বিটিভি পরিদর্শন করলেন সংস্কৃতি কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৪, ১৯: ৩১
Thumbnail image

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৮ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন কার্যালয়ে হামলা হয়। এতে বিটিভির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি পরিদর্শন করেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তি এবং তাঁদের প্রজন্মরাই বিটিভিতে এমন ধ্বংসযজ্ঞ করেছে। 

বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, টিভি ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের, লাকী ইনাম, হারুন অর রশিদ, ঝুনা চৌধুরী, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রেজানুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিরা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন বিটিভির মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারসহ বিটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিটিভি ভবন পরিদর্শন শেষে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা আবেগঘন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। 

রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘বিটিভির সঙ্গে আমাদের একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। আজকে যে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আমরা দেখলাম, তা আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে এভাবে ধ্বংস করা সম্ভব!’ 

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘অসম্ভব খারাপ লাগার দৃশ্য অবলোকন করতে হলো। যেটি হয়তো আমাদের আমৃত্যু বহন করতে হবে। শুধু তদন্তের নামে তদন্ত চাই না, আমরা একটা শ্বেতপত্র চাই।’ 

বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমি চাই যে এই ধরনের মনোবৃত্তি থেকে এই দুর্বৃত্তরা মুক্ত হোক। মানসিকতার যেন পরিবর্তন ঘটে সবার মধ্যে।’ 

ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি পরিদর্শন করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীতগণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, বিটিভিতে অনেক অনেক স্মৃতি। সেটা যে এইভাবে আগুনে জ্বলে যাবে, পুড়ে যাবে এটা কল্পনা করাও কঠিন। 

শাইখ সিরাজ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি, শিল্প-সংস্কৃতির কীরকম রূপ হবে সেটার দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ টেলিভিশন দিয়েছে। সেই টেলিভিশন এইভাবে ধ্বংস হয়ে গেল! 

সারা যাকের বলেন, ‘বিটিভির এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে হতবাক হয়েছি, ব্যথিত হয়েছি।’ 

লাকী ইনাম বলেন, ‘বিটিভির আর্কাইভে কত রকমের কত মূল্যবান কত কিছু ছিল। সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা ভাবা যায়!’ 

নাট্যব্যক্তিত্ব ও বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘হাজার কোটি টাকা খরচ করে হয়তো এটার ধ্বংস চিত্র পুনর্নির্মাণ সম্ভব, কিন্তু মিউজিয়ামে যে ঐতিহ্য এবং একটা দেশকে, দেশের ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা ছিল, এটা আমরা কোথায় পাব? এটা তো আর পাওয়া যাবে না।’ 

ঝুনা চৌধুরী বলেন, ‘এখানে যদি না আসতাম তাহলে কোনোভাবেই কল্পনা করতে পারতাম না, এত ম্যাসিভ অ্যাটাক হয়েছে, এভাবে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এর কোনো কিছুই রিপেয়ার সম্ভব না।’ 

ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি পরিদর্শন ঘুরে দেখেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত গোলাম কুদ্দুস তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘শত শত বছরের সংস্কৃতির যে নানান উপাদান সংরক্ষিত ছিল বিটিভিতে, তার সব ধ্বংস করে দেওয়ার অপচেষ্টা আমরা অবলোকন করলাম।’ 

আহকাম উল্লাহ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের তরুণ প্রজন্ম এটি করতে পারে না। এটির পেছনে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তি এবং তাঁদের প্রজন্মরাই এ রকম কাজ করতে পারে।’ 

বিটিভি পরিদর্শন শেষে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোটা আন্দোলনে সহিংসতায় আহতদের দেখতে যান এবং তাঁদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত