ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক
মাতৃভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা সহজাত। নবী (সা.)-এর জীবনে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আছে। ইসলামের যাবতীয় বিধিবিধান মেনেও যে দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা পোষণ করা সম্ভব, তা তাঁর জীবন থেকে স্পষ্ট। তাঁর জীবন থেকে এখানে এমন চারটি ঘটনা তুলে ধরছি, যাতে পবিত্র ভূমি হিসেবে নয়, বরং মাতৃভূমি ও জন্মভূমি হিসেবেই মক্কার প্রতি নবী (সা.)-এর বিশেষ অনুরাগ প্রমাণিত হয়।
নির্বাসনের আতঙ্ক
হেরা গুহায় সবে কয়েকটি আয়াত নাজিল হয়েছে। ভীত ও জ্বরাক্রান্ত শরীর নিয়ে খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে মহানবী (সা.) এলেন ইঞ্জিল শরিফে অভিজ্ঞ মক্কার বিখ্যাত পণ্ডিত ওয়ারাকা ইবনে নওফলের কাছে। ওয়ারাকা জানালেন, অহির পয়গামের দায়িত্ব পালনের কোনো এক পর্যায়ে অনাগত ভবিষ্যতে জন্মভূমি মক্কা থেকে নির্বাসনে যেতে হবে আপনাকে। এ কথা শুনে সন্ত্রস্ত হৃদয়ে মহানবী (সা.) কেবল একটি প্রশ্নই করেছিলেন, ‘আওয়া মুখরিজিয়্যাহ হুম?’ অর্থাৎ, ‘তারা কি সত্যিই আমাকে বের করে দেবে?’
(বুখারি, আস-সহিহ, হাদিস: ৩)
হাজওয়ারা বাজারের স্মৃতি
সেকালে মক্কার শ্রেষ্ঠ বাজার ছিল হাজওয়ারা। মহানবী (সা.)-এর বিয়ে-শাদির কথা, ব্যবসা-বাণিজ্য, দাওয়াত-তাবলিগসহ দৈনন্দিন ওঠাবসা ছিল এখানেই। হিজরতের সময় কাবা চত্বর পার হয়ে উম্মে হানির বাড়ি অতিক্রম করে ক্রমশ দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে হাজওয়ারায় এসে থেমে গেলেন নবী (সা.)। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আদি ইবনে হামরা (রা.) বলেন, আমি দেখেছি, নবী (সা.) তাঁর উটের পিঠে আরোহিত অবস্থায় হাজওয়ারা নামক স্থানে এসে বলেন, ‘আল্লাহর কসম, তুমি (মক্কা) আল্লাহর গোটা জমিনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং দুনিয়ার সব ভূখণ্ডের মধ্যে তুমি আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম, তোমার কাছ থেকে আমাকে তাড়িয়ে না দিলে আমি (তোমাকে ত্যাগ করে) চলে যেতাম না।’ (ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, হাদিস: ৩১০৮)
মক্কায় ফিরে যাওয়ার আকুতি
মহানবী (সা.)-এর হিজরতের কাফেলা মক্কা ছেড়ে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে জুহফা অতিক্রম করছিল, যেখান থেকে কাফেলা উত্তর দিকে চলতে শুরু করবে। এখানে মহানবী (সা.)-এর হৃদয় মক্কার জন্য এতই উদ্বেল-অস্থির হয়ে উঠেছিল, যার জন্য প্রশস্তির আশ্বাস নেমে আসতে হয়েছে আরশের ওপর থেকে। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা মারফত বার্তা পাঠান, ‘যিনি আপনার জন্য কোরআন (অবতীর্ণ করা) অপরিহার্য করেছেন, তিনি আপনাকে অবশ্যই স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৮৫) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘হিজরতের আট বছর পর আল্লাহর উক্ত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছিল।’ (বুখারি, আস-সহিহ, হাদিস: ৪৪১১)
মক্কার বাড়ির জন্য আক্ষেপ
মক্কায় মহানবী (সা.)-এর জন্মবাড়ি, চাচা আবু তালিবের বাড়ি, স্ত্রী খাদিজার বাড়িসহ তাঁর মোট তিনটি আলাদা বাড়ি ছিল। হিজরতের পর নবী (সা.)-এর চাচাতো ভাই আকিল (রা.) এসব ভোগ করেন এবং পরে তা বিক্রি করে দেন। জীবনের শেষ প্রান্তে বিদায় হজের সময় ছোট্ট সাহাবি ওসামা (রা.) প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি মক্কায় আপনার বাড়িতে অবস্থান করবেন?’ তিনি বললেন, ‘আকিল কি আমাদের জন্য কোনো চারদেয়াল কিংবা কোনো ঘর-বাড়ি অবশিষ্ট রেখেছে?’ (মুসলিম, আস-সহিহ্, হাদিস: ৩১৮৫) নবী (সা.)-এর এই জবাবে সেই স্মৃতিময় ঘরগুলোর জন্য তাঁর বেদনা ও আকুতি ফুটে উঠেছে।
মাতৃভূমি ও মাটির বৈশিষ্ট্য মানুষের মনন ও চরিত্রকে প্রভাবিত করে। অঞ্চলভেদে সমাজ ও সভ্যতায় কিছু বৈশিষ্ট্য অপরিহার্য থাকে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকেও এমন অনেক দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। আরব জীবনবোধ সমুন্নত রাখতে নবী (সা.)-এর অনেক উদ্যোগ হাদিসের গ্রন্থগুলোতে ছড়িয়ে আছে। ফিকহের কিতাবগুলোতে এমন অনেক বিধান আছে, যা স্থান, কাল ও জাতির ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন। তা ছাড়া ‘উরফ’ তথা স্থানীয় প্রচলন ইসলামে একটি অসাধারণ মূলনীতি। সিরাতের একেকটি
ফল্গু যখন একেকটি ভূমিতে বাতি প্রজ্বালন করে, তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়া আলোকসৌন্দর্য বস্তুত মুহাম্মদ
(সা.)-এর আলোকিত জীবনেরই ফল্গুধারা। বাঙালি জাতির বিজয়ের আনন্দ যেন সেই সৌরভেরই মুগ্ধতা। বিজয়ের আনন্দ চিরায়ত হোক।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মাতৃভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা সহজাত। নবী (সা.)-এর জীবনে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আছে। ইসলামের যাবতীয় বিধিবিধান মেনেও যে দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা পোষণ করা সম্ভব, তা তাঁর জীবন থেকে স্পষ্ট। তাঁর জীবন থেকে এখানে এমন চারটি ঘটনা তুলে ধরছি, যাতে পবিত্র ভূমি হিসেবে নয়, বরং মাতৃভূমি ও জন্মভূমি হিসেবেই মক্কার প্রতি নবী (সা.)-এর বিশেষ অনুরাগ প্রমাণিত হয়।
নির্বাসনের আতঙ্ক
হেরা গুহায় সবে কয়েকটি আয়াত নাজিল হয়েছে। ভীত ও জ্বরাক্রান্ত শরীর নিয়ে খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে মহানবী (সা.) এলেন ইঞ্জিল শরিফে অভিজ্ঞ মক্কার বিখ্যাত পণ্ডিত ওয়ারাকা ইবনে নওফলের কাছে। ওয়ারাকা জানালেন, অহির পয়গামের দায়িত্ব পালনের কোনো এক পর্যায়ে অনাগত ভবিষ্যতে জন্মভূমি মক্কা থেকে নির্বাসনে যেতে হবে আপনাকে। এ কথা শুনে সন্ত্রস্ত হৃদয়ে মহানবী (সা.) কেবল একটি প্রশ্নই করেছিলেন, ‘আওয়া মুখরিজিয়্যাহ হুম?’ অর্থাৎ, ‘তারা কি সত্যিই আমাকে বের করে দেবে?’
(বুখারি, আস-সহিহ, হাদিস: ৩)
হাজওয়ারা বাজারের স্মৃতি
সেকালে মক্কার শ্রেষ্ঠ বাজার ছিল হাজওয়ারা। মহানবী (সা.)-এর বিয়ে-শাদির কথা, ব্যবসা-বাণিজ্য, দাওয়াত-তাবলিগসহ দৈনন্দিন ওঠাবসা ছিল এখানেই। হিজরতের সময় কাবা চত্বর পার হয়ে উম্মে হানির বাড়ি অতিক্রম করে ক্রমশ দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে হাজওয়ারায় এসে থেমে গেলেন নবী (সা.)। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আদি ইবনে হামরা (রা.) বলেন, আমি দেখেছি, নবী (সা.) তাঁর উটের পিঠে আরোহিত অবস্থায় হাজওয়ারা নামক স্থানে এসে বলেন, ‘আল্লাহর কসম, তুমি (মক্কা) আল্লাহর গোটা জমিনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং দুনিয়ার সব ভূখণ্ডের মধ্যে তুমি আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম, তোমার কাছ থেকে আমাকে তাড়িয়ে না দিলে আমি (তোমাকে ত্যাগ করে) চলে যেতাম না।’ (ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, হাদিস: ৩১০৮)
মক্কায় ফিরে যাওয়ার আকুতি
মহানবী (সা.)-এর হিজরতের কাফেলা মক্কা ছেড়ে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে জুহফা অতিক্রম করছিল, যেখান থেকে কাফেলা উত্তর দিকে চলতে শুরু করবে। এখানে মহানবী (সা.)-এর হৃদয় মক্কার জন্য এতই উদ্বেল-অস্থির হয়ে উঠেছিল, যার জন্য প্রশস্তির আশ্বাস নেমে আসতে হয়েছে আরশের ওপর থেকে। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা মারফত বার্তা পাঠান, ‘যিনি আপনার জন্য কোরআন (অবতীর্ণ করা) অপরিহার্য করেছেন, তিনি আপনাকে অবশ্যই স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৮৫) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘হিজরতের আট বছর পর আল্লাহর উক্ত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছিল।’ (বুখারি, আস-সহিহ, হাদিস: ৪৪১১)
মক্কার বাড়ির জন্য আক্ষেপ
মক্কায় মহানবী (সা.)-এর জন্মবাড়ি, চাচা আবু তালিবের বাড়ি, স্ত্রী খাদিজার বাড়িসহ তাঁর মোট তিনটি আলাদা বাড়ি ছিল। হিজরতের পর নবী (সা.)-এর চাচাতো ভাই আকিল (রা.) এসব ভোগ করেন এবং পরে তা বিক্রি করে দেন। জীবনের শেষ প্রান্তে বিদায় হজের সময় ছোট্ট সাহাবি ওসামা (রা.) প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি মক্কায় আপনার বাড়িতে অবস্থান করবেন?’ তিনি বললেন, ‘আকিল কি আমাদের জন্য কোনো চারদেয়াল কিংবা কোনো ঘর-বাড়ি অবশিষ্ট রেখেছে?’ (মুসলিম, আস-সহিহ্, হাদিস: ৩১৮৫) নবী (সা.)-এর এই জবাবে সেই স্মৃতিময় ঘরগুলোর জন্য তাঁর বেদনা ও আকুতি ফুটে উঠেছে।
মাতৃভূমি ও মাটির বৈশিষ্ট্য মানুষের মনন ও চরিত্রকে প্রভাবিত করে। অঞ্চলভেদে সমাজ ও সভ্যতায় কিছু বৈশিষ্ট্য অপরিহার্য থাকে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকেও এমন অনেক দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। আরব জীবনবোধ সমুন্নত রাখতে নবী (সা.)-এর অনেক উদ্যোগ হাদিসের গ্রন্থগুলোতে ছড়িয়ে আছে। ফিকহের কিতাবগুলোতে এমন অনেক বিধান আছে, যা স্থান, কাল ও জাতির ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন। তা ছাড়া ‘উরফ’ তথা স্থানীয় প্রচলন ইসলামে একটি অসাধারণ মূলনীতি। সিরাতের একেকটি
ফল্গু যখন একেকটি ভূমিতে বাতি প্রজ্বালন করে, তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়া আলোকসৌন্দর্য বস্তুত মুহাম্মদ
(সা.)-এর আলোকিত জীবনেরই ফল্গুধারা। বাঙালি জাতির বিজয়ের আনন্দ যেন সেই সৌরভেরই মুগ্ধতা। বিজয়ের আনন্দ চিরায়ত হোক।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামের সব বিধানই নবী (সা.) সাহাবিদের সামনে বর্ণনা করতেন। তবে মাঝেমধ্যে কোনো কোনো সাহাবিকে এককভাবে ডেকে বিশেষ কিছু নসিহত করতেন। তেমনই একদিন হজরত আলী (রা.)-কে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নসিহত করলেন। নাসায়ির হাদিসে এসেছে, তিনি আলী (রা.)-কে তিনটি কাজে দেরি না করার নির্দেশ দেন।
১৫ ঘণ্টা আগেহিংসা মানুষের চরিত্রের মন্দ দিক। এটি সমাজকে বিষিয়ে তোলে। পরিবার, সমাজ থেকে নিয়ে সর্বত্র ঘৃণা ও হানাহানির জন্য দায়ী এই হিংসা। তাই এটি পরিহার করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। পরকালে হিংসুকদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। কোরআন-হাদিসে হিংসা পরিহারের ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে।
২ দিন আগেদূরে কোথাও সফরে গেলে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। বিভিন্ন সফরে তিনি স্ত্রীদের মধ্য থেকে একজনকে সঙ্গে নিতেন। হজ-ওমরাহসহ বিভিন্ন যুদ্ধেও স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে গেছেন বলে একাধিক হাদিস থেকে জানা যায়।
৩ দিন আগেসমাজে খুনখারাবি বেড়ে যাওয়া কেয়ামতের আলামত। মহানবী (সা.) খুনখারাবি থেকে দূরে থাকতে উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিস এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কেয়ামত সন্নিকট হবে, আমল কমে যাবে, অন্তরে কৃপণতা ঢেলে দেওয়া হবে এবং হারজ বেড়ে যাবে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হারজ কী?’ তিনি বলেন, ‘হত্যা, হত্যা।’
৪ দিন আগে