বিভুরঞ্জন সরকার
ছয় বছর খুব বেশি সময় নয়, আবার একেবারে কমও নয়। কিছু ঘটনা আছে, যা ভুলতে চাইলেও ভোলা যায় না। বিশেষ করে তা যদি হয় মানুষের সভ্যতার চাকা পেছনে ঘোরানোর মতো কোনো ভয়াবহ ঘটনা। মানুষ আদিম যুগ পেরিয়ে সভ্যতার যুগে প্রবেশ করেছে। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ ক্রমাগত সামনেই হেঁটেছে। মানুষের চোখ সামনে, তাই সম্ভবত পেছনে হাঁটে না। বিজ্ঞান মানুষের স্থবিরতা কেড়ে নিয়ে তাকে গতি দিয়েছে। এই গতির ঘূর্ণি কখনো কখনো মানুষকে যে দিশাহীন করে না, তা নয়। ‘সু’ এবং ‘কু’ দুই মিলেই তো মানুষ। তাই ভালো ও খারাপের দ্বন্দ্বও চিরকালের বিষয়। এই যে বিজ্ঞান মানুষকে আবিষ্কারের নেশা দিয়েছে, এই আবিষ্কার যেমন ভালোর জন্য, আবার তা খারাপ কাজেও ব্যবহার হয় না, তা তো নয়! যে অস্ত্র আত্মরক্ষার জন্য, তা যেমন অন্যের জীবন বিপন্ন করতে পারে, তেমনি তা আত্মঘাতীও করতে পারে।
না, কোনো গুরুগম্ভীর আলোচনা করে পাঠকদের ভারাক্রান্ত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি ছয় বছর আগে আমাদের দেশের একটি ঘটনার কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। অনেকের স্মৃতিতেই হয়তো ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনাটি জ্বলজ্বল করছে। হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় যখন দেশি-বিদেশি অনেকেই রাতের খাবার খাচ্ছিল, গল্পগুজবে মেতে উঠেছিল, ঠিক তখনই ওখানে আক্রমণ চালিয়েছিল একদল সশস্ত্র তরুণ। কী চেয়েছিল ওই তরুণেরা? তারা কি ভেবেছিল, ওই রেস্তোরাঁয় অবস্থানকারীদের হত্যা করলে রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন আসবে, অথবা কায়েম হবে ইসলামি হুকুমত? নিশ্চয়ই এতটা আশা তাদের ছিল না। তারা আসলে মানুষকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল এবং এটাও সবাইকে জানাতে চেয়েছিল যে, দেশে এমন একদল তরুণ আছে, যারা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে ইসলামি বিপ্লব ঘটানোর জন্য।
ওদের মনে আবেগ ছিল, কিন্তু ইতিহাসজ্ঞান ছিল না। ওরা জানতে চেষ্টা করেনি এটা যে, হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে রোমান্টিক ভাবালুতায় কিছু মানুষ খুন করা যায় ;কিন্তু কোনো বিপ্লব ঘটানো যায় না। বিপ্লব কোনো ভাববিলাসিতা নয়। ওটা আসলে মৌলিক পরিবর্তন। সেটা রাতারাতি হয় না, অস্ত্র দিয়ে তো নয়ই। পরিবর্তন ঘটাতে হয় মনোজগতে। মানুষের প্রচলিত বিশ্বাস, ধ্যানধারণার পরিবর্তন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। বিপ্লবের কোনো শর্টকাট পথ নেই। এটা ধৈর্য ধরে করতে হয়। তাই এটা কষ্টের পথ।
অথচ দেশে দেশে, সময়ে সময়ে কিছু মানুষের মধ্যে দ্রুত কিছু ঘটিয়ে ফেলার অস্থিরতা পেয়ে বসে। তারা সামাজিক বিপ্লব বা সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার নামে কিংবা ধর্ম-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে অস্ত্র হাতে নিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যায় মেতে ওঠে। সমাজতন্ত্রের বিপ্লব এখন আর সেভাবে নেই। গত কয়েক দশকে ধর্ম প্রতিষ্ঠার নামে উগ্রবাদীরা হিংসার আশ্রয় নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর কাজ শুরু করেছে। এঁদেরই নাম দেওয়া হয়েছে জঙ্গি।
আমাদের দেশে ধর্মীয় জঙ্গিদের আস্তানা কবে, কীভাবে গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে সেভাবে কোনো অনুসন্ধানী লেখালেখি হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে আফগানিস্তান ফেরত কিছু ইসলামি যোদ্ধা যে এখানে জঙ্গি ধারণা আমদানি করেছে, তা হয়তো বলা যায়। ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’ স্লোগান যখন উঠেছিল, তখন যদি আমাদের টনক নড়ত, তাহলে হয়তো জঙ্গিবাদ সেভাবে শেকড় গেড়ে না-ও বসতে পারত। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা ও সরকারি প্রশাসনযন্ত্রের উদাসীনতা কিংবা ‘দেখি কী হয়’ মনোভাবের সুযোগ নিয়ে ধীরে ধীরে জঙ্গি চিন্তার বিস্তার ঘটেছে। ২০০৪ সালে একযোগে সব জেলায় বোমা হামলার ঘটনাও আমাদের তৎকালীন সরকারের হুঁশ ফেরাতে পারেনি। তার পর একের পর এক আদালতে বোমা হামলা, বিচারক হত্যার পর, বিশেষত আমেরিকার চাপে জঙ্গি দমনের তৎপরতা শুরু হয়েছিল।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর একটি লম্বা বিরতি দিয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ১ জুলাই। হোলি আর্টিজানে সেদিন অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল নিরীহ নিরপরাধ ২২ জন মানুষকে। এর মধ্যে ১৭ জন বিদেশি এবং দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। ওই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে ৫ জন জঙ্গিও নিহত হয়েছিল। ওই ঘটনার আগে দেশে জঙ্গি আছে কি নেই, সে বিতর্ক করে যারা স্বস্তি বোধ করতেন, তাঁরা সেদিন বিব্রত হয়েছিলেন এই ভয়ংকর ঘটনায়।
সে রাতে আকাশে চাঁদ জেগেছিল কি না, দেখিনি। কিন্তু সে রাতে আমার মতো লাখ লাখ মানুষ চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ নিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে জেগেছিলেন। সে রাত ছিল বিভীষিকাময় এক রাত। সেই রাতের বর্বরতা আমাদের এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করায়।
জিহাদের নেশায় শুধু মাদ্রাসাপড়ুয়া অভাবী ঘরের সন্তানরা নয়, ইংরেজি শিক্ষিত বিত্তবান ঘরের তরুণেরাও মানুষ খুন করে অথবা আত্মঘাতী হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সর্বনাশা পথ বেছে নিয়েছে জেনে সেদিন আমরা বিস্ময়াভিভূত হয়েছি। কিন্তু কেন তারা ওই পথ বেছে নিয়েছে, তা কি জানার চেষ্টা করা হয়েছে?
আমাদের দেশে জঙ্গিবাদের যে বিষবৃক্ষ রোপিত হয়েছে, তা শুধু কতিপয় শহরে নয়, প্রত্যন্ত এলাকায়ও যে ছড়িয়ে পড়েছে, ১ জুলাইয়ের ঘটনার পর তা জানতে পেরেছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এরপরও কি আমরা সবাই নিজের ঘর এবং আশপাশে সতর্ক নজর রাখছি?
২০১৬ সালের পর একাধিক জঙ্গি আস্তানায় হানা দিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান এখনো অব্যাহত। সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। জঙ্গিরা ধরা পড়ছে, মারা পড়ছে। কিন্তু এতে খুশি মনে সুখ নিদ্রায় যাওয়ার কিছু নেই। হোলি আর্টিজানের পর সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে জঙ্গিরা দুর্বল হলেও সবাই পথ ছেড়েছে বা অস্ত্র ত্যাগ করেছে মনে করার কোনো কারণ নেই।
আমার মনে হয়, জঙ্গিবাদের শিকড় ওপড়ানো যায়নি। জঙ্গিরা সরকারের কঠোরতার কারণে হয়তো কৌশল বদলেছে। তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাড়া করা বন্ধ করে সম্ভবত নতুন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। এই অস্ত্রের নাম ‘ধর্মীয় অনুভূতি’। অনেককেই ধারাবাহিকভাবে এই অস্ত্রের বলি হতে দেখা যাচ্ছে।
জঙ্গিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হলে শুধু পুলিশি ব্যবস্থা যে যথেষ্ট নয়, এটা সবাইকে বুঝতে হবে। মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী জাগরণ তৈরির জন্য শিক্ষা-সংস্কৃতিতে যে ধরনের পরিবর্তন দরকার, তা করার আগ্রহ বা উদ্যোগ সেভাবে লক্ষণীয় নয়।
জঙ্গিবাদ এক জঘন্য ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপশক্তি। এর বিরুদ্ধে মানুষের মনে সাময়িক ক্রোধ ও প্রতিরোধের স্পৃহা দেখা গেলেও বাস্তবে মনোজগতে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা লালন করে কার্যত জঙ্গিবাদের গোড়ায় পানি সিঞ্চন করছি কিনা, ভেবে দেখার বিষয় সেটাও। আমাদের ভবিষ্যৎ আমরা কীভাবে নিরাপদ করতে চাই, সেটা আমাদের সবার কাছে পরিষ্কার বলে মনে হয় না।
হোলি আর্টিজানের হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। যারা আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি জানাই আন্তরিক সমবেদনা।
ছয় বছর খুব বেশি সময় নয়, আবার একেবারে কমও নয়। কিছু ঘটনা আছে, যা ভুলতে চাইলেও ভোলা যায় না। বিশেষ করে তা যদি হয় মানুষের সভ্যতার চাকা পেছনে ঘোরানোর মতো কোনো ভয়াবহ ঘটনা। মানুষ আদিম যুগ পেরিয়ে সভ্যতার যুগে প্রবেশ করেছে। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ ক্রমাগত সামনেই হেঁটেছে। মানুষের চোখ সামনে, তাই সম্ভবত পেছনে হাঁটে না। বিজ্ঞান মানুষের স্থবিরতা কেড়ে নিয়ে তাকে গতি দিয়েছে। এই গতির ঘূর্ণি কখনো কখনো মানুষকে যে দিশাহীন করে না, তা নয়। ‘সু’ এবং ‘কু’ দুই মিলেই তো মানুষ। তাই ভালো ও খারাপের দ্বন্দ্বও চিরকালের বিষয়। এই যে বিজ্ঞান মানুষকে আবিষ্কারের নেশা দিয়েছে, এই আবিষ্কার যেমন ভালোর জন্য, আবার তা খারাপ কাজেও ব্যবহার হয় না, তা তো নয়! যে অস্ত্র আত্মরক্ষার জন্য, তা যেমন অন্যের জীবন বিপন্ন করতে পারে, তেমনি তা আত্মঘাতীও করতে পারে।
না, কোনো গুরুগম্ভীর আলোচনা করে পাঠকদের ভারাক্রান্ত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি ছয় বছর আগে আমাদের দেশের একটি ঘটনার কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। অনেকের স্মৃতিতেই হয়তো ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনাটি জ্বলজ্বল করছে। হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় যখন দেশি-বিদেশি অনেকেই রাতের খাবার খাচ্ছিল, গল্পগুজবে মেতে উঠেছিল, ঠিক তখনই ওখানে আক্রমণ চালিয়েছিল একদল সশস্ত্র তরুণ। কী চেয়েছিল ওই তরুণেরা? তারা কি ভেবেছিল, ওই রেস্তোরাঁয় অবস্থানকারীদের হত্যা করলে রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন আসবে, অথবা কায়েম হবে ইসলামি হুকুমত? নিশ্চয়ই এতটা আশা তাদের ছিল না। তারা আসলে মানুষকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল এবং এটাও সবাইকে জানাতে চেয়েছিল যে, দেশে এমন একদল তরুণ আছে, যারা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে ইসলামি বিপ্লব ঘটানোর জন্য।
ওদের মনে আবেগ ছিল, কিন্তু ইতিহাসজ্ঞান ছিল না। ওরা জানতে চেষ্টা করেনি এটা যে, হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে রোমান্টিক ভাবালুতায় কিছু মানুষ খুন করা যায় ;কিন্তু কোনো বিপ্লব ঘটানো যায় না। বিপ্লব কোনো ভাববিলাসিতা নয়। ওটা আসলে মৌলিক পরিবর্তন। সেটা রাতারাতি হয় না, অস্ত্র দিয়ে তো নয়ই। পরিবর্তন ঘটাতে হয় মনোজগতে। মানুষের প্রচলিত বিশ্বাস, ধ্যানধারণার পরিবর্তন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। বিপ্লবের কোনো শর্টকাট পথ নেই। এটা ধৈর্য ধরে করতে হয়। তাই এটা কষ্টের পথ।
অথচ দেশে দেশে, সময়ে সময়ে কিছু মানুষের মধ্যে দ্রুত কিছু ঘটিয়ে ফেলার অস্থিরতা পেয়ে বসে। তারা সামাজিক বিপ্লব বা সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার নামে কিংবা ধর্ম-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে অস্ত্র হাতে নিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যায় মেতে ওঠে। সমাজতন্ত্রের বিপ্লব এখন আর সেভাবে নেই। গত কয়েক দশকে ধর্ম প্রতিষ্ঠার নামে উগ্রবাদীরা হিংসার আশ্রয় নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর কাজ শুরু করেছে। এঁদেরই নাম দেওয়া হয়েছে জঙ্গি।
আমাদের দেশে ধর্মীয় জঙ্গিদের আস্তানা কবে, কীভাবে গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে সেভাবে কোনো অনুসন্ধানী লেখালেখি হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে আফগানিস্তান ফেরত কিছু ইসলামি যোদ্ধা যে এখানে জঙ্গি ধারণা আমদানি করেছে, তা হয়তো বলা যায়। ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’ স্লোগান যখন উঠেছিল, তখন যদি আমাদের টনক নড়ত, তাহলে হয়তো জঙ্গিবাদ সেভাবে শেকড় গেড়ে না-ও বসতে পারত। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা ও সরকারি প্রশাসনযন্ত্রের উদাসীনতা কিংবা ‘দেখি কী হয়’ মনোভাবের সুযোগ নিয়ে ধীরে ধীরে জঙ্গি চিন্তার বিস্তার ঘটেছে। ২০০৪ সালে একযোগে সব জেলায় বোমা হামলার ঘটনাও আমাদের তৎকালীন সরকারের হুঁশ ফেরাতে পারেনি। তার পর একের পর এক আদালতে বোমা হামলা, বিচারক হত্যার পর, বিশেষত আমেরিকার চাপে জঙ্গি দমনের তৎপরতা শুরু হয়েছিল।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর একটি লম্বা বিরতি দিয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ১ জুলাই। হোলি আর্টিজানে সেদিন অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল নিরীহ নিরপরাধ ২২ জন মানুষকে। এর মধ্যে ১৭ জন বিদেশি এবং দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। ওই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে ৫ জন জঙ্গিও নিহত হয়েছিল। ওই ঘটনার আগে দেশে জঙ্গি আছে কি নেই, সে বিতর্ক করে যারা স্বস্তি বোধ করতেন, তাঁরা সেদিন বিব্রত হয়েছিলেন এই ভয়ংকর ঘটনায়।
সে রাতে আকাশে চাঁদ জেগেছিল কি না, দেখিনি। কিন্তু সে রাতে আমার মতো লাখ লাখ মানুষ চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ নিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে জেগেছিলেন। সে রাত ছিল বিভীষিকাময় এক রাত। সেই রাতের বর্বরতা আমাদের এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করায়।
জিহাদের নেশায় শুধু মাদ্রাসাপড়ুয়া অভাবী ঘরের সন্তানরা নয়, ইংরেজি শিক্ষিত বিত্তবান ঘরের তরুণেরাও মানুষ খুন করে অথবা আত্মঘাতী হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সর্বনাশা পথ বেছে নিয়েছে জেনে সেদিন আমরা বিস্ময়াভিভূত হয়েছি। কিন্তু কেন তারা ওই পথ বেছে নিয়েছে, তা কি জানার চেষ্টা করা হয়েছে?
আমাদের দেশে জঙ্গিবাদের যে বিষবৃক্ষ রোপিত হয়েছে, তা শুধু কতিপয় শহরে নয়, প্রত্যন্ত এলাকায়ও যে ছড়িয়ে পড়েছে, ১ জুলাইয়ের ঘটনার পর তা জানতে পেরেছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এরপরও কি আমরা সবাই নিজের ঘর এবং আশপাশে সতর্ক নজর রাখছি?
২০১৬ সালের পর একাধিক জঙ্গি আস্তানায় হানা দিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান এখনো অব্যাহত। সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। জঙ্গিরা ধরা পড়ছে, মারা পড়ছে। কিন্তু এতে খুশি মনে সুখ নিদ্রায় যাওয়ার কিছু নেই। হোলি আর্টিজানের পর সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে জঙ্গিরা দুর্বল হলেও সবাই পথ ছেড়েছে বা অস্ত্র ত্যাগ করেছে মনে করার কোনো কারণ নেই।
আমার মনে হয়, জঙ্গিবাদের শিকড় ওপড়ানো যায়নি। জঙ্গিরা সরকারের কঠোরতার কারণে হয়তো কৌশল বদলেছে। তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাড়া করা বন্ধ করে সম্ভবত নতুন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। এই অস্ত্রের নাম ‘ধর্মীয় অনুভূতি’। অনেককেই ধারাবাহিকভাবে এই অস্ত্রের বলি হতে দেখা যাচ্ছে।
জঙ্গিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হলে শুধু পুলিশি ব্যবস্থা যে যথেষ্ট নয়, এটা সবাইকে বুঝতে হবে। মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী জাগরণ তৈরির জন্য শিক্ষা-সংস্কৃতিতে যে ধরনের পরিবর্তন দরকার, তা করার আগ্রহ বা উদ্যোগ সেভাবে লক্ষণীয় নয়।
জঙ্গিবাদ এক জঘন্য ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপশক্তি। এর বিরুদ্ধে মানুষের মনে সাময়িক ক্রোধ ও প্রতিরোধের স্পৃহা দেখা গেলেও বাস্তবে মনোজগতে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা লালন করে কার্যত জঙ্গিবাদের গোড়ায় পানি সিঞ্চন করছি কিনা, ভেবে দেখার বিষয় সেটাও। আমাদের ভবিষ্যৎ আমরা কীভাবে নিরাপদ করতে চাই, সেটা আমাদের সবার কাছে পরিষ্কার বলে মনে হয় না।
হোলি আর্টিজানের হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। যারা আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি জানাই আন্তরিক সমবেদনা।
৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে সংস্কারের আহ্বান শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরেই। সব ক্ষেত্রে। চলচ্চিত্রাঙ্গনেও এই সংস্কারের জোয়ার এসে লেগেছে। জোয়ারের আগে মূলধারার চলচ্চিত্রের লোকজন নানাভাবে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে। অভ্যুত্থান শুরুর পর তাঁদের মনে হয়েছে ভবিষ্যৎ বুঝি অন্ধকারে প্রবেশ করতে যাচ্
২১ ঘণ্টা আগেইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি করেছে। ইরানের ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বিমান হামলা ঝুঁকি বাড়ালেও তা পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের পথে পা বাড়ানোর কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। ইসরায়েলের এখনকার লক্ষ্য তার সীমানা সুরক্ষিত করা। অন্যদিকে ইরানের দরকার বর্তমান শাসন-ক্ষমত
১ দিন আগেবিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। গ্রামের এক হাটে কৃষকের আনাগোনা, শোরগোল। ভ্যানে তুলে বস্তা বোঝাই আলু এনে আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ তাঁরা। বলছিলেন, কৃষিকাজই বাদ দিয়ে দেবেন। তাঁরা যে আলু বিক্রি করেন কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকায়, সেই আলুই ভোক্তার হাতে যায় ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। মাঝের এই মূল্য বৃদ্ধির পথ প
১ দিন আগেলিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েই বাগিয়ে নিতে হয় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পদগুলো। লিখিত পরীক্ষায় যাঁরা বাকিদের টেক্কা দিতে পারেন, পরবর্তী মওকা তাঁদের জন্য সুরক্ষিত। মৌখিক পরীক্ষায় উতরে গেলেই চাকরি নিজের। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ পায় কী করে কিছু পরীক্ষার্থী—বিষয়টি শুধু অ
১ দিন আগে