Ajker Patrika

গোবি মরুভূমির অপার সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ দেয় এই হোটেল

আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১১: ০৪
গোবি মরুভূমির অপার সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ দেয় এই হোটেল

আপাত সীমাহীন মরুভূমির ওপরে ধীরে ধীরে উদিত হচ্ছে সূর্যটা। আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে কমলা আভা। কয়েক ঘণ্টা পরপর ভেড়া এবং ছাগলের পাল নিয়ে নিকটবর্তী পানির উৎসের দিকে যেতে দেখা যাবে রাখালদের। এখানে আপনি কেবল শুনবেন বাতাসের শব্দ, স্থানীয়দের পোষা প্রাণীদের ডাক কিংবা কদাচিৎ নতুন পর্যটক নিয়ে আসা গাড়ির শব্দ। মঙ্গোলিয়ার বিখ্যাত গোবি মরুভূমির অনন্য সৌন্দর্য উপভোগের এমন সুযোগ করে দেয় একটি ইকো লজ বা রিসোর্ট। এসব তথ্য জানা যায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে। 

গোবি মরুভূমির খান কনঘোরের থ্রি কেমেল লজকে বিবেচনা করতে পারেন পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম এলাকায় অবস্থিত হোটেল বা রিসোর্টগুলোর একটি হিসেবে। 

থ্রি কেমেল লজকে বিবেচনা করতে পারেন পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম এলাকায় অবস্থিত হোটেল বা রিসোর্টগুলোর একটি হিসেবে। ছবি: থ্রি কেমেল লজসভ্যতা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এই লজের কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য পর্যটকদের মঙ্গোলিয়ার ঐতিহ্যবাহী যাযাবর জীবনধারার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। যারা কিনা গৃহপালিত পশুর ওপর নির্ভর করে মধ্য এশিয়ার মালভূমিতে টিকে আছে। 

পৃথিবীতে এমন যাযাবর জনগোষ্ঠীর মানুষ এখন আর খুব একটা দেখা না গেলেও মঙ্গোলিয়ার জনসংখ্যার মোটামুটি চার ভাগের এক ভাগ এখনো যাযাবর। 

লজটিতে ২৪টি তাঁবু আছে। গোলাকার এই বিশেষ তাঁবুগুলো কাঠ, দড়ি এবং পশমি কাপড় দিয়ে তৈরি। এর নির্মাণ উপাদানগুলো একদিকে যেমন সহজে বহনযোগ্য, অন্যদিকে এসব তাঁবু মরুর জোর হাওয়ায় টিকে থাকার মতো শক্তিশালী। 

ভেতরের আসবাবগুলো কাঠের তৈরি। প্রতিটি তাঁবুর সঙ্গেই প্রবাহিত পানিসহ বাথরুম এবং সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে, যা সাধারণত এখানকার যাযাবরদের ঐতিহ্যবাহী ঘরগুলোয় পাওয়া যায় না। দ্য থ্রি কেমেল লজে একটি রেস্তোরাঁ, একটি বার এমনকি একটি স্পাও আছে। 

এই লজে থাকা পর্যটকেরা মরুভূমিতে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি স্থানীয়দের জীবনযাত্রা সম্পর্কেও জানতে পারেন। ছবি: থ্রি কেমেল লজএই হোটেলটি ৬৮ বছর বয়স্ক মঙ্গোলিয়ান-আমেরিকান ব্যবসায়ী জালসা উরাবশরোর অনেক শ্রমের ফসল। ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা জালসার পক্ষে কেবল মঙ্গোলিয়ার নাটকীয় প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্বপ্ন দেখার সুযোগ ছিল। কিন্তু দেশটির সংস্কৃতি সব সময়ই ছিল তাঁর হৃদয়জুড়ে, সেটি বাবার বলা চমৎকার সব গল্পের সূত্রে। তাঁর বাবা কালমিকিয়া এলাকায় জন্ম নেন। বর্তমানে রাশিয়ায় পড়া এই জায়গার অধিবাসীরা মঙ্গোলিয়ান ভাষাতেই কথা বলেন। এখনকার বাসিন্দারাও কিন্তু মঙ্গোল জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ।

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে যখন মঙ্গোলিয়া আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়, তখন জালসা প্রথম সেখানে ভ্রমণের সুযোগ পান। ‘আমি সেখানকার প্রত্যন্ত এলাকায় যাই। এক রাখালের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় এবং স্থানীয়দের কিছু তাঁবুতে রাত কাটাই। সেটা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।’ বলেন জালসা। 

এর পরপরই মঙ্গোলিয়ার তখনকার প্রধানমন্ত্রী পশ্চিম থেকে আরও পর্যটক নিয়ে আসার দায়িত্ব দেন জালসাকে। ১৯৯২ সালে নোমাডিক এক্সপিডিশনস নামের একটি পর্যটন প্রতিষ্ঠান চালু করেন তিনি। মঙ্গোলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিত তাঁর প্রতিষ্ঠান। ২০০২ সালে গোবিতে আরও স্থায়ী কিছু করতে চাইলেন জালসা, আর এভাবেই জন্ম থ্রি কেমেল লজের। 

৬৮ বছর বয়স্ক মঙ্গোলিয়ান-আমেরিকান ব্যবসায়ী জালসা উরাবশরোর হাত ধরেই রিসোর্টটির গোড়াপত্তন। ছবি: থ্রি কেমেল লজগোবি কিন্তু ল্যান্ড অব ডাইনোসরস নামেও পরিচিত। থ্রি কেমেল লজ থেকে কেবল আধ ঘণ্টার ভ্রমণে পৌঁছে যাবেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ডাইনোসরের ফসিলের এলাকায়। এক শতক আগে বায়ানজাগে নামের জায়গাটিতে অভিযাত্রীরা প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত ডাইনোসরের ডিম খুঁজে পান। 

আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির দলটির বাকি সদস্যদের সঙ্গে ১৯২০-এর দশকের ভ্রমণের সময় জীবাশ্মবিদ রয় এনড্রিউজ জায়গাটির নাম রাখেন ‘দ্য ফ্লেমিং ক্লিফস’। কারণ এখানকার লাল বেলে পাথরে পড়ন্ত সূর্যের আলো আশ্চর্য এক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। গোটা এলাকা এ সময় আগুনে লাল রং ধারণ করে। এখনো ডাইনোসরের ফসিলের খোঁজ মেলে জায়গাটিতে। 

লজের প্রতিটি তাঁবু সুপরিসর। ছবি: সিএনএন‘এই জায়গাটা সত্যিই রহস্যময়। এর মধ্যে এক ধরনের গোপনীয়তা এবং নির্জনতা আছে। এটা আমার জন্য বিশেষ এক জায়গা।’ সিএনএন ট্রাভেলকে বলেন নোমাডিক এক্সপিডিশনসের কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং প্রধান ট্যুর গাইড বায়ানদেলজার গানবাটার। 

লজ থেকে গাড়িতে চেপে মাত্র ১৫ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায় মল্টসগ এলস নামের জায়গাটিতে। এখানে চমৎকার কিছু বালিয়াড়ি বা বালুর পাহাড়ের দেখা পাবেন। সেখানে পৌঁছে হেঁটে কিংবা স্থানীয় যাযাবর জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে উট ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন বালিয়াড়ির রাজ্যে। 

বালিয়াড়ি এবং লাল পাথরের পাহাড় ছাড়া গোবি মরুভূমি সবুজের জন্যও বিখ্যাত। লজ থেকে গাড়িতে চেপে এক ঘণ্টায় পৌঁছাবেন ইয়ল ভ্যালি বা ইয়ল উপত্যকায়। ইয়ল বা বিশেষ এক ধরনের শকুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে। 

কাঠ, দড়ি এবং কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এখানকার তাঁবুগুলো। ছবি: থ্রি কেমেল লজটেকসই পর্যটনের জন্য আলাদা পরিচিতি আছে থ্রি কেমেল লজের। প্লাস্টিকের বোতল বাদ দিয়ে অতিথিদের হাতে ধাতব পুনর্ব্যবহারযোগ্য টাম্বলার বা হাতলবিহীন পাত্র তুলে দিয়েছে তারা। তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও চমৎকার। সৌর প্যানেলগুলো লজের প্রায় সমস্ত আলোর চাহিদা পূরণ করে। নির্মাণ, আসবাবপত্র এবং সাজসজ্জার উপকরণ যতটা সম্ভব স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। আর এটা করা হয় লজের ৫০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্য থেকে। 

থ্রি কেমেল লজে প্রায় ৩০ জন মঙ্গোলিয়ান চাকরি করেন। গোবি মরুভূমিতে বাস করা যাযাবরদের উন্নয়নে বিনিয়োগও লজের টেকসই লক্ষ্যগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষামূলক বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তার পাশাপাশি ডাইনোসরের জীবাশ্ম রক্ষায় আন্তর্জাতিক জীবাশ্মসংক্রান্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে লজটি। 

বর্তমানে লজটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে মে’র শুরু থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। জালসা জানান, বার্ষিক পর্যটন মৌসুম কিছুটা হলেও সম্প্রসারণ করতে মঙ্গোলিয়া সরকারের সহায়তা আশা করেন তারা। 

থ্রি কেমেল লজের একটি কামরার অন্দরমহলে। ছবি: ট্রিপ অ্যাডভাইজরজালসা সিএনএনকে জানান, মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটার থেকে গাড়িতে মোটামুটি সাত-আট ঘণ্টার দূরত্ব গোবি মরুভূমির এই লজ। সাধারণ পর্যটকেরা এত লম্বা সময়ের ভ্রমণ পছন্দ নাও করতে পারেন। তবে গোবি মরুভূমির দিকে উড়োজাহাজেও যাওয়া যায়। গভীর রাতের এই ফ্লাইট দালানজাদগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছে সূর্যোদয়ের সময়। তারপর মরুভূমি ধরে আরও এক ঘণ্টার মতো যাত্রার পর দূরে একটি মরূদ্যানের মতোই ধরা দেবে লজটি। 

গোবির থেকে বের হওয়াটা আরও বেশি জটিল। রাজধানীর দিকের ফ্লাইট স্বল্প সময়ের নোটিশে বাতিল হওয়াটা রীতিমতো সাধারণ এক ঘটনা। শীতে ফ্লাইটের সংখ্যা থাকে স্বাভাবিকভাবেই কম। 

তবে কথা হলো, একবার যদি আপনি থ্রি কেমেল লজে পৌঁছে যান, সেখানকার বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা আর মরুর অসাধারণ সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে আপনাকে। তখন পথের কষ্টটা নিয়ে আর আক্ষেপ থাকবে না মোটেই।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বেকিং করতে কোন খাবারে কোন ময়দা

ফারাহ্ রহমান
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

বেকিংয়ের কথা মনে এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নরম কেক, তুলতুলে পাউরুটি কিংবা বিস্কুটের কথা। তবে এসব বানানোর সময় একই ময়দা দিয়ে সব তৈরি করতে গেলেই ঘটে বিপত্তি—হয় কেক শক্ত হয়ে যায়, নয়তো পাউরুটি ঠিকমতো ফোলে না। এর মূল কারণ হলো ভুল ময়দা নির্বাচন করা। প্রতিটি খাবারের সঠিক গন্ধ ও স্বাদ বজায় রাখতে এর মূল উপাদান সম্পর্কে ধারণা রাখা খুবই জরুরি। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। তারপর নতুন বছর; ফলে এটাই বেকিংয়ের সেরা সময়। জেনে নিতে পারেন কোন খাবার বেকিংয়ে কোন ধরনের ময়দা বেছে নিতে হবে।

ময়দা আসলে কী

বিভিন্ন শস্য; যেমন ধান, গম, যব, বিভিন্ন বাদাম অথবা বিভিন্ন বীজ পিষে তৈরি করা মিহি গুঁড়াই মূলত ময়দা। আমরা সাধারণত গমের ময়দা বেশি ব্যবহার করি। ময়দার সঙ্গে পানি বা দুধ মেশালে এতে থাকা প্রোটিনগুলো মিলে ‘গ্লুটেন’ তৈরি করে। এই গ্লুটেনই খাবার নরম বানায়।

ভিন্ন ভিন্ন ময়দা এবং এর ব্যবহার

সাধারণ ময়দা

আমাদের রান্নাঘরে খুঁজলেই পাওয়া যায় এই সাধারণ ময়দা বা অল পারপাস ফ্লাওয়ার। কেক, বিস্কুট, পেস্ট্রি কিংবা প্যানকেক বানানোর জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত। এর গ্লুটেন মাঝারি মানের হওয়ায় তৈরি খাবার খুব বেশি নরম বা শক্ত হয় না।

স্ট্রং হোয়াইট ব্রেড ফ্লাওয়ার

এটি পাউরুটি বানানোর জন্য বিশেষ ময়দা। যাঁরা ঘরে পাউরুটি, পিৎজা অথবা ডোনাট বানাতে চান, তাঁদের জন্য এটি হবে সেরা। এতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে, যা প্রচুর গ্লুটেন তৈরি করে। ফলে পাউরুটি অনেক বেশি ফোলে এবং সুন্দর টেক্সচার তৈরি করে।

সেলফ-রাইজিং ফ্লাওয়ার

এই ময়দায় আগে থেকে বেকিং পাউডার ও লবণ মেশানো থাকে। ঝটপট কেক, মাফিন বা স্কোনস বানাতে এটি ব্যবহার করা হয়। এতে আগে থেকে পরিমাণমতো সব মেশানো থাকায় পরিমাণে ভুল হওয়ার ভয় থাকে না।

হোলসাম ফ্লাওয়ার

পুরো গম পিষে এটি তৈরি করা হয়। ফলে এতে আঁশ ও পুষ্টিগুণ বেশি থাকে এবং এটি দেখতে লাল বা বাদামি রঙের হয়। স্বাস্থ্যকর রুটি বা ভারী পাউরুটি বানাতে এটি ব্যবহার করা হয়। এটি একটু ঘন ও দানাদার হয়।

কর্নফ্লাওয়ার

এটি আসলে বেকিংয়ের চেয়ে রান্নায় বেশি ব্যবহার করা হয়। স্যুপ অথবা ঘন সস তৈরিতে কর্নফ্লাওয়ার অতুলনীয়। তবে এটি ব্যবহার করার আগে ঠান্ডা পানিতে গুলিয়ে ব্যবহার করলে দলা পাকানোর ভয় থাকে না।

সঠিক নির্বাচনেই সাফল্য

যে রেসিপির জন্য যে ধরনের ময়দার কথা বলা হয়, সব সময় সেটিই ব্যবহারের চেষ্টা করুন। হাতের কাছে সেলফ-রাইজিং ফ্লাওয়ার না থাকলে সাধারণ ময়দার সঙ্গে পরিমাণমতো বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিলে কাজ চলে যাবে। সঠিক ময়দা ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে দারুণ কেক বা পাউরুটি বানাতে পারবেন।

সূত্র: গয়া বেকারি ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তিনটি সহজ ও সুস্বাদু ভেজ খাবার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০০
রেড ক্যাবেজ স্যালাড। ছবি: বিবিসি
রেড ক্যাবেজ স্যালাড। ছবি: বিবিসি

আসছে বড়দিন। মানে ছুটির দিন। কর্মব্যস্ত জীবনে একটা দিন ছুটি মানেই খানিক অন্য রকম খাবার খাওয়ার চেষ্টা। শখের রাঁধুনি যাঁরা ভাবছেন, এবার বড়দিনে রান্নাঘরের দায়িত্বটা নিজেই নেবেন, তাঁদের জন্যই এই লেখা। যেহেতু উৎসবে প্রথম নিজে রান্না করবেন, তাই রান্নাটা যত রিস্ক ফ্রি হবে, ততই ভালো। মাংস ও মিষ্টি আইটেমের পাশাপাশি ভেজ আইটেমও তো রাখা চাই। কী থাকতে পারে ভেজ আইটেমে?

হানি রোস্টেড ক্যারট

উপকরণ

ছোট গাজর ১ কেজি, অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ, খাঁটি মধু ৩ টেবিল চামচ, তাজা লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, থাইম গুঁড়া সামান্য, লবণ এবং গোলমরিচগুঁড়া পরিমাণমতো।

হানি রোস্টেড ক্যারট। ছবি: বিবিসি ইউকে
হানি রোস্টেড ক্যারট। ছবি: বিবিসি ইউকে

প্রণালি

ওভেন ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রিহিট করুন। গাজরের গোড়া ও আগার অংশ কেটে খোসা ছাড়িয়ে নিন। গাজর মোটা হলে লম্বালম্বি অর্ধেক বা লম্বালম্বি চার টুকরো করে কেটে নিয়ে একটি বড় বেকিং ট্রেতে রাখুন। এবার এগুলোর ওপর অলিভ অয়েল ঢেলে দিন। এরপর ওপর থেকে লবণ ও গোলমরিচ ছড়িয়ে দিয়ে ভালো করে মেশান। তারপর ওভেনে ১৫ থেকে ২৫ মিনিটের জন্য বেক করুন। প্রায় নরম ও হালকা বাদামি না হওয়া পর্যন্ত বেক করতে থাকুন। কতটা সময় বেক করতে হবে, তা নির্ভর করবে গাজর কতটা পুরু তার ওপর।

এই ফাঁকে একটি বাটিতে মধু ও লেবুর রস একসঙ্গে ফেটিয়ে নিন। এবার ওভেন থেকে গাজরের ট্রে বের করে নিয়ে বেক করা গাজরের ওপর মধু ও লেবুর মিশ্রণ ছড়িয়ে দিন। সামান্য থাইম পাতার গুঁড়াও ছড়িয়ে দিতে পারেন। এবার সবকিছু হালকা করে মিশিয়ে নিয়ে আরও ৮-১০ মিনিটের জন্য ওভেনে বেক করুন। গাজরে চকচকে ভাব এলে বের করে পরিবেশন করুন।

এই রেসিপি ভেগানদের জন্য তৈরি করতে, মধুর পরিবর্তে ম্যাপল সিরাপ ব্যবহার করতে পারেন।

রেড ক্যাবেজ স্যালাড

উপকরণ

মাখন ১ চা-চামচ, অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ, সরু করে কাটা পেঁয়াজ ১টি, দারুচিনিগুঁড়া ১ চা- চামচ, জায়ফলগুঁড়া আধা চা-চামচ, ঝিরি ঝিরি করে কাটা লাল বাঁধাকপি ৬০০ গ্রাম, ব্রাউন সুগার ৩ টেবিল চামচ, খোসা ছাড়িয়ে কুচি করে করা আপেল ৩টি, সিরকা এক টেবিল চামচ, থাইম পাতা সাজানোর জন্য।

প্রণালি

একটি বড় ঢাকনাযুক্ত সসপ্যানে মাখন এবং তেল গরম করুন। গরম হলে পেঁয়াজ দিন এবং নরম না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এবার অন্যান্য মসলা দিয়ে নাড়ুন। তারপর বাঁধাকপি যোগ করুন এবং মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন। এভাবে ৩ থেকে ৪ মিনিট ভাজুন। এবার চিনি, আপেল কুচি ও সিরকা দিয়ে আবার কিছুক্ষণ নাড়ুন। তারপর চুলার আঁচ কমিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৩০ মিনিট ধরে রান্না করুন। সবশেষ নিজের পছন্দমতো ডিশে পরিবেশন করুন।

পারফেক্ট রোস্ট পটেটো

উপকরণ

যেকোনো উদ্ভিজ্জ তেল ৩ টেবিল চামচ, ৪ ভাগ করে কাটা মাঝারি আকারের আলু ২০০ গ্রাম, লবণ ও গোলমরিচগুঁড়া পরিমাণমতো।

পারফেক্ট রোস্ট পটেটো। ছবি: বিবিসি ইউকে
পারফেক্ট রোস্ট পটেটো। ছবি: বিবিসি ইউকে

প্রণালি

ওভেন ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রিহিট করুন। চুলায় আলুগুলো প্যানে ঢেকে সেদ্ধ হতে দিন। পানি ফুটে উঠলে লবণ দিয়ে আবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে সেদ্ধ করুন। আধা সেদ্ধ হলে আলুগুলো চুলা থেকে নামিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার পেপার টাওয়েল দিয়ে চেপে আলুর সঙ্গে লেগে থাকা বাড়তি পানি শুকিয়ে ফেলুন। এবার ট্রেতে করে আলুগুলো ১০ মিনিটের জন্য বাতাসের নিচে রাখুন। ওভেন ট্রেতে তেল দিয়ে আলুগুলো ছড়িয়ে দিন। ভালোভাবে তেল ও আলু মাখা হয়ে গেলে ওভেনে ২০ মিনিট ধরে বেক করুন। এরপর বের করে আলুগুলো উল্টেপাল্টে দিয়ে আরও ২০-৩০ মিনিটের জন্য অথবা সোনালি ও মুচমুচে না হওয়া পর্যন্ত বেক করুন। হয়ে গেলে আলুর ওপর লবণ ও গোলমরিচগুঁড়া ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন।

সূত্র: বিবিসি ইউকে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোলাজেন ট্রিটমেন্ট স্ট্রেচ মার্ক কমায়

শোভন সাহা 
শোভন সাহা। ছবি: সংগৃহীত
শোভন সাহা। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: মেটালের গয়নায় অ্যালার্জি থাকায় পরলে কানে ও গলায়, কখনো কখনো হাতেও চুলকানি হয় এবং ফুসকুড়ি ওঠে। তা ছাড়া জরি বা চুমকিওয়ালা শাড়ি, ব্লাউজ পরলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দানা ওঠে। তবে নিরাপদ কোনো ঘরোয়া সমাধান কি আছে এই অ্যালার্জি থেকে বাঁচার?

তুলতুল খান, ঢাকা

এ ধরনের অ্যালার্জি অনেকের থাকে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প উপায় বেছে নিতে হবে। খাঁটি সোনা ও রুপার গয়না পরে দেখতে পারেন। এ ধরনের গয়নায় অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা কম। এর বাইরে অন্যান্য মেটালের গয়নার পরিবর্তে কাপড়, ক্লে, পার্ল বা মাটির গয়না ব্যবহার করতে পারেন। কাপড়ের বেলায়ও নরম ও পরতে আরাম এমন বিকল্প বেছে নিতে হবে।

প্রশ্ন: আমার চুলের ওপরের দিক ঘন আর নিচের দিকে একেবারে পাতলা ও সরু। সমান ঘনত্বের জন্য কি কোনো সমাধান আছে? বছরে দুবার আমি চুলের আগা ছাঁটাই করি।

রোকেয়া সারোয়ার, নোয়াখালী

চুল ভালো রাখার জন্য মাসে একবার ট্রিম করা জরুরি। দীর্ঘদিন ট্রিম না করালে চুলের আগা একেবারে লেজের মতো সরু হয়ে যায়। এ ছাড়া চুল পড়ার সমস্যা যদি থাকে, তাহলে মাসে একবার ভালো পারলার থেকে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে হবে।

প্রশ্ন: শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্ট্রেচ মার্ক আছে। এগুলো দূর করতে কী করব?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা

স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে কোলাজেন ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। এ ছাড়া কোলাজেনসমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপরও কাজ না হলে একজন লেজার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

পরামর্শ দিয়েছেন: শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, শোভন মেকওভার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রেস্তোরাঁ নয়, বাড়িতেই তৈরি করুন ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
শীতের সকালে কিংবা সন্ধ্যার নাশতায় রেস্তোরাঁয় না গিয়ে কীভাবে বাড়িতেই তাদের মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই তৈরি করা যায়। ছবি: ফ্রিপিক
শীতের সকালে কিংবা সন্ধ্যার নাশতায় রেস্তোরাঁয় না গিয়ে কীভাবে বাড়িতেই তাদের মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই তৈরি করা যায়। ছবি: ফ্রিপিক

শীতকালে ভাজাপোড়া খেতে মন চায়। কেন এ ধরনের খাবারের প্রবণতা বাড়ে, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। সেসব থাক। আমরা বরং দেখে নিই, এই শীতের সকালে কিংবা সন্ধ্যার নাশতায় রেস্তোরাঁয় না গিয়ে কীভাবে বাড়িতেই তাদের মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই তৈরি করা যায়।

চিকেন ফ্রাই এখন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় খাবার। শহরগুলোতে গলির মোড়ে মোড়ে চিকেন ফ্রাইয়ের দোকান হয়ে গেছে। অর্থাৎ হাত বাড়ালেই এখন সুস্বাদু আর ক্রিস্পি মুরগি ভাজা পাওয়া যায়। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো চিকেন ফ্রাই করে নিতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, রেস্তোরাঁর মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই বানাতে হলে মাংস ম্যারিনেট করা, ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, বিস্কুটের গুঁড়া বা কর্নফ্লেক্সের মিশ্রণ সঠিক কোটিং এবং ডুবো তেলে ভাজার কৌশল জানা গুরুত্বপূর্ণ। এতে আদা-রসুনবাটা, সয়া সস, গোলমরিচ এবং ডিম ও ময়দার মিশ্রণ ব্যবহার করে ম্যারিনেট ও কোটিং করলে ভেতরে জুসি আর বাইরে মুচমুচে চিকেন ফ্রাই তৈরি হয়।

উপকরণ

মুরগি ছোট টুকরো করে কাটা ৫০০ গ্রাম, ম্যারিনেটের জন্য আদা ও রসুনবাটা, লবণ, গোলমরিচের গুঁড়া, সয়া সস, অল্প মরিচ গুঁড়া, সামান্য ভিনেগার বা লেবুর রস, দই, কোটিংয়ের জন্য ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, বিস্কুটের গুঁড়া বা ব্রেডক্রাম্বস, ডিম, সামান্য বেকিং পাউডার এবং ভাজার জন্য তেল।

উপকরণের এই বিষয়গুলো মোটামুটি আমরা সবাই জানি। এবার এগুলো ঠিকভাবে মেরিনেট করে নিন। এখানে কিছু বিষয় খেয়াল করার আছে। এগুলোর মধ্যে আছে মাংস রেস্টে রাখা। প্রতিটি ধাপে মাংস কিছুক্ষণ করে রেস্টে রাখলে ফল ভালো হবে।

মেয়োনিজ বা কেচাপ ডিপিং সস দিয়ে সাজিয়ে চিকেন ফ্রাই পরিবেশন করুন। ছবি: ফ্রিপিক
মেয়োনিজ বা কেচাপ ডিপিং সস দিয়ে সাজিয়ে চিকেন ফ্রাই পরিবেশন করুন। ছবি: ফ্রিপিক

ম্যারিনেশন প্রণালি

মুরগির টুকরোগুলো আদা-রসুনবাটা, লবণ, গোলমরিচ, সয়া সস, মরিচ গুঁড়া, ভিনেগার বা লেবুর রস ও দই দিয়ে ভালো করে মেখে কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। সম্ভব হলে ফ্রিজে রাখুন। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো। অনেকে মনে করেন, মাংস ভালো করে মেখে এক রাত ফ্রিজে বা ঠান্ডা জায়গায় রাখলে ভাজার পর ফল ভালো পাওয়া যায়। সেটা মেনেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যায় মেরিনেট করে রাতভর রেখে দিন।

টিপস

  • মুরগি ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
  • একটি বাটিতে দুধ, ভিনেগার ও লবণ মিশিয়ে মুরগির মাংস ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে মাংস নরম হবে।

ব্যাটার তৈরি

ভাজার আগে ব্যাটার তৈরি করে নিন। এ জন্য একটি বাটিতে ডিম ফেটিয়ে নিন। আরেকটি বাটিতে ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার এবং সামান্য লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে রাখুন। চাইলে এতে অল্প বিস্কুটের গুঁড়া বা কর্নফ্লেক্স গুঁড়াও যোগ করতে পারেন। আরও ক্রিস্পি চাইলে চালের গুঁড়া যোগ করতে পারেন।

সেদ্ধ কিংবা সঁতে করা শীতের সবজির সঙ্গেও চিকেন ফ্রাই খাওয়া যেতে পারে। ছবি: ফ্রিপিক
সেদ্ধ কিংবা সঁতে করা শীতের সবজির সঙ্গেও চিকেন ফ্রাই খাওয়া যেতে পারে। ছবি: ফ্রিপিক

কোটিং

ম্যারিনেট করা মুরগির টুকরোগুলো প্রথমে ময়দার মিশ্রণে গড়িয়ে নিয়ে অতিরিক্ত ময়দা ঝেড়ে ফেলুন। এরপর ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে নিন। সবশেষে বিস্কুটের গুঁড়া বা ব্রেডক্রাম্বসের মিশ্রণে ভালো করে কোট করুন।

টিপস

ভেজা মিশ্রণ: আলাদা বাটিতে শুকনা মিশ্রণের অর্ধেক নিয়ে বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন।

ডবল ডিপিং পদ্ধতি: প্রথমে মুরগি শুকনা মিশ্রণে, তারপর ভেজা পেস্টে, আবার শুকনা মিশ্রণে কোট করুন।

ভাজা

যেকোনো ধরনের ভাজার মতো চিকেন ফ্রাই করতে তাপমাত্রার পরিমাপটা বোঝা জরুরি। একটি কড়াইতে ডুবো তেল মাঝারি আঁচে তেল গরম করুন। তেলের তাপমাত্রা ৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ভালো হয়।

তেল গরম হলে কোটিং করে রাখা মুরগির মাংসের টুকরোগুলো সাবধানে তেলে ছাড়ুন এবং সোনালি-বাদামি ও মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এখানে কয়েকটি টিপস জেনে নিন।

  • কড়াইতে একবারে বেশি টুকরো দেবেন না। তাতে চিকেন নরম হয়ে যেতে পারে।
  • ভাজার সময় কোটিং খসে পড়ছে কি না, খেয়াল করুন। কোটিং খসে পড়ছে মানে মুরগি শুকনো ছিল না এবং কোটিং সেট হওয়ার সময় দেননি।
  • বাইরে পুড়ে গেছে, কিন্তু ভেতরে কাঁচা থাকলে বুঝতে হবে, তাপমাত্রা বেশি হয়েছে। তাপ কমিয়ে মিডিয়াম তাপে ভাজুন।
  • ভাজা হয়ে গেলে তেল ঝরানোর জন্য একটি তারের র‍্যাকে তুলে রাখুন।

পরিবেশন

  • মেয়োনিজ বা কেচাপ ডিপিং সস
  • ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা কোলস্ল
  • লেমন ওয়েজ
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত