Ajker Patrika

কিংবদন্তির ফ্যাশন স্টেটমেন্ট

আপডেট : ০১ মে ২০২৩, ১১: ৩১
কিংবদন্তির ফ্যাশন স্টেটমেন্ট

‘টাইমলেস স্টাইল’ বলতেই মনে পড়ে যায় ‘রোমান হলিডে’ সিনেমায় এলোপাতাড়ি ভেসপা চালিয়ে যাওয়া উচ্ছল মেয়েটির কথা। হ্যাঁ, রোমান হলিডের প্রিন্সেস অ্যান মানে স্বর্ণযুগের তারকা অড্রে হেপবার্ন ফ্যাশন আইকন হিসেবেও তো কম খ্যাতি পাননি। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট হেপবার্নকে মার্কিন চলচ্চিত্র ইতিহাসের তৃতীয় সেরা নারী কিংবদন্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আবার হল অব ফেমেও নাম উঠেছিল তাঁর। 

বলা হয়, হেপবার্নই নাকি ‘এলবিডি’র আন-অফিশিয়াল ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন। এলবিডি হলো লিটল ব্ল্যাক ড্রেস। সন্ধ্যাকালীন এই ককটেল পোশাক ১৯২০ সালে কোকো শ্যানেলের চমৎকার উদ্ভাবন হলেও অড্রে হেপবার্নের মাধ্য়মেই তা জনপ্রিয়তার শীর্ষে আসে। ছোটখাটো এই পোশাকের সঙ্গে সাদা অপেরা গ্লাভস, হ্যাট আর সানগ্লাস পরে লম্বা এক সিগারেট হাতে নিয়ে তোলা ছবিটির কথা কি আমরা ভুলতে পারি? হেপবার্ন অনুসারীরা তো ঘুরেফিরে দেখেন এই ছবি। এলবিডি ছাড়াও হেপবার্নের আইকনিক লুক মিলত ক্যাপ্রি প্যান্ট, স্লিম ট্রাউজার্স, টার্টলনেক পোশাক, ফিটিং গাউন, সিল্ক স্কার্ফ, পার্লস ফ্ল্যাশ হ্যাট বা ট্রেঞ্চ কোট ইত্যাদি পোশাকে।
পোশাক তো বটেই, চোখে কাজলের রেখা থেকে শুরু করে চুলের বাঁধন পর্যন্ত হেপবার্নের মেকআপ ট্রিকস যেন ঘুরেফিরে চলতি সময়েও দখল করে আছে অনুসারীদের হৃদয়।

 মিনিমাল মেকআপে বিশ্বাসী ছিলেন
হেপবার্নের ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায়, মেকআপের ঘষামাজা খুব একটা পছন্দ করতেন না তিনি। তাঁর মেকআপ আর্টিস্ট ওয়ালি ওয়েস্টমোর মুখে খুবই অল্প পরিমাণে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে দিতেন, যাতে তাঁর ছোট-পাতলা মুখটি স্ক্রিনে একটু হলেও ভরাট দেখায়। ফাউন্ডেশনের প্রলেপ এমনভাবে লাগাতেন, যাতে ত্বকের প্রাকৃতিক রং অটুট থাকে। চেহারায় প্রাণবন্ত ভাব ও উজ্জ্বল আভা ফুটিয়ে তোলাই ছিল হেপবার্নের মেকআপের মূল কারসাজি।

 অড্রে হেপবার্নের মতো যাঁরা মেকআপ করতে চান, তাঁরা মুখ ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এরপর সামান্য ফাউন্ডেশন ত্বকে লাগিয়ে নিন। কনসিলার ব্যবহার করুন, যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই। তবে ফাউন্ডেশনের পরিবর্তে বিবি ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। চেহারায় উজ্জ্বল আভা ছড়িয়ে দিতে গালে ও ভ্রুর নিচে বুলিয়ে নিন হাইলাইটার। বুঝলেনই তো, হেপবার্ন মেকআপের আধিক্য পছন্দ করতেন না।

লুজ পাউডারে ম্যাট লুক
স্ক্রিনে অড্রে হেপবার্নের ম্যাট মেকআপ লুক দেখা যেত। তিনি খুব অল্প পরিমাণে লুজ পাউডার ব্যবহার করতেন। এতে ত্বক তৈলাক্ত দেখাত না আবার ন্যাচারাল লুকটাও থাকত। 

অড্রে হেপবার্ন কড়া রং এড়িয়ে চলতেন
হেপবার্নের মুখে ব্রোঞ্জার বা চোখের পাতায় কড়া রঙের শিমারি আউশ্যাডো চোখে পড়ে না কখনো। অভিজাত লুক মানেই যে মেকআপে কড়া রং, এমনটা তিনি ভাবতেন না। বরং চোখের পাতা ও গালে ব্যবহারের জন্য হালকা শেডগুলোই বেছে নিতেন। অড্রে হেপবার্নের লুক রিমেক করতে চিকবোনে বুলিয়ে নিতে পারেন সফট পিংক ব্লাশন। চোখের পাতায় ব্যবহারের জন্য বেছে নিন বেজ ও প্যাস্টেল রঙের আইশ্যাডো। হালকা বাদামি বা ধূসর আইশ্যাডো বুলিয়ে আইলাইনারে টেনে নিন হেপবার্ন অনুপ্রাণিত উইংস!

প্রশংসিত বোল্ড ভ্রু
হেপবার্নের সিগনেচার ভ্রু যুগলের দিকে চোখ আটকাবেই। পুরু, ঘন ও অনেকখানি টেনে আঁকা ভ্রু নজর কেড়েছে বরাবরই। অন্যদিকে কী করে এই ভ্রু তিনি আঁকতেন, তা নিয়েও নিরীক্ষা কম করেননি হেপবার্ন অনুসারীরা। তবে এ বেলায় একটু সতর্ক হোন। বিবেচনায় রাখুন নিজের ভ্রুর প্রাকৃতিক আকার। নয়তো পুরো সাজটাই বিগড়ে যেতে পারে। হেপবার্ন তাঁর ভ্রু যুগলে বাদামি চারকোল ভ্রু পাউডার ব্রাশ করতেন। 

ড্রামাটিক আই মেকআপ
প্রাকৃতিকভাবেই অড্রে হেপবার্নের চোখ ছিল প্রশস্ত। তাঁর মুখের দিকে তাকালে সবটা আকর্ষণ টেনে নেয় দুই চোখ। এই চোখকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হেপবার্ন তরল আইলাইনার ব্যবহার করতেন। চোখের ওপরের পাতার পাপড়ি ঘেঁষে আইলাইনার লাগাতেন। খেয়াল রাখতেন, যাতে এই লাইন চোখের কোনা থেকে চিকন হয়ে ধীরে ধীরে পুরু থেকে উইংসে এসে থামে। চোখের নিচের পাপড়ি ঘেঁষে টেনে নিতেন ন্য়ুড রঙের আই পেনসিল। এরপর ধূসর রঙের আইশ্যাডো বুলিয়ে নিতেন চোখের নিচের অংশে। এটাই তাঁর ড্রামাটিক আই মেকআপের রহস্য।   

চোখে কাজলের রেখা থেকে শুরু করে চুলের বাঁধন পর্যন্ত হেপবার্নের মেকআপ ট্রিকস যেন চলতি সময়েও দখল করে আছে অনুসারীদের হৃদয়পাপড়িতে মায়া ছড়ানো
অড্রে হেপবার্নের প্রিয় মেকআপ আর্টিস্ট আলবার্তো রসি তাঁর চোখের পাপড়িতে ফলস আইল্য়াশ লাগিয়ে দিতেন। এতে চোখজোড়া দেখতে আরও মায়াবী লাগত। এরপর প্রয়োজন হলে মাসকারা বুলিয়ে দিতেন। তাই হেপবার্ন অনুপ্রাণিত চোখের মেকআপে ফলস আইল্যাশের কথাও ভাবতে পারেন কিন্তু! 

ঠোঁটের টোটকা
পঞ্চাশের দশকে পুরু ঠোঁট দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু হেপবার্নের ঠোঁট ছিল পাতলা। তাই ঠোঁটের একটু ওপর থেকে লিপ লাইনার টানতেন তিনি। খেয়াল রাখতেন, যেন ওপরের ঠোঁট নিচের ঠোঁটের চেয়ে একটু চওড়া দেখায়। এরপর বুলিয়ে নিতেন ম্যাট লিপস্টিক।  

model_Jeba-3ত্বকের যত্নে নিতেন স্টিম ফেসিয়াল
জিনগত কারণেই অড্রে হেপবার্ন পরিচ্ছন্ন ও উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী ছিলেন। তবে যেহেতু তিনি সপ্তাহে দুবার স্টিম ফেসিয়াল নিতেন, তাই তাঁর ত্বকে ময়লা জমত না। রোমকূপ থাকত পরিষ্কার। একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে তাঁর ওপর মুখ এগিয়ে দিতেন, এরপর মাথার ওপর থেকে তোয়ালে দিয়ে সেই পাত্রটা ঢেকে নিতেন, যাতে বাষ্প পুরোটাই মুখে এসে লাগে। এভাবে ২ মিনিট ভাপ নিতেন। গরম পানির ভাপ রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, রোমকূপ থেকে ময়লা আলগা করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ভেতর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। এই স্টিম ফেসিয়াল হেপবার্নের ত্বককে ডিটক্স তো করতই, পাশাপাশি বয়সের ছাপ পড়তে দিত না। 

বিশুদ্ধ বাতাসে হাঁটতে যেতেন
ফুরফুরে হাওয়া বইলে অড্রে হেপবার্ন হাঁটতে বের হতেন। যতটা অক্সিজেন শরীরে নেওয়া যায়, ততই তা শরীর ও ত্বকের জন্য ভালো, এটাই তিনি মনে করতেন।

সূত্র: গ্র‍্যাজিয়া ম্যাগাজিন ও অন্যান্য়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতিহাস দরজায় কড়া নেড়ে বলছে, ১৯৭১ থেকে পাকিস্তান কি শেখেনি কিছুই

‘আমাদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ো না’

কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের খামারবাড়ি অবরোধের ঘোষণা

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত