Ajker Patrika

মার্কিন মুলুকে ম্যান-মার্কিং

হিল্লোল দত্ত
আপডেট : ০৪ মে ২০২৩, ১২: ১৫
মার্কিন মুলুকে ম্যান-মার্কিং

রবীন্দ্রনাথ ভ্রমণপিয়াসী ছিলেন। নেহাত কম দেশ ঘোরেননি তিনি। কাজের উদ্দেশ্যে, সম্মান গ্রহণ করতে, আমন্ত্রণে সাড়া দিতে, প্রদর্শনীতে অংশ নিতে, বক্তৃতা দিতে তিনি বিভিন্ন সময়ে নানান দেশে গেছেন। এক হিসাবে জানা যায়, ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২-এর মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশে অন্তত ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন, যার অনেকগুলো নিয়ে তাঁর ভ্রমণকাহিনিও রয়েছে। 

এত সব দেশের মধ্যে যে দেশটিতে তিনি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ভ্রমণ করেছেন, ইংল্যান্ড বাদে, আশ্চর্যজনকভাবে সেই দেশ নিয়েই আলোচনা খুব কম হয়। খোদ রবীন্দ্রনাথও তাঁর সেই দেশেতে ভ্রমণ নিয়ে কেন যেন নীরবই থেকেছেন। বই তো দূর স্থান, সেই দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর তেমন কোনো লেখালেখিই চোখে পড়ে না।

দেশটির নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে কবি পাঁচবার যাত্রা করেন। প্রায় ১৭ মাস তিনি কাটিয়েছিলেন বিশাল এই দেশে। ১৯১২ থেকে ১৯৩০ অবধি এই যাত্রা নানান প্রাপ্তি, প্রশংসা, সমালোচনা এবং অন্তত একটি অঘটনে বিজড়িত।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তাধারার প্রথম পরিচয় তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে অমৃতসরে গিয়ে। সেখানে বারো বছর বয়েসে তিনি ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি অব বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন’ পড়া শুরু করেন। পুত্রের ভাষায়, ‘পিতা আমাকে ইংরেজি পড়াইবেন বলিয়া পিটার পার্লি'স টেলস পর্যায়ের অনেকগুলি বই লইয়া গিয়াছিলেন। তাহার মধ্য হইতে বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিনের জীবনবৃত্তান্ত তিনি আমার পাঠ্যরূপে বাছিয়া লইলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন জীবনী অনেকটা গল্পের মতো লাগিবে এবং তাহা পড়িয়া আমার উপকার হইবে। কিন্তু পড়াইতে গিয়া তাঁহার ভুল ভাঙিল। বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন নিতান্তই সুবুদ্ধি মানুষ ছিলেন। তাঁহার হিসাব করা কেজো ধর্মনীতির সংকীর্ণতা আমার পিতাকে পীড়িত করিত। তিনি এক-এক জায়গা পড়াইতে পড়াইতে ফ্রাংকলিনের ঘোরতর সাংসারিক বিজ্ঞতার দৃষ্টান্তে ও উপদেশবাক্যে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া উঠিতেন এবং প্রতিবাদ না করিয়া থাকিতে পারিতেন না।’

এই হিসেবি নৈতিকতার প্রতি রবীন্দ্রনাথের অপছন্দ আমৃত্যুই ছিল, যা তাঁর মার্কিন দেশে ভ্রমণের সময়ও প্রতিভাত হয়েছে। তবে সাহিত্যিক হিসেবে ওয়াল্ট হুইটম্যান, রালফ এমার্সনের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও আগ্রহ পরিস্ফুট হয়েছে নানান সময়ে।

কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরোক্ষ সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯০৬ সালে, যখন তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ সেখানকার ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে যান। সে সময় প্রায় সবাই, যাঁরা উচ্চবিত্ত এবং সামাজিক স্তরে উঁচু দরের, তাঁদের সন্তানদের ইংল্যান্ডেই পড়াশোনার জন্য পাঠাতেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেও ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টারি পড়তে যান এবং ব্যর্থ হয়ে দেশে ফেরেন। রথীন্দ্রনাথ অবশ্য সফল হয়ে ফিরেছিলেন ১৯০৯ সালে। 

১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ প্রথম মার্কিন দেশে যান ইংল্যান্ড থেকে। সে বছরই তাঁর ক্ষীণকায় গীতাঞ্জলি ‘সং অফারিংস’ নামে প্রকাশিত হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে এবং মার্কিন মুলুকের প্রখ্যাত ‘পোয়েট্রি’ সাময়িকীতে তাঁর সেই বই থেকে ছখানা কবিতাও বেরিয়েছে। তিনি সেবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাত মাসের একটি ভ্রমণ করেন, যার একটা বড় অংশ গেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, যার মধ্যে হার্ভার্ডও ছিল এবং নানান জায়গায় বক্তৃতা দেওয়ায়। তাঁর দ্বিতীয় সফরটি নানান দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও কৌতূহলোদ্দীপক ছিল। 

১৯১৬-১৭ সালের মধ্যে তিনি আমেরিকার নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল শান্তিনিকেতনের জন্য অর্থ সংগ্রহ। বিখ্যাত প্রকাশক ম্যাকমিলান তাঁর এই বক্তৃতার উদ্যোক্তা ছিলেন। প্রতি বক্তৃতায় তিনি তৎকালীন ৭০০ থেকে ১ হাজার মার্কিন ডলার অবধি সম্মানী পেতেন। এই নিয়ে আমেরিকায়ও তিনি সমালোচনার মুখোমুখি হন। নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়ে তিনি সম্মানিত ও জনপ্রিয় হয়েছিলেন এবং জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে বক্তব্য রেখে হয়েছিলেন সমালোচিত, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে।

বছর তিনেক পর, ১৯২০ সালে কবি আবারও ফিরলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, চার মাসের মেয়াদে। এবারও মূল উদ্দেশ্য শান্তিনিকেতনের জন্য অর্থ জোগাড়। কিন্তু এবারের সফর নিষ্ফল। আমেরিকা জড়িয়ে পড়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, কিছুটা হলেও, তাদের অনাক্রমণনীতি সত্ত্বেও। রবীন্দ্রনাথের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান, জাতীয়তাবাদবিরোধী বক্তব্য, ভোগবাদসর্বস্ব জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এবং জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ নরমেধের প্রতিবাদে তাঁর নাইটহুড ত্যাগ করা, সবকিছু মিলিয়ে তিনি ইয়াংকিদের কাছে অপ্রিয় ও অগ্রহণযোগ্য তখন। এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছেও, যাঁদের বড়সড় ব্যবসা তখনো ইংরেজদের সঙ্গে চলমান। 

১৯২৯ সাঁলে কানাডার সোসাইটি অব এজুকেশনের আমন্ত্রণে তিনি কানাডা যাত্রা করেন। কিন্তু ভ্যাংকুভারের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার রূঢ় আচরণে তিনি সবকিছু বাতিল করে হপ্তা তিনেক লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকেন এবং পরে জাপানে ফেরত আসেন।

পরের বছরই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জীবনের শেষ সফর করেন। ১৯৩০ সালের এই সফর নানান দিক থেকে বর্ণাঢ্য ছিল। মাস দুয়েকের এই সফর তাঁর জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করে। ম্যানহাটনে তিনি আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে সত্য, সৌন্দর্য নিয়ে আলাপ করেন, যা এখন বিশেষভাবে স্মরণীয়। কারণ কবি হয়েও তিনি বিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।

তবে ১৯১৬-১৭ মেয়াদে তাঁর জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা মার্কিন মুলুকে ঘটেছিল, সেটা না বললেই নয়। ১ অক্টোবর, ১৯১৬ সালে তিনি নামলেন পোর্টল্যান্ড, ওরিগনে। ৪ অক্টোবর গেলেন সান ফ্র্যান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখানে কলম্বিয়া থিয়েটারে তাঁর বক্তৃতার সময় নিরাপত্তার খুব কড়াকড়ি দেখা গেল। কোনো এশীয় লোকজনকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। পুলিশ কড়া নজর রাখছে চারপাশে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে লুকিয়ে হোটেলের পেছনের দরজা দিয়ে আনেন। বক্তৃতা দিয়ে বেরোনোর সময়ও পেছনের দরজা। ট্রেনে করে সরিয়ে নেওয়া হয় ঘণ্টাখানেক দূরের পথ স্যান্টা বারবারায়। এমনকি পরের নির্ধারিত অনুষ্ঠানগুলোও বাতিলের অনুরোধ করা হয় কবিকে। 

কারণ কী? 

পুলিশের কাছে গোয়েন্দা মারফত খবর এসেছে, এর আগে হিন্দুস্থান গদর পার্টি নামে আমেরিকার একটি রাজনৈতিক দল রবীন্দ্রনাথের ওপর হামলা করতে চায়। দলটি ১৯১৩ সালে আমেরিকায় নিবন্ধিত হয়। মূলত মার্কিন প্রবাসী পাঞ্জাবিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ব্রিটিশ শাসনের বিপক্ষে ভারতে সহিংস সংগ্রাম করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। দলের তৎকালীন নেতা রামচন্দ্র ভরদ্বাজ ‘হিন্দুস্থান গদর’ নামের একটি পত্রিকা চালাতেন, যা মূলত উর্দু ও পাঞ্জাবি, মাঝেমধ্যে ইংরেজিতে প্রকাশিত হতো। অক্টোবরেই পত্রিকার সম্পাদকীয়তে জগদীশ চন্দ্র বসু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর ব্রিটিশ প্রশাসনের গোয়েন্দাগিরির তীব্র সমালোচনা করা হয়। কিন্তু পরে রবীন্দ্রনাথের বিপক্ষে ৫ অক্টোবর ‘সান ফ্র্যান্সিসকো এক্সামিনার’ নামে এক পত্রিকায় রামচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে সরাসরি আক্রমণ করেন। রবীন্দ্রনাথের নাইটহুড গ্রহণের বিপক্ষে ছিলেন রামচন্দ্র। এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথ এক লেখায় ‘মুঘল শাসনের চাইতে ব্রিটিশ শাসন উত্তম’ বলায় রামচন্দ্র প্রচণ্ড প্রতিবাদ জানান। 

৫ অক্টোবর রবীন্দ্রনাথের সাময়িক আবাস প্যালেস হোটেলের বাইরে গদর পার্টির দুজন সদস্য, হাতেশি সিং ও জীবন সিং খালসা দিওয়ান সোসাইটি নামের আরেকটি প্রবাসী পাঞ্জাবিদের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকামী দলের দুই সদস্য বিষেণ সিং মাট্টু ও উমরাও সিংয়ের ওপর হামলা করেন। হামলার কারণে বিষেণের পাগড়ি মাথা থেকে খুলে পড়ে যায়। বিষেণ ও উমরাও রবীন্দ্রনাথকে একটি সভায় বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন। যদিও হামলা হোটেলের বাইরে হয়, গোয়েন্দাদের প্রাপ্ত তথ্যমতে, গদর পার্টির লোক রবীন্দ্রনাথের ওপরই হামলা চালাতে এসেছিল। কারণ তো আগেই বলা হলো। গদর পার্টির ভেতরে একজন মার্কিন গোয়েন্দাও চুপিসারে নিজের কাজ চালাচ্ছিলেন। তাঁর নাম উইলিয়াম মান্ডেল। তিনি সান ফ্র্যান্সিসকোর প্রবাসী ভারতীয়দের ওপর নজরদারি করতেন, যারা ব্রিটিশ ভারতে সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভে মদদ দিতেন। মজার বিষয় হলো, তাঁকে গদর পার্টিরই একজন রামচন্দ্র ও তাঁর সাথিদের ওপর অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নিয়োগ করেছিলেন। তিনি একসঙ্গে দুটো কাজই চালাচ্ছিলেন সুবিধামতো। সম্ভবত তিনিই রবীন্দ্রনাথের ওপর গদর পার্টির সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে পুলিশকে জানান। 

রবীন্দ্রনাথ অবশ্য এসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামাননি এবং তিনি বলেন যে, এই রাজনৈতিক মতভেদের বিষয়াশয় নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন। দেশবাসীর ওপরেই তিনি ভরসা রাখবেন। 

এই হামলার আতঙ্ক মোটেও ছায়া ফেলেনি তাঁর সফরে। সান ফ্র্যান্সিসকো ও লস অ্যাঞ্জেলেসে সেবার অভূতপূর্ব সাফল্য ও সম্মান লাভ করেন রবীন্দ্রনাথ। ‘সান ফ্র্যান্সিসকো এক্সামিনারেই’ লেখা হয়, স্থাপিত হয়েছে দ্য কাল্ট অব রবীন্দ্রনাথ। ‘লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস’ গর্বভরে ঘোষণা করে, লস অ্যাঞ্জেলেসে অন্য যেকোনো মার্কিন নগরীর চাইতেই রবীন্দ্রনাথের বই বেশি বিক্রি হয়। ১৯১৭ সালে তিনি ‘ন্যাশনালিজম’ নামের বইটি লিখে শেষ করেন। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনকে তিনি বইটি উৎসর্গ করতে চান। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ডামাডোলের মধ্যে এবং অন্যান্য বৈশ্বিক রাজনৈতিক গোলযোগে সেটা আর হয়নি। 

এ ঘটনার একটি করুণ পরিণতি আছে। রামচন্দ্রকে তাঁর দলেরই রাম সিং নামে এক তরুণ ১৯১৫ সালে আদালতকক্ষে গুলি করে হত্যা করেন ব্রিটিশদের সঙ্গে যোগসাজশের সন্দেহে। সেই আদালতে চলছিল হিন্দুস্থান-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি। ঘটনাচক্রে তাতে উঠে এসেছিল রবীন্দ্রনাথেরও নাম। কিন্তু সে আরেক কাহিনি।

লেখক: আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অনুবাদক ও ব্লগার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অতিরিক্ত মিষ্টি বা খাবার খাওয়ার পর সামলে নেবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। ছবি: পেক্সেলস
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। ছবি: পেক্সেলস

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি ঘটে। অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি চিনি বা ক্যালরি খেয়ে ফেলার পরদিন সকালে আমাদের মনে দানা বাঁধে অপরাধ বোধ, আর শুরু হয় নিজেকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পালা। আমরা ভাবি, আজ খাবার না খেয়ে বা খুব কম খেয়ে আগের রাতের ঘাটতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই অভ্যাসটিই আমাদের স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।

অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। এর জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া বা ক্লিনসিং করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রচুর পানি পান, হালকা ব্যায়াম, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার এবং নিজের প্রতি মমতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাই সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য গড়ে ওঠে আপনার বড় ক্যানভাসের জীবনধারা দিয়ে, একটি মাত্র রাত দিয়ে নয়। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান ভিক্টোরিয়া হুইটিংটন এবং সাম্প্রতিক পুষ্টি গবেষণার আলোকে জেনে নিন, একদিনের অনিয়ম সামলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বিজ্ঞানসম্মত উপায়।

অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। ছবি: পেক্সেলস
অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। ছবি: পেক্সেলস

১. নিজেকে বঞ্চিত করবেন না

বেশি খেয়ে ফেলার পরদিন না খেয়ে থাকা বা খুব অল্প খাওয়ার যে প্রবণতা, তা আসলে উল্টো ফল আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে খাবারের প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আবার অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। তাই অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেলার পরদিন খাবার কমিয়ে দেওয়ার বদলে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভালো ফ্যাটের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ।

২. সকালের নাশতা হোক প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ

অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। গবেষণা বলছে, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাশতা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার যোগ করলে তা রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং সারা দিন আপনাকে তৃপ্ত রাখে। খাবার বাদ দিলে শরীরে ‘ঘ্রেলিন’ বা ক্ষুধা উদ্দীপক হরমোন বেড়ে যায়, যা দিনশেষে আপনাকে আবারও বেশি খেতে প্ররোচিত করতে পারে।

৩. শরীরকে সচল রাখুন এবং পানি পান করুন

অতিরিক্ত খাওয়ার পর শরীরে যে অলসতা বা ভারী ভাব কাজ করে, তার পেছনে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার বড় ভূমিকা থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়া সহজ হয়। পাশাপাশি হালকা শারীরিক পরিশ্রম বা অল্প হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। এতে আমাদের পেশিগুলো রক্তে জমে থাকা শর্করাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

যারা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তারা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। ছবি: পেক্সেলস
যারা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তারা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। ছবি: পেক্সেলস

৪. ‘পারফেকশন’ নয়, গুরুত্ব দিন সামগ্রিক অভ্যাসে

পুষ্টিবিদ হুইটিংটন জোর দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য মূলত আপনার নিয়মিত অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে, কোনো একদিনের অনিয়মের ওপর নয়। নার্সেস হেলথ স্টাডির মতো বড় বড় গবেষণাও বলছে, কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের খাদ্যাভ্যাস নয়; বরং আপনার দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ধরনই নির্ধারণ করে আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি। তাই একদিন বেশি খেয়ে ফেললে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্য মানে নিখুঁত হওয়া নয়; বরং একটি সুস্থ ধারায় থাকা।

৫. নিজের প্রতি সদয় হোন

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, নিজেকে ক্ষমা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বোঝার চেষ্টা করুন, সে মুহূর্তে আপনার কিসের প্রয়োজন ছিল। সমালোচনা নয়, কৌতূহলী মন নিয়ে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করলে আপনি ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

সূত্র: ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক তরুণের হাত ধরে ভাগ্য ফিরল পুরো গ্রামের

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
নেপালের তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই এর হাত ধরে বদলে গেছে তাঁর গ্রামের কৃষির চিত্র। গ্রামের ৩৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টি পরিবার এখন কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী। ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট
নেপালের তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই এর হাত ধরে বদলে গেছে তাঁর গ্রামের কৃষির চিত্র। গ্রামের ৩৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টি পরিবার এখন কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী। ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট

‘চাকরি ছেড়ে কৃষিতে লাখপতি’ কিংবা ‘যুবকের ভাগ্য ফিরল কৃষিতে’। এমন সংবাদ আমরা প্রায়ই দেখি সংবাদমাধ্যমে। এই যুবকেরা কখনো কখনো নীরবে বদলে দেয় পুরো জনপদের শত শত কৃষকের জীবন। এসব ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটে, তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটে থাকে। নেপালেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। তা প্রকাশিত হয়েছে দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’-এ।

হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প। সেখানে এই সোনালি-হলুদ ফলটি বদলে দিয়েছে শত শত কৃষকের ভাগ্য এবং পুরো গ্রামের জীবনযাত্রা।

ঘরের আঙিনায় চকচকে সাফল্য

এই পরিবর্তনের উজ্জ্বল প্রতীক তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে প্রায় এক দশক হাড়ভাঙা খাটুনির পর কিছু অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পৈতৃক জমিতে প্রচলিত দানাদার শস্যের চাষ বাদ দিয়ে তৈরি করেন কমলার বাগান। আজ তাঁর ৫৩৫টি কমলাগাছ ফলে ভরপুর। গত বছর ১৭০ কুইন্টাল কমলা বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ রুপি আয় করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় ২০০ কুইন্টাল উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। রেবতি বলেন, ‘বিদেশের চাকরির চেয়ে কমলার চাষ আমার জীবনকে বেশি বদলে দিয়েছে। এখন আর আমাকে বাজারের পেছনে ছুটতে হয় না। ফল পাকার আগেই ব্যবসায়ীরা এসে বাগান বুক করে নেন।’ কমলার আয়েই তিনি সিমলেতে আড়াই তলা একটি পাকা বাড়ি তুলেছেন।

পেনশনের চেয়েও বেশি আয়

শুধু তরুণেরাই নন, এ বিপ্লবে শামিল হয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও। তাঁদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি টেকনিশিয়ান দধি রাম গৌতম। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিক কমলা চাষ করছেন। তাঁর ২৫০টি গাছের কমলা থেকে বছরে যে আয় হয়, তা তাঁর সরকারি পেনশনের চেয়ে তিন গুণ বেশি। বুটওয়াল, পাল্পা ও পোখারা থেকে ব্যবসায়ীরা গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে নগদ টাকায় কমলা কিনে নিয়ে যান।

কমলা চাষে এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্ড চেয়ারম্যান চন্দ্রকান্ত পাউডেল তাঁর জনসেবামূলক কাজের পাশাপাশি ৬০০টি কমলাগাছের বিশাল বাগান সামলাচ্ছেন। এ বছর শিলাবৃষ্টি বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার, যা আরও বেশি লাভের আশা জোগাচ্ছে।

কমলার এক নতুন হাব

পাণিনি-১-এর সলেরি টোল গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কমলার বাগান রয়েছে। গ্রামের কৃষকেরা নিজেদের সংগঠিত করতে গঠন করেছেন পাখাপানি কৃষক দল। ৪৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টিই এখন এই দলের সদস্য। গ্রামের বড় চাষি টুক বাহাদুর দারলামি গত বছর ৩ দশমিক ৫ লাখ রুপি আয় করেছেন কমলা চাষ করে। তিনি জানিয়েছেন, পুরো সলেরি গ্রাম এখন কমলার হাবে পরিণত হয়েছে। ফলে তাঁদের জমিগুলো আর অনাবাদি থাকছে না এবং গ্রাম থেকে মানুষের শহরে চলে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে।

অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব

কৃষকদের এ সাফল্যে হাত বাড়িয়েছে অ্যাগ্রিকালচার নলেজ সেন্টার। সেচের সুবিধার জন্য তারা বড় বড় পানির ট্যাংক তৈরি করে দিয়েছে গ্রামটিতে। কৃষি টেকনিশিয়ান শারদা আচার্যের মতে, সিমলে গ্রামের এই ব্যাপক সাফল্য দেখে প্রতিবেশী গ্রামগুলোও এখন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে ঝুঁকছে। শুধু সিমলে গ্রাম থেকেই বছরে ৩ কোটি রুপিরও বেশি কমলা বিক্রি হয়। গত বছর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কমলার দাম ছিল ৬০ রুপি। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ রুপিতে। কমলার আয়ে কৃষকেরা সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিচ্ছেন, ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন এবং গবাদিপশুর আধুনিক খামার গড়ে তুলছেন।

আরঘাখাঁচির এই জনপদে কমলা এখন আর কেবল একটি ফল নয়—স্বনির্ভরতার প্রতীক। যখন পুরো গ্রাম কমলার হলুদ রঙে ঝলমল করে ওঠে, তখন তা কেবল ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয় না; বরং এক সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের গল্প শোনায়।

সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে ত্বক সজীব ও ব্রণ দূর করতে ব্যবহার করুন বেসনে তৈরি এ প্যাকগুলো

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাক ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে। ছবি: ফ্রিপিক
বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাক ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে। ছবি: ফ্রিপিক

রূপচর্চায় বেসন খুব পরিচিত একটি উপকরণ। একসময় ত্বক পরিষ্কার করতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহার করা হতো। শীতে ত্বকের নির্জীব ভাব নিয়ে যাঁরা চিন্তায় রয়েছেন, তাঁরা সহজলভ্য এই উপকরণটি রোজকার ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে নানা উপকার পেতে পারেন।

এ কথা তো সবাই জানেন, শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি ত্বক দূষণমুক্ত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।

বেসন ও এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেলের প্যাক

বেসনের সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা যায় ফেসপ্যাক। ছবি: ফ্রিপিক
বেসনের সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা যায় ফেসপ্যাক। ছবি: ফ্রিপিক

পুরো শরীরের ত্বকে মাখার জন্য বেসন নিন। এতে কয়েক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ দুধ মেশাতে পারেন। প্যাক তৈরিতে যতটুকু পানি প্রয়োজন, তা যোগ করুন। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন আধা শুকনো হওয়া পর্যন্ত। এরপর আলতো করে কুসুম গরম পানিতে পুরো শরীর ধুয়ে নিন। নারকেল তেল ও দুধ রুক্ষ ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও ময়শ্চারাইজ করে। পাশাপাশি এ প্যাক ত্বকের ডিপ ক্লিনজিংয়েও সহায়তা করে। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাদের জন্য এ প্যাক খুবই ভালো কাজ করে।

বেসন, টক দই ও হলুদের প্যাক

এ সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পুরো শরীরে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে শরীর আলতো ঘষে প্যাক দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। টক দই ত্বকের আর্দ্রতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবেও দুর্দান্ত কাজ করে। অন্যদিকে হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগছোপ কমায় ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

বেসন ও গাঁদা ফুল বাটার প্যাক

বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল বাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাক মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও নরম করতে এ প্যাক ভালো কাজ করে। যাঁদের ত্বকে ব্রণ ও দাগ রয়েছে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই প্যাক মুখে ব্যবহার করতে পারেন।

ডিপ ক্লিনজিং প্যাক

যাঁরা সকালে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ফেসওয়াশ ব্যবহার এড়াতে চান তাঁরা ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিন সকালে। এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হবে ও ধীরে ধীরে জেল্লাদার হয়ে উঠবে।

বেসন, মধু ও গোলাপজল

বেসন, মধু, গোলাপজল ও অল্প পানি মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকাতে শুরু করলে হালকা করে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বক নরম রাখে। গোলাপজল ত্বক সতেজ করতে সাহায্য করে। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই একটি ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

মেছতার দাগ হালকা করতে

বেসনের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মেছতার ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করুন। দাগ কমে এলে ধীরে ধীরে প্যাক ব্যবহারও কমিয়ে আনুন। যেমন সপ্তাহে একবার, তারপর ১৫ দিনে একবার, তারপর মাসে একবার। এভাবে এই প্যাক ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ একেবারে হালকা হয়ে আসবে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকাল যেভাবে সেলিব্রেট করতে পারেন

ফারিয়া রহমান খান 
বছরের এই শেষ সময়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে নতুন বছর শুরুর প্রস্তুতি নিন। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
বছরের এই শেষ সময়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে নতুন বছর শুরুর প্রস্তুতি নিন। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু সুন্দর করে সেলিব্রেট করতে পারেন।

আলো ও উষ্ণতার আমেজ

শীতকাল মানেই ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে ঘরে কিছু ওয়ার্ম লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। রাতে ছাদে বা উঠানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে এর চারপাশে বসুন। আগুনের উষ্ণতা একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। এটি শুধু যে অন্ধকার দূর করে, তা-ই নয়; বরং শীতে একটা সুন্দর, স্নিগ্ধ ও উষ্ণ ভাব এনে দেয়। আগুনের তাপের সঙ্গে এই আয়োজনে থাকে সম্পর্কের উত্তাপও।

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন। এতে ইতিবাচক শক্তি পাবেন নতুন বছরে। ছবি: পেক্সেলস
পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন। এতে ইতিবাচক শক্তি পাবেন নতুন বছরে। ছবি: পেক্সেলস

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন

শীতকালে ঘর পরিষ্কার করে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন। নেতিবাচকতা দূর করতে ঘর পরিষ্কার করে ধূপ বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। আবার শীতের আমেজ আনতে ঘরে দারুচিনি, এলাচি বা লবঙ্গ জাতীয় মসলার সুগন্ধ ব্যবহার করুন। চুলায় পানি গরম করে তাতে এসব দিয়ে ফুটতে দিন, ধীরে ধীরে পুরো বাসায় সুবাস ছড়িয়ে পড়বে। ঘর পরিষ্কার থাকলে মনও শান্ত থাকে আর নতুন দিনগুলোকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

একটা সালতামামি হয়ে যাক

এ সময়টিতে নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এ বছর কী কী ভালো-খারাপ হলো বা কী কী শিখলেন, তা নিয়ে একটু ভাবুন। একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। যেসব অভ্যাস এখন আর আপনার কাজে আসছে না, সেগুলো বাদ দিয়ে নিজের ভালো হয়—এমন কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলুন। নতুন বছরে কী কী করতে চান, সে লক্ষ্য ঠিক করে লিখে রাখুন।

বছর শেষের শীতকালে একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
বছর শেষের শীতকালে একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

জীবনে ছোট-বড় যা কিছু ভালো আছে, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। একটি তালিকা তৈরি করুন, যেখানে আপনার অর্জন, প্রিয় মানুষ, ব্যক্তিগত ভালো লাগা ও সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা লিখে রাখবেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মনে শান্তি পাবেন এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবেন।

নিজের যত্ন নিন

শীতকাল হলো নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার সময়। প্রতিদিন হালকা ইয়োগা, হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে শরীর সচল রাখুন। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন এবং নিজেকে কিছু উপহার দিন। নিজের জন্য সময় বের করে নিজের অস্তিত্ব সেলিব্রেট করার জন্য শীতকাল হলো উপযুক্ত সময়।

প্রকৃতি মন ভালো করার ওষুধ। শীতকালে অপেক্ষাকৃত কম কাজের চাপের সময় প্রকৃতি উপভোগ করুন। ছবি: ফ্রিপিক
প্রকৃতি মন ভালো করার ওষুধ। শীতকালে অপেক্ষাকৃত কম কাজের চাপের সময় প্রকৃতি উপভোগ করুন। ছবি: ফ্রিপিক

প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন

শীতের সকাল বা বিকেলে প্রকৃতির কাছে থাকার চেষ্টা করুন। শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন এবং শীতের নরম রোদ গায়ে মাখুন, যা আপনার মন ভালো করার পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাবে। শীতকালীন ফুলগাছ বারান্দায় রাখুন ও মাটির তৈরি জিনিস দিয়ে ঘর সাজান। দেখবেন এই ছোট কাজগুলো ঘরে একটা স্নিগ্ধ ও সতেজ ভাব আনবে।

প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান

শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিঠার আয়োজন করুন। একসঙ্গে গল্প, হাসি আর খাবার সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করবে এবং সময় আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।

এবার ‘না’ বলতে শিখুন

শীতকাল মানেই বিভিন্ন রকম দাওয়াত। সেগুলোকে পাশে রেখে সামাজিক বা অন্যান্য কাজের চাপ এড়িয়ে চলুন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে বা কোনো কাজ করতে যদি একেবারেই ইচ্ছা না করে তবে, অযথা চাপ অনুভব না করে বিনীতভাবে এড়িয়ে চলুন। এ সময় নিজের বিশ্রাম ও মানসিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই বেশি জরুরি।

সূত্র: রিদমস অব প্লে ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত