Ajker Patrika

গুজব পরাজিত শক্তির মস্ত বড় হাতিয়ার: প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাষণে তিনি গুজব ও মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের যেন এক মহোৎসব চলছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। অভিনব সব প্রক্রিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যতই নির্বাচন কাছে আসবে এর রূপ আরও ভয়ংকর হতে থাকবে। কারা এর পেছনে আছে, কেন আছে তা আপনাদের সবারই জানা আছে।

তিনি বলেন, আমরা এই গুজব ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধ করতে জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছি। জাতিসংঘ মহাসচিব এর মোকাবিলায় আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়ে গেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম পর্ব সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। প্রথম পর্বের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা কিন্তু যুদ্ধাবস্থায় আছি। ‘গুজব’ হলো এই জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির মস্ত বড় হাতিয়ার। গুজব দেখলেই গুজবের সূত্রের সন্ধান করতে থাকবেন। গুজবকে অবহেলা করবেন না। বহু অভিজ্ঞ সমর বিশারদ এই গুজবের পেছনে দিনরাত কাজ করছে, সীমাহীন অর্থ এর পেছনে নিয়োজিত আছে। এর মূল লক্ষ্য জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা। আমরা তাকে ব্যর্থ হতে দেব না।

জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সামগ্রিক ঐক্য পলাতক শক্তির গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। তারা এই ঐক্য ভাঙতে চায়। তাদের অভিনব কৌশল আপনি টেরই পাবেন না। আপনি বুঝতেই পারছেন না কখন তাদের খেলায় আপনি পুতুল হয়ে গেছেন। আমাদের সচেতনতা এবং সামগ্রিক ঐক্য দিয়েই এই গুজবকে রুখতে হবে। পলাতক অপশক্তির ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।

ভাষণের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন।

পবিত্র রমজান মাস ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, এবং এ ব্যাপারে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের ‘লুটপাট’-এর কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি বর্তমানে নিম্নমুখী।

প্রধান উপদেষ্টা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাদের হয়রানি কমাতে ও আগামী নির্বাচনে তাঁদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানান।

ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা দূর করে আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা এবং অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি জানান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং শিগগিরই দেশে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

দুর্নীতি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, নাগরিকের হাতের ইশারায় যেন সরকার তাঁর সেবা দিতে পারে, সেই লক্ষ্যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি নারী অধিকার ও সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং নাগরিক হিসেবে কেউ যেন অন্য নাগরিকের অধিকার হরণ না করে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। ভাষণের শেষ পর্যায়ে, প্রধান উপদেষ্টা পবিত্র ঈদে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং পরাজিত শক্তির সকল প্ররোচনা মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। তিনি গুজব ও মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকার কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে:

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ: সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতেও ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান।

গত ১৬ বছরে সরকারের ‘লুটপাট’ ও বর্তমান সরকারের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা: পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়ম এবং বর্তমান সরকার কীভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, তা তিনি তুলে ধরেন। মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রেও সরকারের সাফল্যের কথা জানান।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গুরুত্ব এবং তাদের সমস্যা সমাধানে সরকারের উদ্যোগ: দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথা স্বীকার করে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। একই সাথে আগামী নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারেও কথা বলেন।

ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা দূর করে আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা এবং অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার পদক্ষেপ: ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার ওপর জোর দেন এবং অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার কথা বলেন।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা: বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে আরও বেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিভিন্ন দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি: অন্যান্য দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

দুর্নীতি দমন এবং এ লক্ষ্যে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও গৃহীত পদক্ষেপ: দুর্নীতি দমনে সরকারের কঠোর অবস্থান এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

সরকারি অফিসগুলোতে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু করার ওপরও জোর দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের অগ্রগতি: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার কিভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং নাগরিক সেবা অনলাইনে পাওয়া কতটা সহজ হয়েছে, তা তিনি বিস্তারিতভাবে জানান।

দেশের উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু করার জন্য ইলন মাস্কের সাথে আলোচনা: দেশের উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেন এবং বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু করার জন্য ইলন মাস্কের সাথে তার আলোচনার কথা উল্লেখ করেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত শেষ করে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো: সরকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত শেষ করার মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে কাজ করছে বলে জানান।

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে একটি যৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়নের কথা বলা: বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে একটি যৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়নের সম্ভাবনা তুলে ধরেন।

নারী অধিকার, সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার এবং গুজব ও মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান: নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন এবং সবাইকে গুজব ও মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিয়াবাড়ীতে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জিএমের রক্তাক্ত মরদেহ

ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়: জারাকে সারজিসের জবাব

কিছুদিন আগে মানিব্যাগও ছিল না, এখন বিশাল শোডাউন কীভাবে—সারজিসকে ডা. তাসনিম

‘সারজিস নাগরিক পার্টি করতে পারলে আমরা কেন ছাত্রদল করতে পারব না’

বাংলাদেশের বিপক্ষে ড্রয়ে ক্ষুব্ধ ভারতের কোচ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত