ফরিদ ফারাবী
বেলজিয়ামের দ্রুতগামী ঝকমকে ট্রেনের দোতলার জানালায় তাকিয়ে দেখছিলাম দূরের ছুটে চলা ছবির মতো সব বাড়ি আর বিশাল উইন্ডমিল। আমাদের গন্তব্য উত্তরের ভেনিস বলে পরিচিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর ব্রুশ। তবে এর আগে আমরা যাব নর্থ সি-সংলগ্ন শহর ওস্টেন্ডে।
প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার ট্রেনযাত্রা শেষে ওস্টেন্ডে পৌঁছে ব্লাঙ্কেনবেরি সমুদ্রসৈকত দেখে আমরা চলে এসেছি পুরোনো শহর ব্রুশে। তবে স্টেশনের নাম ব্রুগসের বদলে ব্রুগ দেখে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলাম। এখানে, অর্থাৎ বেলজিয়াম ভ্রমণের সময় বিবেচনায় রাখতে হবে, ফ্রেঞ্চ নাম ছাড়াও ডাচ ভাষায় অনেক সময় নাম লেখা থাকে। যাতে বানান ও উচ্চারণ–দুই-ই বদলে যেতে পারে।
ট্রেন থেকে নেমে দেখলাম, দলে দলে পর্যটকেরা যাচ্ছেন ব্রুশ শহরের দিকে। রাস্তা পেরিয়ে কিছু দূর এগোতেই মনে হলো, যেন মধ্যযুগের ইউরোপে এসে পড়েছি। শহরজুড়ে পুরোনো বাড়ি আর চার্চ।
চমৎকার ছিমছাম আর গোছানো শহর। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, এটি মূলত পর্যটকদের কেন্দ্র করেই চলছে এখন। তবে রক্ষণাবেক্ষণ নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত। আমরা শহরের অলিগলি ধরে হাঁটতে থাকলাম। তাকিয়ে কেবল দেখছিলাম, একেকটা বাড়ির নির্মাণকাল আর স্থাপত্যশৈলী। বেশির ভাগ বাড়িই দোতলা কিংবা তিনতলা, যা শত শত বছরের ঐতিহ্য আর আভিজাত্য বহন করে চলেছে।
বেলজিয়ামের উত্তর-পশ্চিমের এই এলাকাকে বলা হয় ফ্ল্যান্ডার্স। এই অঞ্চলের আরও কয়েকটি বিখ্যাত শহর রয়েছে। এর মধ্যে ঘেন্ট আর লুভেন এখনো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। অষ্টম শতাব্দীতে এখানে গড়ে উঠেছিল ইউরোপের প্রথম বন্দর। এর মাধ্যমে ব্রুশ পরিণত হয়েছিল এক জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্রে। এখানকার তৈরি কাপড় ছিল পুরো ইউরোপে বিখ্যাত। সমুদ্র থেকে নদী, আর নদীবন্দর থেকে শহরের আনাচকানাচে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য শহরজুড়ে তৈরি হয়েছিল অসংখ্য খাল। খালের আধিক্যের জন্য এই শহরকে অনেকে উত্তরের ভেনিস বলে থাকে।
খালের পাড় ধরে হেঁটে আমরা সিটি সেন্টারে এসে পৌঁছালাম। ৪৩০ হেক্টর জায়গা নিয়ে অবস্থিত এই সিটি সেন্টার ইউনেসকো ঘোষিত প্রসিদ্ধ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। নির্মাণশৈলী অনেকটা ব্রাসেলসের গ্র্যান্ড প্যালেসের মতো। সুবিশাল সব স্থাপনা। অবাক চোখে চেয়ে দেখছি, একসময়ের বিখ্যাত বাণিজ্যিক নগর ব্রুশ টিকে থাকার প্রয়োজনে কেমন পর্যটন নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে!
মূলত বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে উন্নতির চরম শিখরে থাকা ব্রুশের গুরুত্ব কমতে থাকে পনেরো শতকে এসে। এ সময় নতুন সমুদ্রবন্দর আর ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অ্যান্টওয়ার্প। ধীরে ধীরে পরবর্তী কয়েক শ বছরে ব্রুশ অনেকটা পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া শহরটি উনিশ শতকে এসে আবার নতুন করে জেগে ওঠে। তবে এবার আর ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে নয়; চমৎকার সব পুরোনো স্থাপনা, পথঘাট আর খাল নিয়ে ব্রুশ পরিচিতি পায় পর্যটন নগরী হিসেবে। দুই বিশ্বযুদ্ধ আর নানা চড়াই-উতরাইয়ের মাঝেও সৌভাগ্যবশত ব্রুশ প্রায় অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে।
আশপাশ ঘুরে আরেকটু এগোতেই চোখে পড়ল জমজমাট খাবারের এলাকা। এখানে নানা দেশের মানুষ আর নানা রকমের খাবারের পসরা। হাঁটতে হাঁটতে আমরা চলে এলাম সুবিশাল এক চার্চের সামনে। সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় এর সিংহদুয়ার বন্ধ হওয়ায় ভেতরটা আর দেখা হলো না। আমাদের পাশ দিয়েই চলে যাচ্ছিল কিছুটা মধ্যযুগীয় কায়দায় তৈরি ট্যুরিস্ট বহনকারী ঘোড়ার গাড়ি। এ ছাড়া এখানে খাল ধরে পুরো শহর ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্যুরিস্ট বোট সার্ভিসও রয়েছে। তবে এসব পুরোনো শহর ঘুরতে সময় নিয়ে হেঁটে দেখতেই বরং বেশি স্বচ্ছন্দ লাগে। অনেকটা বেশি অনুভব করা যায়।
অলিগলি ঘুরে কখন যে বেলা শেষ হয়ে এল, টেরই পেলাম না। ব্রুশ নগরীর চমৎকার কিছু স্মৃতি নিয়ে আমরা রওনা হলাম ইউরোপের পথে, আমাদের নতুন গন্তব্যে।
বেলজিয়ামের দ্রুতগামী ঝকমকে ট্রেনের দোতলার জানালায় তাকিয়ে দেখছিলাম দূরের ছুটে চলা ছবির মতো সব বাড়ি আর বিশাল উইন্ডমিল। আমাদের গন্তব্য উত্তরের ভেনিস বলে পরিচিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর ব্রুশ। তবে এর আগে আমরা যাব নর্থ সি-সংলগ্ন শহর ওস্টেন্ডে।
প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার ট্রেনযাত্রা শেষে ওস্টেন্ডে পৌঁছে ব্লাঙ্কেনবেরি সমুদ্রসৈকত দেখে আমরা চলে এসেছি পুরোনো শহর ব্রুশে। তবে স্টেশনের নাম ব্রুগসের বদলে ব্রুগ দেখে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলাম। এখানে, অর্থাৎ বেলজিয়াম ভ্রমণের সময় বিবেচনায় রাখতে হবে, ফ্রেঞ্চ নাম ছাড়াও ডাচ ভাষায় অনেক সময় নাম লেখা থাকে। যাতে বানান ও উচ্চারণ–দুই-ই বদলে যেতে পারে।
ট্রেন থেকে নেমে দেখলাম, দলে দলে পর্যটকেরা যাচ্ছেন ব্রুশ শহরের দিকে। রাস্তা পেরিয়ে কিছু দূর এগোতেই মনে হলো, যেন মধ্যযুগের ইউরোপে এসে পড়েছি। শহরজুড়ে পুরোনো বাড়ি আর চার্চ।
চমৎকার ছিমছাম আর গোছানো শহর। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, এটি মূলত পর্যটকদের কেন্দ্র করেই চলছে এখন। তবে রক্ষণাবেক্ষণ নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত। আমরা শহরের অলিগলি ধরে হাঁটতে থাকলাম। তাকিয়ে কেবল দেখছিলাম, একেকটা বাড়ির নির্মাণকাল আর স্থাপত্যশৈলী। বেশির ভাগ বাড়িই দোতলা কিংবা তিনতলা, যা শত শত বছরের ঐতিহ্য আর আভিজাত্য বহন করে চলেছে।
বেলজিয়ামের উত্তর-পশ্চিমের এই এলাকাকে বলা হয় ফ্ল্যান্ডার্স। এই অঞ্চলের আরও কয়েকটি বিখ্যাত শহর রয়েছে। এর মধ্যে ঘেন্ট আর লুভেন এখনো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। অষ্টম শতাব্দীতে এখানে গড়ে উঠেছিল ইউরোপের প্রথম বন্দর। এর মাধ্যমে ব্রুশ পরিণত হয়েছিল এক জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্রে। এখানকার তৈরি কাপড় ছিল পুরো ইউরোপে বিখ্যাত। সমুদ্র থেকে নদী, আর নদীবন্দর থেকে শহরের আনাচকানাচে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য শহরজুড়ে তৈরি হয়েছিল অসংখ্য খাল। খালের আধিক্যের জন্য এই শহরকে অনেকে উত্তরের ভেনিস বলে থাকে।
খালের পাড় ধরে হেঁটে আমরা সিটি সেন্টারে এসে পৌঁছালাম। ৪৩০ হেক্টর জায়গা নিয়ে অবস্থিত এই সিটি সেন্টার ইউনেসকো ঘোষিত প্রসিদ্ধ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। নির্মাণশৈলী অনেকটা ব্রাসেলসের গ্র্যান্ড প্যালেসের মতো। সুবিশাল সব স্থাপনা। অবাক চোখে চেয়ে দেখছি, একসময়ের বিখ্যাত বাণিজ্যিক নগর ব্রুশ টিকে থাকার প্রয়োজনে কেমন পর্যটন নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে!
মূলত বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে উন্নতির চরম শিখরে থাকা ব্রুশের গুরুত্ব কমতে থাকে পনেরো শতকে এসে। এ সময় নতুন সমুদ্রবন্দর আর ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অ্যান্টওয়ার্প। ধীরে ধীরে পরবর্তী কয়েক শ বছরে ব্রুশ অনেকটা পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া শহরটি উনিশ শতকে এসে আবার নতুন করে জেগে ওঠে। তবে এবার আর ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে নয়; চমৎকার সব পুরোনো স্থাপনা, পথঘাট আর খাল নিয়ে ব্রুশ পরিচিতি পায় পর্যটন নগরী হিসেবে। দুই বিশ্বযুদ্ধ আর নানা চড়াই-উতরাইয়ের মাঝেও সৌভাগ্যবশত ব্রুশ প্রায় অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে।
আশপাশ ঘুরে আরেকটু এগোতেই চোখে পড়ল জমজমাট খাবারের এলাকা। এখানে নানা দেশের মানুষ আর নানা রকমের খাবারের পসরা। হাঁটতে হাঁটতে আমরা চলে এলাম সুবিশাল এক চার্চের সামনে। সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় এর সিংহদুয়ার বন্ধ হওয়ায় ভেতরটা আর দেখা হলো না। আমাদের পাশ দিয়েই চলে যাচ্ছিল কিছুটা মধ্যযুগীয় কায়দায় তৈরি ট্যুরিস্ট বহনকারী ঘোড়ার গাড়ি। এ ছাড়া এখানে খাল ধরে পুরো শহর ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্যুরিস্ট বোট সার্ভিসও রয়েছে। তবে এসব পুরোনো শহর ঘুরতে সময় নিয়ে হেঁটে দেখতেই বরং বেশি স্বচ্ছন্দ লাগে। অনেকটা বেশি অনুভব করা যায়।
অলিগলি ঘুরে কখন যে বেলা শেষ হয়ে এল, টেরই পেলাম না। ব্রুশ নগরীর চমৎকার কিছু স্মৃতি নিয়ে আমরা রওনা হলাম ইউরোপের পথে, আমাদের নতুন গন্তব্যে।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে