মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ, (মৌলভীবাজার)
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়। সেই সূত্রে দেশটির সঙ্গে ছিল এ বাড়ির যোগাযোগ। শুধু ইরানের রাজা নন, এ বাড়ির অতিথিশালায় আতিথেয়তা নিয়েছিলেন ত্রিপুরার মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য বাহাদুর। আর ইংরেজ আমলে বহু অফিসার ও ব্যবসায়ী এ বাড়িতে থেকেছিলেন বিভিন্ন কারণে।
এসব কারণেই পৃথিমপাশা জমিদারবাড়ি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়েছে অনেক গালগল্প। তার কিছু সত্য আর কিছু কল্পনার মিশেলে ভরপুর। পৃথিবীতে এখন জমিদার না থাকলেও লিখিত কিংবা মৌখিক ইতিহাসে আছে তাঁদের কথা। আর তাঁদের স্মৃতি পড়ে রয়েছে পুরো দেশের বিভিন্ন জনপদে। তেমনি এক জনপদ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া। সেখানেই এই বিখ্যাত পৃথিমপাশা জমিদারবাড়ি। কয়েক শ বছরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে এ বাড়িটির সঙ্গে। এটি পৃথিমপাশা নবাববাড়ি নামেও পরিচিত। জমিদারি আমলের স্মৃতি আর নানা গালগল্প নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ ঐতিহাসিক বাড়িটি এখন কুলাউড়ার দর্শনীয় জায়গা। এ পর্যটন মৌসুমে একবার ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।
প্রায় ৩৫ একর জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এ জমিদারবাড়ি। এখনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বাড়ির চৌহদ্দিতে রয়েছে বিশাল দিঘি, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, বৈঠকখানা ও ইমামবাড়া। কারুকাজখচিত এ জমিদারবাড়ির সদস্যরা শিয়া মতাবলম্বী। নবাব আলী আমজাদ খান এ বাড়ির ইমামবাড়া প্রতিষ্ঠা করেন। একে কেন্দ্র করে প্রতিবছর মহররমের অনুষ্ঠান হয়। জমিদারবাড়ির মসজিদে এখনো প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করা হয়।
বিশাল এ বাড়িটি এখন দেখাশোনা করেন নবাব আলী আমজাদ খানের উত্তরসূরিরা। পৃথিমপাশার সাদা রঙের এ বাড়ি দেখে বোঝার উপায় নেই এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েক শ বছরের ইতিহাস। বাড়ির ভেতর দিঘির একপাশে রয়েছে জমিদারদের কবরস্থান।
জমিদারবাড়ির ইতিহাস
১৪৯৯ সালে মোগল সম্রাট আকবরের সময়কালে ইরান থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে আসেন সাকি সালামত খান। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে তাঁর ছেলে ইসমাইল খান লোদি আসেন পৃথিমপাশায়। তিনি ছিলেন ওডিশার গভর্নর। ইসমাইল খানের ছেলে শামসুদ্দিন খান। তাঁর ছেলে রবি খানের নামে ১৭৫৬ সালে রবিরবাজার নামে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। রবি খানের ছেলে মোহাম্মদ আলী খান। তিনি ১৭৯২ সালে ইংরেজ শাসকদের পক্ষে নওগাঁ কুকি বিদ্রোহ দমনে ভূমিকা রেখেছিলেন। ইংরেজ সরকার আলী খানের ছেলে গাউস আলী খানকে উপহার হিসেবে ১ হাজার ২০০ হাল বা ১৪ হাজার ৪০০ বিঘা জমি দান করে। এই বিপুল ভূসম্পত্তি এ পরিবারকে আরও সম্পদশালী করে তোলে। গাউস আলী খানের ছেলে আলী আহমদ খান। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন সিলেটের কাজি বা বিচারক। তাঁর সময়ে জমিদারির রাজস্ব বেড়ে যায় এবং তিনি ব্রিটিশ আনুকূল্য লাভ করেন।
নবাব আলী আহমদ খানের ছেলে নবাব আলী আমজাদ খান ছিলেন বৃহত্তর সিলেটের একজন প্রভাবশালী জমিদার। সিলেটের বিখ্যাত সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি সমাজসেবায় তাঁর অন্যতম কীর্তি। জমিদারবাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখতে আলী আমজাদ খান মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আলী আমজাদ খানের দুই ছেলে—আলী হায়দার খান ও আলী আজগর খান। আলী আজগর খানের ছেলে আলী ইয়াওয়ার খান।
সিলেট শহরের প্রতীক হয়ে আছে কিন ব্রিজ আর ঘড়িঘর। ১৮৭৪ সালে যখন ঘড়ির তেমন প্রচলন ছিল না, সে সময় এ শহরের প্রবেশদ্বারে কিন ব্রিজের ডান দিকে সুরমা নদীর তীরে এই ঘড়িঘর নির্মাণ করেন আলী আহমদ খান। এর নাম রাখেন ছেলে আলী আমজাদের নামে। এ কারণেই এটি আলী আমজাদের ঘড়ি নামে পরিচিত।
আলী আমজাদ খানের পুত্র নবাব আলী হায়দার খান ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। পৃথিমপাশা জমিদার পরিবারের সন্তান নবাব আলী সারওয়ার খান, নবাব আলী আব্বাস খান প্রমুখও ছিলেন দেশের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ট্রেনযোগে কুলাউড়া যাওয়া যায়। রেলস্টেশন থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পৃথিমপাশা জমিদারবাড়ি যাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাসে করে দেশের যেকোনো স্থান থেকে মৌলভীবাজার শহরে নেমে লোকাল বাস বা অটোরিকশায় করেও যাওয়া যায় পৃথিমপাশা।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়। সেই সূত্রে দেশটির সঙ্গে ছিল এ বাড়ির যোগাযোগ। শুধু ইরানের রাজা নন, এ বাড়ির অতিথিশালায় আতিথেয়তা নিয়েছিলেন ত্রিপুরার মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য বাহাদুর। আর ইংরেজ আমলে বহু অফিসার ও ব্যবসায়ী এ বাড়িতে থেকেছিলেন বিভিন্ন কারণে।
এসব কারণেই পৃথিমপাশা জমিদারবাড়ি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়েছে অনেক গালগল্প। তার কিছু সত্য আর কিছু কল্পনার মিশেলে ভরপুর। পৃথিবীতে এখন জমিদার না থাকলেও লিখিত কিংবা মৌখিক ইতিহাসে আছে তাঁদের কথা। আর তাঁদের স্মৃতি পড়ে রয়েছে পুরো দেশের বিভিন্ন জনপদে। তেমনি এক জনপদ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া। সেখানেই এই বিখ্যাত পৃথিমপাশা জমিদারবাড়ি। কয়েক শ বছরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে এ বাড়িটির সঙ্গে। এটি পৃথিমপাশা নবাববাড়ি নামেও পরিচিত। জমিদারি আমলের স্মৃতি আর নানা গালগল্প নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ ঐতিহাসিক বাড়িটি এখন কুলাউড়ার দর্শনীয় জায়গা। এ পর্যটন মৌসুমে একবার ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।
প্রায় ৩৫ একর জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এ জমিদারবাড়ি। এখনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বাড়ির চৌহদ্দিতে রয়েছে বিশাল দিঘি, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, বৈঠকখানা ও ইমামবাড়া। কারুকাজখচিত এ জমিদারবাড়ির সদস্যরা শিয়া মতাবলম্বী। নবাব আলী আমজাদ খান এ বাড়ির ইমামবাড়া প্রতিষ্ঠা করেন। একে কেন্দ্র করে প্রতিবছর মহররমের অনুষ্ঠান হয়। জমিদারবাড়ির মসজিদে এখনো প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করা হয়।
বিশাল এ বাড়িটি এখন দেখাশোনা করেন নবাব আলী আমজাদ খানের উত্তরসূরিরা। পৃথিমপাশার সাদা রঙের এ বাড়ি দেখে বোঝার উপায় নেই এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েক শ বছরের ইতিহাস। বাড়ির ভেতর দিঘির একপাশে রয়েছে জমিদারদের কবরস্থান।
জমিদারবাড়ির ইতিহাস
১৪৯৯ সালে মোগল সম্রাট আকবরের সময়কালে ইরান থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে আসেন সাকি সালামত খান। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে তাঁর ছেলে ইসমাইল খান লোদি আসেন পৃথিমপাশায়। তিনি ছিলেন ওডিশার গভর্নর। ইসমাইল খানের ছেলে শামসুদ্দিন খান। তাঁর ছেলে রবি খানের নামে ১৭৫৬ সালে রবিরবাজার নামে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। রবি খানের ছেলে মোহাম্মদ আলী খান। তিনি ১৭৯২ সালে ইংরেজ শাসকদের পক্ষে নওগাঁ কুকি বিদ্রোহ দমনে ভূমিকা রেখেছিলেন। ইংরেজ সরকার আলী খানের ছেলে গাউস আলী খানকে উপহার হিসেবে ১ হাজার ২০০ হাল বা ১৪ হাজার ৪০০ বিঘা জমি দান করে। এই বিপুল ভূসম্পত্তি এ পরিবারকে আরও সম্পদশালী করে তোলে। গাউস আলী খানের ছেলে আলী আহমদ খান। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন সিলেটের কাজি বা বিচারক। তাঁর সময়ে জমিদারির রাজস্ব বেড়ে যায় এবং তিনি ব্রিটিশ আনুকূল্য লাভ করেন।
নবাব আলী আহমদ খানের ছেলে নবাব আলী আমজাদ খান ছিলেন বৃহত্তর সিলেটের একজন প্রভাবশালী জমিদার। সিলেটের বিখ্যাত সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি সমাজসেবায় তাঁর অন্যতম কীর্তি। জমিদারবাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখতে আলী আমজাদ খান মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আলী আমজাদ খানের দুই ছেলে—আলী হায়দার খান ও আলী আজগর খান। আলী আজগর খানের ছেলে আলী ইয়াওয়ার খান।
সিলেট শহরের প্রতীক হয়ে আছে কিন ব্রিজ আর ঘড়িঘর। ১৮৭৪ সালে যখন ঘড়ির তেমন প্রচলন ছিল না, সে সময় এ শহরের প্রবেশদ্বারে কিন ব্রিজের ডান দিকে সুরমা নদীর তীরে এই ঘড়িঘর নির্মাণ করেন আলী আহমদ খান। এর নাম রাখেন ছেলে আলী আমজাদের নামে। এ কারণেই এটি আলী আমজাদের ঘড়ি নামে পরিচিত।
আলী আমজাদ খানের পুত্র নবাব আলী হায়দার খান ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। পৃথিমপাশা জমিদার পরিবারের সন্তান নবাব আলী সারওয়ার খান, নবাব আলী আব্বাস খান প্রমুখও ছিলেন দেশের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ট্রেনযোগে কুলাউড়া যাওয়া যায়। রেলস্টেশন থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পৃথিমপাশা জমিদারবাড়ি যাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাসে করে দেশের যেকোনো স্থান থেকে মৌলভীবাজার শহরে নেমে লোকাল বাস বা অটোরিকশায় করেও যাওয়া যায় পৃথিমপাশা।
শীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
৫ ঘণ্টা আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
৫ ঘণ্টা আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
৬ ঘণ্টা আগেদায়িত্বশীল ভ্রমণ বিভিন্নভাবে আনন্দ দেয়। কিন্তু আপনি নিজে কীভাবে হয়ে উঠবেন একজন দায়িত্বশীল পর্যটক?
৬ ঘণ্টা আগে