তানিয়া ফেরদৌস
পৃথিবীর কোনো কিছুই সোজা নয়। সবকিছুতেই আছে প্যাঁচ। প্যাঁচ আছে বলেই তার পাঁচালি আছে। পাঁচালি আছে বলেই না ঘ্রাণটা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। থাক অত কথা আর না বলি। বলি কী, এই কোরবানির পশুর মাংস রান্না করতে, কাবাব বানাতে যে জিনিসটি আগে দরকার সেটি কী, জানেন? মসলা।
আদা–রসুন–পেঁয়াজ বাটা, কুচি করা পেঁয়াজ, হলুদ–মরিচ–জিরা–ধনে, আস্ত এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা—এই আটপৌরে মাংসের মসলাগুলোর স্বাদ, গন্ধ, আর ব্যবহারের উপযোগিতা আমরা সবাই কম–বেশি জানি। কিন্তু মাংসের বিশেষ পদ তৈরি করতে কিছু বিশিষ্ট মসলাপাতির ব্যবহার রয়েছে, যেগুলোর ফ্লেভার সম্পর্কে সবারই আগ্রহ রয়েছে। বিশেষত স্কুলে পড়া বাংলা ব্যাকরণের প্রায় সমোচ্চারিত শব্দগুলোর মতো কিছু মসলা স্বাদ, গন্ধের দিক থেকে খুবই কাছাকাছি; অথচ একেবারেই আলাদা। সাধে কী আর বলেছিলাম, প্যাঁচ সবখানে আছে। যেমন ধরুন, পেঁয়াজ কুচি করে দিলে এক স্বাদ আবার একটা পেঁয়াজ চার ভাগ করে দিলে পাবেন আরেক স্বাদ। রসুনও গোটা কোয়ার এক স্বাদ, তো একটু থেঁতলে দিলে সেটা বদলে যাবে। সব মসলারই তাই।
জিরা, শাহিজিরা, কালো জিরা আর মিষ্টিজিরা (মৌরি)
আমাদের দেশের রান্নায় জিরার সুগন্ধ না এলে যেন মাংসের পদ পরিপূর্ণতাই পায় না। বীজ জাতীয় মসলা জিরা (cumin) কিন্তু যুগ যুগ ধরে প্রাচীন মিসর, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোতেও খুব গুরুত্বপূর্ণ মাংস রান্নার জন্য। এর এক ধরনের সোঁদা-মেটে ফ্লেভার আছে, যা মাংসের সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে খাপ খেয়ে যায়। আমাদের কোর্মা, রেজালা, ঝাল করে রাঁধা মাংস, কাবাব—সবকিছুতেই জিরার উষ্ণ স্বাদ অপরিহার্য। আবার বিরিয়ানি মসলাতেও জিরা থাকবেই। আস্ত জিরার ফোড়নে মাংসের ঝাল ফ্রাই, কড়াই, দোপিঁয়াজা অন্য মাত্রা পায়। আবার অন্য সব মসলার সঙ্গে জিরা বাটায় কষিয়েই মাংসের ভুনা, কষা, ঝোলের পদ জমে ভালো। এদিকে, টালা বা ভাজা জিরা শেষে ছড়িয়ে মাংসের পদে আনা যায় অনন্য স্বাদ–গন্ধ। বিশেষত খাসি বা ভেড়ার মাংসে এভাবে জিরার ব্যবহার জরুরি।
অন্যদিকে শাহিজিরা বা caraway seeds দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ও দুষ্প্রাপ্য মসলাগুলোর একটি। এটি জিরার চেয়ে কালচে, সরু, মসৃণ একটু বাঁকানো আকৃতির। শাহিজিরা সাধারণত মাংসের পদে আস্ত ফোড়নে বা বিরিয়ানির চাল ভাপাতে বেশি ব্যবহার হয়। আমাদের দেশি রোস্ট, রেজালা, কালিয়া আর কড়াই মাংসেও আস্ত শাহিজিরা ব্যবহার হয়। বেশি দিলে তিতকুটে লাগবে বলে গুঁড়ো শাহিজিরা আবার খুব অল্প পরিমাণে দেওয়া হয় অনেক ইউরোপীয় মাংস রান্নায়। এর উদাহরণ বিফ গোলাশ। এদিকে কিছু কাবাব মসলায় খুব অল্প পরিমাণে শাহিজিরা গুঁড়া দেওয়া হয়। কারণ, বেশি দিলে এর মুলেথি বা লিকরিশ। এর মতো কড়া ফ্লেভার আর কোনো মসলার গন্ধই পাওয়া যাবে না।
কালো জিরা আর কালিজিরা কিন্তু একেবারেই আলাদা। কালো রঙের জিরায় অনেক সময় সাধারণ জিরা মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় ইউরোপের কোনো কোনো দেশে ও তুর্কিস্তানে। সেখানে আমাদের চিরচেনা জিরাকে রোমান কিউমিন বলে। এই কালো রঙের জিরার স্বাদ–গন্ধ জিরার মতোই; তবে কিছুটা মৃদু।
জিরার মতো দেখতে বলে মিষ্টি জিরা নাম দেওয়া হলেও মৌরি (Fennel seeds) একেবারেই আলাদা জগতের মসলা। মৌরির বীজে এক ধরনের মিষ্টি গন্ধ আছে। স্বাদও মিঠে ধাঁচের। আস্ত মৌরির মুখশুদ্ধি হিসেবে যেমন ব্যবহার আছে, তেমনি মালপোয়া বা অন্যান্য মিষ্টান্নে এর তুলনাহীন স্বাদ–গন্ধ মন কেড়ে নেয়। চাইনিজ ফাইভ স্পাইসে যেমন মৌরি গুঁড়া আছে, তেমনি এর আস্ত ব্যবহার হয় পাঁচফোড়নে। তাই মাংসের চাইনিজ পদ বা আচারী মাংসে এই মসলা দিতে হয়। খাসির গেলাসি হোক আর গরুর মেজবানি রান্না—মৌরি বাটা লাগবেই।
এলাচি আর বড় এলাচ
ছোট, সবুজ, ফলসুলভ গন্ধের এলাচি তার সুবাসের জন্য বিখ্যাত পৃথিবীর সবখানে। সব ধরনের মিষ্টান্ন ছাড়াও মাংসের যেকোনো পদেই ছোট এলাচি দিতে হয়। গরম মসলা, কাবাব মসলা বা বিরিয়ানি মসলার ভিত্তি যে ক’টি মসলা, তার একটি এই এলাচি। কোর্মার প্রধান ফ্লেভারটিই এই এলাচির, গেলাসিরও।
এদিকে বড় এলাচ বা কালো এলাচ আসলেই বড়সড় আর কালো রঙের। এর আছে এক গুরুগম্ভীর কর্পূরের মতো গন্ধ। এই মসলা সব সময় আস্ত অবস্থায় বিরিয়ানি, দই দিয়ে তৈরি মাংসের ডিশ, রোগান জোশ ইত্যাদি পদে খুবই অন্যরকম এক স্মোকি ফ্লেভার দেয়।
কালো ও সাদা গোলমরিচ আর কাবাবচিনি
গোলমরিচ বহু যুগ ধরেই পৃথিবীর এ প্রান্তে রান্নায় ঝালের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মাংস রান্নায় এটি ব্যবহার হয়ে আসছে। কালো আর সাদা গোলমরিচ কিন্তু একই গাছের বীজ। ফল পাকতে শুরু করলেই তুলে নিয়ে অক্সিডাইজ বা ভাঁপিয়ে শুকিয়ে নিলে কুঁচকে থাকা ত্বকের কড়া স্বাদের ঝাল ও ঝাঁজালো কালো গোলমরিচ পাওয়া যায়। এই গোলমরিচ বাটায় দক্ষিণী কায়দায় বিফ কারি খুব জনপ্রিয় ভারতে। গরম মসলা, কাবাব মসলায় কালো গোলমরিচ অপরিহার্য।
আবার মসৃণ সাদা গোলমরিচ একই গাছের সুপক্ক ফল। এটি পানিতে ভিজিয়ে আবরণ তুলে ফেলে সাবধানে রোদে শুকিয়ে বানানো হয়। আস্ত সাদা গোলমরিচ মাংসের পদ এবং কাচ্চি বা পাক্কি বিরিয়ানিতে ব্যবহার হয়। এর স্বাদ–গন্ধ খুবই রাজকীয় ও মৃদু ধরনের। মুসাল্লাম, আফগানি পোলাও, উজবেক প্লভ, আরব কাবসা, মান্দি, পার্সি মালাই কোফতা, আমাদের মালাই বা রেশমি কাবাবে এর গুঁড়ো বেশ ব্যবহার হয়। এতে করে ঘি, তেল, চর্বির মধ্যে এক ধরনের চনমনে স্বাদ–গন্ধ আসে ঝালের মাত্রা না বাড়িয়েই এবং রঙে মখমলী ঘিয়ে ভাব রেখেই। আমাদের দেশে কালো আর সাদা গোলমরিচের ব্যবহার বেশি হলেও ছয় ধরনের গোলমরিচের অস্তিত্ব আছে পৃথিবীতে।
কাবাবচিনি কিন্তু একেবারেই আলাদা স্বাদ–গন্ধের মসলা। এর ব্যবহারও বিচিত্র। তারপরও এর আকার–আকৃতির সঙ্গে কালো গোলমরিচের মিল রয়েছে। তবে এর ছোট্ট শুঁড়টির দিকে খেয়াল করলে আর গন্ধ বুঝলে গুলিয়ে যাবে না এ দুটো। এই মসলাটিকে ইংরেজিতে অলস্পাইস বলে। কারণ, এর বিশিষ্ট সুবাসটি লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারুচিনি আর জায়ফলের সম্মিলিত ঘ্রাণের মতো। আরব, তুর্কি আর মরক্কোসহ আফ্রিকার বহু দেশের প্রিয় মাংসের মসলা এই কাবাবচিনি। মাংসের তাজিন, বিভিন্ন কাবাব তৈরি করতে এই মসলার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। দমপোখত বা হান্ডি গোশত–এর আটার বাঁধন খুললে প্রথমেই এই মসলার সুবাস নাকে আলোড়ন জাগায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য টেলে গুঁড়ো করে দিলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়।
রাঁধুনি আর জোয়ান
রাঁধুনি নামের এক ছোট খসখসে দানাবিশিষ্ট মসলা মাংস রান্নায় জাদুকরী ভূমিকা রাখে। একে আঞ্চলিকভাবে এ দেশে কোথাও কোথাও ছোট ধনেও বলে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গরুর মেজবানি মাংসের অতুলনীয় স্বাদ–গন্ধের ব্যাপারে এ মসলার কৃতিত্ব আছে বলে সেখানকার অভিজ্ঞ রন্ধনশিল্পীদের থেকে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে রান্নার শেষ দিকে আলাদা করে জিরা, রাঁধুনি, গরম মসলার মিশ্রণের চূর্ণ দেওয়া হয় নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী। ইংরেজিতে ওয়াইল্ড সেলেরি সিডস বা হিন্দিতে আজমোদা বলে পরিচিত এটি। পাঁচফোড়নেও এর ব্যবহার আছে। মেটে, পাতা গন্ধী—এই আস্ত রাঁধুনির ফোড়ন দিলেও মাংসের ফ্লেভারকে খুলে মেলে ধরে।
জোয়ান বা আজওয়াইন (Carom seeds) আমাদের উপমহাদেশে আস্ত ফোড়ন হিসেবে নিরামিষ খাবারে বেশি ব্যবহার হয়। মধ্যপ্রাচ্যে ও পারসি রান্নায় এর গুঁড়ো মাংসের এক বিশেষ মসলা হিসেবে খুব সমাদৃত। খেয়াল না করলে একে রাঁধুনির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা বেশ সোজা। এটি কিন্তু আস্ত শুকনো ফল, গাছের বীজ নয়। থাইম হার্বের সঙ্গে এর বেশ মিল আছে। আর মসলাটি খুব কম করে ব্যবহার করতে হয়। পেশোয়ারি মাংসের পদে এর লক্ষণীয় ব্যবহার দেখা যায়। আজারবাইজান, ইরান, ইরাক, মধ্যপ্রাচ্যে আস্ত বা বেশ বড় টুকরো করে ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদির মাংস রোস্ট করতে জোয়ানের গুঁড়া খুব ব্যবহার হয়। হজমী গুণের বদৌলতে জোয়ান খুব উপকারী মাংস প্রেমীদের জন্য।
পৃথিবীর কোনো কিছুই সোজা নয়। সবকিছুতেই আছে প্যাঁচ। প্যাঁচ আছে বলেই তার পাঁচালি আছে। পাঁচালি আছে বলেই না ঘ্রাণটা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। থাক অত কথা আর না বলি। বলি কী, এই কোরবানির পশুর মাংস রান্না করতে, কাবাব বানাতে যে জিনিসটি আগে দরকার সেটি কী, জানেন? মসলা।
আদা–রসুন–পেঁয়াজ বাটা, কুচি করা পেঁয়াজ, হলুদ–মরিচ–জিরা–ধনে, আস্ত এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা—এই আটপৌরে মাংসের মসলাগুলোর স্বাদ, গন্ধ, আর ব্যবহারের উপযোগিতা আমরা সবাই কম–বেশি জানি। কিন্তু মাংসের বিশেষ পদ তৈরি করতে কিছু বিশিষ্ট মসলাপাতির ব্যবহার রয়েছে, যেগুলোর ফ্লেভার সম্পর্কে সবারই আগ্রহ রয়েছে। বিশেষত স্কুলে পড়া বাংলা ব্যাকরণের প্রায় সমোচ্চারিত শব্দগুলোর মতো কিছু মসলা স্বাদ, গন্ধের দিক থেকে খুবই কাছাকাছি; অথচ একেবারেই আলাদা। সাধে কী আর বলেছিলাম, প্যাঁচ সবখানে আছে। যেমন ধরুন, পেঁয়াজ কুচি করে দিলে এক স্বাদ আবার একটা পেঁয়াজ চার ভাগ করে দিলে পাবেন আরেক স্বাদ। রসুনও গোটা কোয়ার এক স্বাদ, তো একটু থেঁতলে দিলে সেটা বদলে যাবে। সব মসলারই তাই।
জিরা, শাহিজিরা, কালো জিরা আর মিষ্টিজিরা (মৌরি)
আমাদের দেশের রান্নায় জিরার সুগন্ধ না এলে যেন মাংসের পদ পরিপূর্ণতাই পায় না। বীজ জাতীয় মসলা জিরা (cumin) কিন্তু যুগ যুগ ধরে প্রাচীন মিসর, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোতেও খুব গুরুত্বপূর্ণ মাংস রান্নার জন্য। এর এক ধরনের সোঁদা-মেটে ফ্লেভার আছে, যা মাংসের সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে খাপ খেয়ে যায়। আমাদের কোর্মা, রেজালা, ঝাল করে রাঁধা মাংস, কাবাব—সবকিছুতেই জিরার উষ্ণ স্বাদ অপরিহার্য। আবার বিরিয়ানি মসলাতেও জিরা থাকবেই। আস্ত জিরার ফোড়নে মাংসের ঝাল ফ্রাই, কড়াই, দোপিঁয়াজা অন্য মাত্রা পায়। আবার অন্য সব মসলার সঙ্গে জিরা বাটায় কষিয়েই মাংসের ভুনা, কষা, ঝোলের পদ জমে ভালো। এদিকে, টালা বা ভাজা জিরা শেষে ছড়িয়ে মাংসের পদে আনা যায় অনন্য স্বাদ–গন্ধ। বিশেষত খাসি বা ভেড়ার মাংসে এভাবে জিরার ব্যবহার জরুরি।
অন্যদিকে শাহিজিরা বা caraway seeds দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ও দুষ্প্রাপ্য মসলাগুলোর একটি। এটি জিরার চেয়ে কালচে, সরু, মসৃণ একটু বাঁকানো আকৃতির। শাহিজিরা সাধারণত মাংসের পদে আস্ত ফোড়নে বা বিরিয়ানির চাল ভাপাতে বেশি ব্যবহার হয়। আমাদের দেশি রোস্ট, রেজালা, কালিয়া আর কড়াই মাংসেও আস্ত শাহিজিরা ব্যবহার হয়। বেশি দিলে তিতকুটে লাগবে বলে গুঁড়ো শাহিজিরা আবার খুব অল্প পরিমাণে দেওয়া হয় অনেক ইউরোপীয় মাংস রান্নায়। এর উদাহরণ বিফ গোলাশ। এদিকে কিছু কাবাব মসলায় খুব অল্প পরিমাণে শাহিজিরা গুঁড়া দেওয়া হয়। কারণ, বেশি দিলে এর মুলেথি বা লিকরিশ। এর মতো কড়া ফ্লেভার আর কোনো মসলার গন্ধই পাওয়া যাবে না।
কালো জিরা আর কালিজিরা কিন্তু একেবারেই আলাদা। কালো রঙের জিরায় অনেক সময় সাধারণ জিরা মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় ইউরোপের কোনো কোনো দেশে ও তুর্কিস্তানে। সেখানে আমাদের চিরচেনা জিরাকে রোমান কিউমিন বলে। এই কালো রঙের জিরার স্বাদ–গন্ধ জিরার মতোই; তবে কিছুটা মৃদু।
জিরার মতো দেখতে বলে মিষ্টি জিরা নাম দেওয়া হলেও মৌরি (Fennel seeds) একেবারেই আলাদা জগতের মসলা। মৌরির বীজে এক ধরনের মিষ্টি গন্ধ আছে। স্বাদও মিঠে ধাঁচের। আস্ত মৌরির মুখশুদ্ধি হিসেবে যেমন ব্যবহার আছে, তেমনি মালপোয়া বা অন্যান্য মিষ্টান্নে এর তুলনাহীন স্বাদ–গন্ধ মন কেড়ে নেয়। চাইনিজ ফাইভ স্পাইসে যেমন মৌরি গুঁড়া আছে, তেমনি এর আস্ত ব্যবহার হয় পাঁচফোড়নে। তাই মাংসের চাইনিজ পদ বা আচারী মাংসে এই মসলা দিতে হয়। খাসির গেলাসি হোক আর গরুর মেজবানি রান্না—মৌরি বাটা লাগবেই।
এলাচি আর বড় এলাচ
ছোট, সবুজ, ফলসুলভ গন্ধের এলাচি তার সুবাসের জন্য বিখ্যাত পৃথিবীর সবখানে। সব ধরনের মিষ্টান্ন ছাড়াও মাংসের যেকোনো পদেই ছোট এলাচি দিতে হয়। গরম মসলা, কাবাব মসলা বা বিরিয়ানি মসলার ভিত্তি যে ক’টি মসলা, তার একটি এই এলাচি। কোর্মার প্রধান ফ্লেভারটিই এই এলাচির, গেলাসিরও।
এদিকে বড় এলাচ বা কালো এলাচ আসলেই বড়সড় আর কালো রঙের। এর আছে এক গুরুগম্ভীর কর্পূরের মতো গন্ধ। এই মসলা সব সময় আস্ত অবস্থায় বিরিয়ানি, দই দিয়ে তৈরি মাংসের ডিশ, রোগান জোশ ইত্যাদি পদে খুবই অন্যরকম এক স্মোকি ফ্লেভার দেয়।
কালো ও সাদা গোলমরিচ আর কাবাবচিনি
গোলমরিচ বহু যুগ ধরেই পৃথিবীর এ প্রান্তে রান্নায় ঝালের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মাংস রান্নায় এটি ব্যবহার হয়ে আসছে। কালো আর সাদা গোলমরিচ কিন্তু একই গাছের বীজ। ফল পাকতে শুরু করলেই তুলে নিয়ে অক্সিডাইজ বা ভাঁপিয়ে শুকিয়ে নিলে কুঁচকে থাকা ত্বকের কড়া স্বাদের ঝাল ও ঝাঁজালো কালো গোলমরিচ পাওয়া যায়। এই গোলমরিচ বাটায় দক্ষিণী কায়দায় বিফ কারি খুব জনপ্রিয় ভারতে। গরম মসলা, কাবাব মসলায় কালো গোলমরিচ অপরিহার্য।
আবার মসৃণ সাদা গোলমরিচ একই গাছের সুপক্ক ফল। এটি পানিতে ভিজিয়ে আবরণ তুলে ফেলে সাবধানে রোদে শুকিয়ে বানানো হয়। আস্ত সাদা গোলমরিচ মাংসের পদ এবং কাচ্চি বা পাক্কি বিরিয়ানিতে ব্যবহার হয়। এর স্বাদ–গন্ধ খুবই রাজকীয় ও মৃদু ধরনের। মুসাল্লাম, আফগানি পোলাও, উজবেক প্লভ, আরব কাবসা, মান্দি, পার্সি মালাই কোফতা, আমাদের মালাই বা রেশমি কাবাবে এর গুঁড়ো বেশ ব্যবহার হয়। এতে করে ঘি, তেল, চর্বির মধ্যে এক ধরনের চনমনে স্বাদ–গন্ধ আসে ঝালের মাত্রা না বাড়িয়েই এবং রঙে মখমলী ঘিয়ে ভাব রেখেই। আমাদের দেশে কালো আর সাদা গোলমরিচের ব্যবহার বেশি হলেও ছয় ধরনের গোলমরিচের অস্তিত্ব আছে পৃথিবীতে।
কাবাবচিনি কিন্তু একেবারেই আলাদা স্বাদ–গন্ধের মসলা। এর ব্যবহারও বিচিত্র। তারপরও এর আকার–আকৃতির সঙ্গে কালো গোলমরিচের মিল রয়েছে। তবে এর ছোট্ট শুঁড়টির দিকে খেয়াল করলে আর গন্ধ বুঝলে গুলিয়ে যাবে না এ দুটো। এই মসলাটিকে ইংরেজিতে অলস্পাইস বলে। কারণ, এর বিশিষ্ট সুবাসটি লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারুচিনি আর জায়ফলের সম্মিলিত ঘ্রাণের মতো। আরব, তুর্কি আর মরক্কোসহ আফ্রিকার বহু দেশের প্রিয় মাংসের মসলা এই কাবাবচিনি। মাংসের তাজিন, বিভিন্ন কাবাব তৈরি করতে এই মসলার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। দমপোখত বা হান্ডি গোশত–এর আটার বাঁধন খুললে প্রথমেই এই মসলার সুবাস নাকে আলোড়ন জাগায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য টেলে গুঁড়ো করে দিলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়।
রাঁধুনি আর জোয়ান
রাঁধুনি নামের এক ছোট খসখসে দানাবিশিষ্ট মসলা মাংস রান্নায় জাদুকরী ভূমিকা রাখে। একে আঞ্চলিকভাবে এ দেশে কোথাও কোথাও ছোট ধনেও বলে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গরুর মেজবানি মাংসের অতুলনীয় স্বাদ–গন্ধের ব্যাপারে এ মসলার কৃতিত্ব আছে বলে সেখানকার অভিজ্ঞ রন্ধনশিল্পীদের থেকে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে রান্নার শেষ দিকে আলাদা করে জিরা, রাঁধুনি, গরম মসলার মিশ্রণের চূর্ণ দেওয়া হয় নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী। ইংরেজিতে ওয়াইল্ড সেলেরি সিডস বা হিন্দিতে আজমোদা বলে পরিচিত এটি। পাঁচফোড়নেও এর ব্যবহার আছে। মেটে, পাতা গন্ধী—এই আস্ত রাঁধুনির ফোড়ন দিলেও মাংসের ফ্লেভারকে খুলে মেলে ধরে।
জোয়ান বা আজওয়াইন (Carom seeds) আমাদের উপমহাদেশে আস্ত ফোড়ন হিসেবে নিরামিষ খাবারে বেশি ব্যবহার হয়। মধ্যপ্রাচ্যে ও পারসি রান্নায় এর গুঁড়ো মাংসের এক বিশেষ মসলা হিসেবে খুব সমাদৃত। খেয়াল না করলে একে রাঁধুনির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা বেশ সোজা। এটি কিন্তু আস্ত শুকনো ফল, গাছের বীজ নয়। থাইম হার্বের সঙ্গে এর বেশ মিল আছে। আর মসলাটি খুব কম করে ব্যবহার করতে হয়। পেশোয়ারি মাংসের পদে এর লক্ষণীয় ব্যবহার দেখা যায়। আজারবাইজান, ইরান, ইরাক, মধ্যপ্রাচ্যে আস্ত বা বেশ বড় টুকরো করে ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদির মাংস রোস্ট করতে জোয়ানের গুঁড়া খুব ব্যবহার হয়। হজমী গুণের বদৌলতে জোয়ান খুব উপকারী মাংস প্রেমীদের জন্য।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে