ড্যানিয়েল বাসন্দেহ
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি করেছে। ইরানের ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বিমান হামলা ঝুঁকি বাড়ালেও তা পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের পথে পা বাড়ানোর কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। ইসরায়েলের এখনকার লক্ষ্য তার সীমানা সুরক্ষিত করা। অন্যদিকে ইরানের দরকার বর্তমান শাসন-ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি, তা হলো ক্ষমতার পুনর্নির্মাণ, একটি পরিবর্তন—যা গত বছর ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়েছিল।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে এই প্রশ্ন গভীর হয়েছে যে ওই এলাকায় পূর্ণ মাত্রার সংঘাত শুরু হতে চলেছে কি না। যদিও ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলা আরেকটি উসকানি বলে মনে হতে পারে, তবে এটি থেকে আঞ্চলিক যুদ্ধের সূত্রপাত হওয়ার আশঙ্কা কম। আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি তা হলো, আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ইসরায়েল-ইরান বৈরিতা একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এই আক্রমণ ও কৌশলগুলো একটি নতুন আঞ্চলিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি নকশা, যা গত বছর হামাসের হামলার কারণে ব্যাহত হয়েছিল।
গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কর্মকাণ্ড এবং সিরিয়ায় ইরানি কর্তৃপক্ষকে তার লক্ষ্যবস্তু করা; সেই সঙ্গে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যাসহ তেহরানে অভিযান—সবই ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করেছে। এর জন্য ইসরায়েলের কৌশলের পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ হলো ইরানের সীমিত কর্মক্ষমতা। ইরানের প্রধান লক্ষ্য তার নিজস্ব সীমানার মধ্যে ক্ষমতা বজায় রাখা।
ইরানের প্রাথমিক লক্ষ্য দেশে তার নিজস্ব শাসনের স্থিতিশীলতা। যুদ্ধে যেকোনো প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা একে বিপদে ফেলতে পারে। অন্যদিকে, ইরানের ভবিষ্যৎ হামাস বা হিজবুল্লাহর ভাগ্যের সঙ্গে যুক্ত না। আর ইরান দেশে ক্ষমতার দখল ধরে রাখার প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে তার অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করে।
আমরা ইরানের দুটি পরিমিত প্রতিক্রিয়া এবং ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ইসরায়েলের পদক্ষেপ দেখেছি। উভয় সরকারই ছিল অত্যন্ত হিসাবি। কোনো দেশই প্ররোচনামূলক বা আতঙ্কিত করে— এমন কিছু করছে না। পরিবর্তে, প্রতিটি স্থিতিশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক অবস্থান তৈরির জন্য সময় দিচ্ছে, যা যুদ্ধের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি কমিয়েছে। আসলে এসব ঘটনায় কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো পরিবেশকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, উভয় পক্ষই সংঘাতের পথ এড়িয়েছে।
হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করলেও তেহরান তাদের জন্য নিজের অস্তিত্ব ঝুঁকিতে ফেলবে না। ইরানের পররাষ্ট্রনীতি অভ্যন্তরীণ সংহতি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে চালিত হয়। এ কারণেই যুদ্ধে জড়ানোর পরিবর্তে অনেক হিসাব কষে ইসরায়েলি হামলায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইরান। পারমাণবিক অস্ত্রকে সবশেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, কিন্তু আসলেই এটি আক্রমণাত্মক যুদ্ধের ভিত্তি রচনার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট দেশের স্থিতিশীলতার একটি হাতিয়ার হিসেবে রয়ে গেছে।
কৌশলগতভাবে ইরান এই আঞ্চলিক মঞ্চে ইরাককে তার জন্য লেবানন বা ইয়েমেনের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান মনে করে। ইরাক তাকে রাজনৈতিক প্রভাব এবং অর্থনৈতিক সুবিধা—উভয়ই দেয়, যা তেহরান হারাতে পারে না। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধনসহ নানা কারণে ইরানের জন্য ইরাক একটি বাফার জোন ও কৌশলগত মিত্র হিসেবে কাজ করে। ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি বিরোধ বাধলে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সরাতে ইরাকের ওপর প্রভাব বজায় রাখতে হবে ইরানের।
যদি কোনো কারণে তারা ইরাককে হারায় তবে তা হবে ইরানের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য বড় ধাক্কা।
আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা এড়ানো ইরানের জন্য আরেকটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রোধ করতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে তার জোট এবং ব্রিকসে সদস্যপদ বজায় রাখা। চীনের সঙ্গে ২৫ বছরের অর্থনৈতিক চুক্তি ইরানকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের সুযোগ করে দিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত সহায়তার বিষয়টি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ইউক্রেন সংঘাতের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যাই হোক, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ এই সম্পর্কগুলোকে বিপদে ফেলতে পারে। চীন ও রাশিয়াকে পশ্চিমারা বিচ্ছিন্ন করতে পারলে ইরান বিশ্বমঞ্চে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এমন একটি ঝুঁকি তেহরান নিতে পারবে না।
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর অধীনে ইসরায়েল তার সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়, বিশেষ করে গাজা, লেবানন ও সিরিয়ার সঙ্গে। তবে সংঘাতকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত করার ব্যাপারে তিনি সতর্ক। ইরানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় মূলত কৌশলগত প্রতিরোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য ইরানকে বোঝানো যে তেহরানকে পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়তে এবং এই অঞ্চলে তার প্রভাব কমাতে হবে।
ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো দীর্ঘস্থায়ী। অস্থিতিশীল দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে নিজের চারপাশে নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করা। নিজের সীমানা সুরক্ষিত করাই অগ্রাধিকার। দেশটির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, গাজায় হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ যেন ইসরায়েলের ভেতরে সরাসরি হামলা করে কোনো ক্ষতি না করতে পারে। ইসরায়েল বোঝে—একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ দেশটির নিজস্ব সম্পদের ওপরই শুধু চাপ সৃষ্টি করবে না, বরং বৈশ্বিক শক্তিগুলোকে এখানে টেনে আনার ঝুঁকি তৈরি করবে। ফলে বৃহত্তর সংঘাতে না জড়িয়ে তাদের লক্ষ্য প্রতিবেশীদের হুমকিগুলোকে মোকাবিলা করা।
ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের, বিশেষ করে নেতানিয়াহুর টিকে থাকার বিষয়টি জাতির নিরাপত্তার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। ইরানের হুমকি মোকাবিলা করে ইসরায়েলকে কতটা স্থিতিশীলতা দিতে পারছেন, এর ওপর নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ইরানের ব্যাপারে আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা নিশ্চিত করে তিনি দেশের ভেতরে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সংহত করেছেন।
ইসরায়েল ও ইরানের পলিটিক্যাল ডাইনামিকসের দিকে লক্ষ করলেই বোঝা যায়, অভ্যন্তরীণ কারণে উভয় দেশই বর্তমান সংকট সমাধানে কূটনীতির চেয়ে সংঘাতের ওপর জোর দিয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্যই হলো অভ্যন্তরীণ সমর্থন ও কর্তৃত্ব ধরে রাখতে এই দ্বন্দ্বকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। কিন্তু ভাবলেই যে সেটা হবে, তা বলা কঠিন—দুই দেশের মানুষ তাদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।
আর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্য পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হতে পারে তখনই, যদি কোনো দেশ দেখে এর মাধ্যমে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য তার দিকে পুরোপুরি হেলে যাবে, আর তাতে যদি বৈশ্বিক শক্তিগুলো মদদ জোগায়।
ইসরায়েল এখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা মিত্রদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, যাতে তারা ইরানের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে ইরানকে আরও বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ দেয়। নেতানিয়াহু আরও বিপুল সামরিক সরঞ্জাম ও গোলাবারুদের জন্য আমেরিকার ওপর চাপ দিচ্ছেন। এর পাল্টা জবাব হিসেবে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে জোরদার করতে পারে। ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গভীরতা এবং অর্থনৈতিক চাপ কমাতে এটা সাহায্য করতে পারে তাদের।
ড্যানিয়েল বাসন্দেহ, ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষক
(মিডল ইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত)
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি করেছে। ইরানের ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বিমান হামলা ঝুঁকি বাড়ালেও তা পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের পথে পা বাড়ানোর কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। ইসরায়েলের এখনকার লক্ষ্য তার সীমানা সুরক্ষিত করা। অন্যদিকে ইরানের দরকার বর্তমান শাসন-ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি, তা হলো ক্ষমতার পুনর্নির্মাণ, একটি পরিবর্তন—যা গত বছর ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়েছিল।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে এই প্রশ্ন গভীর হয়েছে যে ওই এলাকায় পূর্ণ মাত্রার সংঘাত শুরু হতে চলেছে কি না। যদিও ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলা আরেকটি উসকানি বলে মনে হতে পারে, তবে এটি থেকে আঞ্চলিক যুদ্ধের সূত্রপাত হওয়ার আশঙ্কা কম। আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি তা হলো, আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ইসরায়েল-ইরান বৈরিতা একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এই আক্রমণ ও কৌশলগুলো একটি নতুন আঞ্চলিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি নকশা, যা গত বছর হামাসের হামলার কারণে ব্যাহত হয়েছিল।
গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কর্মকাণ্ড এবং সিরিয়ায় ইরানি কর্তৃপক্ষকে তার লক্ষ্যবস্তু করা; সেই সঙ্গে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যাসহ তেহরানে অভিযান—সবই ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করেছে। এর জন্য ইসরায়েলের কৌশলের পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ হলো ইরানের সীমিত কর্মক্ষমতা। ইরানের প্রধান লক্ষ্য তার নিজস্ব সীমানার মধ্যে ক্ষমতা বজায় রাখা।
ইরানের প্রাথমিক লক্ষ্য দেশে তার নিজস্ব শাসনের স্থিতিশীলতা। যুদ্ধে যেকোনো প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা একে বিপদে ফেলতে পারে। অন্যদিকে, ইরানের ভবিষ্যৎ হামাস বা হিজবুল্লাহর ভাগ্যের সঙ্গে যুক্ত না। আর ইরান দেশে ক্ষমতার দখল ধরে রাখার প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে তার অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করে।
আমরা ইরানের দুটি পরিমিত প্রতিক্রিয়া এবং ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ইসরায়েলের পদক্ষেপ দেখেছি। উভয় সরকারই ছিল অত্যন্ত হিসাবি। কোনো দেশই প্ররোচনামূলক বা আতঙ্কিত করে— এমন কিছু করছে না। পরিবর্তে, প্রতিটি স্থিতিশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক অবস্থান তৈরির জন্য সময় দিচ্ছে, যা যুদ্ধের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি কমিয়েছে। আসলে এসব ঘটনায় কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো পরিবেশকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, উভয় পক্ষই সংঘাতের পথ এড়িয়েছে।
হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করলেও তেহরান তাদের জন্য নিজের অস্তিত্ব ঝুঁকিতে ফেলবে না। ইরানের পররাষ্ট্রনীতি অভ্যন্তরীণ সংহতি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে চালিত হয়। এ কারণেই যুদ্ধে জড়ানোর পরিবর্তে অনেক হিসাব কষে ইসরায়েলি হামলায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইরান। পারমাণবিক অস্ত্রকে সবশেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, কিন্তু আসলেই এটি আক্রমণাত্মক যুদ্ধের ভিত্তি রচনার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট দেশের স্থিতিশীলতার একটি হাতিয়ার হিসেবে রয়ে গেছে।
কৌশলগতভাবে ইরান এই আঞ্চলিক মঞ্চে ইরাককে তার জন্য লেবানন বা ইয়েমেনের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান মনে করে। ইরাক তাকে রাজনৈতিক প্রভাব এবং অর্থনৈতিক সুবিধা—উভয়ই দেয়, যা তেহরান হারাতে পারে না। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধনসহ নানা কারণে ইরানের জন্য ইরাক একটি বাফার জোন ও কৌশলগত মিত্র হিসেবে কাজ করে। ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি বিরোধ বাধলে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সরাতে ইরাকের ওপর প্রভাব বজায় রাখতে হবে ইরানের।
যদি কোনো কারণে তারা ইরাককে হারায় তবে তা হবে ইরানের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য বড় ধাক্কা।
আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা এড়ানো ইরানের জন্য আরেকটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রোধ করতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে তার জোট এবং ব্রিকসে সদস্যপদ বজায় রাখা। চীনের সঙ্গে ২৫ বছরের অর্থনৈতিক চুক্তি ইরানকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের সুযোগ করে দিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত সহায়তার বিষয়টি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ইউক্রেন সংঘাতের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যাই হোক, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ এই সম্পর্কগুলোকে বিপদে ফেলতে পারে। চীন ও রাশিয়াকে পশ্চিমারা বিচ্ছিন্ন করতে পারলে ইরান বিশ্বমঞ্চে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এমন একটি ঝুঁকি তেহরান নিতে পারবে না।
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর অধীনে ইসরায়েল তার সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়, বিশেষ করে গাজা, লেবানন ও সিরিয়ার সঙ্গে। তবে সংঘাতকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত করার ব্যাপারে তিনি সতর্ক। ইরানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় মূলত কৌশলগত প্রতিরোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য ইরানকে বোঝানো যে তেহরানকে পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়তে এবং এই অঞ্চলে তার প্রভাব কমাতে হবে।
ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো দীর্ঘস্থায়ী। অস্থিতিশীল দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে নিজের চারপাশে নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করা। নিজের সীমানা সুরক্ষিত করাই অগ্রাধিকার। দেশটির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, গাজায় হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ যেন ইসরায়েলের ভেতরে সরাসরি হামলা করে কোনো ক্ষতি না করতে পারে। ইসরায়েল বোঝে—একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ দেশটির নিজস্ব সম্পদের ওপরই শুধু চাপ সৃষ্টি করবে না, বরং বৈশ্বিক শক্তিগুলোকে এখানে টেনে আনার ঝুঁকি তৈরি করবে। ফলে বৃহত্তর সংঘাতে না জড়িয়ে তাদের লক্ষ্য প্রতিবেশীদের হুমকিগুলোকে মোকাবিলা করা।
ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের, বিশেষ করে নেতানিয়াহুর টিকে থাকার বিষয়টি জাতির নিরাপত্তার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। ইরানের হুমকি মোকাবিলা করে ইসরায়েলকে কতটা স্থিতিশীলতা দিতে পারছেন, এর ওপর নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ইরানের ব্যাপারে আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা নিশ্চিত করে তিনি দেশের ভেতরে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সংহত করেছেন।
ইসরায়েল ও ইরানের পলিটিক্যাল ডাইনামিকসের দিকে লক্ষ করলেই বোঝা যায়, অভ্যন্তরীণ কারণে উভয় দেশই বর্তমান সংকট সমাধানে কূটনীতির চেয়ে সংঘাতের ওপর জোর দিয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্যই হলো অভ্যন্তরীণ সমর্থন ও কর্তৃত্ব ধরে রাখতে এই দ্বন্দ্বকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। কিন্তু ভাবলেই যে সেটা হবে, তা বলা কঠিন—দুই দেশের মানুষ তাদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।
আর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্য পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হতে পারে তখনই, যদি কোনো দেশ দেখে এর মাধ্যমে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য তার দিকে পুরোপুরি হেলে যাবে, আর তাতে যদি বৈশ্বিক শক্তিগুলো মদদ জোগায়।
ইসরায়েল এখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা মিত্রদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, যাতে তারা ইরানের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে ইরানকে আরও বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ দেয়। নেতানিয়াহু আরও বিপুল সামরিক সরঞ্জাম ও গোলাবারুদের জন্য আমেরিকার ওপর চাপ দিচ্ছেন। এর পাল্টা জবাব হিসেবে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে জোরদার করতে পারে। ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গভীরতা এবং অর্থনৈতিক চাপ কমাতে এটা সাহায্য করতে পারে তাদের।
ড্যানিয়েল বাসন্দেহ, ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষক
(মিডল ইস্ট মনিটরে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত)
আমার যখন জন্ম হয়, সেই বছরই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেছেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ক্ষুব্ধ স্বদেশ তখন আন্দোলনে ফেটে পড়েছিল। তৃণমূল থেকে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল।
১৭ ঘণ্টা আগে১৬ নভেম্বর কতগুলো ভারতীয় মিডিয়া একযোগে খবর ছেপেছে, ‘ইন্ডিয়ান আমেরিকানস টু আর্জ ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর স্যাংশন অ্যাগেইনস্ট বাংলাদেশ’। অর্থাৎ ভারতীয় আমেরিকানরা ট্রাম্প প্রশাসনকে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাবেন।
১৭ ঘণ্টা আগেসরকার পরিবর্তনের ঘটনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কিছু প্রতারক চক্র দুস্থ, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগেযেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
২ দিন আগে