ইশতিয়াক হাসান
গত বছরের আগস্টে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। তার আগে থেকেই অবশ্য ডুরিয়ান নামের ফলটার গল্প শুনেছিলাম। কী শুনেছিলাম? মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যাওয়া ফলটা নাকি ভারি সুস্বাদু। মালয়েশিয়া ভ্রমণের আগে আমার এক সহকর্মী তো আবদারই করে বসলেন তাঁর জন্য গোটা কয়েক ডুরিয়ান নিয়ে আসতে। তবে তখন আমি কেবল ডুরিয়ানের স্বাদের ব্যাপারেই শুনেছিলাম, গন্ধের ব্যাপারে নয়।
তো মালয়েশিয়ায় গিয়ে সেখানে বসবাস করা শালী ডোনা ও ভায়রা সেলিমের সঙ্গে বেড়াতে বের হয়ে প্রথম ডুরিয়ান দেখলাম, গ্যানটিং হাইল্যান্ডে যাওয়ার পথে। রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে, দুজন লোক বিক্রি করছিলেন। আমাদের গাড়িটা সমস্যা করছিল, তাই থামাতে হয়েছিল সেখানে। পাশেই উঁচু গাছের সারি। সেখানে বানরের হট্টগোল ছিল অনেক। আমার মনোযোগ ছিল তাই শুরুতে সেদিকেই। তারপরই সেলিম বলল, ভাই ডুরিয়ান খাবেন? ডোনাও বলে উঠল অনেক মজা, চলেন খাই।
গাড়িটার দিকে দৃষ্টি দিলাম। দেখলাম মোটামুটি নির্জন জায়গা হলেও এর সামনে বেশ ভিড় জমে গেছে, ডুরিয়ান কিনতে। মালয়েশিয়ার পুলিশদের একটি গাড়িও দাঁড়িয়ে গেছে সেখানে। পুলিশ সদস্যরাও ডুরিয়ান কিনে মহানন্দে খেতে শুরু করলেন। দাম জিজ্ঞেস করলাম। দোকানি জানাল, কেজি ষাট রিংগিত, মানে আমাদের দেশের টাকায় ১৪০০ টাকা। ভাবলাম এতো দাম! তা ছাড়া ডুরিয়ানদের কাঁটাময় শরীর দেখে আমার কাঁঠালের কথা মনে পড়ে গেল, যদিও ডুরিয়ানরা আকারে অনেক ছোট।
সমস্যা হলো, কাঁঠাল পুনমের খুব প্রিয় কিন্তু আমার ফল হিসেবে অপছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে। তাই সব মিলিয়ে ডোনাদের চাপাচাপির পরও খেতে চাইলাম না। এর মধ্যে আমাদের গাড়ির সমস্যা মিটে গেছে। তাই ডুরিয়ানের গাড়ি পেছনে ফেলে রওনা দিলাম গ্যানটিং হাইল্যান্ডের দিকে।
আর আগে বাড়ার আগে বরং ডুরিয়ান নিয়ে কয়েকটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক। এগুলো অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে সংগ্রহ করা। ডুরিয়ান ফলটির উৎপত্তি যদ্দুর জানা যায় বোর্নিও ও সুমাত্রা দ্বীপে। বোর্নিও মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া দুই দেশেই পড়েছে, আর সুমাত্রার মালিক কেবল ইন্দোনেশিয়া। এখন অবশ্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই পাবেন ফলটি।
ডুরিয়ানের ৩০টি জাতের খবর মিলেছে এখন পর্যন্ত। এর মধ্যে খাওয়ার যোগ্য ১০-১১ টি। তবে দুনিয়াজুড়ে এখন ৫০০ ভ্যারাইটি বা ধরনের ডুরিয়ান ফল পাবেন। মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ায় আছে ১০০ ধরনের ডুরিয়ান। আর সবচেয়ে বেশি ডুরিয়ান রপ্তানি করা দেশ থাইল্যান্ডে ডুরিয়ানের শ তিনেক ধরন পাবেন। আকারে সাধারণ ছয় থেকে আট ইঞ্চি লম্বা। চওড়ায় অর্ধেক। তবে এক ফুটি ডুরিয়ানও আছে। ওজন মোটামুটি আধ কেজি থেকে তিন কেজি।
এমনিকে ডুরিয়ান তার কাঁটার জন্য মশহুর হলেও কাঁটাছাড়া জাতও আছে এদের। ডুরিয়ানের বীজও খেতে পারবেন, তবে রান্না করে। মুছাং কিং আর ব্ল্যাক থর্ন হলো মালয়েশিয়ায় পাওয়া ডুরিয়ানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড কানিয়ায়ো ডুরিয়ানের, থাইল্যান্ডের এ ধরনটি সেখানকার কিং অব ডুরিয়ান উৎসবে নিলামে বিক্রি হয় আমাদের টাকায় ৫০ লাখে। আর ডুরিয়ান গাছ দেড় শ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, বাঁচতে পারে ১৫০ বছর পর্যন্ত। ডুরিয়ান নামটি এসেছে মালয় শব্দ ‘ডুরি’ থেকে। যার অর্থ কাঁটা। সম্ভবত ষোলো শতকের শেষ দিকে শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়।
অনেক তথ্য দেওয়া হয়ে গেছে, এবার বরং মালয়েশিয়ায় ডুরিয়ান দেখার গল্পে ফেরা যাক। গাছে প্রথম ডুরিয়ান দেখলাম পরদিন ক্যামেরন হাইল্যান্ডে যাওয়ার পথে। গাড়ি ছুটছিল পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে। এক পাশে পাহাড়, অপর পাশে খাদ। একটা জায়গায় এসে গাড়ি দাঁড় করাল সেলিম। এখানে দাঁড়িয়ে বেশ কতকটা সময় পাহাড় দেখলাম, তার গায়ে লেগে থাকা মেঘেদের দেখলাম, রাস্তা দিয়ে তুমুল বেগে ছুটে চলা গাড়িদের দেখলাম। আর তখনই নজর কাড়ল আমাদের ঠিক সামনেই কয়েকটা গাছে ঝুলে থাকা ডুরিয়ানেরা। এর মধ্যে একটা গাছের ডালগুলোতে এতো এতো ডুরিয়ান ঝুলে আছে যে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। এমনকি ডুরিয়ান দেখে অভ্যস্ত সেলিম আর ডোনাও বলল এক গাছে এতো ডুরিয়ান ওরা আগে আর দেখেনি।
পথেঘাটে এরপর মালয়েশিয়ায় আরও অনেক বার ডুরিয়ান পেলেও চেখে দেখা হচ্ছিল না। এর মধ্যে পেনাংয়ে এক হোটেলে ওঠে দেখলাম, সেখানে লেখা ডুরিয়ান নিয়ে হোটেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেলিম বলল ডুরিয়ানের তীব্র গন্ধ অনেকের সহ্য হয় না। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখি পৃথিবীর অনেক এয়ারলাইনসই ডুরিয়ান নিয়ে উড়োজাহাজে ওঠা নিষিদ্ধ করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অনেক হোটেলেই ডুরিয়ান নেওয়া মানা। এর কারণ হিসেবে সব জায়গায় ডুরিয়ানের অদ্ভুত, তীব্র গন্ধর কথাই বলা হয়েছে। কিছু লোক এমনকি এর গন্ধকে পচা পেঁয়াজ, বাসি মোজার গন্ধের সঙ্গেও তুলনা করেছেন।
কিন্তু ডুরিয়ানের এমন তীব্র গন্ধের কারণ কী? একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা ডুরিয়ানের তীব্র গন্ধের জন্য ৪৪টি ভিন্ন গন্ধ-উৎপাদক রাসায়নিক যৌগকে দায়ী করেছে। প্রতিবেদনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্যগুলির মধ্যে একটি হলো, ৪৪টির মধ্যে তিনটি যৌগকে এই প্রথমবারের মতো প্রথম প্রাকৃতিক কোনো পণ্য বা খাবারে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তাই ডুরিয়ানের গন্ধ এত অনন্য, এর মতো আর কিছুই নেই!
অর্থাৎ এটি কোনো একটি যৌগ নয় যার ফলে ডুরিয়ান এমন ভয়ানক গন্ধ পাওয়া যায়, এটি তাদের সবার সংমিশ্রণ। গবেষকেরা ডুরিয়ানে শনাক্ত করা প্রতিটি গন্ধ উৎপাদক যৌগের বর্ণনা করেছেন। এগুলো পাবেন আমাদের পরিচিত যেসব জিনিসের সেগুলোর মধ্যে আছে মধু, ভাজা পেঁয়াজ, সালফার, ক্যারামেল, পচা ডিম, পচা বাঁধাকপি ইত্যাদি।
তবে ডুরিয়ানের এতো-সব কিছু তখনো আমি জানি না। কিন্তু হোটেলের এই লেখা আর সেলিমের মুখে ফলটির তীব্র গন্ধের কথা শুনে ডুরিয়ানের প্রতি আগ্রহটা আরও কমল। তবে শেষ পর্যন্ত ডুরিয়ান খাওয়া থেকে নিস্তার পেলাম না।
কুয়ালালামপুর থকে গিয়েছিলাম পোর্ট ডিকসনে। সেখানে রাস্তার পাশে এক লোক বিক্রি করছিলেন ডুরিয়ান। আমরা সেখানে গাড়ি থেকে নামতেই তাঁর মুখোমুখি। এবার সেলিম-ডোনা আমাদের ডুরিয়ান খাওয়াবেই। সেলিম মনের খুশিতে ৮ কেজি কিনে ফেলল। নিজেদেরও পছন্দ, আবার অতিথিদেরও আচ্ছাসে খাওয়াবে, এটাই মনের সাধ।
তবে খেতে গিয়েই আমি বুঝতে পারলাম, হোটেলের ওই সাবধানবানীর মর্মার্থ। প্রচণ্ড গন্ধে আমার মাথা ঘুরছে বো বো করে। ওদের খুশি করতে খুব কষ্ট করে ২-৩ কোষ গিললাম। কাঁঠালপ্রেমী পুনমও ডুরিয়ান খেয়ে ধরা! ওয়াফিকাসহ বাংলাদেশ থেকে আমাদের সঙ্গে যাওয়া শাশুড়ি-খালা শাশুড়ির একই অবস্থা। কিন্তু সেলিম-ডোনা খেয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। তবে আশ্চর্য ব্যাপার হলো এর গন্ধকে নির্দিষ্ট কোনো কিছুর সঙ্গে একে আমি মেলাতে পারছিলাম না। এটাকে মোটেই দুর্গন্ধও মনে হয়নি, শুধু মনে হয়েছে সর্বগ্রাসী এক গন্ধ, যেটা সহ্য করা মুশকিল।
পরের ইতিহাস আরও করুণ। তবে তা বলার আগে ডুরিয়ানের ভালো কিছু দিক তুলে ধরা যাক। এর তীব্র গন্ধের জন্য যতই অপছন্দ করেন না কেন গবেষকেরা এর মধ্যে উপকারী অনেক কিছুই খুঁজে পেয়েছেন। ভিটামিনের বি ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এটি। তেমনি পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজের উপস্থিতির কারণে ফলটি খেলে যে উপকৃত হবেন সন্দেহ নেই। এ ছাড়াও, ডুরিয়ানে পাওয়া যায় অ্যান্থোসিনানিন, ক্যারোটেনোয়ড, পরিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়ডের মতো উপাদান। এগুলোর কোনো কোনোটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
মূল গল্পে ফিরে আসি। খাওয়ার পর থেকে যাওয়া ডুরিয়ানগুলো তোলা হলো সেলিমের গাড়িতে। পরের দুই দিন গাড়িতে যেখানেই গিয়েছি সঙ্গী ছিল ডুরিয়ানের প্রবল গন্ধ, এমনকি ডুরিয়ান গাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরও। আর আমার মাথা ঘুরেছে বো বো করে! আমি এখনো ভাবি এমন সর্বগ্রাসী গন্ধ কী আর কোনো ফলের আছে? আর বুঝতেই পারছেন আমার সেই সহকর্মী যে কিনা ডুরিয়ান নিয়ে আসতে বলেছিলেন তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড় আর কিছুই করার ছিল না।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য স্মার্ট লোকাল মালয়েশিয়া, হ্যালথলাইন ডট কম, দ্য সান
গত বছরের আগস্টে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। তার আগে থেকেই অবশ্য ডুরিয়ান নামের ফলটার গল্প শুনেছিলাম। কী শুনেছিলাম? মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যাওয়া ফলটা নাকি ভারি সুস্বাদু। মালয়েশিয়া ভ্রমণের আগে আমার এক সহকর্মী তো আবদারই করে বসলেন তাঁর জন্য গোটা কয়েক ডুরিয়ান নিয়ে আসতে। তবে তখন আমি কেবল ডুরিয়ানের স্বাদের ব্যাপারেই শুনেছিলাম, গন্ধের ব্যাপারে নয়।
তো মালয়েশিয়ায় গিয়ে সেখানে বসবাস করা শালী ডোনা ও ভায়রা সেলিমের সঙ্গে বেড়াতে বের হয়ে প্রথম ডুরিয়ান দেখলাম, গ্যানটিং হাইল্যান্ডে যাওয়ার পথে। রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে, দুজন লোক বিক্রি করছিলেন। আমাদের গাড়িটা সমস্যা করছিল, তাই থামাতে হয়েছিল সেখানে। পাশেই উঁচু গাছের সারি। সেখানে বানরের হট্টগোল ছিল অনেক। আমার মনোযোগ ছিল তাই শুরুতে সেদিকেই। তারপরই সেলিম বলল, ভাই ডুরিয়ান খাবেন? ডোনাও বলে উঠল অনেক মজা, চলেন খাই।
গাড়িটার দিকে দৃষ্টি দিলাম। দেখলাম মোটামুটি নির্জন জায়গা হলেও এর সামনে বেশ ভিড় জমে গেছে, ডুরিয়ান কিনতে। মালয়েশিয়ার পুলিশদের একটি গাড়িও দাঁড়িয়ে গেছে সেখানে। পুলিশ সদস্যরাও ডুরিয়ান কিনে মহানন্দে খেতে শুরু করলেন। দাম জিজ্ঞেস করলাম। দোকানি জানাল, কেজি ষাট রিংগিত, মানে আমাদের দেশের টাকায় ১৪০০ টাকা। ভাবলাম এতো দাম! তা ছাড়া ডুরিয়ানদের কাঁটাময় শরীর দেখে আমার কাঁঠালের কথা মনে পড়ে গেল, যদিও ডুরিয়ানরা আকারে অনেক ছোট।
সমস্যা হলো, কাঁঠাল পুনমের খুব প্রিয় কিন্তু আমার ফল হিসেবে অপছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে। তাই সব মিলিয়ে ডোনাদের চাপাচাপির পরও খেতে চাইলাম না। এর মধ্যে আমাদের গাড়ির সমস্যা মিটে গেছে। তাই ডুরিয়ানের গাড়ি পেছনে ফেলে রওনা দিলাম গ্যানটিং হাইল্যান্ডের দিকে।
আর আগে বাড়ার আগে বরং ডুরিয়ান নিয়ে কয়েকটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক। এগুলো অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে সংগ্রহ করা। ডুরিয়ান ফলটির উৎপত্তি যদ্দুর জানা যায় বোর্নিও ও সুমাত্রা দ্বীপে। বোর্নিও মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া দুই দেশেই পড়েছে, আর সুমাত্রার মালিক কেবল ইন্দোনেশিয়া। এখন অবশ্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই পাবেন ফলটি।
ডুরিয়ানের ৩০টি জাতের খবর মিলেছে এখন পর্যন্ত। এর মধ্যে খাওয়ার যোগ্য ১০-১১ টি। তবে দুনিয়াজুড়ে এখন ৫০০ ভ্যারাইটি বা ধরনের ডুরিয়ান ফল পাবেন। মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ায় আছে ১০০ ধরনের ডুরিয়ান। আর সবচেয়ে বেশি ডুরিয়ান রপ্তানি করা দেশ থাইল্যান্ডে ডুরিয়ানের শ তিনেক ধরন পাবেন। আকারে সাধারণ ছয় থেকে আট ইঞ্চি লম্বা। চওড়ায় অর্ধেক। তবে এক ফুটি ডুরিয়ানও আছে। ওজন মোটামুটি আধ কেজি থেকে তিন কেজি।
এমনিকে ডুরিয়ান তার কাঁটার জন্য মশহুর হলেও কাঁটাছাড়া জাতও আছে এদের। ডুরিয়ানের বীজও খেতে পারবেন, তবে রান্না করে। মুছাং কিং আর ব্ল্যাক থর্ন হলো মালয়েশিয়ায় পাওয়া ডুরিয়ানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড কানিয়ায়ো ডুরিয়ানের, থাইল্যান্ডের এ ধরনটি সেখানকার কিং অব ডুরিয়ান উৎসবে নিলামে বিক্রি হয় আমাদের টাকায় ৫০ লাখে। আর ডুরিয়ান গাছ দেড় শ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, বাঁচতে পারে ১৫০ বছর পর্যন্ত। ডুরিয়ান নামটি এসেছে মালয় শব্দ ‘ডুরি’ থেকে। যার অর্থ কাঁটা। সম্ভবত ষোলো শতকের শেষ দিকে শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়।
অনেক তথ্য দেওয়া হয়ে গেছে, এবার বরং মালয়েশিয়ায় ডুরিয়ান দেখার গল্পে ফেরা যাক। গাছে প্রথম ডুরিয়ান দেখলাম পরদিন ক্যামেরন হাইল্যান্ডে যাওয়ার পথে। গাড়ি ছুটছিল পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে। এক পাশে পাহাড়, অপর পাশে খাদ। একটা জায়গায় এসে গাড়ি দাঁড় করাল সেলিম। এখানে দাঁড়িয়ে বেশ কতকটা সময় পাহাড় দেখলাম, তার গায়ে লেগে থাকা মেঘেদের দেখলাম, রাস্তা দিয়ে তুমুল বেগে ছুটে চলা গাড়িদের দেখলাম। আর তখনই নজর কাড়ল আমাদের ঠিক সামনেই কয়েকটা গাছে ঝুলে থাকা ডুরিয়ানেরা। এর মধ্যে একটা গাছের ডালগুলোতে এতো এতো ডুরিয়ান ঝুলে আছে যে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। এমনকি ডুরিয়ান দেখে অভ্যস্ত সেলিম আর ডোনাও বলল এক গাছে এতো ডুরিয়ান ওরা আগে আর দেখেনি।
পথেঘাটে এরপর মালয়েশিয়ায় আরও অনেক বার ডুরিয়ান পেলেও চেখে দেখা হচ্ছিল না। এর মধ্যে পেনাংয়ে এক হোটেলে ওঠে দেখলাম, সেখানে লেখা ডুরিয়ান নিয়ে হোটেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেলিম বলল ডুরিয়ানের তীব্র গন্ধ অনেকের সহ্য হয় না। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখি পৃথিবীর অনেক এয়ারলাইনসই ডুরিয়ান নিয়ে উড়োজাহাজে ওঠা নিষিদ্ধ করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অনেক হোটেলেই ডুরিয়ান নেওয়া মানা। এর কারণ হিসেবে সব জায়গায় ডুরিয়ানের অদ্ভুত, তীব্র গন্ধর কথাই বলা হয়েছে। কিছু লোক এমনকি এর গন্ধকে পচা পেঁয়াজ, বাসি মোজার গন্ধের সঙ্গেও তুলনা করেছেন।
কিন্তু ডুরিয়ানের এমন তীব্র গন্ধের কারণ কী? একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা ডুরিয়ানের তীব্র গন্ধের জন্য ৪৪টি ভিন্ন গন্ধ-উৎপাদক রাসায়নিক যৌগকে দায়ী করেছে। প্রতিবেদনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্যগুলির মধ্যে একটি হলো, ৪৪টির মধ্যে তিনটি যৌগকে এই প্রথমবারের মতো প্রথম প্রাকৃতিক কোনো পণ্য বা খাবারে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তাই ডুরিয়ানের গন্ধ এত অনন্য, এর মতো আর কিছুই নেই!
অর্থাৎ এটি কোনো একটি যৌগ নয় যার ফলে ডুরিয়ান এমন ভয়ানক গন্ধ পাওয়া যায়, এটি তাদের সবার সংমিশ্রণ। গবেষকেরা ডুরিয়ানে শনাক্ত করা প্রতিটি গন্ধ উৎপাদক যৌগের বর্ণনা করেছেন। এগুলো পাবেন আমাদের পরিচিত যেসব জিনিসের সেগুলোর মধ্যে আছে মধু, ভাজা পেঁয়াজ, সালফার, ক্যারামেল, পচা ডিম, পচা বাঁধাকপি ইত্যাদি।
তবে ডুরিয়ানের এতো-সব কিছু তখনো আমি জানি না। কিন্তু হোটেলের এই লেখা আর সেলিমের মুখে ফলটির তীব্র গন্ধের কথা শুনে ডুরিয়ানের প্রতি আগ্রহটা আরও কমল। তবে শেষ পর্যন্ত ডুরিয়ান খাওয়া থেকে নিস্তার পেলাম না।
কুয়ালালামপুর থকে গিয়েছিলাম পোর্ট ডিকসনে। সেখানে রাস্তার পাশে এক লোক বিক্রি করছিলেন ডুরিয়ান। আমরা সেখানে গাড়ি থেকে নামতেই তাঁর মুখোমুখি। এবার সেলিম-ডোনা আমাদের ডুরিয়ান খাওয়াবেই। সেলিম মনের খুশিতে ৮ কেজি কিনে ফেলল। নিজেদেরও পছন্দ, আবার অতিথিদেরও আচ্ছাসে খাওয়াবে, এটাই মনের সাধ।
তবে খেতে গিয়েই আমি বুঝতে পারলাম, হোটেলের ওই সাবধানবানীর মর্মার্থ। প্রচণ্ড গন্ধে আমার মাথা ঘুরছে বো বো করে। ওদের খুশি করতে খুব কষ্ট করে ২-৩ কোষ গিললাম। কাঁঠালপ্রেমী পুনমও ডুরিয়ান খেয়ে ধরা! ওয়াফিকাসহ বাংলাদেশ থেকে আমাদের সঙ্গে যাওয়া শাশুড়ি-খালা শাশুড়ির একই অবস্থা। কিন্তু সেলিম-ডোনা খেয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। তবে আশ্চর্য ব্যাপার হলো এর গন্ধকে নির্দিষ্ট কোনো কিছুর সঙ্গে একে আমি মেলাতে পারছিলাম না। এটাকে মোটেই দুর্গন্ধও মনে হয়নি, শুধু মনে হয়েছে সর্বগ্রাসী এক গন্ধ, যেটা সহ্য করা মুশকিল।
পরের ইতিহাস আরও করুণ। তবে তা বলার আগে ডুরিয়ানের ভালো কিছু দিক তুলে ধরা যাক। এর তীব্র গন্ধের জন্য যতই অপছন্দ করেন না কেন গবেষকেরা এর মধ্যে উপকারী অনেক কিছুই খুঁজে পেয়েছেন। ভিটামিনের বি ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এটি। তেমনি পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজের উপস্থিতির কারণে ফলটি খেলে যে উপকৃত হবেন সন্দেহ নেই। এ ছাড়াও, ডুরিয়ানে পাওয়া যায় অ্যান্থোসিনানিন, ক্যারোটেনোয়ড, পরিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়ডের মতো উপাদান। এগুলোর কোনো কোনোটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
মূল গল্পে ফিরে আসি। খাওয়ার পর থেকে যাওয়া ডুরিয়ানগুলো তোলা হলো সেলিমের গাড়িতে। পরের দুই দিন গাড়িতে যেখানেই গিয়েছি সঙ্গী ছিল ডুরিয়ানের প্রবল গন্ধ, এমনকি ডুরিয়ান গাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরও। আর আমার মাথা ঘুরেছে বো বো করে! আমি এখনো ভাবি এমন সর্বগ্রাসী গন্ধ কী আর কোনো ফলের আছে? আর বুঝতেই পারছেন আমার সেই সহকর্মী যে কিনা ডুরিয়ান নিয়ে আসতে বলেছিলেন তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড় আর কিছুই করার ছিল না।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য স্মার্ট লোকাল মালয়েশিয়া, হ্যালথলাইন ডট কম, দ্য সান
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে