অনলাইন ডেস্ক
মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বিবেচনা করা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার হিসেবে। বাংলা ভাষায় সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক তিনি। বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্যের ভাবধারা সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন মধুসূদন। ১৮২৪ সালের আজকের দিনে জন্ম নেন তিনি।
যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম। বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার প্রতিষ্ঠিত উকিল। মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। প্রথমে মধুসূদন সাগরদাঁড়ির পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। পরে কলকাতায় খিদিরপুর স্কুলে পড়েন। ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। সেখানে বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন।
মেধাবী ছাত্র মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি এল রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। রিচার্ডসন মধুসূদনের মনে কাব্যের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলায় ভূমিকা রাখেন। কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যেই মধুসূদন নিজের আলাদা একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন। কলেজের পরীক্ষায় বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারী শিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে স্বর্ণপদক পান।
হিন্দু কলেজে পড়ার সময় মধুসূদন কাব্যচর্চা শুরু করেন। তখন তাঁর কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেতে (ইংল্যান্ড) যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল সেখানে গেলে বড় কবি হওয়া যাবে। ১৮৪৩ সালে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং নামের আগে ‘মাইকেল’ শব্দটি যোগ করেন। হিন্দু কলেজে খ্রিষ্টানরা পড়ালেখা করতে না পারায় মধুসূদনকে কলেজ ছাড়তে হয়। ১৮৪৪ সালে তিনি বিশপস কলেজে ভর্তি হন। ইংরেজি ছাড়াও গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখার সুযোগ পান বিশপস কলেজে।
এ সময় ধর্মান্তরের কারণে মধুসূদন আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বাবাও অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেন। তখন বিশপস কলেজের মাদ্রাজি বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজে (এখনকার চেন্নাই) চলে যান। এটি ১৮৪৮ সালের ঘটনা। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। প্রথমে মাদ্রাজ মেইল অরফ্যান অ্যাসাইলাম স্কুলে এবং পরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি হাইস্কুলে।
মাদ্রাজের সঙ্গে মধুসূদনের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জড়িয়ে আছে। এখানেই তিনি সাংবাদিক ও কবি হিসেবে পরিচিতি পান। মাদ্রাজ সার্কুলেটর, হিন্দু ক্রনিকলসসহ বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনা করেন। বেশ কয়েক বছর মাদ্রাজ স্পেক্টেটরের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৪৮ সালে টিমোথি পেনপয়েম ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য কেপ্টিভ লেডি’ প্রকাশিত হয়।
মাদ্রাজেই মধুসূদন রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ নারীকে বিয়ে করেন। আট বছর স্থায়ী হয়েছিল তাঁদের সংসার। রেবেকার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মধুসূদন এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিয়ে করেন।
এর মধ্যে মধুসূদনের মা ও বাবার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে হেনরিয়েটাকে নিয়ে ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় আসেন। সেখানে তিনি পুলিশ কোর্টের কেরানি এবং পরে দোভাষীর কাজ করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেও কিছু আয় করেন। বন্ধুবান্ধব এ সময় বাংলায় সাহিত্যচর্চা করতে উৎসাহ দেন মধুসূদনকে। নিজের মধ্যও একটি তাগিদ অনুভব করছিলেন। বাংলা সাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব অনুভব করেন তিনি। একপর্যায়ে কলকাতার পাইকপাড়ার রাজাদের বেলগাছিয়া থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত হন। তার পরই বলা চলে নাট্যকার হিসেবেই বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে পদার্পণ হয় মধুসূদনের। মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে ১৮৫৮ সালে পাশ্চাত্য রীতিতে রচনা করেন নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’। একে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম সার্থক ও আধুনিক মৌলিক নাটক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পরের বছর মধুসূদন রচনা করেন দুটি প্রহসন। ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’। কাহিনি, সংলাপ ও চরিত্র সৃষ্টির দিক থেকে এগুলো ছিল অনন্য। মধুসূদনের রচনাগুলোর নতুনত্ব সবার নজর কাড়ে। পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন তিনি।
১৮৬০ সালে গ্রিক পুরাণের কাহিনি অবলম্বনে রচনা করেন ‘পদ্মাবতী’ নাটক। এ নাটকে ইংরেজি কাব্যের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার এই প্রথম। এর মাধ্যমে বাংলা কাব্যকে ছন্দের বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। অমিত্রাক্ষর ছন্দে সে বছরই রচনা করেন ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’। পরের বছর ১৮৬১ সালে রামায়ণের কাহিনি নিয়ে একই ছন্দে লেখেন ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। এটি বাংলা ভাষায় প্রথম মৌলিক মহাকাব্য। এই কাব্যের মাধ্যমেই মহাকবির মর্যাদা পান। তাঁর অমিত্রাক্ষর ছন্দও বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
মধুসূদনের কাব্যে নারী বিদ্রোহের সুর চোখে পড়ে। তাঁর ‘বীরাঙ্গনা’ (১৮৬২) পত্রকাব্যের নায়িকাদের দিকে তাকালে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। পরবর্তী সময়ে মধুসূদন দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ১৮৬২ সালে ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ডে যান। সেখান থেকে ১৮৬৩ সালে প্যারিস হয়ে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে যান। সেখানে থাকার সময় ইতালীয় কবি পেত্রার্কের অনুকরণে বাংলায় সনেট লিখতে শুরু করেন। এর আগে বাংলা ভাষায় সনেটের প্রচলন ছিল না। ভার্সাই নগরীতে থাকার সময় নিজের দেশ ও মাতৃভাষাকে নতুনভাবে দেখতে ও বুঝতে পারেন। যার প্রকাশ ঘটে তাঁর ‘বঙ্গভাষা’, ‘কপোতাক্ষ নদে’র মতো সনেটে। এই সনেটগুলো প্রকাশিত হয় ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ নামে।
১৮৬৫ সালে পুনরায় ইংল্যান্ডে যান এবং ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৮৬৭ সালে দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন। ওকালতিতে সুবিধা করতে না পেরে ১৮৭০ সালে হাইকোর্টের অনুবাদ বিভাগে যোগ দেন। দুই বছর পর এ চাকরি ছেড়ে পুনরায় ওকালতি শুরু করেন। এবার সফলতা পেলেও অমিতব্যয়িতার কারণে ঋণে জড়ান।
তবে এই সবকিছুর মধ্যেও মধুসূদন কাব্যচর্চা চালিয়ে যান। হোমারের ইলিয়াড অবলম্বনে ১৮৭১ সালে রচনা করেন ‘হেক্টরবধ’। তাঁর শেষ রচনা ‘মায়াকানন’ (১৮৭৩) নামের একটি নাটক।
জীবনের শেষ দিনগুলো মোটেই ভালো কাটেনি মাইকেল মধুসূদনের। ঋণ, অর্থাভাব, অসুস্থতা, চিকিৎসাহীনতা—সবকিছু মিলিয়ে কঠিন সময় পার করেন। স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর কয়েক দিন পর ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কপর্দকহীন অবস্থায় আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বাংলা সাহিত্যে ‘মধুকবি’ নামে পরিচিত মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
সূত্র. বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া।
মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বিবেচনা করা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার হিসেবে। বাংলা ভাষায় সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক তিনি। বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্যের ভাবধারা সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন মধুসূদন। ১৮২৪ সালের আজকের দিনে জন্ম নেন তিনি।
যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম। বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার প্রতিষ্ঠিত উকিল। মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। প্রথমে মধুসূদন সাগরদাঁড়ির পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। পরে কলকাতায় খিদিরপুর স্কুলে পড়েন। ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। সেখানে বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন।
মেধাবী ছাত্র মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি এল রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। রিচার্ডসন মধুসূদনের মনে কাব্যের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলায় ভূমিকা রাখেন। কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যেই মধুসূদন নিজের আলাদা একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন। কলেজের পরীক্ষায় বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারী শিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে স্বর্ণপদক পান।
হিন্দু কলেজে পড়ার সময় মধুসূদন কাব্যচর্চা শুরু করেন। তখন তাঁর কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেতে (ইংল্যান্ড) যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল সেখানে গেলে বড় কবি হওয়া যাবে। ১৮৪৩ সালে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং নামের আগে ‘মাইকেল’ শব্দটি যোগ করেন। হিন্দু কলেজে খ্রিষ্টানরা পড়ালেখা করতে না পারায় মধুসূদনকে কলেজ ছাড়তে হয়। ১৮৪৪ সালে তিনি বিশপস কলেজে ভর্তি হন। ইংরেজি ছাড়াও গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখার সুযোগ পান বিশপস কলেজে।
এ সময় ধর্মান্তরের কারণে মধুসূদন আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বাবাও অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেন। তখন বিশপস কলেজের মাদ্রাজি বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজে (এখনকার চেন্নাই) চলে যান। এটি ১৮৪৮ সালের ঘটনা। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। প্রথমে মাদ্রাজ মেইল অরফ্যান অ্যাসাইলাম স্কুলে এবং পরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি হাইস্কুলে।
মাদ্রাজের সঙ্গে মধুসূদনের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জড়িয়ে আছে। এখানেই তিনি সাংবাদিক ও কবি হিসেবে পরিচিতি পান। মাদ্রাজ সার্কুলেটর, হিন্দু ক্রনিকলসসহ বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনা করেন। বেশ কয়েক বছর মাদ্রাজ স্পেক্টেটরের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৪৮ সালে টিমোথি পেনপয়েম ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য কেপ্টিভ লেডি’ প্রকাশিত হয়।
মাদ্রাজেই মধুসূদন রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ নারীকে বিয়ে করেন। আট বছর স্থায়ী হয়েছিল তাঁদের সংসার। রেবেকার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মধুসূদন এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিয়ে করেন।
এর মধ্যে মধুসূদনের মা ও বাবার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে হেনরিয়েটাকে নিয়ে ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় আসেন। সেখানে তিনি পুলিশ কোর্টের কেরানি এবং পরে দোভাষীর কাজ করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেও কিছু আয় করেন। বন্ধুবান্ধব এ সময় বাংলায় সাহিত্যচর্চা করতে উৎসাহ দেন মধুসূদনকে। নিজের মধ্যও একটি তাগিদ অনুভব করছিলেন। বাংলা সাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব অনুভব করেন তিনি। একপর্যায়ে কলকাতার পাইকপাড়ার রাজাদের বেলগাছিয়া থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত হন। তার পরই বলা চলে নাট্যকার হিসেবেই বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে পদার্পণ হয় মধুসূদনের। মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে ১৮৫৮ সালে পাশ্চাত্য রীতিতে রচনা করেন নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’। একে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম সার্থক ও আধুনিক মৌলিক নাটক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পরের বছর মধুসূদন রচনা করেন দুটি প্রহসন। ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’। কাহিনি, সংলাপ ও চরিত্র সৃষ্টির দিক থেকে এগুলো ছিল অনন্য। মধুসূদনের রচনাগুলোর নতুনত্ব সবার নজর কাড়ে। পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন তিনি।
১৮৬০ সালে গ্রিক পুরাণের কাহিনি অবলম্বনে রচনা করেন ‘পদ্মাবতী’ নাটক। এ নাটকে ইংরেজি কাব্যের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার এই প্রথম। এর মাধ্যমে বাংলা কাব্যকে ছন্দের বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। অমিত্রাক্ষর ছন্দে সে বছরই রচনা করেন ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’। পরের বছর ১৮৬১ সালে রামায়ণের কাহিনি নিয়ে একই ছন্দে লেখেন ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। এটি বাংলা ভাষায় প্রথম মৌলিক মহাকাব্য। এই কাব্যের মাধ্যমেই মহাকবির মর্যাদা পান। তাঁর অমিত্রাক্ষর ছন্দও বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
মধুসূদনের কাব্যে নারী বিদ্রোহের সুর চোখে পড়ে। তাঁর ‘বীরাঙ্গনা’ (১৮৬২) পত্রকাব্যের নায়িকাদের দিকে তাকালে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। পরবর্তী সময়ে মধুসূদন দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ১৮৬২ সালে ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ডে যান। সেখান থেকে ১৮৬৩ সালে প্যারিস হয়ে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে যান। সেখানে থাকার সময় ইতালীয় কবি পেত্রার্কের অনুকরণে বাংলায় সনেট লিখতে শুরু করেন। এর আগে বাংলা ভাষায় সনেটের প্রচলন ছিল না। ভার্সাই নগরীতে থাকার সময় নিজের দেশ ও মাতৃভাষাকে নতুনভাবে দেখতে ও বুঝতে পারেন। যার প্রকাশ ঘটে তাঁর ‘বঙ্গভাষা’, ‘কপোতাক্ষ নদে’র মতো সনেটে। এই সনেটগুলো প্রকাশিত হয় ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ নামে।
১৮৬৫ সালে পুনরায় ইংল্যান্ডে যান এবং ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৮৬৭ সালে দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন। ওকালতিতে সুবিধা করতে না পেরে ১৮৭০ সালে হাইকোর্টের অনুবাদ বিভাগে যোগ দেন। দুই বছর পর এ চাকরি ছেড়ে পুনরায় ওকালতি শুরু করেন। এবার সফলতা পেলেও অমিতব্যয়িতার কারণে ঋণে জড়ান।
তবে এই সবকিছুর মধ্যেও মধুসূদন কাব্যচর্চা চালিয়ে যান। হোমারের ইলিয়াড অবলম্বনে ১৮৭১ সালে রচনা করেন ‘হেক্টরবধ’। তাঁর শেষ রচনা ‘মায়াকানন’ (১৮৭৩) নামের একটি নাটক।
জীবনের শেষ দিনগুলো মোটেই ভালো কাটেনি মাইকেল মধুসূদনের। ঋণ, অর্থাভাব, অসুস্থতা, চিকিৎসাহীনতা—সবকিছু মিলিয়ে কঠিন সময় পার করেন। স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর কয়েক দিন পর ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কপর্দকহীন অবস্থায় আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বাংলা সাহিত্যে ‘মধুকবি’ নামে পরিচিত মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
সূত্র. বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া।
খাবার মজাদার করতে আমরা সাধারণভাবে তেল-মসলার খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলি। সেখান থেকে বাদ যায় না পেঁয়াজ কিংবা রসুন। পেঁয়াজকে কায়দা করে সরিয়ে রাখলেও খাবার মজাদার হতে পারে। তেমনই কিছু রেসিপি...
৫ ঘণ্টা আগেবাংলা অঞ্চলে মিষ্টিজাতীয় প্রাচীন খাবারগুলোর মধ্যে সন্দেশের নাম আছে একেবারে প্রথম দিকে। সব মিষ্টির কিছু না কিছু বদল হলেও, এর বদল হয়েছে খুবই কম। যশোরের নলেন গুড়ের সন্দেশ, মানিকগঞ্জ বা নাগরপুরের প্যারা সন্দেশ, পাবনার মাছের পেটি সন্দেশ ইত্যাদি কে না খেতে পছন্দ করে!
৬ ঘণ্টা আগেজীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে দারুচিনি দ্বীপের কথা, তার রহস্যময় শ্যামলিমার কথা, সেই সবুজের গহিনে দিকহারা নাবিকের আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষার কথা। এই দারুচিনি দ্বীপ কি আসলে কোনো সমুদ্রঘেরা ভূখণ্ড, নাকি বনলতা সেন নিজেই, তা নিয়ে কবিরা বিতর্ক করুক। আমরা বরং এই দ্বীপের তত্ত্বতালাশ করি।
৬ ঘণ্টা আগে‘প্রসেসেস’-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভাতের মাড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি হজমযোগ্য স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে কাজ করে। এমনকি এটি ওজন কমাতে পারে।
৬ ঘণ্টা আগে