ঈদে থাকুক রেশমি পোশাক

রিমন রহমান, রাজশাহী
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৮: ২৯
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ৩৩

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে রেশম চাষ ও এর সুতা ছড়িয়ে পড়েছিল ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী একসময় বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল রেশম চাষ ও সুতার জন্য। এর টানেই রাজশাহী ছুটে এসেছিল ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকেরা।

যদিও রাজশাহীতে রেশমি কাপড় উৎপাদনে এখন ভাটার টান। রেশমের চাষ এখন কোনোমতে টিকে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর অল্প কিছু জায়গায়। তবে এর ঐতিহ্য মলিন হয়নি একটুও। এখনো যেকোনো উৎসবে স্থানীয় অভিজাত ব্যক্তিদের প্রথম পছন্দ থাকে রাজশাহী সিল্ক বা রেশমের কাপড়। রাজশাহীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখনো সিল্কের কাপড় তৈরি করে বিপণন করে থাকে।

আর কয়েক দিন পরেই ঈদ। এরপর পয়লা বৈশাখ। এ দুই উৎসব বিবেচনায় রেখে এবার পোশাকের নকশা করেছেন ডিজাইনাররা। রঙের দিক থেকে রেশম বস্ত্রে প্রাধান্য পেয়েছে লাল ও সাদা। দোকানগুলোতে এ দুই রঙের কাপড়ের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। 

সিল্ক মানেই রাজশাহী
রেশমশিল্প বিকাশের জন্য রাজশাহীতে রয়েছে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড এবং রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এখানে একটি কারখানাও আছে। এই কারখানায় সিল্কের কাপড় তৈরি হয়। ব্যক্তিমালিকানায় থাকা কয়েকটি রেশম কারখানাকে সুতার জন্য নির্ভর করতে হয় চীনের ওপর। চীন থেকে সুতা এলেও কাপড় তৈরির কারিগর শুধু রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেই আছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কিছু মানুষ এই সুতা থেকে কাপড় তৈরি করেন। ২০১৭ সালে ‘রাজশাহী সিল্ক’ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ঈদ-পূজা কিংবা পয়লা বৈশাখের মতো উৎসবে বিত্তবানদের প্রথম পছন্দ সিল্কের কাপড়। এবারও এর ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি।

ঈদের পোশাকে নতুনত্ব
রাজশাহীতে সিল্কের পোশাক ভালো বিক্রি হয় সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেডের শোরুমে। নগরীর সপুরা এলাকায় একসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা ও শোরুম। সপুরা সিল্ক এবার নতুন ডিজাইনের শাড়ি এনেছে। শাড়িতে করা হয়েছে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, ব্লক এবং রংতুলিতে আর্টপ্রিন্ট। এনডি, বলাকা ও ধূপিয়ান সিল্কের পাশাপাশি এবার মসলিন সিল্কের পাঞ্জাবিও এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। আগে শুধু সিল্কের টু-পিস ও থ্রি-পিস পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম মেয়েদের জন্য এনেছে ওয়ান পিস। নতুন পণ্যের মধ্যে আছে সিল্কের শার্ট। চিকন এই কাপড়ের নিচে দেওয়া হয়েছে ফলস সুতি। এনডি, মটকা, বলাকা ও সফট সিল্কের শার্ট, ওড়না ও স্কার্ফও পাওয়া যাচ্ছে রাজশাহীতে।
রাজশাহীর একটি প্রতিষ্ঠান ঊষা সিল্ক। প্রতিষ্ঠানটি এবার ঈদ ও পয়লা বৈশাখ বিবেচনায় রেখে পোশাকে রং বিন্যাস করেছে লাল ও সাদা প্রাধান্য দিয়ে। 

রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশনও এবার লাল-সাদাকে প্রাধান্য দিয়েছে। এই রং দুটি কেন্দ্র করে নতুন ডিজাইনে শাড়িও এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী রেশম কারখানার শোরুমে শতভাগ খাঁটি সিল্কের প্রিন্ট থান ও গরদ কাপড়ের শাড়ি, টু-পিস, গজ কাপড়, লেডিস শাল, ওড়না, হিজাব ও স্কার্ফ পাওয়া যাচ্ছে।

ঈদবাজার 
এরই মধ্য়ে কেনাকাটায় মুখর হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিসিক সপুরা এলাকায় থাকা সপুরা সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন, ঊষা সিল্কসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। সপুরা সিল্কের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, ‘রোজার শুরুতে তিনটি সরকারি ছুটি ছিল। সেই ছুটিতেই কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। এবার বিক্রি খুব ভালো।’ একই কথা জানালেন ঊষা সিল্কের মহাব্যবস্থাপক জহুরুল ইসলাম ও রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা। তাঁরা জানান, ঈদের জন্য প্রতিদিন সকাল সকাল তাঁরা শোরুম খুলছেন। তবে ক্রেতারা বেশি আসছেন ইফতারের পরে। মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্রি চলছে। কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঈদে বিক্রি বেশ ভালো বলেও জানান তাঁরা।

সপুরা সিল্কের শোরুমে কথা হয় শাড়ি কিনতে আসা ক্রেতা আফিসা তাবাসসুমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সিল্কের শাড়ি আর পাঞ্জাবি ছাড়া যেন ঈদই মনে হয় না। তাই ঈদে আগ্রহ নিয়ে এসব কেনাকাটা করা হয়। আত্মীয়-স্বজনের জন্যও কিনতে হয়। পাঠাতে হয় দেশের নানা প্রান্তে। তাই এবার একটু আগেভাগেই কেনাকাটা করতে চলে এসেছি। এখানকার কালেকশন খুব ভালো।’

ঢাকায় যেখানে শোরুম
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে মোন্তাজ প্লাজা, গুলশান-২-এর গুলশান অ্যাভিনিউয়ের শরীয়ত উল্লাহ ভবন, শান্তিনগরের চামেলীবাগের টুইন টাওয়ারস কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স এবং চট্টগ্রামের ইউনুসকো সিটি সেন্টারে রাজশাহীর সপুরা সিল্কের শোরুম রয়েছে। ঊষা সিল্কের শোরুম রয়েছে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের মমতাজ প্লাজায়। এখানে রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশনের শোরুমও রয়েছে। এ ছাড়া ফার্মগেটে তেজগাঁও থানার বিপরীতে জেডিপিসি ভবনে রাষ্ট্রায়ত্ত রাজশাহী রেশম কারখানার একটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।

দরদাম
ব্যক্তিমালিকানাধীন রেশম কাপড়ের শোরুমগুলোয় সিল্কের শাড়ি ২ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার, শার্ট ৫৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০, পাঞ্জাবি ১ হাজার ২০০ থেকে ২৫ হাজার, থ্রি-পিস ১ হাজার ২০০ থেকে ১৭ হাজার, হিজাব, ওড়না ও স্কার্ফ ৭৫০ থেকে ৭ হাজার টাকায় কেনা যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত রেশম কারখানার শোরুমে শুধু দুই ধরনের শাড়ি পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রিন্ট থানের দাম ৫ হাজার ৫০০ আর গরদ কাপড়ের শাড়ি ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত