জাহীদ রেজা নূর
অবশেষে কাতার এয়ারওয়েজের ৭০৫ রুটের বিমানটি নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণ করল। খুবই মসৃণ অবতরণ। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে এগারোটা। ১৯ এপ্রিল। ঢাকায় ততক্ষণে ২০ এপ্রিলের সকাল হয়ে গেছে। আমরা ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলাম ১৯ এপ্রিল সকাল দশটা পঞ্চাশ মিনিটে। এর মধ্যে টাইমজোন পরিবর্তিত হয়েছে। এখন নিউইয়র্কে আমরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দশ ঘণ্টা এগিয়ে।
নিউইয়র্কে যখনই আসি, তখনই একবার ব্রডওয়ে ঘুরে আসতে মন চায়। ব্রডওয়ের কোনো এক থিয়েটারে একটা নাটক দেখতে পেলে অনেক কিছু ভাবার অবকাশ মেলে। হোক সেটা ব্রডওয়ে, অফ ব্রডওয়ে কিংবা অফ অফ ব্রডওয়ে। তাতে কিছু আসে যায় না। শিল্পকে এরা কোথায় নিয়ে গেছে, তা ভেবে মানুষের কল্পনাশক্তি আর কারিগরি ক্যারিশমার সৃজনশীল অবয়বের জন্য গর্ব হয়। চ্যাটজিপিটির কালে মানুষের নান্দনিকতার দাম কমে না যাওয়ার একটা বড় জায়গা হিসেবে সৃজনশীলতা আরও বহুদিন বেঁচে থাকবে বলে অন্তত আমার মনে হয়। আর সেই সৃজনশীলতা মরে যেতে পারে, হেরে যেতে পারে, যদি যান্ত্রিক শব্দাবলিই একসময় মানুষের স্বপ্নের আকাশ ঢেকে দেয়।
যাহোক, ঢাকা মহানগর যখন চল্লিশোর্ধ্ব সেলসিয়াস মাথায় করে কাটিয়ে যাচ্ছিল ভয়াবহ দিন-রাত, তখন শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পূর্বনির্ধারিত নিউইয়র্কগামী প্লেনে চড়ে বসার পরও মনে হয়নি যে রাত সাড়ে এগারোটায় নিউইয়র্ক পৌঁছুলে একটা জ্যাকেট চড়াতে হবে শরীরে। দশ ঘণ্টা সময়ের হেরফের বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, আর তাতেই তাপমাত্রা নত হয়েছে কতটা!
এবারের বিমানযাত্রা, ইমিগ্রেশন, লাগেজ বুঝে পাওয়া—সবই ছিল সহজ। শুধু ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার সময় এয়ারপোর্টে কাতার এয়ারওয়েজের এক কর্মকর্তার চোখ পড়েছিল আমার হ্যান্ড লাগেজের দিকে। বিমানবন্দরের কাতার এয়ারওয়েজের কাউন্টারগুলোর সর্বত্র লেখা আছে, ল্যাপটপসহ সাত কেজির বেশি জিনিসপত্তর নেওয়া যাবে না হাতব্যাগে। আমার হ্যান্ড লাগেজে মালামাল ছিল কিছুটা বেশি। বেঁকে বসলেন সেবাদানকারী কর্মকর্তা। এ জন্য বাড়তি টাকা গুনতে বললেন। তাঁকে সুযোগ না দিয়ে ব্যাগে থাকা সোয়েটারটি পরে নিলাম, হাতে নিলাম দুটো থান ইটের মতো বই, তারপর বললাম, ‘বইগুলো আমরা পড়ব। আর এবার ব্যাগটা মাপুন তো!’
ভদ্রলোক তাজ্জব বনে গেলেন এবং চুপ করে রইলেন। এ রকম সহজ সমাধান আছে, সেটা তাঁর মাথায় কুলাল না। তাঁরই একজন ডান হাত বা বাঁ হাত, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হ্যান্ড লাগেজে ট্যাগ লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘ঈদ হিসেবে স্যার আপনার লাগেজের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। ঈদের সময় এমনটা হতেই পারে। আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।’
দেখো দেখি কাণ্ড! এ কথাটা আগে বললে কি আর ভারী সোয়েটারটা শরীরে জড়াতে হয়!
প্লেনে নাকি এখন ভালো খাবার দেয় না, এমনটাই শুনেছিলাম। গতবার যখন নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে কুয়েত এয়ারওয়েজে করে ফিরেছিলাম ঢাকায়, তখন সত্যিই খাবারের এই রেশনিংয়ের সামনে পড়েছিলাম। পাইলট মহাশয় অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘তোমাদের কারও খিদে লাগলে কেবিন ক্রুকে বোলো। ওরা তোমার ইচ্ছেমতো জুস, চা-কফি আর স্যান্ডউইচ সরবরাহ করবে।’
কখনো চেয়ে খাওয়ার ইচ্ছে হয়নি আমার। তাই যে কবার যেচে এসে খাবার দিয়ে গেছে ক্রুরা, তার বেশি চাইনি।
ঢাকা-দোহা রুটে যে বিমানটি ছিল, সেটিতে আসনগুলো ভাগ করা ছিল ২-৪-২ হিসেবে। আমরা দুজন। একটি আইল-আসন পেলে সুবিধা হয়। সেটা পাওয়া গিয়েছিল। তবে আসনের সামনে যে মনিটরটি আছে, সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। যে সিনেমা দেখতে চাই, সেটা ঠিকভাবে দেখা যায় না। গান শুনতে চাইলে সেটা খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে ঢাকা-দোহার আকাশটা ছিল বিনোদনের সুযোগহীন।
তবে দোহা-নিউইয়র্কের পথে সেই সমস্যা ছিল না। ৩-৪-৩ আসনবিন্যাসের বড় উড়োজাহাজটির ইকোনমি ক্লাসের ভ্রমণটি ছিল আরামদায়ক।
একটা কৌতূহল আমার মনে অনেক দিন ধরেই বাস করছে। আমরা যারা সাশ্রয়ী মূল্যে বিমানের টিকিট কিনি, তাদের ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী বলা হয়। এই গরিব যাত্রীদের প্লেনে ওঠানো হয় বিজনেস ক্লাসের দরজা দিয়ে। অর্থাৎ আঁটসাঁট ইকোনমি ক্লাসের আসনের দিকে এগোনোর সময় বিজনেস ক্লাসের বিলাসবহুল আসনগুলো দেখে যেন পরবর্তীকালে বেশি পয়সা খরচ করে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করার স্বাদ জাগে—তারই মনস্তাত্ত্বিক খেলা কি না এটা, কে জানে!
আরে ভাই, বাজার অর্থনীতির যুগে আমাদের বসবাস। এখানে নিজেকে জাহির করার চেয়ে ‘বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’।
এবার ঢাকা-দোহা, দোহা-নিউইয়র্কে দেখা গেল খাদ্য আর পানীয়ের সমাহার। কিছুক্ষণ পর পর হয় গলা ভেজাতে বলে, নয়তো খাবার গিলতে বলে! এবং অবাক হয়ে লক্ষ করি, ফ্লাইটের কোনো না কোনো বিমানবালার চেহারায় যে বিরক্তি ফুটে উঠতে দেখেছি নানা সময়ে, এবার যেন তা ছিল না। বরং ছোটখাটো কথা বলে বিমানযাত্রাটি আনন্দমুখর করে তুলতে চাইছিলেন তাঁরা। একটা উদাহরণ না দিলে বোঝা যাবে না। ডিনারে ছিল চিকেন অ্যান্ড রাইস, আর বিফ অ্যান্ড পটেটো। গরুর মাংসের সঙ্গে আমার আজন্ম ভালোবাসা বলে সেটাই চাইলাম।
বিমানবালা হেসে জানতে চাইল, ‘তুমি চিকেন খাবে না কেন?’
‘আগেরবার চিকেন নিয়েছিলাম। আর ডিনারে আমি বিফ পছন্দ করি।’
‘কোথা থেকে আসছ?’
‘ঢাকা থেকে।’
‘আচ্ছা!’
এটুকুই কথাবার্তা। কিন্তু এই যে আপাতকার্যকারণহীন কথাবার্তা, তারও তো একটা মূল্য আছে জীবনে।
জেএফকে বিমানবন্দরে রাত সাড়ে এগারোটায় নামার পর শীতটা টের পাওয়া গেল। লাগেজের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। দুটো ট্রলি বারো ডলার দিয়ে নিয়ে মালসামানসহ আট নম্বর টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা দুজন। নিউইয়র্কে থাকা আমাদের মেয়ে ঝড়ের বেগে টার্মিনালে প্রবেশ করে আমাদের দুজনের হাতে ধরিয়ে দিল গতবার আমাদেরই রেখে যাওয়া দুটো জ্যাকেট। হ্যাঁ, ততক্ষণে আমরা ঢাকা শহরের প্রায় মধ্যপ্রাচ্য বনে যাওয়া আবহাওয়া থেকে বেরিয়ে এসেছি। বুঝতে পারছি, একই পৃথিবীতে বসবাস করলেও প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়েছে কত না বৈচিত্র্যময় করে। এক জায়গায় মানুষের যখন গরমে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, অন্য এক জায়গার মানুষ তখন শীতে কাঁপছে!
বৈচিত্র্যের কথা বললে আবার নিউইয়র্কের কথাই বলতে হয়। এ শহর প্রত্যেক মানুষকে যেন জড়িয়ে রেখেছে পরম আদরে। অকারণে এই শহরকে নানা নামে ডাকা হয় না। সম্ভবত বাংলা ভাষায়ই সোভিয়েত সাহিত্যিক মাক্সিম গোর্কির একটা বই পড়েছিলাম, ‘পীতদানবের দেশে’ নামে যার অনুবাদ হয়েছিল। নিউইয়র্ককে পীতদানবের দেশ নামেও ডাকা হয়। বলা হয় ‘বিশালাকার আপেল’। আর হ্যাঁ, যে ডাকটির সঙ্গে সত্যের মাখামাখি আছে, সেটি হলো ‘বিশ্বের রাজধানী।’ এই শেষ দুটি শব্দে একটু থামুন। ‘বিশ্বের রাজধানী’ বলতে হলে একটি শহরকে কেমন হতে হবে, সেটা ভেবে নিন।
আদুরে শহর
বলা হয়, নিউইয়র্ক যেন মানুষকে আদর করে ধরে রাখে। এ শহর কোটিপতি আর উন্মাদের শহর। এ শহর দরিদ্র আর অভিজাত মানুষের শহর। পৃথিবীর সব রং ধরা আছে এ শহরে। পৃথিবীর যেকোনো নৃতাত্ত্বিক উত্তরাধিকারকে পাওয়া যাবে এখানে। শুধু কি তাই? চীনের মানুষেরা এসে এখানে গড়ে তুলেছে তাদের পাড়া, সেখানে ইংরেজির পাশে চৈনিক ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড। নিউইয়র্কের কুইনসের ফ্লাশিংয়ে গেলে কিংবা ম্যানহাটানের চায়না টাউনে গেলে বোঁচা নাকের মানুষের ভিড় দেখে বোঝাই যাবে না, এটা আমেরিকা। মনে হবে, এখন বুঝি চীনেই আছি আমরা।
রুশ জাতি এসে আস্তানা গেড়েছে নিউইয়র্কের যেসব জায়গায়, সেগুলোতেও মানুষ ইংরেজির চেয়ে রুশ ভাষায় কথা বলতে বেশি ভালোবাসে। বিশেষ করে ব্রাইটন বিচ কিংবা ফরেস্ট হিলসে গেলে রুশ ভাষাটাই যেন হয়ে যায় সেই এলাকার ভাষা। কোনো বাঙালিও যদি রুশ ভাষায় কথা বলে, এসব এলাকায় কেউ অবাক হবে না। রুশ ভাষায় কথা না বললেই বরং ভাববে—‘মালটা নতুন আমদানি’। আফ্রিকার মানুষের জন্য ম্যানহাটানের ‘হারলেম’ একসময় বিখ্যাত ছিল। এখানকার অধিকাংশ মানুষই ছিল কৃষ্ণবর্ণের। খুনোখুনিও বেশি হতো। অপরাধজগৎ বলে নাম ছিল হারলেমের। এখন অবশ্য অবস্থা পাল্টেছে। সংখ্যায় কমে গিয়ে শতকরা চল্লিশের মতো হয়েছে আফ্রিকান আমেরিকান। তবে কুইনসের জ্যামাইকায় গেলেও এখন দেখা যাবে আফ্রিকান আমেরিকানদের জয়জয়কার।
আর বাঙালি? জি হ্যাঁ, গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, জ্যাকসন হাইটসে দু-তিনটি রাস্তাই আছে, যেখানে দোকানগুলোয় কর্মরত প্রায় সবাই বাঙালি। এখানকার দোকানপাটের সাইনবোর্ডে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলার অবস্থান। এমন মানুষকেও জ্যাকসন হাইটসে পাওয়া যাবে, যিনি এক বর্ণ ইংরেজি জানেন না। কোনো না কোনোভাবে নিউইয়র্কে এসে সেই যে কাজে ঢুকে গেছেন, সেটাই হয়ে গেছে তাঁর জগৎ। আর এখান থেকে কোথাও যাননি। মুখস্থ জায়গায় নেমে কাজ করে আবার মুখস্থ জায়গায় ফিরে যান তাঁরা। ব্রুকলিন, ব্রংকসেও কত যে বাঙালির বসবাস! ইদানীং কুইনসের পারসনস বুলভার্ড থেকে ১৭৯ স্ট্রিট পর্যন্ত গেলেও মনে হবে, মিনি বাংলাদেশেই বুঝি এসে পড়েছি।
আমরা জার্নি করেছি চব্বিশ ঘণ্টার কাছাকাছি। সব মিলিয়ে তা বড়ই ক্লান্তিকর। প্লেনেই বসে থাকতে হয়েছে কম করে হলেও আঠারো ঘণ্টা। ফলে এ রকম একটি ভ্রমণের পর দিন-রাতের ব্যবধান ঘুচে যায়। সময় পরিবর্তন হয়েছে বলে কারও কারও রাতের ঘুম দিনে হয়, রাতে চোখ মেলে বসে থাকতে হয়। কেউ সারা দিন মড়ার মতো ঘুমায়, কারও চোখে ঘুম আসে না।
বইয়ের মধ্যে নিউইয়র্কের খোঁজ
যাদের ঘুম আসে না, তাদের কেউ কেউ কিছু পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এ মুহূর্তে রাত দুটো বাজতে দশ মিনিট বাকি যখন, তখন তেমনই এক রাতজাগা মানুষের ইচ্ছে হলো বইপত্তরের খোঁজ নেবে। এবং অবধারিতভাবে নিউইয়র্কবিষয়ক ভালো বইয়ের দিকেই রাখতে হবে দৃষ্টি।
কেন এই বইগুলোর কথা জানতে চাইছি? এর কারণ হলো, সব তো নিজের চোখে দেখা সম্ভব নয়। এসব উপন্যাসের মাধ্যমে নিউইয়র্কের জীবনটা যেন পরিষ্কার হয়ে উঠে আসে পাঠকের মনে। পাঠকের জন্য এই বই-ভ্রমণটাও খুব সস্তা কিছু নয়। বাস্তবে দেশ দেখা হোক আর না হোক, বইয়ের পৃষ্ঠায় সেই দেশকে দেখে ফেলার সুযোগ পাওয়া বিরল সৌভাগ্য।
গিওম ম্যুসো লিখেছেন ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ উপন্যাসটি। সেন্ট্রাল পার্ক কিন্তু নিউইয়র্কের কেন্দ্র। বিশাল এ সবুজ পার্কে অবকাশ কাটাতে ভালো লাগে। স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে চান যাঁরা, তাঁরা এখানে চলে আসেন সকাল-বিকেলে। রয়েছে রিকশা। চড়া ভাড়ায় তা পার্কের কিছু অংশ ঘুরিয়ে আনে পর্যটককে। সেই পার্ক নিয়েই গিওমের উপন্যাসটি। সেন্ট্রাল পার্কের এক বেঞ্চিতে হঠাৎ ঘুম ভাঙল এলিসের। এলিস দেখল, তার হাতে হাতকড়া। সেই হাতকড়ায় বাঁধা আছে অন্য এক অজানা পুরুষের হাত। একটু পর মেয়েটা জানতে পারে, একটি জাজ দলের সদস্য এই লোকটি। এলিস কিছুতেই বুঝতে পারে না, নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের এক বেঞ্চিতে কী করে এ রকম একজন অচেনা মানুষের সঙ্গে হাতকড়া পরা অবস্থায় সে বসে আছে। এলিসের হঠাৎ তার পেশার কথা মনে হয়। পুলিশে চাকরি করে মেয়েটি। বছর দুয়েক আগে ইরিক বোগ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেছিল সে। এমন কি হতে পারে, সেই ইরিক বোগ এখনো জীবিত আর এখন সে এলিসের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে? প্রশ্নের জন্ম হয় অনেক বেশি, উত্তর আসে অনেক কম। এলিস অবশ্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে মনে করে, এই রহস্যের সমাধান তাকেই করতে হবে।
কে এই অচেনা মানুষটি, কী তার পরিচয়, এ প্রশ্নও তো এড়ানো যায় না। এভাবেই এগিয়ে চলে উপন্যাসটি।
নিউইয়র্ক শহরের নিশ্বাস শোনা যায় এই উপন্যাসে।
সেন্ট্রাল পার্কের কথা উঠলেই অনেকের মনে পড়ে যায় ‘হোম অ্যালোন’ সিরিজের ‘লস্ট ইন নিউইয়র্ক’ ছবিটির কথা। যে হোটেলে এসে উঠেছিল কেভিন, তার পাশেই ছিল সেন্ট্রাল পার্ক। আর সেই সেন্ট্রাল পার্কে ‘ভেজা দস্যু’রা প্রায় ধরে ফেলেছিল কেভিনকে! সেই সিনেমায় এক পলকের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও দেখা গিয়েছিল, পরবর্তীকালে যিনি হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
সেন্ট্রাল পার্কের একটা জায়গা আছে, যা জন লেননের প্রতি উৎসর্গীকৃত। স্ট্রবেরি ফিল্ডস তার নাম। সেখানে অনেকেই আসে। কেউ আসে গিটার হাতে। লেননের গান পরিবেশন করে। অনেকে সেখানে দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তোলে। পার্ক পার হলেই ড্যাকোটা অ্যাপার্টমেন্ট। এইন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের একটি ফ্ল্যাটেই থাকতেন লেনন। চ্যাপম্যান নামে এক ভক্তকে যখন অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সামনে, তখনই সেই ভক্ত গুলি ছুড়েছিল জন লেননের শরীরে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও তিনি বাঁচেননি। সেন্ট্রাল পার্কের কাছে এলে লেননের কথা মনে পড়ে।
সোফি কিনসেলার উপন্যাসটার নাম ‘শপাহোলিক টেকস ম্যানহাটান’। উপন্যাসটির কথা বলার আগে ম্যানহাটানের কথা একটু বলে নিই। তারও আগে নিউইয়র্ক রাজ্যটির কথা। এ কথা সবাই জানেন, নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি অঙ্গরাজ্য। এই রাজ্যেরই রাজধানী নিউইয়র্ক সিটি। রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এলে এই ম্যানহাটানের দেখা পাওয়া যাবে।
‘শপাহোলিক টেকস ম্যানহাটান’-এর গল্প বলতে গেলে কেন নিউইয়র্ক শহর সম্পর্কে জানার প্রয়োজন পড়ে, তা পরিষ্কার করব এবার। আসলে ‘ম্যানহাটান’ শব্দটি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মন দুলিয়ে দেয়। নিউইয়র্ক সিটি যে পাঁচটি প্রশাসনিক অঞ্চল বা বরো নিয়ে তৈরি, তার একটি হচ্ছে ম্যানহাটান। বাকিগুলোর নাম হলো ব্রুকলিন, ব্রংকস, কুইনস আর স্ট্যাটেন আইল্যান্ড। ঘটনাচক্রে আমি যখন নিউইয়র্কে আসি, তখন কুইনস ভিলেজে থাকি। অতি ব্যস্ত ম্যানহাটানের তুলনায় কুইনস ভিলেজ কিছুটা নীরব।
নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বড় বরো হলো কুইনস। আর সবচেয়ে ছোট কিন্তু সবচেয়ে প্রভাবশালী বরোর নাম ম্যানহাটান। ম্যানহাটানকে নিউইয়র্ক সিটির প্রাণ বললে একেবারেই বাড়িয়ে বলা হবে না। এখানকার গগনচুম্বী ভবনগুলো এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জাদুঘর, খাবারের দোকান কিংবা শপিং মল মন কেড়ে নেয় পর্যটকদের। এমপায়ার স্টেট বিল্ডিং, ক্রিসলার বিল্ডিং, সিটিকর্প সেন্টারসহ বড় বড় প্রাসাদসম ভবন এই ম্যানহাটানেই অবস্থিত। আর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কথা তো আলাদাভাবে বলতে হবে। ম্যানহাটান ভ্রমণের কথা হবে পরে। আগে এটুকু শুধু বলে নিই, শুরুতেই যে ব্রডওয়ে থিয়েটারের কথা বলেছিলাম, তা দেখতে হলে আসতে হবে এই ম্যানহাটানেই। নিউইয়র্কের দুই বিখ্যাত নদী হাডসন আর ইস্ট রিভারের কথাও পরে বলা হবে। আটলান্টিকের কথাও আসবে পরে।
সোফি কিনসেলার বইটির কথা এবার বলা যায়। এখন বলা হবে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের শপিং মল আর দোকানপাটের কথা। কেন বলা হবে? বলা হবে, কারণ, এই বিষয়টিই তো কিনসেলার বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য। কীভাবে এই দোকানগুলো মোহগ্রস্ত করে ফেলে মানুষকে, তারই আঁচ পাওয়া যাবে বইয়ের ভেতর ঢুকলে। ম্যানহাটান বদলে দেয় মানুষের ভাবনাকে। তছনছ করে দেয় হৃদয়ের যৌক্তিক ভাবনার চলাচলকে। বেকি বলে যে মেয়েটির কথা বলা হচ্ছে উপন্যাসে, তার জীবনে এ রকম বড় বড় ঢেউ এসে লাগবে, সে কথা আগে থেকে কে জানত? ম্যানহাটান তাকে তার জীবন এবং ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ভাবনার মধ্যে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এল। গুগেনহেইম জাদুঘরে তো বেকিকে যেতেই হবে, কিন্তু লোভনীয় দোকানগুলোর কাচের বিভিন্ন জানালা মোহিত করে ফেলে বেকিকে, এরপর সে শুধু কিনতে থাকে, কিনতে থাকে, কিনতে থাকে…।
নাহ্! উপন্যাসগুলো নিয়ে পরে কথা হবে। শুধু এ কথাই বলার চেষ্টা করলাম যে আদতে নিউইয়র্ককে চিনতে হলে এর প্রাণকেন্দ্রে যেতে হয় বারবার। ওই যে, ম্যানহাটানের টাইমস স্কয়ারের পাশেই যেখানে একটি দোকানের ভেতর ছোট্ট মিউজিয়ামের মতো করে স্বনামধন্য শিল্পীদের ব্যবহৃত পোশাক-আশাক আর বাদ্যযন্ত্রের দেখা মেলে, সেখানেই হঠাৎ করে কনসার্ট ফর বাংলাদেশে ব্যবহার করা জর্জ হ্যারিসনের গিটারটি দেখলে কেমন লাগবে আপনার? কিংবা ঘুরতে ঘুরতে মোমায় এসে ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’ দেখে ফেললে কি আপনি আর আগের মানুষটা থেকে যেতে পারবেন? আর পিকাসোর সেই বিখ্যাত ছাগলটি কি আপনাকে অনেকখানি বদলে ফেলবে না?
দরদাম
নাহ্! নিউইয়র্ক নিয়ে এত কিছু বলার আছে, যা এক বসায় লিখে যাওয়া সম্ভব নয়। ঘুম থেকে উঠে প্রথম দিন যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে দোকানে গেলাম, তখন বুঝতে পারলাম, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া পড়েছে পণ্যের দামে।
সবচেয়ে অবাক করেছে ডিমের দাম। যুদ্ধের আগে ডিম ছিল স্বাভাবিক দামে। যদি ভুল করে না থাকি, তাহলে ডিমের ডজন ছিল ২ ডলার। এখানে অবশ্য তিন আকারের ডিম আছে। খুব বড়, বড় আর মাঝারি। ‘ছোট ডিম’ বলে কোনো লেবেল দেখিনি কখনো। ছোটটাকেই বুঝি ‘মেজ’ নামে চালিয়ে দেওয়া হয়।
পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ধাই ধাই করে ডিমের দাম কেন বেড়ে গেল, সেটা কে বলতে পারবে কে জানে। সে সময় দোকানগুলোয় লেখা থাকত, ‘এই দাম সাময়িক। কিছুদিন পর আবার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’ সে সময় ১২টা ডিমের দাম কখনো কখনো ৫ ডলারও হয়েছিল। এবার ডিম কিনলাম প্রথমে সাড়ে চার ডলার, পরে সাড়ে তিন ডলার ডজন। একটু তো কমেছে দাম, কিন্তু আগের জায়গায় তা ফেরেনি।
রেস্তোরাঁয় খাবারদাবারের দাম বেড়েছে। বাইরের স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রেও চড়া দামের আভাস। গাড়ির তেলের দামও আগের তুলনায় বেশি।
আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘সুন্দরী’ সিনেমায় ববিতার ঠোঁটে একটা সংলাপ ছিল, ‘বাপ মরছে আমার আর দাড়ি রাখছে কাঞ্চন’। সংলাপটা একটু ঘুরিয়ে বলি, ‘যুদ্ধ করে রাশিয়া-ইউক্রেন, আর খাবারের দাম বাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে।’ না, কথাটা খুব একটা ঠিক বলা হলো না। এই যুদ্ধে বিশ্বমোড়লদের কাউকেই ধোয়া তুলসীপাতা বলা যাবে না। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার ক্ষেত্রে বাইরের দেশগুলোর ইন্ধন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার রাশিয়াকে উসকে দিয়েছে। রাশিয়াও সেই উসকানিতে সায় দিয়ে যুদ্ধ বাধিয়েছে।
তাতে লাভ হয়েছে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা অস্ত্র ব্যবসায়ীদের; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু সেই চাপ এসে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের বুকে। তবে চাপ কতটা গভীর, সেটা বোঝার জন্য যেতে হবে বাজারে, শপিং মলে, রাজপথে। কান পাততে হবে মানুষের সংলাপে।
তারই অপেক্ষায় রয়েছি।
অবশেষে কাতার এয়ারওয়েজের ৭০৫ রুটের বিমানটি নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণ করল। খুবই মসৃণ অবতরণ। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে এগারোটা। ১৯ এপ্রিল। ঢাকায় ততক্ষণে ২০ এপ্রিলের সকাল হয়ে গেছে। আমরা ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলাম ১৯ এপ্রিল সকাল দশটা পঞ্চাশ মিনিটে। এর মধ্যে টাইমজোন পরিবর্তিত হয়েছে। এখন নিউইয়র্কে আমরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দশ ঘণ্টা এগিয়ে।
নিউইয়র্কে যখনই আসি, তখনই একবার ব্রডওয়ে ঘুরে আসতে মন চায়। ব্রডওয়ের কোনো এক থিয়েটারে একটা নাটক দেখতে পেলে অনেক কিছু ভাবার অবকাশ মেলে। হোক সেটা ব্রডওয়ে, অফ ব্রডওয়ে কিংবা অফ অফ ব্রডওয়ে। তাতে কিছু আসে যায় না। শিল্পকে এরা কোথায় নিয়ে গেছে, তা ভেবে মানুষের কল্পনাশক্তি আর কারিগরি ক্যারিশমার সৃজনশীল অবয়বের জন্য গর্ব হয়। চ্যাটজিপিটির কালে মানুষের নান্দনিকতার দাম কমে না যাওয়ার একটা বড় জায়গা হিসেবে সৃজনশীলতা আরও বহুদিন বেঁচে থাকবে বলে অন্তত আমার মনে হয়। আর সেই সৃজনশীলতা মরে যেতে পারে, হেরে যেতে পারে, যদি যান্ত্রিক শব্দাবলিই একসময় মানুষের স্বপ্নের আকাশ ঢেকে দেয়।
যাহোক, ঢাকা মহানগর যখন চল্লিশোর্ধ্ব সেলসিয়াস মাথায় করে কাটিয়ে যাচ্ছিল ভয়াবহ দিন-রাত, তখন শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পূর্বনির্ধারিত নিউইয়র্কগামী প্লেনে চড়ে বসার পরও মনে হয়নি যে রাত সাড়ে এগারোটায় নিউইয়র্ক পৌঁছুলে একটা জ্যাকেট চড়াতে হবে শরীরে। দশ ঘণ্টা সময়ের হেরফের বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, আর তাতেই তাপমাত্রা নত হয়েছে কতটা!
এবারের বিমানযাত্রা, ইমিগ্রেশন, লাগেজ বুঝে পাওয়া—সবই ছিল সহজ। শুধু ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার সময় এয়ারপোর্টে কাতার এয়ারওয়েজের এক কর্মকর্তার চোখ পড়েছিল আমার হ্যান্ড লাগেজের দিকে। বিমানবন্দরের কাতার এয়ারওয়েজের কাউন্টারগুলোর সর্বত্র লেখা আছে, ল্যাপটপসহ সাত কেজির বেশি জিনিসপত্তর নেওয়া যাবে না হাতব্যাগে। আমার হ্যান্ড লাগেজে মালামাল ছিল কিছুটা বেশি। বেঁকে বসলেন সেবাদানকারী কর্মকর্তা। এ জন্য বাড়তি টাকা গুনতে বললেন। তাঁকে সুযোগ না দিয়ে ব্যাগে থাকা সোয়েটারটি পরে নিলাম, হাতে নিলাম দুটো থান ইটের মতো বই, তারপর বললাম, ‘বইগুলো আমরা পড়ব। আর এবার ব্যাগটা মাপুন তো!’
ভদ্রলোক তাজ্জব বনে গেলেন এবং চুপ করে রইলেন। এ রকম সহজ সমাধান আছে, সেটা তাঁর মাথায় কুলাল না। তাঁরই একজন ডান হাত বা বাঁ হাত, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হ্যান্ড লাগেজে ট্যাগ লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘ঈদ হিসেবে স্যার আপনার লাগেজের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। ঈদের সময় এমনটা হতেই পারে। আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।’
দেখো দেখি কাণ্ড! এ কথাটা আগে বললে কি আর ভারী সোয়েটারটা শরীরে জড়াতে হয়!
প্লেনে নাকি এখন ভালো খাবার দেয় না, এমনটাই শুনেছিলাম। গতবার যখন নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে কুয়েত এয়ারওয়েজে করে ফিরেছিলাম ঢাকায়, তখন সত্যিই খাবারের এই রেশনিংয়ের সামনে পড়েছিলাম। পাইলট মহাশয় অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘তোমাদের কারও খিদে লাগলে কেবিন ক্রুকে বোলো। ওরা তোমার ইচ্ছেমতো জুস, চা-কফি আর স্যান্ডউইচ সরবরাহ করবে।’
কখনো চেয়ে খাওয়ার ইচ্ছে হয়নি আমার। তাই যে কবার যেচে এসে খাবার দিয়ে গেছে ক্রুরা, তার বেশি চাইনি।
ঢাকা-দোহা রুটে যে বিমানটি ছিল, সেটিতে আসনগুলো ভাগ করা ছিল ২-৪-২ হিসেবে। আমরা দুজন। একটি আইল-আসন পেলে সুবিধা হয়। সেটা পাওয়া গিয়েছিল। তবে আসনের সামনে যে মনিটরটি আছে, সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। যে সিনেমা দেখতে চাই, সেটা ঠিকভাবে দেখা যায় না। গান শুনতে চাইলে সেটা খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে ঢাকা-দোহার আকাশটা ছিল বিনোদনের সুযোগহীন।
তবে দোহা-নিউইয়র্কের পথে সেই সমস্যা ছিল না। ৩-৪-৩ আসনবিন্যাসের বড় উড়োজাহাজটির ইকোনমি ক্লাসের ভ্রমণটি ছিল আরামদায়ক।
একটা কৌতূহল আমার মনে অনেক দিন ধরেই বাস করছে। আমরা যারা সাশ্রয়ী মূল্যে বিমানের টিকিট কিনি, তাদের ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী বলা হয়। এই গরিব যাত্রীদের প্লেনে ওঠানো হয় বিজনেস ক্লাসের দরজা দিয়ে। অর্থাৎ আঁটসাঁট ইকোনমি ক্লাসের আসনের দিকে এগোনোর সময় বিজনেস ক্লাসের বিলাসবহুল আসনগুলো দেখে যেন পরবর্তীকালে বেশি পয়সা খরচ করে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করার স্বাদ জাগে—তারই মনস্তাত্ত্বিক খেলা কি না এটা, কে জানে!
আরে ভাই, বাজার অর্থনীতির যুগে আমাদের বসবাস। এখানে নিজেকে জাহির করার চেয়ে ‘বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’।
এবার ঢাকা-দোহা, দোহা-নিউইয়র্কে দেখা গেল খাদ্য আর পানীয়ের সমাহার। কিছুক্ষণ পর পর হয় গলা ভেজাতে বলে, নয়তো খাবার গিলতে বলে! এবং অবাক হয়ে লক্ষ করি, ফ্লাইটের কোনো না কোনো বিমানবালার চেহারায় যে বিরক্তি ফুটে উঠতে দেখেছি নানা সময়ে, এবার যেন তা ছিল না। বরং ছোটখাটো কথা বলে বিমানযাত্রাটি আনন্দমুখর করে তুলতে চাইছিলেন তাঁরা। একটা উদাহরণ না দিলে বোঝা যাবে না। ডিনারে ছিল চিকেন অ্যান্ড রাইস, আর বিফ অ্যান্ড পটেটো। গরুর মাংসের সঙ্গে আমার আজন্ম ভালোবাসা বলে সেটাই চাইলাম।
বিমানবালা হেসে জানতে চাইল, ‘তুমি চিকেন খাবে না কেন?’
‘আগেরবার চিকেন নিয়েছিলাম। আর ডিনারে আমি বিফ পছন্দ করি।’
‘কোথা থেকে আসছ?’
‘ঢাকা থেকে।’
‘আচ্ছা!’
এটুকুই কথাবার্তা। কিন্তু এই যে আপাতকার্যকারণহীন কথাবার্তা, তারও তো একটা মূল্য আছে জীবনে।
জেএফকে বিমানবন্দরে রাত সাড়ে এগারোটায় নামার পর শীতটা টের পাওয়া গেল। লাগেজের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। দুটো ট্রলি বারো ডলার দিয়ে নিয়ে মালসামানসহ আট নম্বর টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা দুজন। নিউইয়র্কে থাকা আমাদের মেয়ে ঝড়ের বেগে টার্মিনালে প্রবেশ করে আমাদের দুজনের হাতে ধরিয়ে দিল গতবার আমাদেরই রেখে যাওয়া দুটো জ্যাকেট। হ্যাঁ, ততক্ষণে আমরা ঢাকা শহরের প্রায় মধ্যপ্রাচ্য বনে যাওয়া আবহাওয়া থেকে বেরিয়ে এসেছি। বুঝতে পারছি, একই পৃথিবীতে বসবাস করলেও প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়েছে কত না বৈচিত্র্যময় করে। এক জায়গায় মানুষের যখন গরমে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, অন্য এক জায়গার মানুষ তখন শীতে কাঁপছে!
বৈচিত্র্যের কথা বললে আবার নিউইয়র্কের কথাই বলতে হয়। এ শহর প্রত্যেক মানুষকে যেন জড়িয়ে রেখেছে পরম আদরে। অকারণে এই শহরকে নানা নামে ডাকা হয় না। সম্ভবত বাংলা ভাষায়ই সোভিয়েত সাহিত্যিক মাক্সিম গোর্কির একটা বই পড়েছিলাম, ‘পীতদানবের দেশে’ নামে যার অনুবাদ হয়েছিল। নিউইয়র্ককে পীতদানবের দেশ নামেও ডাকা হয়। বলা হয় ‘বিশালাকার আপেল’। আর হ্যাঁ, যে ডাকটির সঙ্গে সত্যের মাখামাখি আছে, সেটি হলো ‘বিশ্বের রাজধানী।’ এই শেষ দুটি শব্দে একটু থামুন। ‘বিশ্বের রাজধানী’ বলতে হলে একটি শহরকে কেমন হতে হবে, সেটা ভেবে নিন।
আদুরে শহর
বলা হয়, নিউইয়র্ক যেন মানুষকে আদর করে ধরে রাখে। এ শহর কোটিপতি আর উন্মাদের শহর। এ শহর দরিদ্র আর অভিজাত মানুষের শহর। পৃথিবীর সব রং ধরা আছে এ শহরে। পৃথিবীর যেকোনো নৃতাত্ত্বিক উত্তরাধিকারকে পাওয়া যাবে এখানে। শুধু কি তাই? চীনের মানুষেরা এসে এখানে গড়ে তুলেছে তাদের পাড়া, সেখানে ইংরেজির পাশে চৈনিক ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড। নিউইয়র্কের কুইনসের ফ্লাশিংয়ে গেলে কিংবা ম্যানহাটানের চায়না টাউনে গেলে বোঁচা নাকের মানুষের ভিড় দেখে বোঝাই যাবে না, এটা আমেরিকা। মনে হবে, এখন বুঝি চীনেই আছি আমরা।
রুশ জাতি এসে আস্তানা গেড়েছে নিউইয়র্কের যেসব জায়গায়, সেগুলোতেও মানুষ ইংরেজির চেয়ে রুশ ভাষায় কথা বলতে বেশি ভালোবাসে। বিশেষ করে ব্রাইটন বিচ কিংবা ফরেস্ট হিলসে গেলে রুশ ভাষাটাই যেন হয়ে যায় সেই এলাকার ভাষা। কোনো বাঙালিও যদি রুশ ভাষায় কথা বলে, এসব এলাকায় কেউ অবাক হবে না। রুশ ভাষায় কথা না বললেই বরং ভাববে—‘মালটা নতুন আমদানি’। আফ্রিকার মানুষের জন্য ম্যানহাটানের ‘হারলেম’ একসময় বিখ্যাত ছিল। এখানকার অধিকাংশ মানুষই ছিল কৃষ্ণবর্ণের। খুনোখুনিও বেশি হতো। অপরাধজগৎ বলে নাম ছিল হারলেমের। এখন অবশ্য অবস্থা পাল্টেছে। সংখ্যায় কমে গিয়ে শতকরা চল্লিশের মতো হয়েছে আফ্রিকান আমেরিকান। তবে কুইনসের জ্যামাইকায় গেলেও এখন দেখা যাবে আফ্রিকান আমেরিকানদের জয়জয়কার।
আর বাঙালি? জি হ্যাঁ, গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, জ্যাকসন হাইটসে দু-তিনটি রাস্তাই আছে, যেখানে দোকানগুলোয় কর্মরত প্রায় সবাই বাঙালি। এখানকার দোকানপাটের সাইনবোর্ডে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলার অবস্থান। এমন মানুষকেও জ্যাকসন হাইটসে পাওয়া যাবে, যিনি এক বর্ণ ইংরেজি জানেন না। কোনো না কোনোভাবে নিউইয়র্কে এসে সেই যে কাজে ঢুকে গেছেন, সেটাই হয়ে গেছে তাঁর জগৎ। আর এখান থেকে কোথাও যাননি। মুখস্থ জায়গায় নেমে কাজ করে আবার মুখস্থ জায়গায় ফিরে যান তাঁরা। ব্রুকলিন, ব্রংকসেও কত যে বাঙালির বসবাস! ইদানীং কুইনসের পারসনস বুলভার্ড থেকে ১৭৯ স্ট্রিট পর্যন্ত গেলেও মনে হবে, মিনি বাংলাদেশেই বুঝি এসে পড়েছি।
আমরা জার্নি করেছি চব্বিশ ঘণ্টার কাছাকাছি। সব মিলিয়ে তা বড়ই ক্লান্তিকর। প্লেনেই বসে থাকতে হয়েছে কম করে হলেও আঠারো ঘণ্টা। ফলে এ রকম একটি ভ্রমণের পর দিন-রাতের ব্যবধান ঘুচে যায়। সময় পরিবর্তন হয়েছে বলে কারও কারও রাতের ঘুম দিনে হয়, রাতে চোখ মেলে বসে থাকতে হয়। কেউ সারা দিন মড়ার মতো ঘুমায়, কারও চোখে ঘুম আসে না।
বইয়ের মধ্যে নিউইয়র্কের খোঁজ
যাদের ঘুম আসে না, তাদের কেউ কেউ কিছু পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এ মুহূর্তে রাত দুটো বাজতে দশ মিনিট বাকি যখন, তখন তেমনই এক রাতজাগা মানুষের ইচ্ছে হলো বইপত্তরের খোঁজ নেবে। এবং অবধারিতভাবে নিউইয়র্কবিষয়ক ভালো বইয়ের দিকেই রাখতে হবে দৃষ্টি।
কেন এই বইগুলোর কথা জানতে চাইছি? এর কারণ হলো, সব তো নিজের চোখে দেখা সম্ভব নয়। এসব উপন্যাসের মাধ্যমে নিউইয়র্কের জীবনটা যেন পরিষ্কার হয়ে উঠে আসে পাঠকের মনে। পাঠকের জন্য এই বই-ভ্রমণটাও খুব সস্তা কিছু নয়। বাস্তবে দেশ দেখা হোক আর না হোক, বইয়ের পৃষ্ঠায় সেই দেশকে দেখে ফেলার সুযোগ পাওয়া বিরল সৌভাগ্য।
গিওম ম্যুসো লিখেছেন ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ উপন্যাসটি। সেন্ট্রাল পার্ক কিন্তু নিউইয়র্কের কেন্দ্র। বিশাল এ সবুজ পার্কে অবকাশ কাটাতে ভালো লাগে। স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে চান যাঁরা, তাঁরা এখানে চলে আসেন সকাল-বিকেলে। রয়েছে রিকশা। চড়া ভাড়ায় তা পার্কের কিছু অংশ ঘুরিয়ে আনে পর্যটককে। সেই পার্ক নিয়েই গিওমের উপন্যাসটি। সেন্ট্রাল পার্কের এক বেঞ্চিতে হঠাৎ ঘুম ভাঙল এলিসের। এলিস দেখল, তার হাতে হাতকড়া। সেই হাতকড়ায় বাঁধা আছে অন্য এক অজানা পুরুষের হাত। একটু পর মেয়েটা জানতে পারে, একটি জাজ দলের সদস্য এই লোকটি। এলিস কিছুতেই বুঝতে পারে না, নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের এক বেঞ্চিতে কী করে এ রকম একজন অচেনা মানুষের সঙ্গে হাতকড়া পরা অবস্থায় সে বসে আছে। এলিসের হঠাৎ তার পেশার কথা মনে হয়। পুলিশে চাকরি করে মেয়েটি। বছর দুয়েক আগে ইরিক বোগ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেছিল সে। এমন কি হতে পারে, সেই ইরিক বোগ এখনো জীবিত আর এখন সে এলিসের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে? প্রশ্নের জন্ম হয় অনেক বেশি, উত্তর আসে অনেক কম। এলিস অবশ্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে মনে করে, এই রহস্যের সমাধান তাকেই করতে হবে।
কে এই অচেনা মানুষটি, কী তার পরিচয়, এ প্রশ্নও তো এড়ানো যায় না। এভাবেই এগিয়ে চলে উপন্যাসটি।
নিউইয়র্ক শহরের নিশ্বাস শোনা যায় এই উপন্যাসে।
সেন্ট্রাল পার্কের কথা উঠলেই অনেকের মনে পড়ে যায় ‘হোম অ্যালোন’ সিরিজের ‘লস্ট ইন নিউইয়র্ক’ ছবিটির কথা। যে হোটেলে এসে উঠেছিল কেভিন, তার পাশেই ছিল সেন্ট্রাল পার্ক। আর সেই সেন্ট্রাল পার্কে ‘ভেজা দস্যু’রা প্রায় ধরে ফেলেছিল কেভিনকে! সেই সিনেমায় এক পলকের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও দেখা গিয়েছিল, পরবর্তীকালে যিনি হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
সেন্ট্রাল পার্কের একটা জায়গা আছে, যা জন লেননের প্রতি উৎসর্গীকৃত। স্ট্রবেরি ফিল্ডস তার নাম। সেখানে অনেকেই আসে। কেউ আসে গিটার হাতে। লেননের গান পরিবেশন করে। অনেকে সেখানে দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তোলে। পার্ক পার হলেই ড্যাকোটা অ্যাপার্টমেন্ট। এইন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের একটি ফ্ল্যাটেই থাকতেন লেনন। চ্যাপম্যান নামে এক ভক্তকে যখন অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সামনে, তখনই সেই ভক্ত গুলি ছুড়েছিল জন লেননের শরীরে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও তিনি বাঁচেননি। সেন্ট্রাল পার্কের কাছে এলে লেননের কথা মনে পড়ে।
সোফি কিনসেলার উপন্যাসটার নাম ‘শপাহোলিক টেকস ম্যানহাটান’। উপন্যাসটির কথা বলার আগে ম্যানহাটানের কথা একটু বলে নিই। তারও আগে নিউইয়র্ক রাজ্যটির কথা। এ কথা সবাই জানেন, নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি অঙ্গরাজ্য। এই রাজ্যেরই রাজধানী নিউইয়র্ক সিটি। রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এলে এই ম্যানহাটানের দেখা পাওয়া যাবে।
‘শপাহোলিক টেকস ম্যানহাটান’-এর গল্প বলতে গেলে কেন নিউইয়র্ক শহর সম্পর্কে জানার প্রয়োজন পড়ে, তা পরিষ্কার করব এবার। আসলে ‘ম্যানহাটান’ শব্দটি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মন দুলিয়ে দেয়। নিউইয়র্ক সিটি যে পাঁচটি প্রশাসনিক অঞ্চল বা বরো নিয়ে তৈরি, তার একটি হচ্ছে ম্যানহাটান। বাকিগুলোর নাম হলো ব্রুকলিন, ব্রংকস, কুইনস আর স্ট্যাটেন আইল্যান্ড। ঘটনাচক্রে আমি যখন নিউইয়র্কে আসি, তখন কুইনস ভিলেজে থাকি। অতি ব্যস্ত ম্যানহাটানের তুলনায় কুইনস ভিলেজ কিছুটা নীরব।
নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বড় বরো হলো কুইনস। আর সবচেয়ে ছোট কিন্তু সবচেয়ে প্রভাবশালী বরোর নাম ম্যানহাটান। ম্যানহাটানকে নিউইয়র্ক সিটির প্রাণ বললে একেবারেই বাড়িয়ে বলা হবে না। এখানকার গগনচুম্বী ভবনগুলো এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জাদুঘর, খাবারের দোকান কিংবা শপিং মল মন কেড়ে নেয় পর্যটকদের। এমপায়ার স্টেট বিল্ডিং, ক্রিসলার বিল্ডিং, সিটিকর্প সেন্টারসহ বড় বড় প্রাসাদসম ভবন এই ম্যানহাটানেই অবস্থিত। আর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কথা তো আলাদাভাবে বলতে হবে। ম্যানহাটান ভ্রমণের কথা হবে পরে। আগে এটুকু শুধু বলে নিই, শুরুতেই যে ব্রডওয়ে থিয়েটারের কথা বলেছিলাম, তা দেখতে হলে আসতে হবে এই ম্যানহাটানেই। নিউইয়র্কের দুই বিখ্যাত নদী হাডসন আর ইস্ট রিভারের কথাও পরে বলা হবে। আটলান্টিকের কথাও আসবে পরে।
সোফি কিনসেলার বইটির কথা এবার বলা যায়। এখন বলা হবে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের শপিং মল আর দোকানপাটের কথা। কেন বলা হবে? বলা হবে, কারণ, এই বিষয়টিই তো কিনসেলার বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য। কীভাবে এই দোকানগুলো মোহগ্রস্ত করে ফেলে মানুষকে, তারই আঁচ পাওয়া যাবে বইয়ের ভেতর ঢুকলে। ম্যানহাটান বদলে দেয় মানুষের ভাবনাকে। তছনছ করে দেয় হৃদয়ের যৌক্তিক ভাবনার চলাচলকে। বেকি বলে যে মেয়েটির কথা বলা হচ্ছে উপন্যাসে, তার জীবনে এ রকম বড় বড় ঢেউ এসে লাগবে, সে কথা আগে থেকে কে জানত? ম্যানহাটান তাকে তার জীবন এবং ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ভাবনার মধ্যে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এল। গুগেনহেইম জাদুঘরে তো বেকিকে যেতেই হবে, কিন্তু লোভনীয় দোকানগুলোর কাচের বিভিন্ন জানালা মোহিত করে ফেলে বেকিকে, এরপর সে শুধু কিনতে থাকে, কিনতে থাকে, কিনতে থাকে…।
নাহ্! উপন্যাসগুলো নিয়ে পরে কথা হবে। শুধু এ কথাই বলার চেষ্টা করলাম যে আদতে নিউইয়র্ককে চিনতে হলে এর প্রাণকেন্দ্রে যেতে হয় বারবার। ওই যে, ম্যানহাটানের টাইমস স্কয়ারের পাশেই যেখানে একটি দোকানের ভেতর ছোট্ট মিউজিয়ামের মতো করে স্বনামধন্য শিল্পীদের ব্যবহৃত পোশাক-আশাক আর বাদ্যযন্ত্রের দেখা মেলে, সেখানেই হঠাৎ করে কনসার্ট ফর বাংলাদেশে ব্যবহার করা জর্জ হ্যারিসনের গিটারটি দেখলে কেমন লাগবে আপনার? কিংবা ঘুরতে ঘুরতে মোমায় এসে ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’ দেখে ফেললে কি আপনি আর আগের মানুষটা থেকে যেতে পারবেন? আর পিকাসোর সেই বিখ্যাত ছাগলটি কি আপনাকে অনেকখানি বদলে ফেলবে না?
দরদাম
নাহ্! নিউইয়র্ক নিয়ে এত কিছু বলার আছে, যা এক বসায় লিখে যাওয়া সম্ভব নয়। ঘুম থেকে উঠে প্রথম দিন যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে দোকানে গেলাম, তখন বুঝতে পারলাম, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া পড়েছে পণ্যের দামে।
সবচেয়ে অবাক করেছে ডিমের দাম। যুদ্ধের আগে ডিম ছিল স্বাভাবিক দামে। যদি ভুল করে না থাকি, তাহলে ডিমের ডজন ছিল ২ ডলার। এখানে অবশ্য তিন আকারের ডিম আছে। খুব বড়, বড় আর মাঝারি। ‘ছোট ডিম’ বলে কোনো লেবেল দেখিনি কখনো। ছোটটাকেই বুঝি ‘মেজ’ নামে চালিয়ে দেওয়া হয়।
পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ধাই ধাই করে ডিমের দাম কেন বেড়ে গেল, সেটা কে বলতে পারবে কে জানে। সে সময় দোকানগুলোয় লেখা থাকত, ‘এই দাম সাময়িক। কিছুদিন পর আবার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’ সে সময় ১২টা ডিমের দাম কখনো কখনো ৫ ডলারও হয়েছিল। এবার ডিম কিনলাম প্রথমে সাড়ে চার ডলার, পরে সাড়ে তিন ডলার ডজন। একটু তো কমেছে দাম, কিন্তু আগের জায়গায় তা ফেরেনি।
রেস্তোরাঁয় খাবারদাবারের দাম বেড়েছে। বাইরের স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রেও চড়া দামের আভাস। গাড়ির তেলের দামও আগের তুলনায় বেশি।
আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘সুন্দরী’ সিনেমায় ববিতার ঠোঁটে একটা সংলাপ ছিল, ‘বাপ মরছে আমার আর দাড়ি রাখছে কাঞ্চন’। সংলাপটা একটু ঘুরিয়ে বলি, ‘যুদ্ধ করে রাশিয়া-ইউক্রেন, আর খাবারের দাম বাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে।’ না, কথাটা খুব একটা ঠিক বলা হলো না। এই যুদ্ধে বিশ্বমোড়লদের কাউকেই ধোয়া তুলসীপাতা বলা যাবে না। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার ক্ষেত্রে বাইরের দেশগুলোর ইন্ধন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার রাশিয়াকে উসকে দিয়েছে। রাশিয়াও সেই উসকানিতে সায় দিয়ে যুদ্ধ বাধিয়েছে।
তাতে লাভ হয়েছে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা অস্ত্র ব্যবসায়ীদের; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু সেই চাপ এসে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের বুকে। তবে চাপ কতটা গভীর, সেটা বোঝার জন্য যেতে হবে বাজারে, শপিং মলে, রাজপথে। কান পাততে হবে মানুষের সংলাপে।
তারই অপেক্ষায় রয়েছি।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আপনার দৈনন্দিন জীবন এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। এটি মানসিক ও শারীরিক সুস্থতাকে বাড়িয়ে তোলে। এখানে সকালে ঘুম থেকে ওঠার ১০টি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
৪০ মিনিট আগেনিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের একটি ক্লিপ দেখে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই একজন ট্রেডার হতে চেয়েছিলেন প্যাট্রিক শুল্টে। পরে তিনি বিষয়টি শিখেও ফেলেন। চলে যান শিকাগোতে। সেখানে গিয়ে সব ধরনের ট্রেডিং শুরু করেন।
৩ ঘণ্টা আগেবহু পুরোনো জরাজীর্ণ মন্দির। মন্দিরের দেয়াল থেকে খসে পড়া আস্তরণের ওপরে উঠেছে তৃণলতাসহ বিভিন্ন ধরনের আগাছা। ভেতরে রয়েছে চতুর্ভুজ আকৃতির কুণ্ডলী। সে কুণ্ডলীতে থাকা স্বচ্ছ জলের তলা থেকে বুদ্বুদ শব্দে ওপরে উঠছে পানি।
৮ ঘণ্টা আগেব্রিটিশ সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সুদর্শন ও চৌকস গুপ্তচর জেমস বন্ডের জন্ম নভেম্বর মাসে বলে ধরে নেওয়া হয়। যদিও এ নিয়ে খানিক বিতর্ক আছে। জন পিয়ারসনের কল্পিত জীবনী ‘জেমস বন্ড: দ্য অথরাইজড বায়োগ্রাফি অব ০০৭ ’-এ বন্ডের জন্মতারিখ ১১ নভেম্বর ১৯২০ হিসেবে লেখা হয়েছে। আবার বন্ড বিশেষজ্ঞ জন গ্রিসওল্ড...
১৭ ঘণ্টা আগে