মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
ঢাকার উপকণ্ঠে ধামরাই। শহরঘেঁষা হলেও এখানে আছে নয়নাভিরাম প্রকৃতি; বিশেষ করে ধামরাইয়ের কাজিয়ালকুণ্ড, আড়ালিয়া, মাখুলিয়া, কানারচর, মাধবপট্টিসহ আরও অনেক গ্রাম ছবির মতো সুন্দর।
এসব গ্রামের কয়েকটিতে রয়েছে প্রচুর হিজল ও করচগাছ। এক অদ্ভুত প্রশান্তি দেবে তারা। বংশী ও ধলেশ্বরী নদীঘেরা গ্রামের নিচু ফসলি মাঠ থেকে বর্ষার পানি নেমে গেছে। উঁচু গ্রামগুলো এখন দ্বীপ নয়, টিলার মতো দেখতে। নৌকার বদলে সেখানে এখন হাঁটাপথ। বর্ষার মাছশিকারিরা এখন কৃষক। থইথই পানি না থাকলেও নিচু জমি আর খালে যে পানি আছে, সেখানে ভেসে বেড়ায় পাতিহাঁসের দল। মাঠগুলো ভরে উঠেছে শীতের সবজিতে। কোথাও কোথাও চাষ করা হয়েছে সরিষা। মধ্য ডিসেম্বরে তার হলুদ ফুলে ভরে উঠবে মাঠ, তারই প্রস্তুতি নিচ্ছে সবুজ চারাগুলো।
এসব গ্রাম এখনো বেশ নীরব। পাকা রাস্তায় তীব্র বেগে ছুটে যায় গাড়ি, কিন্তু শহরের মতো উচ্চ শব্দে হর্ন বাজায় না। ফলে নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরে। দুপুরে মনে হয় মাঠগুলো ঝিম মেরে রোদ পোহায়। বিষণ্ন দুপুরে ঘুঘুর ডাক যে কাউকে উদাস করবে।
ছবির মতো সুন্দর গ্রামের সিঁথি। তার মেঠো পথে সারি সারি তালগাছের ছায়ায় হেঁটে ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে আড়ালিয়া বাজারে উপস্থিত হই। সেখানকার টংদোকানে গরম-গরম আলুপুরি, শিঙাড়া আর গরুর দুধের মালাই চায়ের স্বাদ জিবে লেগে থাকবে দীর্ঘদিন। খেয়েদেয়ে চাঙা হয়ে বাজারের পাশের চৌটাইল গ্রামের পিঠ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ধলেশ্বরীর বুকে ডুবসাঁতারে মাতামাতি করে শৈশবের স্মৃতি হাতড়ানোর সুযোগ পাওয়া যাবে। বিনা টিকিটে ইচ্ছেমতো গোসল করে চলে যেতে পারেন কাজিয়ালকুণ্ড। এখানে সড়কের দুই পাশের গাছের ছায়ায় পেতে রাখা বেঞ্চে বেলা পার করে দেওয়া যায় অনায়াসে। গাছের ফাঁক গলে হুহু করে আসা আসন্ন শীতের বাতাস দুপুরের গরমেও স্বস্তি দেবে।
ধানের নাড়ার স্তূপ ও পাখির ডাকে এখানে অপার্থিব পরিবেশ। ঘুরতে ঘুরতে সকাল গড়িয়ে দুপুর। পেটে নিশ্চয় লেগে গেছে টান। কাজিয়ালকুণ্ডের ঢুলিভিটা সড়কে রয়েছে নানান ক্যাটাগরির রেস্টুরেন্ট। খাবারের মানের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি মনে হতে পারে। এর চেয়ে ভালো নিজেরা সওদাপাতি করে গ্রামের ভেতর কোনো টংদোকানিকে দলে ভিড়িয়ে রান্না করিয়ে নেওয়া।
পেট ঠান্ডা হলে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে পারেন মাখুলিয়া। ধান শুকানোর মনোরম মুহূর্ত, গ্রামের বউঝিদের গোলায় ধান তোলার ব্যস্ততা যান্ত্রিকতা থেকে খানিক মুক্তি দেবে। সেখান থেকে যেতে পারেন কানারচরের দিকে। সেখানে আছে বিস্তৃত ফসলি জমি। মাটির গভীর থেকে ফসলের জন্য তোলা শ্যালো মেশিনের নলের সামনে বসে আরও একবার গোসল করতে পারেন। না হলে তাকিয়ে থাকুন দিগন্তের দিকে। যত দূর চোখ যায় শুধু কাঁচা-পাকা ধানখেত দেখতে পাবেন। আশ্চর্য হয়ে ভাবতে শুরু করবেন, এমন সুন্দর গ্রামের নাম কে রেখেছে কানারচর!
সূর্য যখন পশ্চিমে হেলে পড়বে, ঠিক তখনই মধ্য ফোর্ডনগরের দিকে ছুটে যান। বটতলা ছাড়িয়ে, বাঁশের সেতু মাড়িয়ে, ইঞ্জিনবোটে চড়ে বংশী নদীতে ভেসে বেড়ান কিছুক্ষণ। মাঝির সঙ্গে কথা হবে, ট্রলার যাবে দক্ষিণ দিকে। সঙ্গে নিন ছোলা ভুনা, পেঁয়াজি আর হাতে ভাজা মুড়ি। মাখা মুড়ি শেষ হওয়ার আগেই হয়তো আবিষ্কার করবেন, জীবনটা এখানে অনেক সুন্দর। ভাসতে ভাসতে ভরসন্ধ্যায় নেমে পড়ুন সাভারের নামাবাজার গুদারা ঘাটে।
যাবেন যেভাবে
ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে নিজস্ব বা ভাড়া করা গাড়ি, মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেল কিংবা গণপরিবহনে সাভারের থানা রোড হয়ে নামাবাজার ব্রিজের ওপর দিয়ে দিনে দিনে ঘুরে আসা যায়। উপজেলা ধামরাই হলেও সাভারের থানা রোড বা বাজার রোড দিয়ে যাতায়াত সহজ।
আরও যা দেখা যাবে
খুব ভোরে পৌঁছাতে পারলে আড়ালিয়ার পাশে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরের নয়নাভিরাম খড়ার চর, কাংশা ও ফড়িঙ্গা গ্রাম ঘুরে আসা যাবে।
টিপস
গল্পের মতো ঘুরতে চাইলে সঙ্গে রাখুন কয়েক সেট পরিধেয় জামাকাপড়। ভোজনরসিক হলে সকালের নাশতায় নামাবাজারের থাপড়ানো রুটি ও দই-মিষ্টি তালিকায় রাখতে পারেন।
ছবি: দে ছুট ভ্রমণ সংঘ
ঢাকার উপকণ্ঠে ধামরাই। শহরঘেঁষা হলেও এখানে আছে নয়নাভিরাম প্রকৃতি; বিশেষ করে ধামরাইয়ের কাজিয়ালকুণ্ড, আড়ালিয়া, মাখুলিয়া, কানারচর, মাধবপট্টিসহ আরও অনেক গ্রাম ছবির মতো সুন্দর।
এসব গ্রামের কয়েকটিতে রয়েছে প্রচুর হিজল ও করচগাছ। এক অদ্ভুত প্রশান্তি দেবে তারা। বংশী ও ধলেশ্বরী নদীঘেরা গ্রামের নিচু ফসলি মাঠ থেকে বর্ষার পানি নেমে গেছে। উঁচু গ্রামগুলো এখন দ্বীপ নয়, টিলার মতো দেখতে। নৌকার বদলে সেখানে এখন হাঁটাপথ। বর্ষার মাছশিকারিরা এখন কৃষক। থইথই পানি না থাকলেও নিচু জমি আর খালে যে পানি আছে, সেখানে ভেসে বেড়ায় পাতিহাঁসের দল। মাঠগুলো ভরে উঠেছে শীতের সবজিতে। কোথাও কোথাও চাষ করা হয়েছে সরিষা। মধ্য ডিসেম্বরে তার হলুদ ফুলে ভরে উঠবে মাঠ, তারই প্রস্তুতি নিচ্ছে সবুজ চারাগুলো।
এসব গ্রাম এখনো বেশ নীরব। পাকা রাস্তায় তীব্র বেগে ছুটে যায় গাড়ি, কিন্তু শহরের মতো উচ্চ শব্দে হর্ন বাজায় না। ফলে নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরে। দুপুরে মনে হয় মাঠগুলো ঝিম মেরে রোদ পোহায়। বিষণ্ন দুপুরে ঘুঘুর ডাক যে কাউকে উদাস করবে।
ছবির মতো সুন্দর গ্রামের সিঁথি। তার মেঠো পথে সারি সারি তালগাছের ছায়ায় হেঁটে ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে আড়ালিয়া বাজারে উপস্থিত হই। সেখানকার টংদোকানে গরম-গরম আলুপুরি, শিঙাড়া আর গরুর দুধের মালাই চায়ের স্বাদ জিবে লেগে থাকবে দীর্ঘদিন। খেয়েদেয়ে চাঙা হয়ে বাজারের পাশের চৌটাইল গ্রামের পিঠ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ধলেশ্বরীর বুকে ডুবসাঁতারে মাতামাতি করে শৈশবের স্মৃতি হাতড়ানোর সুযোগ পাওয়া যাবে। বিনা টিকিটে ইচ্ছেমতো গোসল করে চলে যেতে পারেন কাজিয়ালকুণ্ড। এখানে সড়কের দুই পাশের গাছের ছায়ায় পেতে রাখা বেঞ্চে বেলা পার করে দেওয়া যায় অনায়াসে। গাছের ফাঁক গলে হুহু করে আসা আসন্ন শীতের বাতাস দুপুরের গরমেও স্বস্তি দেবে।
ধানের নাড়ার স্তূপ ও পাখির ডাকে এখানে অপার্থিব পরিবেশ। ঘুরতে ঘুরতে সকাল গড়িয়ে দুপুর। পেটে নিশ্চয় লেগে গেছে টান। কাজিয়ালকুণ্ডের ঢুলিভিটা সড়কে রয়েছে নানান ক্যাটাগরির রেস্টুরেন্ট। খাবারের মানের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি মনে হতে পারে। এর চেয়ে ভালো নিজেরা সওদাপাতি করে গ্রামের ভেতর কোনো টংদোকানিকে দলে ভিড়িয়ে রান্না করিয়ে নেওয়া।
পেট ঠান্ডা হলে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে পারেন মাখুলিয়া। ধান শুকানোর মনোরম মুহূর্ত, গ্রামের বউঝিদের গোলায় ধান তোলার ব্যস্ততা যান্ত্রিকতা থেকে খানিক মুক্তি দেবে। সেখান থেকে যেতে পারেন কানারচরের দিকে। সেখানে আছে বিস্তৃত ফসলি জমি। মাটির গভীর থেকে ফসলের জন্য তোলা শ্যালো মেশিনের নলের সামনে বসে আরও একবার গোসল করতে পারেন। না হলে তাকিয়ে থাকুন দিগন্তের দিকে। যত দূর চোখ যায় শুধু কাঁচা-পাকা ধানখেত দেখতে পাবেন। আশ্চর্য হয়ে ভাবতে শুরু করবেন, এমন সুন্দর গ্রামের নাম কে রেখেছে কানারচর!
সূর্য যখন পশ্চিমে হেলে পড়বে, ঠিক তখনই মধ্য ফোর্ডনগরের দিকে ছুটে যান। বটতলা ছাড়িয়ে, বাঁশের সেতু মাড়িয়ে, ইঞ্জিনবোটে চড়ে বংশী নদীতে ভেসে বেড়ান কিছুক্ষণ। মাঝির সঙ্গে কথা হবে, ট্রলার যাবে দক্ষিণ দিকে। সঙ্গে নিন ছোলা ভুনা, পেঁয়াজি আর হাতে ভাজা মুড়ি। মাখা মুড়ি শেষ হওয়ার আগেই হয়তো আবিষ্কার করবেন, জীবনটা এখানে অনেক সুন্দর। ভাসতে ভাসতে ভরসন্ধ্যায় নেমে পড়ুন সাভারের নামাবাজার গুদারা ঘাটে।
যাবেন যেভাবে
ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে নিজস্ব বা ভাড়া করা গাড়ি, মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেল কিংবা গণপরিবহনে সাভারের থানা রোড হয়ে নামাবাজার ব্রিজের ওপর দিয়ে দিনে দিনে ঘুরে আসা যায়। উপজেলা ধামরাই হলেও সাভারের থানা রোড বা বাজার রোড দিয়ে যাতায়াত সহজ।
আরও যা দেখা যাবে
খুব ভোরে পৌঁছাতে পারলে আড়ালিয়ার পাশে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরের নয়নাভিরাম খড়ার চর, কাংশা ও ফড়িঙ্গা গ্রাম ঘুরে আসা যাবে।
টিপস
গল্পের মতো ঘুরতে চাইলে সঙ্গে রাখুন কয়েক সেট পরিধেয় জামাকাপড়। ভোজনরসিক হলে সকালের নাশতায় নামাবাজারের থাপড়ানো রুটি ও দই-মিষ্টি তালিকায় রাখতে পারেন।
ছবি: দে ছুট ভ্রমণ সংঘ
প্রিয়জনকে খুশি করবেন এবং তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলবেন—এমন উপহারের কথা চিন্তা করলে সাধারণত বড়, দৃশ্যমান জিনিসগুলোই মনে আসে। যেমন—ফুল, তাঁর প্রিয় জিনিস বা নিয়মিত ব্যবহারের জিনিস, এমনকি স্থূল ইঙ্গিত বা ভাববিনিময়ও হতে পারে। ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে উপহারের ভূমিকা প্রশ্নাতীত।
১৩ ঘণ্টা আগেচাদর নিয়ে এমন কাব্যকথার কমতি নেই আমাদের। বর্ণিল একখণ্ড উষ্ণতা যেন। শীত এলেই এর জমিনে ফুটে ওঠে হরেক রং, হরেক রেখা। আমাদের ফ্যাশনে চাদর এক দারুণ সিগনেচার তৈরি করেছে। এতটা ব্যঞ্জনা হয়তো অন্য কোনো পোশাক তৈরি করতে পারেনি। চাদর গায়ে দিলেই পুরুষ হয়ে ওঠে কবি কিংবা উপন্যাসের রোমান্টিক কোনো চরিত্র...
১৯ ঘণ্টা আগেচা কিংবা কফি পানের পাত্র হিসেবে এখন সিরামিকের কাপের পরিচয় সীমাবদ্ধ নেই। আকর্ষণীয় নকশা আর রঙের এই কাপ বা মগগুলোকে এখন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে খানিক হলেও বদলে যাচ্ছে বাসাবাড়ির চেহারা। ঘর সাজানো থেকে শুরু করে নানান সৃজনশীল কাজের অংশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এগুলো। ফলে নান্দনিক হয়ে...
১৯ ঘণ্টা আগেহাতব্যাগের ধরন যেমন সময়-সময় বদলায়, তেমনই এতে থাকা জিনিসপত্র ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে না বদলালে চলে না। তাই এই শীতে হাতব্যাগে থাকা প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায় পরিবর্তন আনুন। কী কী জরুরি জিনিস রাখা যেতে পারে হাতব্যাগে...
১৯ ঘণ্টা আগে