আমদানিতেও চালের দামে নড়চড় কম

  • নামমাত্র শুল্কে ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে চাল
  • সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চালও বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজি
  • দু-একটি ছাড়া অধিকাংশ চালই বিক্রি হচ্ছে আগের মতো বাড়তি দামে
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮: ৪০
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ১৪

দেশে গত বোরো মৌসুমের পরই বাড়তে থাকে চালের দাম। ক্রেতাদের আশা ছিল, আমন মৌসুম শুরু হলে দাম কমবে। কিন্তু আশা দুরাশাই রয়ে গেছে এখন পর্যন্ত। মোকামে আমন ধান আসতে শুরু করলেও চালের বাজারে খুব একটা প্রভাব নেই। শুধু তা-ই নয়, সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েও পণ্যটির দাম কমিয়ে আনতে পারছে না। বাজারে সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চালও বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজি।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আমন মৌসুমে উৎপাদন হয় এমন জাতের ধান থেকে তৈরি দু-এক ধরনের মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ১-২ টাকা কমেছে। তবে অধিকাংশ চালই বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামে।

রাজধানীর মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় দেশীয় বাসমতীর কেজি ৯০-৯৫, কাটারি (সেদ্ধ) ও কাটারি নাজির ৭২-৭৮, বিভিন্ন ধরনের জিরাশাইল (মিনিকেট) ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিআর আঠারো, উনত্রিশসহ মাঝারি মানের চালগুলো বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতারা বলছেন, এগুলোর দাম আগের অবস্থানেই রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমন মৌসুমে সাধারণত পাইজাম, গুটিস্বর্ণা, কাজললতা, জিরানাজির ও কিছু মোটা চালের উৎপাদন হয়। মৌসুম শুরু হলে এসবের সরবরাহ বেড়ে দাম কিছুটা কমে। ইতিমধ্যে কয়েক ধরনের চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এগুলোর দাম কিছুটা কমলেও আশানুরূপ নয়।

রাজধানীর বাজারগুলোতে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজি, যা গত মাসে ছিল ৫২-৫৪ টাকা। এ ছাড়া স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা কেজি, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। পাইজাম ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৬২ টাকা কেজি ছিল। তবে জিরানাজির জাতের চালগুলো আগের দাম ৬৮-৭০ টাকায় স্থির রয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী বাজারের চাল বিক্রেতা মরিয়ম স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইসহাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাজধানীতে যেসব চালের চাহিদা বেশি, সেগুলো অধিকাংশই বোরো মৌসুমের ধান থেকে উৎপাদিত হয়। তাই আমন মৌসুমের ধানে চালের দাম খুব একটা কমছে না। ব্যাপক হারে যখন আসবে, তখন হয়তো দাম আরও কমবে।

দেশে চালের বাজার ১০-১২টি করপোরেট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাঁরা যখন দাম কমাবে তখনই মানুষ কম দামে চাল খেতে পারবে। কিন্তু তারা সাধারণত দাম কমায় না।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মুগদা বাজারে কথা হয় চালের ক্রেতা রাহিমা বেগমের সঙ্গে। একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করা এই নারী বলেন, ‘বাজারের সবচেয়ে মোটা চালও ৫০ টাকার ওপরে। কিন্তু এই চাল দিয়ে তো ভাত খাওয়া যায় না। তাই কিছুটা ভালো মানের চাল কিনতে হয়। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমার অন্য কিছুতে খরচ কমাতে হচ্ছে।’

টিসিবির তথ্য বলছে, বর্তমানে যে দামে চাল বিক্রি হচ্ছে, তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪-১২ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। অর্থাৎ চালে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ শতাংশ পর্যন্ত। এর সঙ্গে দেশের সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশের চাপও সামলাতে হয় সাধারণ ক্রেতাকে।

টিসিবির হিসাবে গত তিন মাসে চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ টাকা বেড়েছে। আগস্ট মাসে সরু চাল পাওয়া যেত ৬৪ টাকা কেজি, যা বর্তমানে ৬৮ টাকা কেজি। মাঝারি মানের চাল পাওয়া যেত ৫৫ টাকা কেজিতে, যা এখন ৫৮ টাকা কেজি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, দেশে বোরো মৌসুমের পর সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয় আমন মৌসুমে। দেশে যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়, তার ৪০-৪২ শতাংশই আসে এই আমন মৌসুম থেকে।

নওগাঁ জেলা চালকলমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবার ১২টি জেলায় বন্যার কারণে আমন মৌসুমের ধানের উৎপাদন কম হবে। আমনের ঘাটতি ৮-১০ লাখ টন হতে পারে। এ জন্য বাজারে ধানের গতি কিছুটা কম। তবে চালের দাম কিছুটা কমেছে, আরও কমবে।

বন্যায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে যাতে চালের ঘাটতি না পড়ে, সেজন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ১১ নভেম্বর ২৪ প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শর্তে বলা হয়েছে, আমদানিকারকদের আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব চাল দেশে বাজারজাত করতে হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টন সেদ্ধ ও ৫৫ হাজার টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ নভেম্বর ভারত থেকে দুই বছর পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।

এদিকে চাল আমদানিতে শুল্ক ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, এতে করে চালের আমদানিমূল্য ২৪ টাকার বেশি কমার কথা।

ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, চাল আমদানির পর সেগুলো কোথায় যায়, সেটা নজরদারি করতে হবে। কারণ দেশের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চাল মজুত করলে আমদানির চাল বাজারে আসবে না। এ নজরদারি না থাকায় চালের দাম সহসা কমে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত