সুমন্ত গুপ্ত
ঠিক সকাল ৯টায় আমাদের গাড়ি এসে হাজির। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না, কোথায় যাওয়া যায়। ড্রাইভারের কাছে নিদান চাইলাম। তিনি বললেন, রেমা-কালেঙ্গা ফরেস্ট।
রেমা-কালেঙ্গা নাম শুনে নিজের ওপর রাগ হলো, কেন এই নাম এতক্ষণ মনে করতে পারছিলাম না, সেটা ভেবে। আমি নিজেও যাইনি সেখানে। সবাই খুব আনন্দিত; কিন্তু কেউ রাস্তা চেনে না। শেষমেশ ইন্টারনেটের ওপর ভরসা করে রওনা দিলাম।
বৃষ্টিতে বেহাল রাস্তা। সেই পথে চলতে চলতে আমাদের গাড়ির অবস্থাও নাজুক। বহু নাটকীয়তার পর গাড়ি ছেড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রেমা-কালেঙ্গার উপকণ্ঠে পৌঁছানো গেল অবশেষে। নেমে শুরু হলো হাঁটা। শেষ পর্যন্ত দেখা মিলল রেমা-কালেঙ্গার। ঘড়িতে তখন বেলা ৩টা বাজে। গাইড আমিনের সঙ্গে দেখা হলো।
প্রকৃতি এখানে উজাড় করে সব দিয়েছে। এখন শুধুই সৌন্দর্য উপভোগ। বনের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল চশমাপরা হনুমান। এই অভয়ারণ্যে ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, গাছপালা ও লতাপাতা আছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদগুলোর মধ্যে রয়েছে সেগুন, কাঁকড়, হারগোজা, হরীতকী, বহেড়া, জাম, ডুমুর, কাঁঠাল, রাতা ইত্যাদি। আছে ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৬৭ প্রজাতির পাখি। উল্লেখযোগ্য পাখিগুলো হচ্ছে ভীমরাজ, পাহাড়ি ময়না, কাও ধনেশ, বনমোরগ ইত্যাদি। ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে এখানে।
ছবির মতো সুন্দর এ বন দেখার জন্য আছে তিনটি ট্রেইল বা পথ। ৩০ মিনিট, ১ ঘণ্টা ও ৩ ঘণ্টার ট্রেইলের যেকোনো একটি বেছে নেওয়া যায়। এক ঘণ্টার ট্রেইল ধরে আমরা এগিয়ে চললাম। প্রথমে দেখা পেলাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ক্যাম্প। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখা গেল বীর উত্তম আবদুল মান্নানের কবর। তিনি এখানে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন।
আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আবার কোথাও নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছি নতুন কিছু দেখার আশায়। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে যে কারও মন ভরে যাবে রেমা-কালেঙ্গায়। আমরা গভীর বন দিয়ে হাঁটছি। কোথাও প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। গাইড জানালেন, রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ির ১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য। ১৯৮১ সালে এই রিজার্ভ ফরেস্টের ১ হাজার ৯৫ হেক্টর এলাকাকে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালে ফরেস্টের আরও কিছু জমি বৃদ্ধি করে মোট ১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর করা হয়। এই বনে ত্রিপুরা, সাঁওতাল এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে।
গভীর বনে গিয়ে দেখা গেল বনমুরগির ডিম। হঠাৎ গাইড মুখে আঙুল দিয়ে আমাদের চুপ থাকতে বললেন। একটা ঝাঁজালো গন্ধ নাকে লাগছে। মনে হচ্ছে, কোনো বিষধর সাপ শ্বাস ছাড়ছে। আমরা এদিক-ওদিক তাকালাম। এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের মাঝে আমরা এগিয়ে চলছি।
ট্রেইলের শেষ প্রান্তে দেখা গেল অসম্ভব সুন্দর একটি লেক। বন্য প্রাণীদের পানির চাহিদা মেটাতে এটি তৈরি করা হয়েছে। লেকের পাশে রয়েছে একটা ওয়াচ টাওয়ার। ইচ্ছা করলে উঠে যাওয়া যায়। ওপর থেকে পুরো বনভূমি দেখার মজাই আলাদা।
যাবেন কীভাবে
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের অবস্থান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়। দুইভাবে যাওয়া যায় সেখানে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাস কিংবা ট্রেনে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত; সেখান থেকে অটোরিকশায় কালেঙ্গা। বাসভাড়া ২৫৯ থেকে ৪০০ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জে থামে আন্তনগর ট্রেন উপবন এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে এই ট্রেন। ভাড়া ১৭০ থেকে ৬৭৩ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে কালেঙ্গার ট্যাক্সিভাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। কালেঙ্গা যাওয়ার অন্য পথটি হলো ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল। সেখান থেকে জিপে কালেঙ্গা। শ্রীমঙ্গল থেকে গেলে জঙ্গলের ভেতরের দীর্ঘ পথটি চলতে ভালো লাগবে সবার। রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ভ্রমণে অবশ্যই সঙ্গে গাইড নিতে হবে।
ঠিক সকাল ৯টায় আমাদের গাড়ি এসে হাজির। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না, কোথায় যাওয়া যায়। ড্রাইভারের কাছে নিদান চাইলাম। তিনি বললেন, রেমা-কালেঙ্গা ফরেস্ট।
রেমা-কালেঙ্গা নাম শুনে নিজের ওপর রাগ হলো, কেন এই নাম এতক্ষণ মনে করতে পারছিলাম না, সেটা ভেবে। আমি নিজেও যাইনি সেখানে। সবাই খুব আনন্দিত; কিন্তু কেউ রাস্তা চেনে না। শেষমেশ ইন্টারনেটের ওপর ভরসা করে রওনা দিলাম।
বৃষ্টিতে বেহাল রাস্তা। সেই পথে চলতে চলতে আমাদের গাড়ির অবস্থাও নাজুক। বহু নাটকীয়তার পর গাড়ি ছেড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রেমা-কালেঙ্গার উপকণ্ঠে পৌঁছানো গেল অবশেষে। নেমে শুরু হলো হাঁটা। শেষ পর্যন্ত দেখা মিলল রেমা-কালেঙ্গার। ঘড়িতে তখন বেলা ৩টা বাজে। গাইড আমিনের সঙ্গে দেখা হলো।
প্রকৃতি এখানে উজাড় করে সব দিয়েছে। এখন শুধুই সৌন্দর্য উপভোগ। বনের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল চশমাপরা হনুমান। এই অভয়ারণ্যে ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, গাছপালা ও লতাপাতা আছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদগুলোর মধ্যে রয়েছে সেগুন, কাঁকড়, হারগোজা, হরীতকী, বহেড়া, জাম, ডুমুর, কাঁঠাল, রাতা ইত্যাদি। আছে ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৬৭ প্রজাতির পাখি। উল্লেখযোগ্য পাখিগুলো হচ্ছে ভীমরাজ, পাহাড়ি ময়না, কাও ধনেশ, বনমোরগ ইত্যাদি। ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে এখানে।
ছবির মতো সুন্দর এ বন দেখার জন্য আছে তিনটি ট্রেইল বা পথ। ৩০ মিনিট, ১ ঘণ্টা ও ৩ ঘণ্টার ট্রেইলের যেকোনো একটি বেছে নেওয়া যায়। এক ঘণ্টার ট্রেইল ধরে আমরা এগিয়ে চললাম। প্রথমে দেখা পেলাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ক্যাম্প। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখা গেল বীর উত্তম আবদুল মান্নানের কবর। তিনি এখানে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন।
আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আবার কোথাও নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছি নতুন কিছু দেখার আশায়। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে যে কারও মন ভরে যাবে রেমা-কালেঙ্গায়। আমরা গভীর বন দিয়ে হাঁটছি। কোথাও প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। গাইড জানালেন, রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ির ১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য। ১৯৮১ সালে এই রিজার্ভ ফরেস্টের ১ হাজার ৯৫ হেক্টর এলাকাকে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালে ফরেস্টের আরও কিছু জমি বৃদ্ধি করে মোট ১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর করা হয়। এই বনে ত্রিপুরা, সাঁওতাল এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে।
গভীর বনে গিয়ে দেখা গেল বনমুরগির ডিম। হঠাৎ গাইড মুখে আঙুল দিয়ে আমাদের চুপ থাকতে বললেন। একটা ঝাঁজালো গন্ধ নাকে লাগছে। মনে হচ্ছে, কোনো বিষধর সাপ শ্বাস ছাড়ছে। আমরা এদিক-ওদিক তাকালাম। এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের মাঝে আমরা এগিয়ে চলছি।
ট্রেইলের শেষ প্রান্তে দেখা গেল অসম্ভব সুন্দর একটি লেক। বন্য প্রাণীদের পানির চাহিদা মেটাতে এটি তৈরি করা হয়েছে। লেকের পাশে রয়েছে একটা ওয়াচ টাওয়ার। ইচ্ছা করলে উঠে যাওয়া যায়। ওপর থেকে পুরো বনভূমি দেখার মজাই আলাদা।
যাবেন কীভাবে
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের অবস্থান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়। দুইভাবে যাওয়া যায় সেখানে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাস কিংবা ট্রেনে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত; সেখান থেকে অটোরিকশায় কালেঙ্গা। বাসভাড়া ২৫৯ থেকে ৪০০ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জে থামে আন্তনগর ট্রেন উপবন এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে এই ট্রেন। ভাড়া ১৭০ থেকে ৬৭৩ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে কালেঙ্গার ট্যাক্সিভাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। কালেঙ্গা যাওয়ার অন্য পথটি হলো ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল। সেখান থেকে জিপে কালেঙ্গা। শ্রীমঙ্গল থেকে গেলে জঙ্গলের ভেতরের দীর্ঘ পথটি চলতে ভালো লাগবে সবার। রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ভ্রমণে অবশ্যই সঙ্গে গাইড নিতে হবে।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে