Ajker Patrika

হলফনামায় স্ত্রীর সম্পদের তথ্য দেননি ৯ মন্ত্রী

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩: ৪৩
হলফনামায় স্ত্রীর সম্পদের তথ্য দেননি ৯ মন্ত্রী

স্বামী মন্ত্রী, তাই স্ত্রীও গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। গত পাঁচ বছরে বর্তমান সরকারের ২৩ মন্ত্রীর মধ্যে ১১ জনের স্ত্রীদের এবং এক মন্ত্রীর স্বামীর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কোনো কোনো মন্ত্রীর স্ত্রীদের সম্পত্তি বেড়েছে সাড়ে ৮ গুণ পর্যন্ত। ৯ জন মন্ত্রী নিজ নিজ স্ত্রীর সম্পদের তথ্য দেননি। তাঁদের মধ্যে অবশ্য দুজনের স্ত্রীরা জীবিত নেই বলে জানা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

যে মন্ত্রীরা হলফনামায় স্ত্রীদের সম্পদের তথ্য দেননি, তাঁরা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পরিবেশমন্ত্রী সাহাব উদ্দিন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে অবশ্য আইনমন্ত্রীর স্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর স্ত্রী জীবিত নেই বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তাঁর স্ত্রী শাবানা মালেকের ৫৫ ভরি সোনা ছাড়া আর কোনো সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেননি। ২০১৮ সালে তিনি স্ত্রীর ৩ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য দিয়েছিলেন।

এবার যে ৯ মন্ত্রী তাঁদের স্ত্রীদের সম্পদের তথ্য দেননি, তাঁদের মধ্যে ৩ জন ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রীদের সম্পদের তথ্য দিয়েছিলেন। হলফনামা অনুসারে, তখন কৃষিমন্ত্রীর স্ত্রী ফরিদা রাজ্জাকের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭৩ লাখ টাকা। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির স্ত্রী আইরীন মালবিকা মুনশির সম্পদ ছিল প্রায় ১১ কোটি টাকা মূল্যের। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানুর সম্পদের মধ্যে ছিল ১২ তোলা স্বর্ণ এবং ব্যাংকে জমা প্রায় ৭ লাখ টাকা।

হলফনামায় তথ্য গোপন কিংবা অসত্য তথ্য দিলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, হলফনামা সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ চাইলে মনোনয়নপত্র বাছাই কিংবা আপিলের সময় কোনো প্রার্থীর অসত্য তথ্য নিয়ে আপত্তি তুলতে পারেন। পরে আপত্তি দিলে তখন কমিশনের তেমন কিছু করার থাকে না।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হলফনামায় স্ত্রীর সম্পদের তথ্য গোপন করা অন্যায়। এটা দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের উচিত তথ্য আড়ালের বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা।’ 

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে ৯ মন্ত্রীর স্ত্রীদের। সেই মন্ত্রীরা হচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির স্বামী তৌফিক নাওয়াজেরও সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তথ্য দেওয়া ১১ মন্ত্রীর স্ত্রীদের এবং এক মন্ত্রীর স্বামীর ২০১৮ সালের হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এবারের হলফনামা অনুসারে তাঁদের সম্পদ বেড়ে হয়েছে ১২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকার। মন্ত্রীদের মধ্যে ২০১৮ সালের হলফনামার তুলনায় ২০২৩ সালে স্ত্রীদের সম্পদ কম দেখিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ২০২৩ সালে এবং ২০১৮ সালে স্ত্রীর সম্পদের একই রকম তথ্য দিয়েছেন।

হলফনামার তথ্যমতে, শিল্পমন্ত্রীর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ। আগেরবার ছিল ২১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, এবার দেখিয়েছেন ১ কোটি ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ৩ গুণ। তাঁর স্ত্রী তাহমিনা খানের সম্পদ গত ৫ বছরে ২ কোটি থেকে বেড়ে ৯ কোটি টাকা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রীর স্ত্রী জুলেখা মান্নানের ২ হাজার টাকা বেড়ে ৮৮ লাখ টাকা হয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর স্ত্রী নাসরীন আহমদের ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা থেকে হয়েছে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর স্ত্রী পারভীন রেজার সম্পদ ৪৩ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখের বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রীর স্ত্রী মেহ্লা প্রুর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৫ কোটি ৮১ লাখ টাকার বেশি। অর্থমন্ত্রীর চেয়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদে এগিয়ে তাঁর স্ত্রী কাশমেরী কামাল। তাঁর সম্পদ ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অথচ ২০১৮ সালের হলফনামায় ছিল ৫১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

হলফনামায় তথ্য আড়াল করা কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘তথ্য গোপনকারী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হওয়া উচিত। এই অপরাধে নির্বাচনের ফলও বাতিল হতে পারে। যেসব তথ্য দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোও কতটুকু সত্য, তা যাচাই করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘হলফনামার বিধান করা হয়েছে, যাতে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা কলুষমুক্ত হয়। তথ্য গোপন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া মূলত নির্বাচনী বিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত