অনলাইন ডেস্ক
এটা এমন এক বিষয়, যার স্বপ্ন থাকে অনেক দম্পতিরই। তবে এটা করে দেখাতে পারেন কম মানুষই। ম্যাট প্রায়র ও লিয়া প্রায়র তাঁদের চাকরি ছেড়েছেন, বেচে দিলেন সব সহায়সম্পত্তি। তারপর দুই শিশুসন্তান তিন বছরের জ্যাক আর এক বছরের শার্লেটকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন বিশ্বভ্রমণে। এ মাসের অর্থাৎ জুলাইয়ের ১৫ তারিখে শুরু হয়েছে তাঁদের ভ্রমণ।
অবশ্য এই দম্পতির ডিএনএতেই আছে ভ্রমণের নেশা। ২০১১ সালে লাওসে তাঁদের প্রথম দেখা হয়। ম্যাট তখন একটা লন্ডন ব্ল্যাক ক্লাব গাড়ি চালিয়ে বিশ্ব ঘুরে ব্রিটিশ রেডক্রসের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে লিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েক বছর শিক্ষকতা করে এক বছরের বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন।
ম্যাট যেহেতু গাড়ি নিয়ে ভ্রমণে আছেন, তাই দূর থেকেই যোগাযোগ থাকে দুজনের। এক বছর পর হংকংয়ে এসে একসঙ্গে জীবন শুরু করলেন তাঁরা। নিজের ভ্রমণের সময় ম্যাটের পরিচয় হয় জাপদের সঙ্গে, যারা ১৯২৮ মডেলের একটি ক্ল্যাসিক গাড়িতে ২২ বছর ধরে বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন। এই ভ্রমণের সময় তাঁদের চার সন্তান হয়।
‘লিয়া আর আমার দেখা হওয়ার পরে জাপদের ভ্রমণের কথা বলেছিলাম। তখনই বীজটা রোপিত হয়। ভাবছিলাম, হয়তো আমরাও এ রকম একটা কিছু করব।’ সিএনএনকে বলেন ম্যাট প্রায়র।
যাত্রা হলো শুরু
তাঁদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে এখন। লন্ডন থেকে একটি ইনিয়েস গ্রেনেডিয়ার ফোর হুইলার গাড়িতে যাত্রা শুরু হয়েছে তাঁদের। এর সঙ্গে জোড়া লাগানো আছে প্যাট্রিয়ট কমপ্লেক্স এক্স-৩ নামের একটি ট্রেইলার। আগামী পাঁচ বছরে শতাধিক দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা তাঁদের। পথে বিভিন্ন ন্যাশনাল পার্ক ও সংরক্ষিত অঞ্চলে থামবেন এবং পরিবেশগত ও সামাজিক বিভিন্ন উদ্যোগে সাহায্য করবেন। কাজ করবেন জীববৈচিত্র্য নিয়েও।
যুক্তরাজ্য ভ্রমণ শেষে তাঁরা পেরোবেন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য। তারপর মধ্য এশিয়া, চীন, হিমালয় অঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা হয়ে ভ্রমণ করবেন উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা।
এই ভ্রমণে ‘প্রজেক্ট ওয়াইল্ড আর্থ’ নামের নিজেদের একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করবেন। ভ্রমণের সময় ন্যাশনাল পার্কের বিভিন্ন রেঞ্জার, সহায়তাকরী সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাঁদের দেখা হবে। তাঁদের গল্প নিজেদের ওয়েবসাইটে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরবেন এর মাধ্যমে।
‘বাচ্চাদের স্কুল শুরুর আগেই আমাদের হাতে চমৎকার একটা সময় আছে। রোমাঞ্চকর একটা কিছু করার এটাই উপযুক্ত সময়।’ বলেন ম্যাট। ভ্রমণটিতে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করেন ম্যাট।
প্রজেক্ট ওয়াইল্ড আর্থ
হংকংয়ে ফিরে পরের একটা দশক ব্যস্ত সময় কাটালেন তারা। আমেরিকান নাগরিক লিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করার পাশাপাশি হংকংয়ে এমন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। অবশ্য ব্রিটিশ নাগরিক ম্যাট এ সময়টায় অনেক কিছুই করলেন। এর মধ্যে আছে বিমান চালনা, একটি রোমাঞ্চ ঘরানার ট্রাভেল কোম্পানির সহ-উদ্যোক্তা, হংকং এক্সপ্লোরারস ক্লাবের পরিচালকের দায়িত্ব পালন ইত্যাদি।
২০১৯ সালে হংকং শহরে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে তাঁরা ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে একটি অরগানিক খামার করার কথা ভাবলেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে দম্পতিকে হংকংয়ে আটতে যেতে হলো। এর মধ্যে তাঁদের ছেলে জ্যাকের জন্ম হলো।
২০২২ সালেও হংকংয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক না হওয়ায় আবার অন্তঃসত্ত্বা লিয়া সাময়িকভাবে পাড়ি জমালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তখন হংকংয়ে থাকলেও তাঁদের মেয়ে শার্লেট জন্মানোর সময় অবশ্য স্ত্রীর পাশে থাকতে পারলেন।
তারপর কী করা যায় যখন ভাবছিলেন, তখন জাপদের দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চারের কথা তাঁরা মনে করলেন। প্রজেক্ট ওয়াইল্ড আর্থ প্রজেক্টটি তখনই ডালপালা মেলল।
‘পরিবার নিয়ে স্থলপথে ভ্রমণ করার জন্য পরিকল্পনাটি পুনরায় মাথাচাড়া দিল। সবকিছু বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমাদের মনের চাওয়া ও সংকল্প এখানে এক হয়ে গিয়েছিল।’ বলেন ম্যাট, ‘ক্যারিয়ার বা অর্থের দিক থেকে এটা হয়তো খুব বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত নয়, তবে আমাদের এটাই সঠিক মনে হয়েছে।’
বিখ্যাত প্রাইমেট বিশেষজ্ঞ এবং সংরক্ষক ড. জেন গুডলে অনুপ্রাণিত হন ম্যাট ও লিয়া। চলার পথে সময়টা কীভাবে কাজে লাগাবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নিজেদের আগ্রহ এবং মূল্যবোধের দিকে আবার নজর দিলেন দুজন।
‘এটা পরিষ্কার প্রকৃতিকে রক্ষা করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এটিই আমাদের নিয়ে যাবে সংরক্ষণের দিকে।’ বলেন ম্যাট।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত প্রকল্পগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তাঁরা। পাশাপাশি তাঁদের পরিবার কীভাবে এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা অনেক লোকের সঙ্গে কথা বলেন।
তাঁদের প্রকল্পটি যখন একটি কাঠামো পেতে শুরু করে, দম্পতি অংশীদারদের সঙ্গে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে শুরু করেন। বিশ্বব্যাপী ২৫০টির বেশি প্রকল্পের একটি তালিকা করেন, যেগুলোতে তাঁরা চলার পথে কাজ করবেন। এগুলোর মধ্যে আছে আদিবাসীদের ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া, প্রকৃতিনির্ভর পর্যটন, বন্যপ্রাণী তদারকি ও সংরক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি প্রকল্প।
‘আমরা এমন প্রকল্পগুলো খুঁজছিলাম যেগুলো কেবল অনুপ্রেরণামূলক নয় বরং অন্যদের জন্য তাদের নিজস্ব প্রকল্প শুরু করার জন্য একটি উদাহরণ হিসাবে কাজ করতে পারে। যে কোনো ক্ষেত্রে একটি সমাধান খুঁজতে যতটা সম্ভব প্রকৃতিকে বেছে নেওয়ায় বিশ্বাসী আমরা।’ বলেন ম্যাট। কৃষি বনায়ন, পুনরুৎপাদনশীল কৃষির ওপর জোর দেওয়া প্রকল্পগুলোও প্রায়রদের আগ্রহ তৈরি করে।
পথের গল্প
স্টোরিটেলিং বা গল্প বর্ণনার মাধ্যমে সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেন ম্যাট ও রিয়া। এ ক্ষেত্রে তাদের বড় অনুপ্রেরণা দ্য জেন গুডল ইনস্টিটিউট এবং রুটস অ্যান্ড শুটস নামের দুটি সংগঠনের পরামর্শ। এগুলোর প্রতিষ্ঠাতা প্রাইমেট বিশেষজ্ঞ এবং সংরক্ষক ড. জেন গুডল।
‘গল্প বর্ণনাতে মনোযোগ দিতে তিনি আমাদের জন্য বিশাল এক অনুপ্রেরণা। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন এটাই মানুষকে ভেতর থেকে বদলে যেতে সাহায্য করে। এটা ধরেই আমরা এগিয়েছি।’ বলেন ম্যাট, ‘পৃথিবীতে যা ঘটছে এর যত বেশি উদাহরণ আর গল্প জানাব আমরা, তা মানুষকে নানা ধরনের কাজে অনুপ্রাণিত করবে।’
যেহেতু গোটা পথটা গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ করবেন তাতে বেশ কার্বন নিঃসরণ হবে। তাই তাঁদের পরিকল্পনা প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন মসি আর্থের মাসিক সদস্য হওয়ার মাধ্যমে সেটা পুষিয়ে দেওয়া। তা ছাড়া পাঁচ বছরের এই ভ্রমণে সি গ্রাস বা সামুদ্রিক ঘাস সংরক্ষণেও কাজ করবেন।
একটি পরিবার
তবে মূল ভ্রমণের আগে জ্যাক এবং শার্লেটকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে কয়েকটি লম্বা দূরত্বের পরীক্ষামূলক ভ্রমণ করেন ম্যাট এবং লিয়া। এ ভ্রমণ এবং ক্যাম্পিং দুজনকে নিজেদের বিশ্ব ভ্রমণ এবং মোবাইল, টিভির মতো বিষয় ছাড়া কীভাবে শিশু দুটির আনন্দময় সময় কাটানো নিশ্চিত করা যায় তার পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।
ভ্রমণ ও সংরক্ষণের কাজে তাদের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে জ্যাক এবং শার্লটকে যতটা সম্ভব বৈচিত্র্য, উদ্ভাবনী ধারণা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবেন বলে আশা করেন এ দম্পতি। ম্যাট মনে করেন বাচ্চাদের সঙ্গে এই চমৎকার সময় কাটানোটা অসাধারণ হবে।
‘আমরা আশা করি প্রকৃতি ও অন্যদের সাহায্য করা আমাদের সন্তানদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে। তবে ভ্রমণটা শেষ পর্যন্ত তাঁদের কোথায় নিয়ে যাবে, সেটা তাঁদের ওপরই।’ বলেন ম্যাট।
এটা এমন এক বিষয়, যার স্বপ্ন থাকে অনেক দম্পতিরই। তবে এটা করে দেখাতে পারেন কম মানুষই। ম্যাট প্রায়র ও লিয়া প্রায়র তাঁদের চাকরি ছেড়েছেন, বেচে দিলেন সব সহায়সম্পত্তি। তারপর দুই শিশুসন্তান তিন বছরের জ্যাক আর এক বছরের শার্লেটকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন বিশ্বভ্রমণে। এ মাসের অর্থাৎ জুলাইয়ের ১৫ তারিখে শুরু হয়েছে তাঁদের ভ্রমণ।
অবশ্য এই দম্পতির ডিএনএতেই আছে ভ্রমণের নেশা। ২০১১ সালে লাওসে তাঁদের প্রথম দেখা হয়। ম্যাট তখন একটা লন্ডন ব্ল্যাক ক্লাব গাড়ি চালিয়ে বিশ্ব ঘুরে ব্রিটিশ রেডক্রসের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে লিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েক বছর শিক্ষকতা করে এক বছরের বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন।
ম্যাট যেহেতু গাড়ি নিয়ে ভ্রমণে আছেন, তাই দূর থেকেই যোগাযোগ থাকে দুজনের। এক বছর পর হংকংয়ে এসে একসঙ্গে জীবন শুরু করলেন তাঁরা। নিজের ভ্রমণের সময় ম্যাটের পরিচয় হয় জাপদের সঙ্গে, যারা ১৯২৮ মডেলের একটি ক্ল্যাসিক গাড়িতে ২২ বছর ধরে বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন। এই ভ্রমণের সময় তাঁদের চার সন্তান হয়।
‘লিয়া আর আমার দেখা হওয়ার পরে জাপদের ভ্রমণের কথা বলেছিলাম। তখনই বীজটা রোপিত হয়। ভাবছিলাম, হয়তো আমরাও এ রকম একটা কিছু করব।’ সিএনএনকে বলেন ম্যাট প্রায়র।
যাত্রা হলো শুরু
তাঁদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে এখন। লন্ডন থেকে একটি ইনিয়েস গ্রেনেডিয়ার ফোর হুইলার গাড়িতে যাত্রা শুরু হয়েছে তাঁদের। এর সঙ্গে জোড়া লাগানো আছে প্যাট্রিয়ট কমপ্লেক্স এক্স-৩ নামের একটি ট্রেইলার। আগামী পাঁচ বছরে শতাধিক দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা তাঁদের। পথে বিভিন্ন ন্যাশনাল পার্ক ও সংরক্ষিত অঞ্চলে থামবেন এবং পরিবেশগত ও সামাজিক বিভিন্ন উদ্যোগে সাহায্য করবেন। কাজ করবেন জীববৈচিত্র্য নিয়েও।
যুক্তরাজ্য ভ্রমণ শেষে তাঁরা পেরোবেন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য। তারপর মধ্য এশিয়া, চীন, হিমালয় অঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা হয়ে ভ্রমণ করবেন উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা।
এই ভ্রমণে ‘প্রজেক্ট ওয়াইল্ড আর্থ’ নামের নিজেদের একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করবেন। ভ্রমণের সময় ন্যাশনাল পার্কের বিভিন্ন রেঞ্জার, সহায়তাকরী সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাঁদের দেখা হবে। তাঁদের গল্প নিজেদের ওয়েবসাইটে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরবেন এর মাধ্যমে।
‘বাচ্চাদের স্কুল শুরুর আগেই আমাদের হাতে চমৎকার একটা সময় আছে। রোমাঞ্চকর একটা কিছু করার এটাই উপযুক্ত সময়।’ বলেন ম্যাট। ভ্রমণটিতে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করেন ম্যাট।
প্রজেক্ট ওয়াইল্ড আর্থ
হংকংয়ে ফিরে পরের একটা দশক ব্যস্ত সময় কাটালেন তারা। আমেরিকান নাগরিক লিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করার পাশাপাশি হংকংয়ে এমন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। অবশ্য ব্রিটিশ নাগরিক ম্যাট এ সময়টায় অনেক কিছুই করলেন। এর মধ্যে আছে বিমান চালনা, একটি রোমাঞ্চ ঘরানার ট্রাভেল কোম্পানির সহ-উদ্যোক্তা, হংকং এক্সপ্লোরারস ক্লাবের পরিচালকের দায়িত্ব পালন ইত্যাদি।
২০১৯ সালে হংকং শহরে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে তাঁরা ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে একটি অরগানিক খামার করার কথা ভাবলেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে দম্পতিকে হংকংয়ে আটতে যেতে হলো। এর মধ্যে তাঁদের ছেলে জ্যাকের জন্ম হলো।
২০২২ সালেও হংকংয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক না হওয়ায় আবার অন্তঃসত্ত্বা লিয়া সাময়িকভাবে পাড়ি জমালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তখন হংকংয়ে থাকলেও তাঁদের মেয়ে শার্লেট জন্মানোর সময় অবশ্য স্ত্রীর পাশে থাকতে পারলেন।
তারপর কী করা যায় যখন ভাবছিলেন, তখন জাপদের দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চারের কথা তাঁরা মনে করলেন। প্রজেক্ট ওয়াইল্ড আর্থ প্রজেক্টটি তখনই ডালপালা মেলল।
‘পরিবার নিয়ে স্থলপথে ভ্রমণ করার জন্য পরিকল্পনাটি পুনরায় মাথাচাড়া দিল। সবকিছু বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমাদের মনের চাওয়া ও সংকল্প এখানে এক হয়ে গিয়েছিল।’ বলেন ম্যাট, ‘ক্যারিয়ার বা অর্থের দিক থেকে এটা হয়তো খুব বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত নয়, তবে আমাদের এটাই সঠিক মনে হয়েছে।’
বিখ্যাত প্রাইমেট বিশেষজ্ঞ এবং সংরক্ষক ড. জেন গুডলে অনুপ্রাণিত হন ম্যাট ও লিয়া। চলার পথে সময়টা কীভাবে কাজে লাগাবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নিজেদের আগ্রহ এবং মূল্যবোধের দিকে আবার নজর দিলেন দুজন।
‘এটা পরিষ্কার প্রকৃতিকে রক্ষা করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এটিই আমাদের নিয়ে যাবে সংরক্ষণের দিকে।’ বলেন ম্যাট।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত প্রকল্পগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তাঁরা। পাশাপাশি তাঁদের পরিবার কীভাবে এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা অনেক লোকের সঙ্গে কথা বলেন।
তাঁদের প্রকল্পটি যখন একটি কাঠামো পেতে শুরু করে, দম্পতি অংশীদারদের সঙ্গে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে শুরু করেন। বিশ্বব্যাপী ২৫০টির বেশি প্রকল্পের একটি তালিকা করেন, যেগুলোতে তাঁরা চলার পথে কাজ করবেন। এগুলোর মধ্যে আছে আদিবাসীদের ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া, প্রকৃতিনির্ভর পর্যটন, বন্যপ্রাণী তদারকি ও সংরক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি প্রকল্প।
‘আমরা এমন প্রকল্পগুলো খুঁজছিলাম যেগুলো কেবল অনুপ্রেরণামূলক নয় বরং অন্যদের জন্য তাদের নিজস্ব প্রকল্প শুরু করার জন্য একটি উদাহরণ হিসাবে কাজ করতে পারে। যে কোনো ক্ষেত্রে একটি সমাধান খুঁজতে যতটা সম্ভব প্রকৃতিকে বেছে নেওয়ায় বিশ্বাসী আমরা।’ বলেন ম্যাট। কৃষি বনায়ন, পুনরুৎপাদনশীল কৃষির ওপর জোর দেওয়া প্রকল্পগুলোও প্রায়রদের আগ্রহ তৈরি করে।
পথের গল্প
স্টোরিটেলিং বা গল্প বর্ণনার মাধ্যমে সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেন ম্যাট ও রিয়া। এ ক্ষেত্রে তাদের বড় অনুপ্রেরণা দ্য জেন গুডল ইনস্টিটিউট এবং রুটস অ্যান্ড শুটস নামের দুটি সংগঠনের পরামর্শ। এগুলোর প্রতিষ্ঠাতা প্রাইমেট বিশেষজ্ঞ এবং সংরক্ষক ড. জেন গুডল।
‘গল্প বর্ণনাতে মনোযোগ দিতে তিনি আমাদের জন্য বিশাল এক অনুপ্রেরণা। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন এটাই মানুষকে ভেতর থেকে বদলে যেতে সাহায্য করে। এটা ধরেই আমরা এগিয়েছি।’ বলেন ম্যাট, ‘পৃথিবীতে যা ঘটছে এর যত বেশি উদাহরণ আর গল্প জানাব আমরা, তা মানুষকে নানা ধরনের কাজে অনুপ্রাণিত করবে।’
যেহেতু গোটা পথটা গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ করবেন তাতে বেশ কার্বন নিঃসরণ হবে। তাই তাঁদের পরিকল্পনা প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন মসি আর্থের মাসিক সদস্য হওয়ার মাধ্যমে সেটা পুষিয়ে দেওয়া। তা ছাড়া পাঁচ বছরের এই ভ্রমণে সি গ্রাস বা সামুদ্রিক ঘাস সংরক্ষণেও কাজ করবেন।
একটি পরিবার
তবে মূল ভ্রমণের আগে জ্যাক এবং শার্লেটকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে কয়েকটি লম্বা দূরত্বের পরীক্ষামূলক ভ্রমণ করেন ম্যাট এবং লিয়া। এ ভ্রমণ এবং ক্যাম্পিং দুজনকে নিজেদের বিশ্ব ভ্রমণ এবং মোবাইল, টিভির মতো বিষয় ছাড়া কীভাবে শিশু দুটির আনন্দময় সময় কাটানো নিশ্চিত করা যায় তার পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।
ভ্রমণ ও সংরক্ষণের কাজে তাদের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে জ্যাক এবং শার্লটকে যতটা সম্ভব বৈচিত্র্য, উদ্ভাবনী ধারণা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবেন বলে আশা করেন এ দম্পতি। ম্যাট মনে করেন বাচ্চাদের সঙ্গে এই চমৎকার সময় কাটানোটা অসাধারণ হবে।
‘আমরা আশা করি প্রকৃতি ও অন্যদের সাহায্য করা আমাদের সন্তানদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে। তবে ভ্রমণটা শেষ পর্যন্ত তাঁদের কোথায় নিয়ে যাবে, সেটা তাঁদের ওপরই।’ বলেন ম্যাট।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে