সৌরভ নূর
বড্ড রাশভারী লোক ছিলেন সত্যজিৎ রায়। ছয় ফুটের ওপর উচ্চতা, ভারী কণ্ঠ, আর অসামান্য ব্যক্তিত্ব—রায় বংশের উচ্চতা ও গভীরতা শারীরিক অবয়বেও যেন ধারণ করেছিলেন তিনি। তাঁরই সৃষ্ট ফেলুদা চরিত্রকে যে তিনি নিজের আদলেই রূপায়ণ করেছিলেন, তা আর না বললেও চলে।
ফেলুদার মতোই ছিল সত্যজিতের অসম্ভব পড়ার নেশা, আর সেই সঙ্গে বিচিত্র সব শখ। কথার ধাঁধা, শব্দের প্যাঁচ থেকে শুরু করে যেকোনো রকম পাজল সলভিংয়ে সত্যজিতের আগ্রহ ছিল শিশুদের মতো। বিশ্ব দরবারে সত্যজিতের হাত ধরে পরিচয় হয়েছিল ভারতীয় সিনেমার। এসেছিল পৃথিবীজোড়া খ্যাতি। আকিরা কুরোসাওয়ার মতো চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ওঁর সিনেমা না দেখা হলো অনেকটা পৃথিবীতে থেকেও চাঁদ বা সূর্য না দেখার মতো ব্যপার।’ এ রকম মহীরুহ একজন ব্যক্তিত্ব, সানন্দে ট্রেনের কামরায় বসে ধাঁধা মেলাতে ভালোবাসতেন। টিনটিনের নতুন বই এলে ঝাঁপিয়ে পড়তেন ঠিক যেমন তাঁর ফেলুদার বই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত শিশু-কিশোরেরা।
এ তো গেল সত্যজিতের ভেতরে বাস করা শিশুর গল্প। আরও হাজার হাজার শিশুর প্রাণের খোরাকও তিনি জুগিয়েছেন তাঁর চলচ্চিত্রে, সম্পাদনা করা সন্দেশ পত্রিকায়, আর সাহিত্যের পরতে পরতে। প্রথমে তিনি ছোটদের জন্যে বানালেন ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’। দুই রাজা—ভালো রাজা, মন্দ রাজা। তাদের লড়াই হওয়ার কথা। কীভাবে গুপী, আর বাঘা নামের দুই সাদাসিধে সরল মানুষ ভূতের রাজার বরের সাহায্যে সে লড়াই থামিয়ে দেয়, সে গল্প এখন বলাটা বাতুলতা। তাঁর ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়ের লেখা এই গল্প মানুষের মুখে মুখে ফিরত বহুদিন ধরে। সত্যজিৎ একে বড় পর্দায় এনে তৈরি করলেন ইতিহাস। বাংলা চলচ্চিত্র পেল বিশ্বমানের ছোটদের সিনেমা।
এই সিরিজের পরবর্তী চলচ্চিত্র `হীরক রাজার দেশে' সত্যজিতের নিজের লেখা। একটি অদ্ভুত স্বৈরাচারী রাজ্য হীরকরাজ্য। সেখানে একটু বেগরবাই করলেই মগজধোলাই করে দেন হীরকরাজ। কীভাবে গুপি–বাঘা সেই রাজ্যে গিয়ে পড়ে এবং একা লড়তে থাকা মাস্টারমশাইয়ের পাশে থেকে পতন ঘটায় হীরকের সবচেয়ে বড় শত্রুর, সেই কাহিনির বর্ণনায় সবার মুখের কথা দিলেন ছন্দে ছন্দে, কেবল মাস্টারমশাই ছাড়া। হয়তো তিনি বোঝাতে চাইলেন একমাত্র মাস্টারমশাই স্পষ্ট, মুক্ত চিন্তা করতে সক্ষম ছিলেন। বাকিদের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল হীরকরাজার শাসনের আবর্তে। মুখে মুখে ফেরা মানুষের প্রবাদে এখনো সচল রয়েছে এই সিনেমার নানা সংলাপ। যেকোনো সময়েই এই চলচ্চিত্র প্রাসঙ্গিক। এ জন্যই সত্যজিৎকে জিনিয়াস বলা হয়।
এদিকে ফেলুদা কয়েক পুরুষ ধরে শিশুদের আইডল হয়ে আসছে এবং হয়ে থাকবে। গম্ভীর; অথচ রসকষহীন নন। আধুনিক, বিশ্বনাগরিক, কিন্তু যখন পুরোনো কলকাতা ভেঙে নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা উঠেছিল, ফেলুদা তখন রাস্তায় নেমে অনশন করা অবধি যেতে চেয়েছিলেন। সত্যজিৎ ফেলুদার মধ্যে দিয়ে কিছু গভীর নৈতিকতার বোধ শিশুদের ভেতরে গ্রোথিত করতে চেয়েছিলেন। পরে যখন তিনি একে চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করেন, ফেলুদার চরিত্রে সৌমিত্র সমস্ত জাতির মন জয় করে নেন। সে এক জাদুর ঘোর লাগা সময়!
সত্যজিতের ছোটদের সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, এখানে সব থেকে বড় খল চরিত্রটিকেও বেশ মজার একটি চরিত্র করে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। হয়তো শিশুদের মনে ঘৃণার মতো তীব্র ধ্বংসাত্মক কোনো অনুভূতি জাগাতে চাননি তিনি। তাই সোনার কেল্লার নকল ডক্টর হাজরাই হোক বা তার সাগরেদ, কিংবা গুগাবাবার মন্দ রাজাই হোক—রাগের বদলে তাদের মধ্যে হাস্যরসই পাই আমরা; হয়তো কোথাও গিয়ে মায়াও লাগে। বড়দের চোখে তাকালেও এমনকি চমক লাগে। কারণ, সত্যজিৎ তাঁর এসব চলচ্চিত্রে খল চরিত্রগুলোকে খেলো করে তুলেছিলেন, যা একটি রাজনীতিও বটে। এখানেই হয়তো ভালো পরিচালক আর মহান পরিচালকের পার্থক্য। ঋষির চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখা ও তা দেখানোর জন্য সত্যজিতের মতো প্রতিভাই দরকার। আর তাঁরই ভাষায়, ‘প্রতিভা সর্বকালে, সর্বদেশে বিরল।’ সত্যজিৎ; নিঃসন্দেহে এক ও অদ্বিতীয়, যাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কী করার থাকে!
বড্ড রাশভারী লোক ছিলেন সত্যজিৎ রায়। ছয় ফুটের ওপর উচ্চতা, ভারী কণ্ঠ, আর অসামান্য ব্যক্তিত্ব—রায় বংশের উচ্চতা ও গভীরতা শারীরিক অবয়বেও যেন ধারণ করেছিলেন তিনি। তাঁরই সৃষ্ট ফেলুদা চরিত্রকে যে তিনি নিজের আদলেই রূপায়ণ করেছিলেন, তা আর না বললেও চলে।
ফেলুদার মতোই ছিল সত্যজিতের অসম্ভব পড়ার নেশা, আর সেই সঙ্গে বিচিত্র সব শখ। কথার ধাঁধা, শব্দের প্যাঁচ থেকে শুরু করে যেকোনো রকম পাজল সলভিংয়ে সত্যজিতের আগ্রহ ছিল শিশুদের মতো। বিশ্ব দরবারে সত্যজিতের হাত ধরে পরিচয় হয়েছিল ভারতীয় সিনেমার। এসেছিল পৃথিবীজোড়া খ্যাতি। আকিরা কুরোসাওয়ার মতো চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ওঁর সিনেমা না দেখা হলো অনেকটা পৃথিবীতে থেকেও চাঁদ বা সূর্য না দেখার মতো ব্যপার।’ এ রকম মহীরুহ একজন ব্যক্তিত্ব, সানন্দে ট্রেনের কামরায় বসে ধাঁধা মেলাতে ভালোবাসতেন। টিনটিনের নতুন বই এলে ঝাঁপিয়ে পড়তেন ঠিক যেমন তাঁর ফেলুদার বই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত শিশু-কিশোরেরা।
এ তো গেল সত্যজিতের ভেতরে বাস করা শিশুর গল্প। আরও হাজার হাজার শিশুর প্রাণের খোরাকও তিনি জুগিয়েছেন তাঁর চলচ্চিত্রে, সম্পাদনা করা সন্দেশ পত্রিকায়, আর সাহিত্যের পরতে পরতে। প্রথমে তিনি ছোটদের জন্যে বানালেন ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’। দুই রাজা—ভালো রাজা, মন্দ রাজা। তাদের লড়াই হওয়ার কথা। কীভাবে গুপী, আর বাঘা নামের দুই সাদাসিধে সরল মানুষ ভূতের রাজার বরের সাহায্যে সে লড়াই থামিয়ে দেয়, সে গল্প এখন বলাটা বাতুলতা। তাঁর ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়ের লেখা এই গল্প মানুষের মুখে মুখে ফিরত বহুদিন ধরে। সত্যজিৎ একে বড় পর্দায় এনে তৈরি করলেন ইতিহাস। বাংলা চলচ্চিত্র পেল বিশ্বমানের ছোটদের সিনেমা।
এই সিরিজের পরবর্তী চলচ্চিত্র `হীরক রাজার দেশে' সত্যজিতের নিজের লেখা। একটি অদ্ভুত স্বৈরাচারী রাজ্য হীরকরাজ্য। সেখানে একটু বেগরবাই করলেই মগজধোলাই করে দেন হীরকরাজ। কীভাবে গুপি–বাঘা সেই রাজ্যে গিয়ে পড়ে এবং একা লড়তে থাকা মাস্টারমশাইয়ের পাশে থেকে পতন ঘটায় হীরকের সবচেয়ে বড় শত্রুর, সেই কাহিনির বর্ণনায় সবার মুখের কথা দিলেন ছন্দে ছন্দে, কেবল মাস্টারমশাই ছাড়া। হয়তো তিনি বোঝাতে চাইলেন একমাত্র মাস্টারমশাই স্পষ্ট, মুক্ত চিন্তা করতে সক্ষম ছিলেন। বাকিদের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল হীরকরাজার শাসনের আবর্তে। মুখে মুখে ফেরা মানুষের প্রবাদে এখনো সচল রয়েছে এই সিনেমার নানা সংলাপ। যেকোনো সময়েই এই চলচ্চিত্র প্রাসঙ্গিক। এ জন্যই সত্যজিৎকে জিনিয়াস বলা হয়।
এদিকে ফেলুদা কয়েক পুরুষ ধরে শিশুদের আইডল হয়ে আসছে এবং হয়ে থাকবে। গম্ভীর; অথচ রসকষহীন নন। আধুনিক, বিশ্বনাগরিক, কিন্তু যখন পুরোনো কলকাতা ভেঙে নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা উঠেছিল, ফেলুদা তখন রাস্তায় নেমে অনশন করা অবধি যেতে চেয়েছিলেন। সত্যজিৎ ফেলুদার মধ্যে দিয়ে কিছু গভীর নৈতিকতার বোধ শিশুদের ভেতরে গ্রোথিত করতে চেয়েছিলেন। পরে যখন তিনি একে চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করেন, ফেলুদার চরিত্রে সৌমিত্র সমস্ত জাতির মন জয় করে নেন। সে এক জাদুর ঘোর লাগা সময়!
সত্যজিতের ছোটদের সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, এখানে সব থেকে বড় খল চরিত্রটিকেও বেশ মজার একটি চরিত্র করে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। হয়তো শিশুদের মনে ঘৃণার মতো তীব্র ধ্বংসাত্মক কোনো অনুভূতি জাগাতে চাননি তিনি। তাই সোনার কেল্লার নকল ডক্টর হাজরাই হোক বা তার সাগরেদ, কিংবা গুগাবাবার মন্দ রাজাই হোক—রাগের বদলে তাদের মধ্যে হাস্যরসই পাই আমরা; হয়তো কোথাও গিয়ে মায়াও লাগে। বড়দের চোখে তাকালেও এমনকি চমক লাগে। কারণ, সত্যজিৎ তাঁর এসব চলচ্চিত্রে খল চরিত্রগুলোকে খেলো করে তুলেছিলেন, যা একটি রাজনীতিও বটে। এখানেই হয়তো ভালো পরিচালক আর মহান পরিচালকের পার্থক্য। ঋষির চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখা ও তা দেখানোর জন্য সত্যজিতের মতো প্রতিভাই দরকার। আর তাঁরই ভাষায়, ‘প্রতিভা সর্বকালে, সর্বদেশে বিরল।’ সত্যজিৎ; নিঃসন্দেহে এক ও অদ্বিতীয়, যাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কী করার থাকে!
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে