাতে হুদহুদের সংবাদ সংগ্রহ, উপস্থাপনা ও পরিবেশনশৈলী দেখে মনে হয়, পাখিটি সাধারণ কোনো হুদহুদ ছিল না। বরং বিশেষ গুণ ও ক্ষমতাসম্পন্ন হুদহুদ পাখি ছিল। তার কর্মকাণ্ডে সংবাদকর্মীদের জন্য রয়েছে চমৎকার সব শিক্ষা। এখানে কয়েকটি শিক্ষা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
কৌতূহলোদ্দীপক শিরোনাম
গল্পে আমরা দেখি, কৌতূহলোদ্দীপক ও আকর্ষণীয় শিরোনামে সে কথা শুরু করেছে, যা সাংবাদিকতার জন্য অনন্য শিক্ষা। সে বলেছে, ‘আপনি যে খবর মোটেও জানেন না তা আমি অনুপুঙ্খ জেনে এসেছি এবং সাবা জাতি থেকে সুনিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি।’ সে দ্রুতই চমৎকার এক ভূমিকা দিয়ে কথা শুরু করেছে। ফলে সোলায়মান (আ.) তা শুনতে কৌতূহলী হয়ে পড়েন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।
সাজানো বিষয়কাঠামো
বিষয়কাঠামো গোছালো হওয়ার ব্যাপারে বোদ্ধা সাংবাদিকেরা বেশ জোর দেন। হুদহুদ তা তো করেছেই, সঙ্গে পঞ্চেন্দ্রিয় ও বুদ্ধিমত্তারও প্রয়োগ করেছে। যেমন—সাবার শাসক বিলকিস একজন নারী, তাঁর ও তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে শাসক-শাসিতের সম্পর্ক বিদ্যমান, তিনি সাবা অঞ্চলের একচ্ছত্র অধিপতি এবং তাঁর রাজ্যে প্রয়োজনীয় সবকিছুই আছে ইত্যাদি সে দেখেশুনে বুঝতে পেরেছে। আর শয়তান তাদের সৎপথ থেকে বিরত রেখেছে এবং এ কারণেই তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হচ্ছে না ইত্যাদি কথা তাকে বুদ্ধি খাটিয়েই বের করতে হয়েছে।
গল্পের চরিত্রে বৈচিত্র্য
গল্পের চরিত্রে বৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই গল্পেও বেশ কিছু বৈচিত্র্য আমরা দেখতে পাই। প্রথমে সোলায়মান (আ.) হুদহুদকে সন্ধান করে পান না। আবার হুদহুদ তাঁর সামনে এসে বড় খবরটি দেয়। এরপর সাবার রানির কথার অবতারণা করে। তার সম্প্রদায়ের সূর্যের উপাসনার কথা আলোচনা করে। এভাবে গল্পে বৈচিত্র্য আসে।
অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে সংযম
গল্পে গভীর দৃষ্টি দিলে দেখি, সোলায়মান (আ.) হুদহুদকে অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শন করেছেন। প্রথমে তিনি বললেন, ‘কী ব্যাপার, হুদহুদকে তো দেখছি না।’ এরপর অভিযোগের সুরে বললেন, ‘সে কি অনুপস্থিত?’ এরপর পর্যায়ক্রমে কঠোর শাস্তি থেকে লঘু শাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। কঠিন শাস্তি, এরপর জবাই, এরপর কারণ দর্শিয়ে ক্ষমাপ্রাপ্তির কথা বলেছেন। সুতরাং প্রতিশোধ নয়, সংশোধন ও ক্ষমাই সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।
সংবাদকর্মীর আত্মরক্ষার কৌশল
সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো বিপদের মুখোমুখি হলে তা থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশলও সংবাদকর্মীর জানা থাকা চাই। হুদহুদ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা করেছে। শুরুতেই সে সোলায়মান (আ.)কে
চমকে দিয়ে বলেছে, ‘আপনি যে খবর মোটেও জানেন না, তা আমি অনুপুঙ্খ জেনে এসেছি’। এর মাধ্যমে সে হজরত সোলায়মান (আ.)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তার অনুপস্থিতির যথাযথ কারণ শুনতে বাধ্য করেছে।
মার্জিত শব্দচয়ন
গল্পে হুদহুদ চমৎকার শব্দচয়ন করে কথা বলেছে। আয়াতের ‘আহাততু’ ও ‘নাবা’ শব্দদ্বয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ‘ইহাতা’ ধাতুর অর্থ অনুপুঙ্খ জানা, যেখানে কোনো ফাঁকফোকর নেই। আর ‘নাবা’ শব্দটি আরবিতে অধিক নির্ভরযোগ্য খবরকে বলা হয়। খবর নির্ভরযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে এ রকম শব্দের ভূমিকা ব্যাপক।
ঘটনার চিত্রায়ণ
সংবাদে ঘটনার যথাযথ চিত্রায়ণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সংলাপ, চারপাশের অবস্থার বিবরণ এবং বিভিন্ন সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা গল্পটিকে জীবন্ত করে তুলেছে। হুদহুদ সাবা রাজ্যের জীবন্ত বিবরণ হাজির করল। সোলায়মান (আ.) তাদের জন্য চিন্তিত হলেন এবং তাদের আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য চিঠি দিলেন।
সংক্ষেপে উপস্থাপন
কম শব্দে বেশি কথা বুঝিয়ে দেওয়া এবং বাহুল্য বর্জন করাও একটি দক্ষতা। হুদহুদ তা ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছে। খুব অল্প শব্দে সে বেশ বড় ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে। যেমন সে বলেছে, ‘তাকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে’।
লেখক: লিবিয়ান ইতিহাসবিদ ও ইসলামি চিন্তক
আল জাজিরা আরবি থেকে সংক্ষিপ্ত অনুবাদ: ইজাজুল হক
ভ্রমণের সময় নামাজের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে ইসলাম। কোনো ব্যক্তি নিজের আবাসস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরের কোনো গন্তব্যে ভ্রমণের নিয়তে বের হয়ে তাঁর এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬)
১৫ ঘণ্টা আগেজুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
২ দিন আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
২ দিন আগে