Ajker Patrika

বৈষম্য বেড়েছে, দুর্বল হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বৈষম্য বেড়েছে, দুর্বল হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি

গত এক দশকে দেশের মাথাপিছু আয় ও জীবন মান বেড়েছে, দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এর ভেতরে চোরাবালি আছে। কারণ দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এখনো পেছনে পড়ে রয়েছে। বৈষম্য বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি দুর্বল হয়ে গেছে। নেতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার কারণে সব জায়গায় একটি ভীতির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সবক্ষেত্রেই এই ভীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আরও তীব্র করে তুলেছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে এসিডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘জাতীয় উন্নয়ন আখ্যান ও স্থানীয় ভাবনা উপ-আঞ্চলিক পরামর্শ সভার সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ড. দেবপ্রিয় এসিডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো।

তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে এ বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রংপুর, খুলনা, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঠাকুরগাঁও, রাঙামাটি ও চট্টগ্রামে পরামর্শ সভায় ৫০০ সক্রিয় নাগরিক সরাসরি আলোচনায় অংশ নেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণটি তৈরি করা হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বৈষম্যের বিষয়টি আরও বেড়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি দুর্বল হয়ে গেছে। তাঁদের পক্ষে কথা বলার লোক কমে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে গেছে।’ তবে বাংলাদেশ রুগ্‌ণ না হলেও এর পুষ্টির অভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বৈশ্বিক কারণে উন্নয়নের সুষম বণ্টন আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন ড. দেবপ্রিয়। দেশের উন্নয়ন প্রয়োজন তবে উন্নয়নকে কখনো মানবাধিকারের বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘স্থানীয় মানুষ, আদিবাসী, দরিদ্র মানুষদের প্রতি জাতীয় গণমাধ্যমের আগ্রহ কম। তাঁদের দুঃখ কষ্ট, সমস্যা শহরের গণমাধ্যমে আসে না। গরিব মানুষ হেডলাইনে আসে না। জাতীয় সংবাদমাধ্যমে ধনীদের কথা আসে। কিন্তু এই অনগ্রসর মানুষের কথা কম আসে।’

গত এক দশকের অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় জাতীয় আয়, প্রবৃদ্ধি, গড় আয়ু, গড় শিক্ষার হার, রপ্তানি আয় সবই বেড়েছে। তবে এই উন্নয়ের ভিত্তি কতটা মজবুত সেটা আমরা দেখার চেষ্টা করেছি। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ, আদিবাসী মানুষ, হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডার মানুষ, বিশেষ ভৌগোলিক এলাকার মানুষ, কৃষক, মৎস্যজীবীদের কাছে উন্নয়ন ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না। এসব মানুষদের যাতে আমরা যাতে ভুলে না যাই এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যাতে তাদের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রাখা হয় সে জন্য এই গবেষণা কার্যক্রম। এই গবেষণার ফলাফল সরকার গ্রহণ করতে পারে। যোগ করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এই গবেষণা থেকে ছয়টি বার্তা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন ড. দেবপ্রিয়।

প্রথমত, শোভন কর্ম সংস্থানের ঘাটতি। বিশেষ করে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ঘাটতি রয়েছে এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সার্টিফিকেটধারী যুব সমাজ তৈরি হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যে উন্নয়ন হচ্ছে তাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এমনও তথ্য পাওয়া গেছে যে, দলিত শ্রেণির জন্য চাকরির যে কোটা সেখানেও ৮ লাখ টাকা ঘুষ না দিলে চাকরি হয় না। কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা এই যুবসমাজ মাদকাসক্ত হচ্ছে, উগ্রবাদে জড়াচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। পুরুষতান্ত্রিকতা ও সাইবার সিকিউরিটির অভাবে নারীদের হয়রানি ও নির্যাতনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আইনের শাসনের ঘাটতির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

তৃতীয় বার্তায় ড. দেবপ্রিয় বলেন, পরিবেশ দূষণ এখন জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বন্যা, ভূমিধস, বায়ুদূষণ, পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে।

চতুর্থত, সরকারি সেবা পদ্ধতি বা রাষ্ট্রীয় সেবার মান ও সেবা দান ক্ষমতার কমেছে।

পঞ্চম বার্তায় বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ কমার কথা বলেছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নানাভাবে হয়রানির শিকার ও নির্যাতিত হচ্ছে। পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসীদের বড় সমস্যা হলো ভূমি সমস্যা তার এখনো সমাধান হয়নি।

ষষ্ঠ বার্তায় তিনি বলেন, সব জায়গায় একটি ভীতির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সবক্ষেত্রেই এই ভীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষ কথা বলেতে ভয় পাচ্ছে।

এ ছাড়া আরও ৫টি খাত বিশেষ করে শিক্ষা খাতে শিক্ষার মান কমা, আর্থিক সংগতির অভাবে মাধ্যমিক পর্যায়ে কন্যাশিশুদের ঝরে পড়া, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে হাসপাতাল থাকলেও ডাক্তার ও ওষুধ না থাকা, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের সমস্যা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মাথাপিছু ও সামগ্রিক বরাদ্দ দুটোই এত কম যে তা দিয়ে মানুষের প্রয়োজন মিটছে না, রাস্তার নিরাপত্তা কম, দুর্ঘটনা বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু তাদের সুরক্ষা কম। খেলার মাঠের অভাব ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের অভাবে উগ্রবাদের বিস্তার বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন খুবই অন্যায় হয়েছে, এর কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এ সময় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উন্নয়ন নৈতিক হতে হবে। পিছিয়ে পড়া এসব প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে যদি আমরা কাজ না করি তাহলে অর্থনৈতিক একটা বড় শক্তিকে আমরা হারিয়ে ফেলব। তাতে আমাদের সামগ্রিক ক্ষতি। এদের উন্নয়ন করা গেলে নতুন চাহিদা ও বাজার তৈরি হবে। অর্থনৈতিক লেনদেনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। এতে সবারই লাভ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্য দূর করতে রাজনৈতিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, সুশাসন এখন দ্বিতীয় প্রজন্মের চাওয়া। জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

এই গবেষণায় সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, সিপিডির সহযোগী গবেষক ফাবিয়া বুশরা খান অংশ নেন। সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল হিকস বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), ওয়াটার এআইডি বাংলাদেশ, ইউনাইটেড নেশন্স ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বাংলাদেশ, এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম পভার্টি-এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশন, বাংলাদেশ ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম, ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, ঘাসফুল ও কাপেং ফাউন্ডেশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ১২
মেজর সাদিক ও স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন।
মেজর সাদিক ও স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন।

মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে গুলশান থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।

সুমাইয়ার স্বামী মেজর সাদিকুল হকের বিরুদ্ধে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কোর্ট-মার্শাল গঠন করেছে সেনাবাহিনী।

আদালতে গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই মোক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সুমাইয়া জাফরিনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন ডিবি পুলিশের গুলশান জোনাল টিমের পরিদর্শক মোজাম্মেল হক মামুন।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল সকালে গুলশান-১-এর জব্বার টাওয়ারের পাশে ৩০-৩৫ জন নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যানারে বিক্ষোভ-মিছিল করেন। আসামিরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাঁরা দেশবিরোধী স্লোগান দেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। কয়েকজন পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পুলিশ ওই দিনই গুলশান থানায় মামলা করে।

আবেদনে বলা হয়, এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দি ও স্থানীয়ভাবে তদন্তে জানা যায়, সুমাইয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ জোগানদাতা, পরামর্শদাতা ও নির্দেশদাতা। তিনি সক্রিয়ভাবে দেশবিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। আসামি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়। তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের অর্থ জোগান দিয়ে থাকেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই আসামি সারা দেশের আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মীদের সুসংগঠিত করে দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিলেন বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন গ্রেপ্তার দেখানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। পরে আদালত তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ঘটনায় ভাটারা থানায় করা মামলায় গত ৬ আগস্ট সুমাইয়া জাফরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৭ আগস্ট তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড হয়। রিমান্ড শেষে ১২ আগস্ট সুমাইয়া জাফরিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১৭৫ থেকে ২০০ পর্যবেক্ষক পাঠাবে ইইউ: ইসি সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে বিভিন্ন পর্যায়ে ১৭৫ থেকে ২০০ জন পর্যবেক্ষক পাঠাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমাকে যেটা ধারণা দেওয়া হয়েছে—বিভিন্ন সময়ে ১৭৫ থেকে ২০০ জনের মতো আসবেন। এখন কে আগে আসবেন, তাঁদের সংখ্যা কত, তাঁরা কী কী দেখবেন, তাঁদের সঙ্গে পরবর্তীতে কেউ জয়েন করবেন কি না—এই সম্পর্কে কোনো প্রস্তাবনা এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি।’

গত সোমবার চুক্তি হয়েছে জানিয়ে সচিব আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একটা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তির আওতায় আমরা তাঁদের ফ্যাসিলিটিজ প্রোভাইড করব। তাঁদের যাতায়াত, চলাফেরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তাঁদের লোকাল প্রটোকল কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানতে হবে।’

এখন পর্যন্ত ইইউ ও তুরস্ক থেকে পর্যবেক্ষক দল আসবে নিশ্চিত হয়েছে বলে জানান সচিব।

প্রার্থীর নিরাপত্তায় অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন অনুমতি নিয়ে নির্দেশনা জারি করেছে কি না—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় এটা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হবে। তাঁরা ভালো মনে করেছেন এবং আমরা সবাই এ বিষয়ে একমত।’

কীভাবে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব—এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্নটা করলে বোধ হয় আমার জন্য ভালো হয়। আমার সঙ্গে উনার এ ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। কাজেই, আমি এর ব্যাখ্যা দিতে গেলে অপব্যাখ্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যেটা আমি করতে চাই না।’

নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘এটার ব্যাপারেও আমি কোনো মন্তব্য করব না। নিরাপত্তার বিষয়টা কখনো ভীতি হয়? আমি আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করি। নিরাপত্তার বিষয়টা নিশ্চিত করলে আবার ভীতি সঞ্চার হবে, এটা কোনো কথা হতে পারে? এটি তো সবারই চেষ্টা করা উচিত।’

আখতার আহমেদ আরও বলেন, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার বিষয়টা যখন প্রাসঙ্গিক হবে, তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ রিয়াজ হামিদউল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ উদ্বেগের কথা জানায়।

আজ বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। তাঁকে তলব করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিএম) বি শ্যাম।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে। এ সময় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছে, ঢাকায় কিছু ‘চরমপন্থী উপাদান’ প্রকাশ্যে ঢাকায় ভারতীয় মিশনের আশেপাশে একটি নিরাপত্তা সংকট তৈরি করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, এই ধরনের হুমকি কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিক—এমনটাই প্রত্যাশিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নিয়ে ‘চরমপন্থী উপাদানগুলো’র মাধ্যমে যে ‘মিথ্যা বয়ান’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে, ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার এই উদ্বেগজনক ঘটনাগুলোর কোনো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেনি বা ভারত সরকারের সঙ্গে কোনো অর্থবহ প্রমাণ দেয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ওঠা ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, যা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক এবং মানুষে-মানুষে উদ্যোগের মাধ্যমে আরও জোরদার হয়েছে। এই সম্পর্কের ভিত্তিতেই নয়াদিল্লি বারবার বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে মত দিয়েছে। ভারত সরকার ধারাবাহিক আহ্বান জানিয়েছে, একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশে যেন অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে, বাংলাদেশ সরকার তাদের কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা বজায় রেখে সেদেশে অবস্থিত ভারতীয় মিশন এবং অন্যান্য বিদেশি পোস্টগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

উল্লেখ্য, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে, এই তলবের মূল কারণ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতার ‘উসকানিমূলক’ মন্তব্য বলে উল্লেখ করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে সে প্রসঙ্গ আনা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যাত্রীদের মালপত্রের নিরাপত্তায় শাহজালালে বডি ক্যামেরা পরবেন ট্রাফিক স্টাফরা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৪
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের মালপত্রের (ব্যাগেজ) নিরাপত্তা নিশ্চিতে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট (জিএইচএ) হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠানটি ব্যাগেজ পরিবহনপ্রক্রিয়ায় নিয়োজিত ট্রাফিক স্টাফদের জন্য বডি ক্যামেরা সংযোজন করেছে।

এই বডি ক্যামেরা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমানের হোল্ড থেকে শুরু করে ব্যাগেজ বেল্ট হয়ে যাত্রীর হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের আওতায় আসবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের পাশাপাশি যেসব আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের জন্য প্রতিষ্ঠানটি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেয়, তাদের ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানায়, বডি ক্যামেরা সংযোজনের ফলে ব্যাগেজ চুরি, হারানো কিংবা ক্ষতির অভিযোগ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে যাচাই করা সম্ভব হবে। কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা শনাক্ত করে দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করা যাবে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যাত্রীদের আস্থা ও সন্তুষ্টি আরও সুদৃঢ় হবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ও সেবার একটি অভিন্ন কাঠামো প্রতিষ্ঠায় এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং যাত্রীকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তব উদাহরণ হিসেবে বডি ক্যামেরা উদ্যোগটি বিবেচিত হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তা, সেবা ও আস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যকর ও আধুনিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত