অনলাইন ডেস্ক
নিকোলাস চাজি ও মাথিল্ড ভোনির প্রথম দেখা হয় ২০১৫ সালে। দুজনেরই বন্ধু এমন একজনের বাসার এক অনুষ্ঠানে। আলাপচারিতার একপর্যায়ে জানতে পারেন, দুজনের একটি বিষয়ে দারুণ মিল, সেটি ভ্রমণের আগ্রহ। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে স্নাতকোত্তর শ্রেণির পড়ালেখা করছিলেন দুজনেই। একজনের আরেকজনকে এতটাই ভালো লেগে যায় যে প্রথম ডেটটা কোথায় করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। সিদ্ধান্ত হলো, এটা হবে বেলজিয়ামের সড়কে একটি ভ্রমণ।
‘বেলজিয়ামের সড়কে একটি ভ্রমণ দিয়ে এর শুরু’, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন থাইল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ২৯ বছর বয়স্ক নিকোলাস চাজি, ‘তারপর থেকে আমরা একসঙ্গে ছুটির দিন কাটাতে লাগলাম আর সড়কপথে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে শুরু করলাম।’
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পরের কয়েকটা বছর ছোট ছোট ভ্রমণ করলেন দুজনে। তারপরই ভাবলেন, পরের ভ্রমণটা আরও লম্বা হবে, বিশ্বের নানা প্রান্তে এক বছরের একটা ভ্রমণ পরিকল্পনা ডালপালা মেলতে লাগল তাঁদের মনে।
একই স্বপ্ন
‘আমাদের চিন্তাভাবনা ছিল কীভাবে ভ্রমণটা চালিয়ে যাওয়া যায়,’ বলেন ফ্রান্স থেকে আসা ২৯ বছরের ভোনি, ‘আমাদের দুজনেরই স্বপ্ন ছিল একই, তবে প্রথমে ভেবেছিলাম এটা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’
যখন বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করলেন, তখন মনে হলো স্বপ্নটি সত্যি করা সম্ভব। এ জন্য তাঁদের বেশ কিছু অর্থ জমাতে হবে আর জীবনধারায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
ভোনি জানান, তাঁরা বুঝতে পারেন, সব কটি গন্তব্য ঘুরে দেখার জন্য অন্তত তিন বছর সময় দিতে হবে তাঁদের। ‘এই কাজটা শেষ করা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে আমাদের।’ বলেন তিনি।
নিজেদের তিন বছর সময় দিলেন তাঁরা ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত অর্থ জমানোর জন্য। ওই অর্থ দিয়ে তাঁরা গাড়িতে চেপে সাত মহাদেশের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করবেন, অতিক্রম করবেন ৩ লাখ কিলোমিটারের মতো দূরত্ব।
প্রতি মাসের আয়ের একটি বড় অংশ আলাদা একটি অ্যাকাউন্টে এ বাবদ জমা করতে লাগলেন তাঁরা। চাজি জানান, এ সময় বেশ কঠোর জীবন-যাপন শুরু করেন। রেস্তোরাঁর খরচ কমিয়ে দিলেন, বেঁচে দিলেন খুব দরকারি ছাড়া বাকি সবকিছু।
২০২০ সালের আগস্টে ২০১২ মডেলের একটি ল্যান্ডরোভার ডিফেন্ডার কেনেন তাঁরা। নাম রাখেন অ্যালবাট্রস। একে চার চাকার ওপরে ছোট্ট এক ঘরে বদলে নিলেন। এর মধ্যে আছে রূপান্তর সক্ষম একটি বিছানা, সোফা আর মাথার ওপরে প্রয়োজন হলে টাঙানো যায় এমন একটি ছাদ।
যখন তিন বছরের সময়সীমার শেষে পৌঁছালেন, তখন লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছুটা পিছিয়ে তাঁরা। হিসাব করেছিলেন প্রতিবছরের জন্য ৩০ হাজার ইউরোর মতো প্রয়োজন হবে তাঁদের। তবে যা-ই হোক, এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
‘পরিকল্পনা করার মতো অনেক কিছু ছিল, ’ বলেন চাজি, ‘শেষ মিনিট পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হলো আমাদের।’
২০২১ সালে নেক্সট মেরিডিয়ান ডট এক্সপিডিশন নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন দুজনে। তাঁদের ভ্রমণের ভিডিও দেওয়াই উদ্দেশ্য। তাঁদের পরীক্ষামূলক ভ্রমণগুলোর একটির ভিডিও এতে পোস্ট করেন।
রোমাঞ্চকর ভ্রমণ
২০২২ সালের এপ্রিলে তাঁদের মূল যাত্রা শুরু হলো ফ্রান্স থেকে। লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড হয়ে একটি চক্র সম্পন্ন করলেন তাঁরা।
মজার ঘটনা, তাঁদের বিভিন্ন ভ্রমণের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা এবং সামনে কোথায় যাচ্ছেন জানানোর পর চাজি ও ভোনি আবিষ্কার করলেন, মানুষ তাঁদের ভ্রমণে রাত কাটানোর জন্য জায়গা দিতে চাচ্ছে। ডেনমার্কে এ রকম একটি প্রস্তাবে রাজি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
‘ডিনারে বসে আলাপ করলেন আমরা (আমন্ত্রণদাতার সঙ্গে)। বুঝতে পারলাম, দুই সপ্তাহ ভ্রমণের সময় ওই এক রাতে বেশি জানতে পেরেছি।’ প্রথম এ রকম থাকার অভিজ্ঞতা বলেন ভোনি, ‘ওই একজন মানুষ আমাদের জায়গাটি সম্পর্কে অনেক তথ্য দিলেন।’
তারপর থেকে তাঁরা ঠিক করলেন, এ ধরনের প্রস্তাবগুলোয় রাজি হয়ে যাবেন। এতে চলার পথে নতুন সব পথ খুলে যাবে।
‘যে দেশেই যাই, অনেক লোকের কাছ থেকে তাঁদের বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ পাই আমরা।’ বলেন চাজি, ‘কাজেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এমন মানুষদের লম্বা একটি তালিকা আছে আমাদের কাছে।’
ইউরোপ ভ্রমণের শেষ দিকে অ্যালবাট্রসকে জাহাজে করে কানাডার হালিফাক্সে পাঠিয়ে দেন। আর তাঁরা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ফেরেন ফ্রান্সে। তারপর উড়োজাহাজে কানাডা পৌঁছে প্রিয় গাড়িটায় চেপে বসেন আবার। মার্কিন মুলুকের গোটা আলাস্কা অঙ্গরাজ্য পেরোনোর পর অতিক্রম করেন ওয়াইয়োমিং, কলোরাডো, উতাহ ও অ্যারিজোনা। সেখান থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পেরিয়ে গাড়ি নিয়ে মেক্সিকো ভ্রমণ শেষে প্রবেশ করেন মধ্য আমেরিকায়।
একে একে বেলিজ, গুয়াতেমালা, এল সালভেদর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা এবং পানামা ভ্রমণ করেন। তরপর কলম্বিয়াগামী জাহাজে তুলে দেন অ্যালবাট্রসকে।
আন্তরিক অভ্যর্থনা
কলম্বিয়া থেকে অ্যালবাট্রস নিয়ে তাঁরা যান ইকুয়েডরে। লেখাটি লেখার সময় পেরুর দিকে চলেছেন তাঁরা। ভ্রমণ শুরু করার পর এল সালভেদর ছাড়া যে দেশেই গেছেন, অন্তত একটি রাত কাটিয়েছেন এ জুটি।
‘প্রতিটি দেশের বেলাতেই আমাদের উদ্দেশ্য হলো কারও বাড়িতে যাওয়া, এক বা দুই রাত কাটানো, দেশটি সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানা, ’ বলেন চাজি, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে দেখা করা, খাবারের স্বাদ নেওয়া এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা।’
‘কারণ, আমরা খেয়াল করলাম, একটি জলপ্রপাত বা পর্বত দেখার চেয়ে এ বিষয়টি স্মৃতির ওপর বেশি প্রভাব বিস্তার করে।’
এ জুটি জানান, অস্ট্রেলিয়ায় কমপক্ষে ৩০ জন এবং চিলিতে ৫০ জনের মতো মানুষ তাঁদের রাতের জন্য একটি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
‘অনেক লোকই আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এগুলোর মধ্যে বাছাই করা কঠিন, ’ চাজি মন্তব্য করেন, ‘তবে আমরা অন্তত একটি বিষয় করার চেষ্টা করি। যে দেশে যাই, আমরা সব সময় এমন একজন স্থানীয় ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, যিনি অ্যালবাট্রসের ওপর ওই দেশের পতাকা সেঁটে দেবেন।’
ভ্রমণের সময় কখনো কখনো ঝামেলায়ও পড়তে হয়েছে তাঁদের। মেক্সিকোর কথাই ধরুন। হাঁটুতে ব্যথা পাওয়ার কারণে একটি অপারেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় চাজিকে। এতে সেখানে কয়েকটি সপ্তাহ বাড়তি থাকতে হয় তাঁদের। অ্যালবাট্রসের কারিগরি কিছু সমস্যাও দেখা দেয় কয়েকবার।
‘লোকেরা মজা করে বলে, আপনার যদি ল্যান্ডরোভার থাকে, তবে আপনি একজন মেকানিকে পরিণত হবেন’ চাজি বলেন, ‘এখন আমি আসলেই জানি, কীভাবে খুচরা যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হয়। আর গাড়ির যন্ত্রপাতিগুলো খুলে ফেলে পরে আবার জায়গামতো বসিয়ে দিতে মোটেই ভয় পাই না।’
বৈরী আবহাওয়া
গাড়ির সমস্যা ছাড়া বৈরী আবহাওয়াও তাদের বেগ দিয়েছে বলে জানান এই যুগল।
‘মধ্য আমেরিকায় পাঁচ মাস ধরে দিনের বেলা আর্দ্রতা আকাশচুম্বী থাকে, ঘামে জবজবে হয়ে যাবে আপনার শরীর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবার পেয়েছি এর বিপরীত চিত্র।’
চাজি মধ্য আমেরিকায় কাটানো প্রতিটি দিন ও রাতের সেই ঘামে গোসল করার স্মৃতি স্মরণ করে জানান, এখন ইকুয়েডরের পাহাড়ি এলাকায় বেশ আনন্দে আছেন।
পেরুতে পৌঁছার পর আর্জেন্টিনার মধ্য দিয়ে যাবেন। তারপরের গন্তব্য অ্যান্টার্কটিকা। সফরের পরের ধাপটি তাদের নিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ায়, তারপর নিজেদের আবিষ্কার করতে চান এশিয়ায়।
যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী যায়, ভ্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে ইউরোপে ফিরে যাওয়ার আগে আফ্রিকা পাড়ি দেবেন অ্যালবাট্রস নিয়ে।
চাজি বলেছেন, তিনি বিশেষভাবে আফ্রিকাকে গভীরভাবে জানতে উন্মুখ হয়ে আছেন। এটিকে তাঁর ‘প্রিয় মহাদেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। যদিও তাঁরা যাত্রায় এক বছরের বেশি সময় ইতিমধ্যে পার করেছেন, পথে বিভিন্ন কারণে দেরি হওয়ায় ভ্রমণ সময় অন্তত এক বছর বাড়াতে হবে বলে মনে করেন।
অনুপ্রেরণার যাত্রা
তাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারের সঙ্গেও কাজ করছেন। এঁদের মধ্যে আছে জাহাজ নিয়ে রোমাঞ্চকর অভিযানে বের হয় এমন কোম্পানিও।
তাঁদের এই ভ্রমণের যে কিছু চমৎকার দিক আছে, সেগুলো জানিয়েছেন এ যুগল।
‘যখন কোনো কাজে থাকেন, তখন আপনার কাছে এত সময় থাকে না,’ চাজি বলেন, ‘কিন্তু আমাদের এখন চিন্তা করার জন্য অনেক সময় আছে।’
‘জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্যসহ নানা বিষয়ে আকর্ষণীয় সব পরিকল্পনা আমাদের মাথায় আসে।’
আপাতত অবশ্য নিজেদের এই দুঃসাহসিক অভিযানের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।
‘আমরা এসব ধারণা আমাদের মাথার এক পাশে জমা করে রেখেছি,’ চাজি বলেন, ‘তিন বা চার বছর পরে আমরা দেখব কী হয়।’
‘আমরা এখনই কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি না; কারণ, আমাদের সামনে অনেকটা পথ যেতে হবে।’
নিকোলাস চাজি ও মাথিল্ড ভোনির প্রথম দেখা হয় ২০১৫ সালে। দুজনেরই বন্ধু এমন একজনের বাসার এক অনুষ্ঠানে। আলাপচারিতার একপর্যায়ে জানতে পারেন, দুজনের একটি বিষয়ে দারুণ মিল, সেটি ভ্রমণের আগ্রহ। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে স্নাতকোত্তর শ্রেণির পড়ালেখা করছিলেন দুজনেই। একজনের আরেকজনকে এতটাই ভালো লেগে যায় যে প্রথম ডেটটা কোথায় করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। সিদ্ধান্ত হলো, এটা হবে বেলজিয়ামের সড়কে একটি ভ্রমণ।
‘বেলজিয়ামের সড়কে একটি ভ্রমণ দিয়ে এর শুরু’, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন থাইল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ২৯ বছর বয়স্ক নিকোলাস চাজি, ‘তারপর থেকে আমরা একসঙ্গে ছুটির দিন কাটাতে লাগলাম আর সড়কপথে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে শুরু করলাম।’
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পরের কয়েকটা বছর ছোট ছোট ভ্রমণ করলেন দুজনে। তারপরই ভাবলেন, পরের ভ্রমণটা আরও লম্বা হবে, বিশ্বের নানা প্রান্তে এক বছরের একটা ভ্রমণ পরিকল্পনা ডালপালা মেলতে লাগল তাঁদের মনে।
একই স্বপ্ন
‘আমাদের চিন্তাভাবনা ছিল কীভাবে ভ্রমণটা চালিয়ে যাওয়া যায়,’ বলেন ফ্রান্স থেকে আসা ২৯ বছরের ভোনি, ‘আমাদের দুজনেরই স্বপ্ন ছিল একই, তবে প্রথমে ভেবেছিলাম এটা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’
যখন বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করলেন, তখন মনে হলো স্বপ্নটি সত্যি করা সম্ভব। এ জন্য তাঁদের বেশ কিছু অর্থ জমাতে হবে আর জীবনধারায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে।
ভোনি জানান, তাঁরা বুঝতে পারেন, সব কটি গন্তব্য ঘুরে দেখার জন্য অন্তত তিন বছর সময় দিতে হবে তাঁদের। ‘এই কাজটা শেষ করা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে আমাদের।’ বলেন তিনি।
নিজেদের তিন বছর সময় দিলেন তাঁরা ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত অর্থ জমানোর জন্য। ওই অর্থ দিয়ে তাঁরা গাড়িতে চেপে সাত মহাদেশের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করবেন, অতিক্রম করবেন ৩ লাখ কিলোমিটারের মতো দূরত্ব।
প্রতি মাসের আয়ের একটি বড় অংশ আলাদা একটি অ্যাকাউন্টে এ বাবদ জমা করতে লাগলেন তাঁরা। চাজি জানান, এ সময় বেশ কঠোর জীবন-যাপন শুরু করেন। রেস্তোরাঁর খরচ কমিয়ে দিলেন, বেঁচে দিলেন খুব দরকারি ছাড়া বাকি সবকিছু।
২০২০ সালের আগস্টে ২০১২ মডেলের একটি ল্যান্ডরোভার ডিফেন্ডার কেনেন তাঁরা। নাম রাখেন অ্যালবাট্রস। একে চার চাকার ওপরে ছোট্ট এক ঘরে বদলে নিলেন। এর মধ্যে আছে রূপান্তর সক্ষম একটি বিছানা, সোফা আর মাথার ওপরে প্রয়োজন হলে টাঙানো যায় এমন একটি ছাদ।
যখন তিন বছরের সময়সীমার শেষে পৌঁছালেন, তখন লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছুটা পিছিয়ে তাঁরা। হিসাব করেছিলেন প্রতিবছরের জন্য ৩০ হাজার ইউরোর মতো প্রয়োজন হবে তাঁদের। তবে যা-ই হোক, এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
‘পরিকল্পনা করার মতো অনেক কিছু ছিল, ’ বলেন চাজি, ‘শেষ মিনিট পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হলো আমাদের।’
২০২১ সালে নেক্সট মেরিডিয়ান ডট এক্সপিডিশন নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন দুজনে। তাঁদের ভ্রমণের ভিডিও দেওয়াই উদ্দেশ্য। তাঁদের পরীক্ষামূলক ভ্রমণগুলোর একটির ভিডিও এতে পোস্ট করেন।
রোমাঞ্চকর ভ্রমণ
২০২২ সালের এপ্রিলে তাঁদের মূল যাত্রা শুরু হলো ফ্রান্স থেকে। লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড হয়ে একটি চক্র সম্পন্ন করলেন তাঁরা।
মজার ঘটনা, তাঁদের বিভিন্ন ভ্রমণের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা এবং সামনে কোথায় যাচ্ছেন জানানোর পর চাজি ও ভোনি আবিষ্কার করলেন, মানুষ তাঁদের ভ্রমণে রাত কাটানোর জন্য জায়গা দিতে চাচ্ছে। ডেনমার্কে এ রকম একটি প্রস্তাবে রাজি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
‘ডিনারে বসে আলাপ করলেন আমরা (আমন্ত্রণদাতার সঙ্গে)। বুঝতে পারলাম, দুই সপ্তাহ ভ্রমণের সময় ওই এক রাতে বেশি জানতে পেরেছি।’ প্রথম এ রকম থাকার অভিজ্ঞতা বলেন ভোনি, ‘ওই একজন মানুষ আমাদের জায়গাটি সম্পর্কে অনেক তথ্য দিলেন।’
তারপর থেকে তাঁরা ঠিক করলেন, এ ধরনের প্রস্তাবগুলোয় রাজি হয়ে যাবেন। এতে চলার পথে নতুন সব পথ খুলে যাবে।
‘যে দেশেই যাই, অনেক লোকের কাছ থেকে তাঁদের বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ পাই আমরা।’ বলেন চাজি, ‘কাজেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এমন মানুষদের লম্বা একটি তালিকা আছে আমাদের কাছে।’
ইউরোপ ভ্রমণের শেষ দিকে অ্যালবাট্রসকে জাহাজে করে কানাডার হালিফাক্সে পাঠিয়ে দেন। আর তাঁরা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ফেরেন ফ্রান্সে। তারপর উড়োজাহাজে কানাডা পৌঁছে প্রিয় গাড়িটায় চেপে বসেন আবার। মার্কিন মুলুকের গোটা আলাস্কা অঙ্গরাজ্য পেরোনোর পর অতিক্রম করেন ওয়াইয়োমিং, কলোরাডো, উতাহ ও অ্যারিজোনা। সেখান থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পেরিয়ে গাড়ি নিয়ে মেক্সিকো ভ্রমণ শেষে প্রবেশ করেন মধ্য আমেরিকায়।
একে একে বেলিজ, গুয়াতেমালা, এল সালভেদর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা এবং পানামা ভ্রমণ করেন। তরপর কলম্বিয়াগামী জাহাজে তুলে দেন অ্যালবাট্রসকে।
আন্তরিক অভ্যর্থনা
কলম্বিয়া থেকে অ্যালবাট্রস নিয়ে তাঁরা যান ইকুয়েডরে। লেখাটি লেখার সময় পেরুর দিকে চলেছেন তাঁরা। ভ্রমণ শুরু করার পর এল সালভেদর ছাড়া যে দেশেই গেছেন, অন্তত একটি রাত কাটিয়েছেন এ জুটি।
‘প্রতিটি দেশের বেলাতেই আমাদের উদ্দেশ্য হলো কারও বাড়িতে যাওয়া, এক বা দুই রাত কাটানো, দেশটি সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানা, ’ বলেন চাজি, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে দেখা করা, খাবারের স্বাদ নেওয়া এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা।’
‘কারণ, আমরা খেয়াল করলাম, একটি জলপ্রপাত বা পর্বত দেখার চেয়ে এ বিষয়টি স্মৃতির ওপর বেশি প্রভাব বিস্তার করে।’
এ জুটি জানান, অস্ট্রেলিয়ায় কমপক্ষে ৩০ জন এবং চিলিতে ৫০ জনের মতো মানুষ তাঁদের রাতের জন্য একটি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
‘অনেক লোকই আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এগুলোর মধ্যে বাছাই করা কঠিন, ’ চাজি মন্তব্য করেন, ‘তবে আমরা অন্তত একটি বিষয় করার চেষ্টা করি। যে দেশে যাই, আমরা সব সময় এমন একজন স্থানীয় ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, যিনি অ্যালবাট্রসের ওপর ওই দেশের পতাকা সেঁটে দেবেন।’
ভ্রমণের সময় কখনো কখনো ঝামেলায়ও পড়তে হয়েছে তাঁদের। মেক্সিকোর কথাই ধরুন। হাঁটুতে ব্যথা পাওয়ার কারণে একটি অপারেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় চাজিকে। এতে সেখানে কয়েকটি সপ্তাহ বাড়তি থাকতে হয় তাঁদের। অ্যালবাট্রসের কারিগরি কিছু সমস্যাও দেখা দেয় কয়েকবার।
‘লোকেরা মজা করে বলে, আপনার যদি ল্যান্ডরোভার থাকে, তবে আপনি একজন মেকানিকে পরিণত হবেন’ চাজি বলেন, ‘এখন আমি আসলেই জানি, কীভাবে খুচরা যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হয়। আর গাড়ির যন্ত্রপাতিগুলো খুলে ফেলে পরে আবার জায়গামতো বসিয়ে দিতে মোটেই ভয় পাই না।’
বৈরী আবহাওয়া
গাড়ির সমস্যা ছাড়া বৈরী আবহাওয়াও তাদের বেগ দিয়েছে বলে জানান এই যুগল।
‘মধ্য আমেরিকায় পাঁচ মাস ধরে দিনের বেলা আর্দ্রতা আকাশচুম্বী থাকে, ঘামে জবজবে হয়ে যাবে আপনার শরীর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবার পেয়েছি এর বিপরীত চিত্র।’
চাজি মধ্য আমেরিকায় কাটানো প্রতিটি দিন ও রাতের সেই ঘামে গোসল করার স্মৃতি স্মরণ করে জানান, এখন ইকুয়েডরের পাহাড়ি এলাকায় বেশ আনন্দে আছেন।
পেরুতে পৌঁছার পর আর্জেন্টিনার মধ্য দিয়ে যাবেন। তারপরের গন্তব্য অ্যান্টার্কটিকা। সফরের পরের ধাপটি তাদের নিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ায়, তারপর নিজেদের আবিষ্কার করতে চান এশিয়ায়।
যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী যায়, ভ্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে ইউরোপে ফিরে যাওয়ার আগে আফ্রিকা পাড়ি দেবেন অ্যালবাট্রস নিয়ে।
চাজি বলেছেন, তিনি বিশেষভাবে আফ্রিকাকে গভীরভাবে জানতে উন্মুখ হয়ে আছেন। এটিকে তাঁর ‘প্রিয় মহাদেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। যদিও তাঁরা যাত্রায় এক বছরের বেশি সময় ইতিমধ্যে পার করেছেন, পথে বিভিন্ন কারণে দেরি হওয়ায় ভ্রমণ সময় অন্তত এক বছর বাড়াতে হবে বলে মনে করেন।
অনুপ্রেরণার যাত্রা
তাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারের সঙ্গেও কাজ করছেন। এঁদের মধ্যে আছে জাহাজ নিয়ে রোমাঞ্চকর অভিযানে বের হয় এমন কোম্পানিও।
তাঁদের এই ভ্রমণের যে কিছু চমৎকার দিক আছে, সেগুলো জানিয়েছেন এ যুগল।
‘যখন কোনো কাজে থাকেন, তখন আপনার কাছে এত সময় থাকে না,’ চাজি বলেন, ‘কিন্তু আমাদের এখন চিন্তা করার জন্য অনেক সময় আছে।’
‘জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্যসহ নানা বিষয়ে আকর্ষণীয় সব পরিকল্পনা আমাদের মাথায় আসে।’
আপাতত অবশ্য নিজেদের এই দুঃসাহসিক অভিযানের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।
‘আমরা এসব ধারণা আমাদের মাথার এক পাশে জমা করে রেখেছি,’ চাজি বলেন, ‘তিন বা চার বছর পরে আমরা দেখব কী হয়।’
‘আমরা এখনই কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি না; কারণ, আমাদের সামনে অনেকটা পথ যেতে হবে।’
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
৪ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
৪ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
৪ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
৪ দিন আগে