Ajker Patrika

শেষ বেলার বৃষ্টিবিলাস

জীবনধারা ডেস্ক
শেষ বেলার বৃষ্টিবিলাস

নীল অপরাজিতার পেলব পাপড়িতে লেগে আছে বৃষ্টিবিন্দু। মেঘলা আকাশের দিকে মুখ বাড়িয়ে নীলাভ ফুলটি হয়তো বলছে, বেশ ভিজিয়ে দিলে তো আমায়!

আষাঢ়ের হিসাব চুকেছে সেই কবে, আর শ্রাবণ? সে তো শেষ বেলায় এসে ঝরছে মুষলধারে। মনে হয়, শ্রাবণের বারিধারা এবার আসন পাততে চলেছে শরতের দুয়ারেও। সাতসকালে সূর্য কখনো আকাশে দেখা দিলেও বর্ষা যেন একেবারেই নাছোড়বান্দা। কখন যে সাদা মেঘে ভর করে তার অতীত অভিমান, বলা যায় না। আর তাতেই শুরু হয় তুমুল তর্জনগর্জন। ঝরে ঝরঝর। বৃষ্টির তীব্রতা কমে গেলেও ইলশেগুঁড়ি পড়ছে তো পড়ছেই। 

বৃষ্টি থামার আগে শ্রাবণ যেন জানালায় লিখে দিয়ে যায় তার বিন্দু বিন্দু জলে লেখা গান। সে কোন গান? ‘এমনও দিনে তারে বলা যায়, এমনও ঘনঘোর বরিষায়।’ নাকি ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে’। এমন বাদল দিনে কিছুতেই যদি মন না লাগে তাহলে কী করবেন বলুন তো? ঝুম বৃষ্টি যদি নেমেই যায় তাহলে জানালায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখবেন? নাকি শুকাতে দেওয়া কাপড় তোলার অজুহাতে প্রিয় শাড়িটি গায়ে জড়িয়ে ছাদে গিয়ে একটু ভিজে আসবেন? সন্ধ্যার নাশতায় ঝটপট কিছু করে ফেলতে পারেন। নাকি ছুটি নিয়ে নৌকাভ্রমণে বের হবেন? হোক না একটু বর্ষা যাপন! 

জিভ আর পেটের জন্য মুচমুচে খাবার থাকুক বৃষ্টিদিনে। ছবি: সংগৃহীতবেরিয়ে পড়ুন নিরুদ্দেশে
বৃষ্টি হবে আর ঘরে বসে থাকবেন, সে কি হয়? তাই বেরিয়ে পড়ুন। ছাতা মাথায় কিংবা রেইনকোট গায়ে। হরেক রকমের ছাতা আর রেইনকোট পাওয়া যায় আজকাল। পছন্দেরটি নিয়েই বেরিয়ে পড়ুন। কারণ রং নাকি মন ভালো করে। বেরিয়ে কী করবেন? সে তো আপনি ঠিক করবেন। ধরুন, ঘন কালো মেঘকে প্রেক্ষাপটে রেখে লাল রঙের একটা ছাতা মাথায় আপনি খোলা মাঠে খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটছেন। সময়ের দিকে খেয়াল না রাখলেই হলো। অথবা ধরুন হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন গলির মাথার দিকে, প্রতিদিন দেখা হলেও যেদিকে যাওয়া হয় না। আর যদি নিজের বাইক থাকে তাহলে তো কথাই নেই। রেইনকোট গায়ে চড়িয়ে, হেলমেট মাথায় গলিয়ে আস্তে ধীরে বাইকে উঠে বসুন। কোনো তাড়াহুড়ো নয়, কোনো নির্দিষ্ট দিকে বা গন্তব্যে নয়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মধ্যম গতিতে বাইক চালাতে থাকুন যতক্ষণ ভালো লাগে। 

আর হ্যাঁ, রিকশা ভ্রমণ। রিকশায় উঠে হুড ফেলে দিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার মজা একেবারেই আলাদা। সেটা যদি হয় ক্যাম্পাস, তার ব্যঞ্জনা হৃদয় ছুঁয়ে যায়! ক্যাম্পাস না হলেও সমস্যা নেই। যেকোনো রাস্তায় উঠে বসুন রিকশায়। তারপর চলতে থাকুন নিরুদ্দেশ। 

জলের ওপর জলের শব্দ—বিষয়টা কেমন বলুন তো? এই বিষয়টার সঙ্গে আপনার যোগাযোগ হতে পারে কেবল নদীতে। আপনার এলাকায় কোনো নদী থাকলে একটি নৌকায় উঠে বসুন। চরাচরে বৃষ্টি ছাড়া যদি কিছুই না থাকে সমস্যা নেই। সেই নিবিড় বৃষ্টিতে শুনতে পারবেন জলের ওপর জল পতনের শব্দ। নৌকা যদি হয় ইঞ্জিন চালিত, কোথাও কিছুক্ষণের জন্য ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন। ব্যাস। 

নদীভ্রমণ হতে পারে বর্ষাযাপনের দারুণ অনুষঙ্গ। ছবি: ভ্রমণকন্যাচোখের সঙ্গে পেটও ভরুক
বৃষ্টির সঙ্গে ক্ষুধার একটা সম্পর্ক রয়েছে, আদিম সম্পর্ক। বৃষ্টি শুরু হলেই বেশির ভাগ মানুষের মনে হয় কিছু একটা খাই। বাইরে থেকে খাবার আনাটা যেমন ঝামেলা তেমন বাইরে গিয়ে খাওয়াটাও একটু কষ্টকর। তাই বৃষ্টির দিনে মন ভালো রাখতে নিজেই হয়ে যান শেফ। 

বৃষ্টি শুরু হলেই বেশির ভাগ মানুষের মাথায় আসে খিচুড়ি খাওয়ার কথা। পছন্দ মতো সেই খিচুড়ি হতে পারে ল্যাটকা কিংবা ভুনা। সঙ্গে হতে পারে মুরগি কিংবা গরুর মাংস ভুনা অথবা ডিম ভাজা, আলু ভর্তা। আর এই মেন্যু কল্পনায় ভাবতে গেলেও যে কাউকে জিভের জল সামলাতে হবে সতর্কভাবে। বৃষ্টি দিনের দুপুর বেলা এই খাবার খেয়ে পাতলা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে ঘুমাতে পারলে গোটা সপ্তাহের ক্লান্তি, মন খারাপ সব কেটে যেতে পারে একবারেই। 

ভারী খাবার খেতে না চাইলে যে কেউই হালকা নাশতা খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন বৃষ্টিদিনের বিকেলবেলাটা। রান্না ঘরে থাকা ডাল, বেসন আর সবজি মিশিয়ে যে পাকোড়া তৈরি হয় তা বৃষ্টির দিনকে আরও একটু চনমনে করে তোলে। হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশে গরম-গরম পেঁয়াজি আর পাকোড়া পেটকে যতটা না উষ্ণতা দেয় তার চেয়ে বেশি শান্তি দেয় মনকে। 

রাস্তার পশুপাখিরাও পাক উষ্ণতা। ছবি: জয়িতা তৃষাবাইরে বৃষ্টি দেখে অনেকেরই ফুচকা খেতে মন চাইতে পারে। মন খারাপ না করে তারা পাপড়ি পুরি বানিয়ে ফেলতে পারেন বাড়িতেই। এর জন্য ঘরে থাকা ময়দা, সুজি, লবণ ও পানি একত্রে মিশিয়ে ভালো করে মাখিয়ে খামির করে নিতে হবে। এরপর বড় করে বেলে কাটার দিয়ে কেটে তেলে ভেজে তুলতে হবে। কাটার ক্ষেত্রে নিজের মন মতো আকৃতিও দিতে পারেন। এবার আলু সেদ্ধ করে ফুচকার মতো পুর দিতে হবে।

পাপড়ি পুরির সঙ্গে খেতে পারেন তেঁতুলের সস। বৃষ্টিদিনের আরামের খাওয়ার সরিষার তেল দিয়ে মুড়ি চানাচুর মাখা। এটা তৈরি করতে কষ্ট কম কিন্তু খেতে দারুণ। সরিষার তেল এবং আদার ঝাঁঝ বৃষ্টির দিনে ঠান্ডা লাগা ভাবটাকে এক নিমেষেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। 

ভিন্ন কিছু হোক
চাইলে বর্ষা উদযাপন করা যায় একটু ভিন্ন ভাবেও। নিজের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া যায় অন্যদের সঙ্গে। কেননা বর্ষা যে সবার জন্যই আনন্দদায়ক হবে এমনটা দাবি করা হয়তো কিছুটা স্বার্থপরতাই হবে। 

মানুষ ছাড়াও গ্রাম কিংবা শহরে বাস করে অসংখ্য প্রাণী। যান্ত্রিক এই শহরে ভারী বৃষ্টিতে দারুণভাবে অসহায় হয়ে পড়ে রাস্তায় বসবাস করা পশুপাখিরা। চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন, ‘ক্ষুধার্ত পশুকে খাবার খাওয়ানো আর নিজের আত্মাকে খাবার খাওয়ানো একই কথা।’ ঝুম বৃষ্টিতে আশ্রয়হীন, ক্ষুধার্ত পশুপাখিকে আশ্রয় ও খাদ্য দিন। এটি আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেবে। 

এমন শাপলা বনে বৃষ্টিপতন আপনার মন ভালো করে দেবে। ছবি: জয়িতা তৃষা টাপুরটুপুর বৃষ্টি পড়লে
বর্ষার একেবারে শেষ। কিন্তু কখনো কখনো চরাচর ছাপিয়ে কোনো খবর না দিয়েই ঝমঝমিয়ে নেমে পড়ছে বৃষ্টি—কখনো সকালবেলা, কখনো দুপুর জুড়ে, কখনো সন্ধ্যাবেলা। এক টানা বৃষ্টির শব্দ আর প্লে লিস্টে বেজে চলা হরি প্রসাদ চৌরাশিয়ার বাঁশি কিংবা জাকির হোসেনের তবলা বা রবিশঙ্করের সেতারের সুর মিলেমিশে একাকার।

বৃষ্টি নূপুর পায়ে গাছেদের পাতায় পাতায় যখন নাচন লাগায়, তখন কার না মন নেচে ওঠে। কে না চায় ছুটি নিতে কাজের জঙ্গল থেকে? মন যে তখন উদাস বাউল, বৃষ্টি তখন তানপুরা। তারে টান লাগাতেই মেতে ওঠে রোজকার যাপন পেরিয়ে ভিন্ন ছন্দে। 

ঝুম বৃষ্টিতে পড়তে পারেন প্রিয় লেখকদের বই। কে আপনার প্রিয় লেখক? শরৎ, হুমায়ূন, সুনীল, শীর্ষেন্দু নাকি জেন অস্টিন, কাহলিল জিব্রান, জীবনানন্দ, শঙ্খ ঘোষ? এক কাপ ধূমায়িত কফি বা চা নিয়ে বসে পড়ুন জানালার ধারে, বৃষ্টির ছাঁট থেকে খানিক দূরে। দেখবেন সময় কেমন কাটে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছাড়েন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা

সৌদি রাষ্ট্রদূতের অভিযোগের ভিত্তিতেই মডেল মেঘনা কারাগারে

মডেল মেঘনার পরিবারের মাধ্যমে সুরাহার চেষ্টা করেছিল পুলিশ

৯ টুকরো লাশ: সবুজকে হেমায়েতপুর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন পলাশ-তৃষা

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি জানা যাবে মাত্র ৮০০ টাকার রক্ত পরীক্ষায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত