কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। চোখের সামনে ঠিক কতগুলো রঙিন সুতা নাচছে, তা গুনে শেষ করতে পারছিলাম না। বেনারসি তাঁতে একমনে শাড়ি বুনে চলেছেন এক তাঁতি। কাঠের তৈরি মাকু ডান থেকে বাঁয়ে, বাঁ থেকে ডানে ছুটে চলেছে সমানতালে। খটাখট না হলেও একটা শব্দ ও ছন্দ আছে তাতে। আমার চোখের সামনে তৈরি হচ্ছে একটা মিন্ট রঙের বেনারসি শাড়ি। আহা! এই তবে সেই বেনারসি?
সমরেশ মজুমদার তাঁর সাতকাহন উপন্যাসে লিখেছেন, ‘ভালবাসা হল বেনারসি শাড়ির মত, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয়, তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।’
এই সেই ভালোবাসার মতো দামি শাড়ি বেনারসি! সাহিত্যে নানাভাবে বহুবার ঘুরেফিরে এসেছে এর কথা। কখনো শাড়ি দিয়ে বোঝানো হয়েছে আভিজাত্য, কখনোবা ভালোবাসা আর যত্নের কথা। বাঙালিরা এখনো মনে করেন শাড়িতেই নারী। হাজার ধরনের শাড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিছু শাড়ি অঞ্চলের নামেই বেড়ে উঠেছে, ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। সেই সব শাড়িরই একটি বেনারসি। মানুষের জীবনের বিশেষ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব ও সৌন্দর্য অপরিসীম।
বয়স হোক সতেরো কিংবা ষাট, শাড়ি বাংলাদেশ তথা ভারত উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নারীদের জন্য বিশেষ একটি পোশাক। আগের যুগে বিয়ে মানেই ছিল বেনারসি শাড়ি। তবে কালের প্রবাহে পরিবর্তন এসেছে নারীদের শাড়ি পরার ক্ষেত্রে। একসময়ের প্রধান পোশাক শাড়ি থেকে নারীরা এখন বেরিয়ে এসে পরছেন সালোয়ার–কামিজ, কুর্তি, স্কার্ট, টপস, জিনস আর টি-শার্ট। তারপরও, নারীদের কাছে শাড়ি যত্নে তোলা ভালোবাসা।
সেই ভালোবাসার ব্যবহারে এসেছে বৈচিত্র্য। যেমন জামদানি কাপড় থেকে তৈরি করা হয়েছে মেয়েদের জামা, ব্যাগ এমনকি জুতাও। গামছারও হয়েছে শাড়ি কিংবা ফতুয়া। বেনারসিও সেই নিরীক্ষা থেকে বাদ যায়নি। বেনারসি শাড়ি দিয়ে নয়, বেনারসি তাঁতে তৈরি কাপড় দিয়ে এখন অনেকেই বানাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের পোশাক। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জামা, স্কার্ট, কটি, ফ্রক, গাউন। ফলে বেনারসি মানেই শাড়ি এমন ধারণা এখন আর কাজ করছে না। আর বেনারসি তাঁতে বোনা কাপড়ের পোশাক শুধু নারীরাই পরবে, ব্যাপারটি এমনও নয়।
এসব কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্যুট, টাইসহ ছেলেদের পোশাকও। কেউ যদি শাড়ি পরতে না চান কিন্তু বেনারসি ভালোবাসেন, তাহলে নির্দ্বিধায় পরে ফেলতে পারেন বেনারসির তৈরি গাউন, কামিজ, স্কার্ট কিংবা স্যুট। এতে বেনারসি বেঁচে থাকবে যুগের পর যুগ।
রাজধানীর লো মেরিডিয়েন হোটেলের নিচতলায় চলছে ‘টাইমলেস ম্যাগনিফিসেন্স অব দ্য বাংলাদেশি বেনারসি’ নামের একটি আয়োজন। সেখানেই দাঁড়িয়ে দেখছিলাম বেনারসি শাড়ি বোনা। দেখছিলাম হ্যাঙারে ঝোলানো বেনারসি কাপড়ে তৈরি ঝলমলে বিভিন্ন পোশাক।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্প ঐতিহ্যের নিদর্শন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের তৈরি ভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে সাজানো হয়েছে এ ফেস্টিভালটি। এর আয়োজন করেছে দ্য মসলিন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আয়োজনটি শুরু হয়েছে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে, চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ ফেস্টিভাল উন্মুক্ত থাকে দর্শকের জন্য।
১৯৪৭ সালের এক অযাচিত অভিবাসনের হাত ধরে জন্ম বাংলাদেশি বেনারসির। যেকোনো শিল্পই বেঁচে থাকে শিল্পীদের হাত ধরে। বেনারসিও বেঁচে আছে কোনোমতে। পৃষ্ঠপোষকতাহীন অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের গর্ভে এ বয়নশিল্পীরা হারিয়ে যাচ্ছেন। বংশপরম্পরা ভেঙে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা। এতে শুধু একটি শিল্পী সম্প্রদায়ের মৃত্যু হচ্ছে না, মৃত্যু হচ্ছে একটি শিল্পের। মিরপুর বেনারসিপল্লির তাঁতশিল্পী মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘আমরা চাই আগের মতো বেনারসি পরার চল শুরু হোক। দেশীয় বেনারসি কিনুক সবাই।’ তারকা হোটেলের সুসজ্জিত বলরুমে রফিকের এই আহ্বান কি হাহাকারের মতো শোনাল! বিশ্বজুড়ে যখন হস্তশিল্প ও ঐতিহ্য রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেই কর্মযজ্ঞে বাংলাদেশের এক তাঁতি খোদ রাজধানীর এক তারকা হোটেলের শিল্প বাঁচানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। বিষয়টি ভাবায় বটে।
আবার বেনারসির তৈরি বৈচিত্র্যময় বস্ত্রসম্ভারের উপস্থিতি দেখে অন্ধকার গুহার দূরতম প্রান্তে আলোক বিন্দুর মতো ইতিবাচকতাও দেখা যায়। এই ইতিবাচকতাই বেনারসিকে ফ্যাশনের বিশাল দুনিয়ায় তুলে ধরবে।
ঘুরে ঘুরে সব দেখে যখন বের হয়ে আসব, পেছন থেকে মোহাম্মদ রফিক বললেন, ‘ওই শাড়িটা দেখে যান, শাড়িটা আজ বোনা শেষ।’ তাকিয়ে দেখলাম, আসমানি রঙের অজস্র নকশায় ভরে উঠেছে বেনারসি শাড়িটির সবুজ রঙের জমিন। মনে মনে বললাম, আহা! গরম-গরম একটা শাড়ি দেখে ফেললাম আজ!
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। চোখের সামনে ঠিক কতগুলো রঙিন সুতা নাচছে, তা গুনে শেষ করতে পারছিলাম না। বেনারসি তাঁতে একমনে শাড়ি বুনে চলেছেন এক তাঁতি। কাঠের তৈরি মাকু ডান থেকে বাঁয়ে, বাঁ থেকে ডানে ছুটে চলেছে সমানতালে। খটাখট না হলেও একটা শব্দ ও ছন্দ আছে তাতে। আমার চোখের সামনে তৈরি হচ্ছে একটা মিন্ট রঙের বেনারসি শাড়ি। আহা! এই তবে সেই বেনারসি?
সমরেশ মজুমদার তাঁর সাতকাহন উপন্যাসে লিখেছেন, ‘ভালবাসা হল বেনারসি শাড়ির মত, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয়, তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।’
এই সেই ভালোবাসার মতো দামি শাড়ি বেনারসি! সাহিত্যে নানাভাবে বহুবার ঘুরেফিরে এসেছে এর কথা। কখনো শাড়ি দিয়ে বোঝানো হয়েছে আভিজাত্য, কখনোবা ভালোবাসা আর যত্নের কথা। বাঙালিরা এখনো মনে করেন শাড়িতেই নারী। হাজার ধরনের শাড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিছু শাড়ি অঞ্চলের নামেই বেড়ে উঠেছে, ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। সেই সব শাড়িরই একটি বেনারসি। মানুষের জীবনের বিশেষ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব ও সৌন্দর্য অপরিসীম।
বয়স হোক সতেরো কিংবা ষাট, শাড়ি বাংলাদেশ তথা ভারত উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নারীদের জন্য বিশেষ একটি পোশাক। আগের যুগে বিয়ে মানেই ছিল বেনারসি শাড়ি। তবে কালের প্রবাহে পরিবর্তন এসেছে নারীদের শাড়ি পরার ক্ষেত্রে। একসময়ের প্রধান পোশাক শাড়ি থেকে নারীরা এখন বেরিয়ে এসে পরছেন সালোয়ার–কামিজ, কুর্তি, স্কার্ট, টপস, জিনস আর টি-শার্ট। তারপরও, নারীদের কাছে শাড়ি যত্নে তোলা ভালোবাসা।
সেই ভালোবাসার ব্যবহারে এসেছে বৈচিত্র্য। যেমন জামদানি কাপড় থেকে তৈরি করা হয়েছে মেয়েদের জামা, ব্যাগ এমনকি জুতাও। গামছারও হয়েছে শাড়ি কিংবা ফতুয়া। বেনারসিও সেই নিরীক্ষা থেকে বাদ যায়নি। বেনারসি শাড়ি দিয়ে নয়, বেনারসি তাঁতে তৈরি কাপড় দিয়ে এখন অনেকেই বানাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের পোশাক। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জামা, স্কার্ট, কটি, ফ্রক, গাউন। ফলে বেনারসি মানেই শাড়ি এমন ধারণা এখন আর কাজ করছে না। আর বেনারসি তাঁতে বোনা কাপড়ের পোশাক শুধু নারীরাই পরবে, ব্যাপারটি এমনও নয়।
এসব কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্যুট, টাইসহ ছেলেদের পোশাকও। কেউ যদি শাড়ি পরতে না চান কিন্তু বেনারসি ভালোবাসেন, তাহলে নির্দ্বিধায় পরে ফেলতে পারেন বেনারসির তৈরি গাউন, কামিজ, স্কার্ট কিংবা স্যুট। এতে বেনারসি বেঁচে থাকবে যুগের পর যুগ।
রাজধানীর লো মেরিডিয়েন হোটেলের নিচতলায় চলছে ‘টাইমলেস ম্যাগনিফিসেন্স অব দ্য বাংলাদেশি বেনারসি’ নামের একটি আয়োজন। সেখানেই দাঁড়িয়ে দেখছিলাম বেনারসি শাড়ি বোনা। দেখছিলাম হ্যাঙারে ঝোলানো বেনারসি কাপড়ে তৈরি ঝলমলে বিভিন্ন পোশাক।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্প ঐতিহ্যের নিদর্শন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের তৈরি ভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে সাজানো হয়েছে এ ফেস্টিভালটি। এর আয়োজন করেছে দ্য মসলিন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আয়োজনটি শুরু হয়েছে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে, চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ ফেস্টিভাল উন্মুক্ত থাকে দর্শকের জন্য।
১৯৪৭ সালের এক অযাচিত অভিবাসনের হাত ধরে জন্ম বাংলাদেশি বেনারসির। যেকোনো শিল্পই বেঁচে থাকে শিল্পীদের হাত ধরে। বেনারসিও বেঁচে আছে কোনোমতে। পৃষ্ঠপোষকতাহীন অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের গর্ভে এ বয়নশিল্পীরা হারিয়ে যাচ্ছেন। বংশপরম্পরা ভেঙে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা। এতে শুধু একটি শিল্পী সম্প্রদায়ের মৃত্যু হচ্ছে না, মৃত্যু হচ্ছে একটি শিল্পের। মিরপুর বেনারসিপল্লির তাঁতশিল্পী মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘আমরা চাই আগের মতো বেনারসি পরার চল শুরু হোক। দেশীয় বেনারসি কিনুক সবাই।’ তারকা হোটেলের সুসজ্জিত বলরুমে রফিকের এই আহ্বান কি হাহাকারের মতো শোনাল! বিশ্বজুড়ে যখন হস্তশিল্প ও ঐতিহ্য রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেই কর্মযজ্ঞে বাংলাদেশের এক তাঁতি খোদ রাজধানীর এক তারকা হোটেলের শিল্প বাঁচানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। বিষয়টি ভাবায় বটে।
আবার বেনারসির তৈরি বৈচিত্র্যময় বস্ত্রসম্ভারের উপস্থিতি দেখে অন্ধকার গুহার দূরতম প্রান্তে আলোক বিন্দুর মতো ইতিবাচকতাও দেখা যায়। এই ইতিবাচকতাই বেনারসিকে ফ্যাশনের বিশাল দুনিয়ায় তুলে ধরবে।
ঘুরে ঘুরে সব দেখে যখন বের হয়ে আসব, পেছন থেকে মোহাম্মদ রফিক বললেন, ‘ওই শাড়িটা দেখে যান, শাড়িটা আজ বোনা শেষ।’ তাকিয়ে দেখলাম, আসমানি রঙের অজস্র নকশায় ভরে উঠেছে বেনারসি শাড়িটির সবুজ রঙের জমিন। মনে মনে বললাম, আহা! গরম-গরম একটা শাড়ি দেখে ফেললাম আজ!
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১৪ ঘণ্টা আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১৫ ঘণ্টা আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১৫ ঘণ্টা আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১৫ ঘণ্টা আগে