রজত কান্তি রায়, ঢাকা
ভারত ভ্রমণ
১৯৯৮ সালে জন্ম মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজের। ২০১৯ সালে ভারতে যান পড়াশোনা করতে। এখন লেখাপড়া করছেন কলকাতার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে, হোটেল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে। ২০১৯ সালে তিনি শখের বশে ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। একের পর এক ঘুরতে থাকেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কেরালা, তামিলনাড়ুসহ এ পর্যন্ত
দেশটির ১২টি রাজ্য ঘুরেছেন ফিজ। প্রতিটি রাজ্য নিয়েই তিনি বানিয়েছেন ভ্রমণ ভ্লগ। ধীরে ধীরে সে দেশে জনপ্রিয় হয়ে যান ইউটিউবার হিসেবে। দেশে তাঁর অডিয়েন্স তৈরি হচ্ছে এখন। একেবারে মেহেরপুরের আঞ্চলিক ভাষায় ভ্লগ তৈরি করেন ফিজ।
মাবিয়া খাতুন ও কাঁটাতার
মাবিয়া খাতুন সম্পর্কে ফিজের ফুফু। ছোট ফুফু। তাঁর বিয়ে হয় ভারতের নদীয়া জেলার টেহট্টার গোবিন্দপুর গ্রামে। একসময় সীমান্তের জনপদগুলোতে দুই দেশের মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিল পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই। উভয় দেশের মানুষের মধ্যে বিয়ের সম্পর্ক হতো, মানুষ হাটবাজার করতে যেত এ দেশ থেকে সে দেশে। খুব সমস্যা ছিল না। সে রকম সময়, সেই আশি বা নব্বইয়ের দশকে মাবিয়া খাতুনের বিয়ে হয় নদীয়ায়। তখনো কাঁটাতারের বেড়া ওঠেনি সীমান্তে। ফিজ তাঁর দাদির সঙ্গে যেতেন ছোট ফুফুর বাড়ি। ফুফু ভীষণ ভালোবাসতেন ছোট্ট ফিজকে।
তারপর হঠাৎ একদিন কাঁটাতারের বেড়া ওঠে সীমান্তে। হাজার হাজার পরিবার একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরস্পর থেকে। কান্নার রোল ওঠে সীমান্তবর্তী জনপদগুলোতে।
অনেকের মতো দাদির সঙ্গে ফিজেরও ফুফুর বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফুফুর ভালোবাসাহীন এক বিমর্ষ একাকিত্ব বাসা বাঁধে মোস্তাফিজুর রহমানের বুকে।
‘আমি একটা ক্যামেরা কিনেছিলাম। সেই ক্যামেরা নিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গিয়ে ছবি তুলতাম ফুফুর বাড়ির দিকে তাক করে। আমাদের বাড়ি থেকে খুব কাছে ছিল ফুফুর বাড়ি। কিন্তু অন্য দেশ! সাত-আট বছর বয়স তখন। খুব কান্না পেত ভাই!’ না, সাক্ষাৎকার দিতে ভিডিও ক্যামেরার সামনে কয়েক শ ওয়াটের উজ্জ্বল আলোর নিচে বসে আমার সামনে কাঁদেননি সেলিব্রিটি ফিজ। কিন্তু তাঁর চোখের কোনা যে চিকচিক করে উঠেছিল, উজ্জ্বল আলোয় সেটা দেখেছিলাম।
জানতে চাইলাম, সেটাই কি ভ্রমণের স্বপ্ন গড়ে দিল তবে?
ফিজ জানালেন, হ্যাঁ। সাত-আট বছর বয়সের কিশোর ফিজ ভীষণ অভিমানে এক কঠিন সংকল্প করে ফেলে, ফুফুকে একদিন দাদির কাছে আনবে! সে স্বপ্ন পূরণ হয় ২০১৯ সালে। পড়তে গিয়ে প্রথমে ফুফুর বাড়িতেই ওঠেন ফিজ। প্রায় ১৩ বছর পর দাদির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন হোয়াটসঅ্যাপে।
বাড়ি থেকে পালিয়ে
ভারতে পড়তে যাওয়ার আগে কিশোর ফিজের গ্রামের গণ্ডির বাইরে প্রথম ভ্রমণ গাজীপুর। তবে সেটা বাড়ি থেকে পালিয়ে।
ফিজের বাবা মিজানুর রহমান মিজান নিজের কনস্ট্রাকশনের ব্যবসার কাজে থাকতেন ঢাকায়। ফলে মা মমতাজ বেগম একটু শাসনেই রেখেছিলেন ফিজকে। গ্রামময় টইটই করে ঘুরে বেড়ানো, ব্যাক ফ্লিপ, ফ্রন্ট ফ্লিপের অ্যাক্রোবেটিক ছন্দ যার রক্তে, সে আর কতই-বা সুবোধ হবে! ফলে প্রতিদিনই ভাগ্যে জুটত মার কিংবা বকা। বাবাও ঢাকা থেকে ছেলের খোঁজখবর নিতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখতেন নিয়মিত। দুরন্ত ফিজের কাজকর্ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল তাঁর। বাবা ফোন করে বলতেন, ‘তুই আমার অলক্ষ্মী ছেলে।’ এটা শুনতে খুব ভালো লাগত না ফিজের। ফল যা হওয়ার তা-ই হলো। ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর। এইচএসসি পাস করে মেহেরপুর থেকে পালিয়ে চলে এলেন গাজীপুরে। উঠলেন চাচার বাসায়। চাচা আবার সংবাদ দিলেন তাঁর বাবাকে। ফলে গিয়ে উঠতে হলো মোহাম্মদপুরে, বাবার কাছে। জুটল প্রচণ্ড মার। কী আর করা! ভর্তি হলেন মোহাম্মদপুরের একটি কলেজে। সেখান থেকে ভারত।
সো গাইজ, দিস ইজ লাইফ
জানতে চাইলাম, তরুণেরা কি কনটেন্ট তৈরিকে নিজেদের পেশা হিসেবে নিতে পারেন? ফিজ সতর্ক হয়ে গেলেন। জানালেন, ক্যামেরার সামনে ‘সো গাইজ, দিস ইজ লাইফ’ বলার ক্রেজটাই সবাই দেখে। এর পেছনের পরিশ্রম সম্পর্কে কারও তেমন ধারণা নেই। কাজ করতে গিয়ে এই পরিশ্রমের কারণেই অনেকে ব্যর্থ হয়। তা ছাড়া জনপ্রিয়তা আসতেও সময় লাগে প্রচুর। তত দিনে হতাশা চলে আসা অস্বাভাবিক নয়। কাজেই লেখাপড়াটা শেষ করতে হবে।
আর সবচেয়ে বড় বিষয়, ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে অনেক টাকা কামাব, এ চিন্তা বাদ দিতে হবে। এটা হতে পারে, না-ও পারে।’
চৈত্রের আকাশে কালো মেঘ। বৃষ্টির শঙ্কা। ভবিষ্যতের ভ্রমণের জন্য শুভকামনা জানাতে হাত বাড়িয়ে দিলাম ফিজের দিকে। তিনি বিদায় নিলেন।
ভারত ভ্রমণ
১৯৯৮ সালে জন্ম মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজের। ২০১৯ সালে ভারতে যান পড়াশোনা করতে। এখন লেখাপড়া করছেন কলকাতার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে, হোটেল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে। ২০১৯ সালে তিনি শখের বশে ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। একের পর এক ঘুরতে থাকেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কেরালা, তামিলনাড়ুসহ এ পর্যন্ত
দেশটির ১২টি রাজ্য ঘুরেছেন ফিজ। প্রতিটি রাজ্য নিয়েই তিনি বানিয়েছেন ভ্রমণ ভ্লগ। ধীরে ধীরে সে দেশে জনপ্রিয় হয়ে যান ইউটিউবার হিসেবে। দেশে তাঁর অডিয়েন্স তৈরি হচ্ছে এখন। একেবারে মেহেরপুরের আঞ্চলিক ভাষায় ভ্লগ তৈরি করেন ফিজ।
মাবিয়া খাতুন ও কাঁটাতার
মাবিয়া খাতুন সম্পর্কে ফিজের ফুফু। ছোট ফুফু। তাঁর বিয়ে হয় ভারতের নদীয়া জেলার টেহট্টার গোবিন্দপুর গ্রামে। একসময় সীমান্তের জনপদগুলোতে দুই দেশের মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিল পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই। উভয় দেশের মানুষের মধ্যে বিয়ের সম্পর্ক হতো, মানুষ হাটবাজার করতে যেত এ দেশ থেকে সে দেশে। খুব সমস্যা ছিল না। সে রকম সময়, সেই আশি বা নব্বইয়ের দশকে মাবিয়া খাতুনের বিয়ে হয় নদীয়ায়। তখনো কাঁটাতারের বেড়া ওঠেনি সীমান্তে। ফিজ তাঁর দাদির সঙ্গে যেতেন ছোট ফুফুর বাড়ি। ফুফু ভীষণ ভালোবাসতেন ছোট্ট ফিজকে।
তারপর হঠাৎ একদিন কাঁটাতারের বেড়া ওঠে সীমান্তে। হাজার হাজার পরিবার একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরস্পর থেকে। কান্নার রোল ওঠে সীমান্তবর্তী জনপদগুলোতে।
অনেকের মতো দাদির সঙ্গে ফিজেরও ফুফুর বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফুফুর ভালোবাসাহীন এক বিমর্ষ একাকিত্ব বাসা বাঁধে মোস্তাফিজুর রহমানের বুকে।
‘আমি একটা ক্যামেরা কিনেছিলাম। সেই ক্যামেরা নিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গিয়ে ছবি তুলতাম ফুফুর বাড়ির দিকে তাক করে। আমাদের বাড়ি থেকে খুব কাছে ছিল ফুফুর বাড়ি। কিন্তু অন্য দেশ! সাত-আট বছর বয়স তখন। খুব কান্না পেত ভাই!’ না, সাক্ষাৎকার দিতে ভিডিও ক্যামেরার সামনে কয়েক শ ওয়াটের উজ্জ্বল আলোর নিচে বসে আমার সামনে কাঁদেননি সেলিব্রিটি ফিজ। কিন্তু তাঁর চোখের কোনা যে চিকচিক করে উঠেছিল, উজ্জ্বল আলোয় সেটা দেখেছিলাম।
জানতে চাইলাম, সেটাই কি ভ্রমণের স্বপ্ন গড়ে দিল তবে?
ফিজ জানালেন, হ্যাঁ। সাত-আট বছর বয়সের কিশোর ফিজ ভীষণ অভিমানে এক কঠিন সংকল্প করে ফেলে, ফুফুকে একদিন দাদির কাছে আনবে! সে স্বপ্ন পূরণ হয় ২০১৯ সালে। পড়তে গিয়ে প্রথমে ফুফুর বাড়িতেই ওঠেন ফিজ। প্রায় ১৩ বছর পর দাদির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন হোয়াটসঅ্যাপে।
বাড়ি থেকে পালিয়ে
ভারতে পড়তে যাওয়ার আগে কিশোর ফিজের গ্রামের গণ্ডির বাইরে প্রথম ভ্রমণ গাজীপুর। তবে সেটা বাড়ি থেকে পালিয়ে।
ফিজের বাবা মিজানুর রহমান মিজান নিজের কনস্ট্রাকশনের ব্যবসার কাজে থাকতেন ঢাকায়। ফলে মা মমতাজ বেগম একটু শাসনেই রেখেছিলেন ফিজকে। গ্রামময় টইটই করে ঘুরে বেড়ানো, ব্যাক ফ্লিপ, ফ্রন্ট ফ্লিপের অ্যাক্রোবেটিক ছন্দ যার রক্তে, সে আর কতই-বা সুবোধ হবে! ফলে প্রতিদিনই ভাগ্যে জুটত মার কিংবা বকা। বাবাও ঢাকা থেকে ছেলের খোঁজখবর নিতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখতেন নিয়মিত। দুরন্ত ফিজের কাজকর্ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল তাঁর। বাবা ফোন করে বলতেন, ‘তুই আমার অলক্ষ্মী ছেলে।’ এটা শুনতে খুব ভালো লাগত না ফিজের। ফল যা হওয়ার তা-ই হলো। ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর। এইচএসসি পাস করে মেহেরপুর থেকে পালিয়ে চলে এলেন গাজীপুরে। উঠলেন চাচার বাসায়। চাচা আবার সংবাদ দিলেন তাঁর বাবাকে। ফলে গিয়ে উঠতে হলো মোহাম্মদপুরে, বাবার কাছে। জুটল প্রচণ্ড মার। কী আর করা! ভর্তি হলেন মোহাম্মদপুরের একটি কলেজে। সেখান থেকে ভারত।
সো গাইজ, দিস ইজ লাইফ
জানতে চাইলাম, তরুণেরা কি কনটেন্ট তৈরিকে নিজেদের পেশা হিসেবে নিতে পারেন? ফিজ সতর্ক হয়ে গেলেন। জানালেন, ক্যামেরার সামনে ‘সো গাইজ, দিস ইজ লাইফ’ বলার ক্রেজটাই সবাই দেখে। এর পেছনের পরিশ্রম সম্পর্কে কারও তেমন ধারণা নেই। কাজ করতে গিয়ে এই পরিশ্রমের কারণেই অনেকে ব্যর্থ হয়। তা ছাড়া জনপ্রিয়তা আসতেও সময় লাগে প্রচুর। তত দিনে হতাশা চলে আসা অস্বাভাবিক নয়। কাজেই লেখাপড়াটা শেষ করতে হবে।
আর সবচেয়ে বড় বিষয়, ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে অনেক টাকা কামাব, এ চিন্তা বাদ দিতে হবে। এটা হতে পারে, না-ও পারে।’
চৈত্রের আকাশে কালো মেঘ। বৃষ্টির শঙ্কা। ভবিষ্যতের ভ্রমণের জন্য শুভকামনা জানাতে হাত বাড়িয়ে দিলাম ফিজের দিকে। তিনি বিদায় নিলেন।
তরুণদের মধ্যে যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তাদের বলা হচ্ছে জেন জি বা জেনারেশন জেড। একাডেমিক পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে করোনা চলাকালীন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ শুরু করে এই প্রজন্ম। কিন্তু তাদের নিয়ে সবার যে প্রত্যাশা এরই মধ্যে তাতে ধুলো পড়তে শুরু করেছে।
১ দিন আগেআমন্ত্রণ নয়, রাজশাহী আপনাকে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে। ছাতিমের সুগন্ধ ছাড়িয়ে রাজশাহী এখন ম-ম করছে হাঁসের মাংস ভুনার সুগন্ধে। সাদা ভাত আর গরম-গরম মাংস ভুনা। বিকেলে বাটার মোড়ের জিলাপির সঙ্গে নিমকি দিয়ে হালকা নাশতা। আলোর শহর রাজশাহী ঘুরে দেখার পর সন্ধ্যায় সিঅ্যান্ডবি মোড়ে গরম-গরম রসগোল্লার সঙ্গে পুরি।
৩ দিন আগেশুধু কলাপাড়া বললে অনেকে হয়তো জায়গাটা চিনবেন না। কিন্তু কুয়াকাটার কথা বললে চিনবেন প্রায় সবাই। কুয়াকাটা সৈকতের জন্য কলাপাড়া এখন সুপরিচিত। এখানে আছে এক বিখ্যাত খাবার। জগার মিষ্টি।
৩ দিন আগেঢাকা শহরের গলিগুলো এখন খাবারের ঘ্রাণে উতলা থাকে। এদিক-ওদিক তাকালেই দেখবেন, কোথাও না কোথাও একটি লাইভ বেকারি। এতে বেক করা হচ্ছে পাউরুটি, বিভিন্ন ধরনের কেক-বিস্কুট কিংবা বাটার বান। কৌতূহল নিয়ে এক পিস কিনে মুখে পুরে দিতে পারেন। এগুলোর দামও যে খুব আহামরি, তা কিন্তু নয়।
৩ দিন আগে