ফারহানা আক্তার
সবাই মিলে ঈদের ব্যস্ততার মাঝেই রানা প্লাজা দিবস পার করলাম আমরা।
ধারালো আঘাত পেলে ঘা শুকানোর পরে ক্ষত হয়তো সেরে যায়, কিন্তু আঘাতের দাগ মুছে যায় না। রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পরিস্থিতি অনেকটা ক্ষত শুকানো দাগের মতো হয়ে আছে। এক দশক ধরে এই দিনকে আমরা স্মরণ করছি। কিন্তু কীভাবে আমরা ওরকম বেদনাময় জীবনের দুর্ভাগ্য এড়াতে পারি? তার জন্য শিল্প ও বাণ্যিজিক কাজে ব্যবহৃত ভবনগুলো কতটা নিরাপদ করেছি আমরা? রানা প্লাজা বিপর্যয়ের এক দশক পার করার পরেও কতটুকু শোভন কর্মপরিবেশ তৈরি করা গেল দেশব্যাপী?
কায়কোবাদের কথা কি মনে আছে আমাদের?
২৪ এপ্রিল ২০১৩ কায়কোবাদ টেলিভিশনে রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় চাপা পড়াদের আকুতি শুনে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছিলেন না, উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর বাসা থেকে ছুটে চলে গিয়েছিলেন উদ্ধারকাজে শামিল হতে। প্রশিক্ষণ ছাড়াই প্রায় ৩০-৩৫ জনকে উদ্ধার শেষে নিজেই মারা পড়েন।
কথা ছিল সবাইকে উদ্ধার শেষে প্রিয় স্ত্রী, দুটি সন্তানের কাছে ফিরে আসবেন তিনি। কিন্তু পোশাকশ্রমিক শাহিনাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে গিয়ে দগ্ধ হন এই ব্রেভহার্ট ইজাজ উদ্দিন কায়কোবাদ। শাহিনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁর শরীরের ৫০ শতাংশের বেশি পুড়ে যায়। কায়কোবাদের শেষ কথা ছিল, ‘একজন মানুষ যদি এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থাকে, তাহলে আমি এই জায়গা ছেড়ে যাব না।’
সেই ব্রেভহার্টম্যানকে বাঁচাতে গিয়ে আকাশের তারা হয়ে গেলেন। কিন্তু যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের পুনর্বাসন কি সম্ভব হয়েছে? অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সমীক্ষা অনুযায়ী, রানা প্লাজায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে এখনো ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ কর্মহীন। ২৪ এপ্রিল রান্না প্লাজা দিবস পালন শেষেও কি এঁদের কর্মহীনতা ঘুচবে?
দুর্ঘটনার খাতা কিন্তু বন্ধ করা যাচ্ছে না
১০ বছর নানান প্রতিশ্রুতির পর নিজেদের বিবেকের কাছে আমরা এ প্রশ্ন করতে পারি, দেশে অনুরূপ আর বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না। উত্তর হলো, মৃতের সংখ্যা অত বেশি না হলেও দুর্ঘটনা কিন্তু ঘটেছে এবং মাঝেমধ্যেই ঘটে চলেছে। বনানী ট্র্যাজেডি, নিমতলা ট্র্যাজেডি, চকবাজার ট্র্যাজেডি, কিছুদিন আগে বঙ্গবাজারের আগুন—এই সব দুর্ঘটনায় আহত-নিহত হচ্ছে অনেক সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শ্রমজীবীরা। কেন আমরা ক্ষয়ক্ষতির এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে পারছি না? এ কাজে আমাদের যাবতীয় চেষ্টায় ত্রুটি কোথায়?
দুর্ঘটনাপ্রবণ ভবন মানে দেশের ইমেজের ক্ষতি
সংশোধিত শ্রম আইন, ২০১৩-এর ষষ্ঠ অধ্যায়ে বলা আছে, ‘যদি কোনো পরিদর্শকের নিকট ইহা প্রতীয়মান হয় যে, কোন প্রতিষ্ঠানের কোন ভবন বা ইহার কোন অংশ অথবা ইহার কোন পথ বা প্ল্যান্ট এমন অবস্থায় আছে যে, ইহা মানুষের জীবন বা নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক, তাহা হইলে তিনি মালিকের নিকট লিখিত আদেশ জারি করিয়া, উহাতে উল্লিখিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, তাহার মতে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন উহা গ্রহণ করিবার নির্দেশ দিতে পারিবেন।’ দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভবনগুলোকে ওই আইনি নির্দেশনার আওতায় আনতে সমস্যা কোথায়?
মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পরে না। স্বল্প বেতনে শ্রমিক পাওয়া যায় বলে এ দেশে মানুষের চেয়ে পণ্যের দাম বেশি। শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো নির্মাণের সময় সঠিকভাবে ইমারত নির্মাণ আইন মানা হচ্ছে কি না, সেটাও দেখা দরকার। অভিযোগ আছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না এসব ক্ষেত্রে। এতে করে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে মানুষ নিয়মিতভাবে। উপরন্তু তাতে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। দেশের সুনাম নষ্ট মানে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের ক্ষতি। অর্থাৎ দুর্ঘটনাপ্রবণ ভবন থাকা মানে অর্থনৈতিকভাবেও দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
যুগ অনেক পাল্টে গেছে। বিদেশের বাজারে ক্রেতা পণ্য কিনতে গেলে খেয়াল রাখেন পণ্যটি শোভন কর্মপরিবেশের আওতায় তৈরি কি না। পণ্য অর্ডার দেওয়ার আগে অনেক কিছু যাচাই করে অর্ডার দেওয়া হয়। যেমন—বিশেষ একটা পণ্য তৈরির কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকেরা কতটুকু নিরাপদ পরিবেশে কাজ করছেন। কতটা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনা এই প্রবণতা আরও উসকে দিয়েছে।
শোভন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে হলে আইন-আদালতের সব নির্দেশনা অনুসরণ করেই শিল্প-বাণিজ্য ভবনগুলো তৈরি ও ব্যবহার করতে হবে। আর সেটা নিশ্চিত করতে কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগকে সজাগ নজরদারি করতে হবে।
দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সময় মালিকদের অবশ্যই নকশা ও নিয়মকানুন অনুসরণ করেই সেটা করতে হবে। এসব বিষয়ে গাফিলতি যে গণহত্যাতুল্য অবস্থা তৈরি করে, সেটা আমরা রানা প্লাজা অধ্যায় থেকে শিখেছি। অথচ এখনো নানান দুর্ঘটনার পর নিয়মিতই শুনতে হয় যে, ঘরবাড়ির মালিকেরা ফায়ার সার্ভিসসহ নানান প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ ও নির্দেশনা মানছেন না।
এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। এটা দেশের অর্থনৈতিক ইমেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতোই। উপরন্তু এ রকম কর্মপরিবেশ জাতীয় উৎপাদনশীলতার জন্যও বড় বাধা।
পরিদর্শনকাজে নাগরিক সমাজকে যুক্ত করা যায় কি না
কর্মক্ষেত্র যদি স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ না হয়, সেখানে যদি কাজের শোভন পরিবেশ না থাকে তাহলে প্রত্যাশামতো উৎপাদন কীভাবে হবে?
এ ক্ষেত্রে যদিও কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগ জাতীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, কিন্তু বর্তমান অবস্থায় শ্রমিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের কিছু অংশগ্রহণ এ কাজে জরুরি হয়ে পড়েছে।
যেহেতু কর্মক্ষেত্র উন্নয়নের সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমজীবীর জীবন এবং দেশের অর্থনৈতিক ইমেজ যুক্ত এবং এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত উন্নয়ন ঘটছে না। সে কারণে মানবাধিকারকার্মী, নাগরিক সমাজ ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে শোভন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ বিষয়ে আরও সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনীয় শিল্প-বাণিজ্য কাজে ভবনাদির পরিবেশ বিষয়ে তাদের পরিদর্শনেও নামতে হবে।
সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এবং তাঁদের অনুমতি নিয়েই মালিক-শ্রমিক-সরকার-নাগরিক সমাজের তরফ থেকে যৌথভাবে দেখা দরকার। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের কাজের শর্ত অনুযায়ী ভবনগুলো তৈরি হয়েছে কি না। অগ্নিনিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না। শ্রমিক অনুপাতে মেশিনগুলো যথাস্থানে বসানো আছে কি না। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা আছে কি না।
এ রকম বিষয়গুলো দেখে কোনো ত্রুটি বা সম্ভাব্য বিপদের আলামত পেলে নাগরিক সমাজ কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগকে তা জানাতে পারে।
উন্নয়ন ধারাও পাল্টানো দরকার
শ্রম আইন, ২০০৬-এ উল্লেখ আছে, প্রতি প্রতিষ্ঠানে বিধি দ্বারা নির্ধারিতভাবে অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রতি তলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী অন্তত একটি বিকল্প সিঁড়িসহ বহির্গমনের উপায় ও অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম থাকতে হবে। কিন্তু বনানীর এফআর টাওয়ারের কথা কি আমরা ভুলে গেছি? এই টাওয়ারে ফায়ার ডোর ছিল না, মূল সিঁড়ি ও ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি পাশাপাশি থাকার কারণে দুর্ঘটনার সময়ে অতিরিক্ত মানুষের ভিড় এড়িয়ে লাফ দিতে গিয়ে মৃত্যু ঘটে মানুষের। এখানে ফায়ার অ্যালার্মও ছিল না।
বঙ্গবাজার দুর্ঘটনায় আমরা এ-ও শুনলাম, ফায়ার সার্ভিস আগেই সতর্ক করা সত্ত্বেও সেখানে ব্যবসা চলছিল। তার মানে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার পাশাপাশি এখন নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ ছাড়া শিল্প ও বাণিজ্য দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। সুতরাং এই খাতে আমাদের পরিদর্শনব্যবস্থায় নাগরিক সমাজকে ব্যাপকভাবে যুক্ত করা সময়ের বড় দাবি হয়ে উঠেছে।
ঢাকায় অনেক শিল্প ও বাণ্যিজিক ভবন রয়েছে, যেখানে ফায়ার হাইড্রেন্ডের ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া এমন অনেক ভবন রয়েছে, যার সিঁড়িগুলো সরু করে বানানো। এ কারণে দেখা যায়, দুর্ঘটনার সময় তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে অনেকে পদদলিত হয়ে মারা যাচ্ছেন। নগরের খাল, নালাগুলো ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিত উঁচু ভবন, যার ফলাফল হিসেবে আগুন নেভানোর জন্য পানি পাওয়াও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থা বদলাতে আমাদের কেবল কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের ওপর ভরসা করে থাকলেই হবে না। উন্নয়নধারায় নাগরিক নজরদারিও বাড়াতে হবে।
লেখক: শ্রম অধিকার বিষয়ে একটি বেসরকারি সংগঠনে কাজ করেন
সবাই মিলে ঈদের ব্যস্ততার মাঝেই রানা প্লাজা দিবস পার করলাম আমরা।
ধারালো আঘাত পেলে ঘা শুকানোর পরে ক্ষত হয়তো সেরে যায়, কিন্তু আঘাতের দাগ মুছে যায় না। রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পরিস্থিতি অনেকটা ক্ষত শুকানো দাগের মতো হয়ে আছে। এক দশক ধরে এই দিনকে আমরা স্মরণ করছি। কিন্তু কীভাবে আমরা ওরকম বেদনাময় জীবনের দুর্ভাগ্য এড়াতে পারি? তার জন্য শিল্প ও বাণ্যিজিক কাজে ব্যবহৃত ভবনগুলো কতটা নিরাপদ করেছি আমরা? রানা প্লাজা বিপর্যয়ের এক দশক পার করার পরেও কতটুকু শোভন কর্মপরিবেশ তৈরি করা গেল দেশব্যাপী?
কায়কোবাদের কথা কি মনে আছে আমাদের?
২৪ এপ্রিল ২০১৩ কায়কোবাদ টেলিভিশনে রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় চাপা পড়াদের আকুতি শুনে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছিলেন না, উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর বাসা থেকে ছুটে চলে গিয়েছিলেন উদ্ধারকাজে শামিল হতে। প্রশিক্ষণ ছাড়াই প্রায় ৩০-৩৫ জনকে উদ্ধার শেষে নিজেই মারা পড়েন।
কথা ছিল সবাইকে উদ্ধার শেষে প্রিয় স্ত্রী, দুটি সন্তানের কাছে ফিরে আসবেন তিনি। কিন্তু পোশাকশ্রমিক শাহিনাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে গিয়ে দগ্ধ হন এই ব্রেভহার্ট ইজাজ উদ্দিন কায়কোবাদ। শাহিনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁর শরীরের ৫০ শতাংশের বেশি পুড়ে যায়। কায়কোবাদের শেষ কথা ছিল, ‘একজন মানুষ যদি এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থাকে, তাহলে আমি এই জায়গা ছেড়ে যাব না।’
সেই ব্রেভহার্টম্যানকে বাঁচাতে গিয়ে আকাশের তারা হয়ে গেলেন। কিন্তু যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের পুনর্বাসন কি সম্ভব হয়েছে? অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সমীক্ষা অনুযায়ী, রানা প্লাজায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে এখনো ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ কর্মহীন। ২৪ এপ্রিল রান্না প্লাজা দিবস পালন শেষেও কি এঁদের কর্মহীনতা ঘুচবে?
দুর্ঘটনার খাতা কিন্তু বন্ধ করা যাচ্ছে না
১০ বছর নানান প্রতিশ্রুতির পর নিজেদের বিবেকের কাছে আমরা এ প্রশ্ন করতে পারি, দেশে অনুরূপ আর বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না। উত্তর হলো, মৃতের সংখ্যা অত বেশি না হলেও দুর্ঘটনা কিন্তু ঘটেছে এবং মাঝেমধ্যেই ঘটে চলেছে। বনানী ট্র্যাজেডি, নিমতলা ট্র্যাজেডি, চকবাজার ট্র্যাজেডি, কিছুদিন আগে বঙ্গবাজারের আগুন—এই সব দুর্ঘটনায় আহত-নিহত হচ্ছে অনেক সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শ্রমজীবীরা। কেন আমরা ক্ষয়ক্ষতির এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে পারছি না? এ কাজে আমাদের যাবতীয় চেষ্টায় ত্রুটি কোথায়?
দুর্ঘটনাপ্রবণ ভবন মানে দেশের ইমেজের ক্ষতি
সংশোধিত শ্রম আইন, ২০১৩-এর ষষ্ঠ অধ্যায়ে বলা আছে, ‘যদি কোনো পরিদর্শকের নিকট ইহা প্রতীয়মান হয় যে, কোন প্রতিষ্ঠানের কোন ভবন বা ইহার কোন অংশ অথবা ইহার কোন পথ বা প্ল্যান্ট এমন অবস্থায় আছে যে, ইহা মানুষের জীবন বা নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক, তাহা হইলে তিনি মালিকের নিকট লিখিত আদেশ জারি করিয়া, উহাতে উল্লিখিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, তাহার মতে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন উহা গ্রহণ করিবার নির্দেশ দিতে পারিবেন।’ দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভবনগুলোকে ওই আইনি নির্দেশনার আওতায় আনতে সমস্যা কোথায়?
মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পরে না। স্বল্প বেতনে শ্রমিক পাওয়া যায় বলে এ দেশে মানুষের চেয়ে পণ্যের দাম বেশি। শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো নির্মাণের সময় সঠিকভাবে ইমারত নির্মাণ আইন মানা হচ্ছে কি না, সেটাও দেখা দরকার। অভিযোগ আছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না এসব ক্ষেত্রে। এতে করে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে মানুষ নিয়মিতভাবে। উপরন্তু তাতে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। দেশের সুনাম নষ্ট মানে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের ক্ষতি। অর্থাৎ দুর্ঘটনাপ্রবণ ভবন থাকা মানে অর্থনৈতিকভাবেও দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
যুগ অনেক পাল্টে গেছে। বিদেশের বাজারে ক্রেতা পণ্য কিনতে গেলে খেয়াল রাখেন পণ্যটি শোভন কর্মপরিবেশের আওতায় তৈরি কি না। পণ্য অর্ডার দেওয়ার আগে অনেক কিছু যাচাই করে অর্ডার দেওয়া হয়। যেমন—বিশেষ একটা পণ্য তৈরির কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকেরা কতটুকু নিরাপদ পরিবেশে কাজ করছেন। কতটা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনা এই প্রবণতা আরও উসকে দিয়েছে।
শোভন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে হলে আইন-আদালতের সব নির্দেশনা অনুসরণ করেই শিল্প-বাণিজ্য ভবনগুলো তৈরি ও ব্যবহার করতে হবে। আর সেটা নিশ্চিত করতে কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগকে সজাগ নজরদারি করতে হবে।
দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সময় মালিকদের অবশ্যই নকশা ও নিয়মকানুন অনুসরণ করেই সেটা করতে হবে। এসব বিষয়ে গাফিলতি যে গণহত্যাতুল্য অবস্থা তৈরি করে, সেটা আমরা রানা প্লাজা অধ্যায় থেকে শিখেছি। অথচ এখনো নানান দুর্ঘটনার পর নিয়মিতই শুনতে হয় যে, ঘরবাড়ির মালিকেরা ফায়ার সার্ভিসসহ নানান প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ ও নির্দেশনা মানছেন না।
এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। এটা দেশের অর্থনৈতিক ইমেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতোই। উপরন্তু এ রকম কর্মপরিবেশ জাতীয় উৎপাদনশীলতার জন্যও বড় বাধা।
পরিদর্শনকাজে নাগরিক সমাজকে যুক্ত করা যায় কি না
কর্মক্ষেত্র যদি স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ না হয়, সেখানে যদি কাজের শোভন পরিবেশ না থাকে তাহলে প্রত্যাশামতো উৎপাদন কীভাবে হবে?
এ ক্ষেত্রে যদিও কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগ জাতীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, কিন্তু বর্তমান অবস্থায় শ্রমিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের কিছু অংশগ্রহণ এ কাজে জরুরি হয়ে পড়েছে।
যেহেতু কর্মক্ষেত্র উন্নয়নের সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমজীবীর জীবন এবং দেশের অর্থনৈতিক ইমেজ যুক্ত এবং এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত উন্নয়ন ঘটছে না। সে কারণে মানবাধিকারকার্মী, নাগরিক সমাজ ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে শোভন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ বিষয়ে আরও সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনীয় শিল্প-বাণিজ্য কাজে ভবনাদির পরিবেশ বিষয়ে তাদের পরিদর্শনেও নামতে হবে।
সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এবং তাঁদের অনুমতি নিয়েই মালিক-শ্রমিক-সরকার-নাগরিক সমাজের তরফ থেকে যৌথভাবে দেখা দরকার। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের কাজের শর্ত অনুযায়ী ভবনগুলো তৈরি হয়েছে কি না। অগ্নিনিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না। শ্রমিক অনুপাতে মেশিনগুলো যথাস্থানে বসানো আছে কি না। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা আছে কি না।
এ রকম বিষয়গুলো দেখে কোনো ত্রুটি বা সম্ভাব্য বিপদের আলামত পেলে নাগরিক সমাজ কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগকে তা জানাতে পারে।
উন্নয়ন ধারাও পাল্টানো দরকার
শ্রম আইন, ২০০৬-এ উল্লেখ আছে, প্রতি প্রতিষ্ঠানে বিধি দ্বারা নির্ধারিতভাবে অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রতি তলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী অন্তত একটি বিকল্প সিঁড়িসহ বহির্গমনের উপায় ও অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম থাকতে হবে। কিন্তু বনানীর এফআর টাওয়ারের কথা কি আমরা ভুলে গেছি? এই টাওয়ারে ফায়ার ডোর ছিল না, মূল সিঁড়ি ও ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি পাশাপাশি থাকার কারণে দুর্ঘটনার সময়ে অতিরিক্ত মানুষের ভিড় এড়িয়ে লাফ দিতে গিয়ে মৃত্যু ঘটে মানুষের। এখানে ফায়ার অ্যালার্মও ছিল না।
বঙ্গবাজার দুর্ঘটনায় আমরা এ-ও শুনলাম, ফায়ার সার্ভিস আগেই সতর্ক করা সত্ত্বেও সেখানে ব্যবসা চলছিল। তার মানে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার পাশাপাশি এখন নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ ছাড়া শিল্প ও বাণিজ্য দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। সুতরাং এই খাতে আমাদের পরিদর্শনব্যবস্থায় নাগরিক সমাজকে ব্যাপকভাবে যুক্ত করা সময়ের বড় দাবি হয়ে উঠেছে।
ঢাকায় অনেক শিল্প ও বাণ্যিজিক ভবন রয়েছে, যেখানে ফায়ার হাইড্রেন্ডের ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া এমন অনেক ভবন রয়েছে, যার সিঁড়িগুলো সরু করে বানানো। এ কারণে দেখা যায়, দুর্ঘটনার সময় তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে অনেকে পদদলিত হয়ে মারা যাচ্ছেন। নগরের খাল, নালাগুলো ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিত উঁচু ভবন, যার ফলাফল হিসেবে আগুন নেভানোর জন্য পানি পাওয়াও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থা বদলাতে আমাদের কেবল কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের ওপর ভরসা করে থাকলেই হবে না। উন্নয়নধারায় নাগরিক নজরদারিও বাড়াতে হবে।
লেখক: শ্রম অধিকার বিষয়ে একটি বেসরকারি সংগঠনে কাজ করেন
সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে অটোরিকশা বন্ধের প্রস্তাবে চালকদের রাস্তায় নেমে আসা এবং শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবরোধে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
৮ ঘণ্টা আগেআগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কী পারবে না, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কী হবে না—এ নিয়ে গরম এখন রাজনীতির মাঠ। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবে দাবিদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি তো আরও একধাপ বেশি। আওয়ামী লীগকে কেবল নির্বাচনের বাইরে রাখাই নয়, দাবি তাদের দেশের প্রাচী
১৫ ঘণ্টা আগেহুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওনের ছেলে নিষাদ হুমায়ূনের একটা ভাইরাল ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। বেশ মজা পেলাম। সত্যি বললে মজার চেয়েও ছোট্ট বাচ্চার কথায় ভাবনার উদ্রেক হলো। চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত হলো।
১৫ ঘণ্টা আগেপরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সার্কুলার অর্থনীতি বা বৃত্তাকার অর্থনীতি এক নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশে স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কুলার অর্থনীতির বিকল্প নেই।
১৬ ঘণ্টা আগে