খায়রুল আলম
বাঙালির জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন ৭ মার্চ। কারণ সেদিনের রেসকোর্স ময়দান থেকেই সূচিত হয়েছিল বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির নবযাত্রা। আর সেই যাত্রার কান্ডারি ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ১৮ মিনিটের ভাষণে বাঙালিকে শোষণের জাঁতাকল ভেঙে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ডাক দিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার। উদাত্ত আহ্বান জানালেন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকার। রেসকোর্স ময়দানে জনতার অগ্নিগর্ভের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণ শেষ করলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে। সেদিনের সেই মঞ্চ থেকে ওঠা এই রণধ্বনি অব্যাহত ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে। এই স্লোগান বুকে ধরেই মুক্তিসংগ্রামে লড়ে গেছে বাঙালি।
‘জয় বাংলা’ নামের এই সাধারণ একটি স্লোগান বুকে ধরে স্বাধীনতাকামী বাঙালি কাঁপিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের ভিত্তি, সত্যি করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জয় বাংলা’ শব্দ দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাঙালির ইতিহাস তো বটেই, বাংলা ও বাঙালির রাজনীতি ও সংস্কৃতির একটি অন্যতম স্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। বঙ্গবন্ধু ছাড়া ‘জয় বাংলা’ যেমন অর্থহীন, তেমনি ‘জয় বাংলা’ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শব্দটি পূর্ণতা পায় না। অন্ততপক্ষে স্লোগানের ক্ষেত্রে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ধারণ করেই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সবাই।
‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ পঙ্ক্তি একটি কবিতার মতো । আর এই কবিতার সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে ঘিরেই। এ ছাড়া ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বঙ্গবন্ধুরই আবিষ্কার। কবি নজরুল ইসলামের একটি কবিতা থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন।
কোনো জাতির জীবনে যখন স্বাধিকার ও মুক্তির প্রসব বেদনা শুরু হয়, তখন সেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একজন নেতার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময়কাল থেকেই ধীরে ধীরে সেই নেতৃত্বের জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমান (পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা) নিজের অবস্থানটি পোক্ত করছিলেন।
জীবনের ৪০ শতাংশ সময় (আবুল বারকাত, বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ, পৃষ্ঠা ৭৩) জেলখানায় কাটালেও, যে সময়টুকু বাইরে ছিলেন, তার সবটুকুই বলা চলে তিনি ব্যয় করেছেন বাঙালি জাতির স্বাধিকার এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য (দেখুন ৭ মার্চের ভাষণ)। ড. বারকাতের হিসাবে, বঙ্গবন্ধু সারা জীবনে মাত্র ১২ শতাংশ সময় (গড়ে দৈনিক ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা) ঘুমিয়েছেন।
তবে এটা ঠিক, একটি জাতিকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু একজন নেতাই যথেষ্ট নন, যদি সেই নেতা তাঁর জাতির সামনে লড়াইয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে না পারেন এবং তাঁর রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনায় অস্পষ্টতা থাকে। এ কারণে যুগে যুগে সারা পৃথিবীর স্বাধিকার আন্দোলনে কোনো একটি বা কয়েকটি নির্দিষ্ট স্লোগান সেই লড়াই-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় থেকেই এই বাংলার পুরো জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করা তথা তাদের স্বাধিকারের পথে নিয়ে যেতে একটি অভিন্ন স্লোগানের খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর সেটিই হলো জাতির পিতার দেওয়া ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
বাঙালি জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। তবে এই স্বাধীনতা কিন্তু এক দিনে অর্জিত হয়নি। ’৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের এই দীর্ঘ বন্ধুর পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে লাখো জনতার উদ্দেশে বজ্রকণ্ঠে ১৮ মিনিটব্যাপী যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন, তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। যদিও বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের নির্দিষ্ট সময় ছিল বেলা ২টা, কিন্তু বেলা ১১টা বাজতেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান। তবে জনতার ভিড়ে ৩২ নম্বর থেকে সভামঞ্চে আসতে বঙ্গবন্ধুর ঘণ্টাখানেক দেরি হয়।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পরতে পরতে মিশে আছে জাতির পিতার অসামান্য অবদান। তাঁর অনন্য বাগ্মিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ভাস্বর ওই ভাষণে তিনি তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাঙালির আবেগ, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা এক সূত্রে গেঁথে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক।
ঐতিহাসিক ভাষণের সেই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। সংগত কারণে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কারণ ৭ মার্চের ভাষণের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। কোনো ধরনের আপসের পথে না গিয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৩০ লাখ মানুষ জীবন উৎসর্গ করে, যা বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই ভাষণের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নেতৃত্বের সর্বোচ্চ দেশাত্মবোধ, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির এবং লক্ষ্য অর্জনে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তি। এই ভাষণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সময়ের পরিসীমায় গণ্ডিবদ্ধ না থেকে তা হয় কালোত্তীর্ণ ও প্রেরণাদায়ী। এই ভাষণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর কাব্যিক গুণ-শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাস, যা হয়ে ওঠে গীতিময় ও চতুর্দিকে অনুরণিত। যেকোনো শ্রেষ্ঠ ভাষণই উত্থিত হয় বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে, ফলে তা তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও হৃদয় উৎসারিত বলা যায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও ছিল তাই, যা লিখিত ছিল না। এই ভাষণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটি আকারে ছিল নাতিদীর্ঘ।
১৮৬৩ সালে আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের শব্দসংখ্যা ২৭২, সময় ৩ মিনিটের কম। ভাষণটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও লিখিত, যা ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে আফ্রো-আমেরিকান মানবাধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি বিখ্যাত ভাষণের সময়কাল ছিল ১৭ মিনিট, শব্দসংখ্যা ১ হাজার ৬৬৭। ভাষণটির প্রথমাংশ লিখিত ও পঠিত, যার শ্রোতাসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ। পক্ষান্তরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল ১৮ মিনিট ব্যাপী, শব্দসংখ্যা ১ হাজার ১৩৫। যেটি ছিল তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও অলিখিত। এই ভাষণের প্রতিটি শব্দ নির্বাচন করা হয়েছিল অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনের নিরিখে। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল তাঁর হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এই ভাষণ ছিল অত্যন্ত কৌশলী। পৃথিবীর বহু সমাজবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ করেছেন। এই ভাষণ বিশ্বসম্প্রদায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল। লন্ডনের অবজারভার পত্রিকার তখনকার বিখ্যাত কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিরিল ডান বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেন, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন নেতা এলেন, যিনি চারিত্রিক, নৃতাত্ত্বিক, ভাষা, পোশাক-আশাক, গায়ের রং ও আচার-আচরণে একজন নিখুঁত বাঙালি। তাঁর বজ্রকণ্ঠের ঘোষণা দেশের মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনে এবং মান্য করে।
১৯৭৪ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শন ভ্যাকব্রাইড বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, কেবল ভৌগোলিক স্বাধীনতাই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন মানুষের মুক্তি, বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। সাম্য ও সম্পদের বৈষম্য দূর করাই স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। আর এই সত্যের প্রকাশ ঘটে ৭ মার্চের ভাষণে।
ভারতীয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক। তাঁর সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সমস্ত পৃথিবী স্বীকার করবে।’
পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ একটি অনন্য দলিল। এতে একদিকে আছে মুক্তির প্রেরণা, অন্যদিকে আছে স্বাধীনতার পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা।’ আর কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছেন, ‘৭ মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধু ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।’
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যত দিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, তত দিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিকামী মানুষের মনে চিরজাগরুক থাকবে। এই ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস।’
গুরুত্ব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি (আইএসি)। ২০১৭ সালের ২৮ থেকে ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চার দিনের বৈঠকে ৭ মার্চের ভাষণকে এই স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইএসি।
ইউনেসকো তার ওয়েবসাইটে আরও লিখেছে, উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়া জাতি-রাষ্ট্রগুলো অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে ব্যর্থ হয়ে কীভাবে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জনগণকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, তার যথার্থ প্রামাণ্য দলিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।
৭ মার্চের ঐতিহাসিক এই ভাষণ বিশ্ববাসীর জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। এই একটি মাত্র ভাষণ পাল্টে দিয়েছে একটি দেশের মানচিত্র, জন্ম দিয়েছে একটি জাতীয় পতাকা আর তৈরি করেছে নতুন এক জাতীয় সংগীত। ৭ মার্চের এই ভাষণ শুধু বাঙালি জাতির জন্যই নয়, বরং বিশ্বমানবতার জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।
বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে এই ভাষণ প্রেরণার উৎস। যত দিন যাবে, নতুন প্রজন্মের কাছে ৭ মার্চের ভাষণ অনুপ্রেরণার সারথি হিসেবে কাজ করবে। তরুণ প্রজন্ম এই ভাষণের প্রেরণায় জাতির জনকের সোনার বাংলাকে বিশ্বের বুকে একদিন উজ্জ্বল-ভাস্বর হিসেবে তুলে ধরবে।
আমরা যারা স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছি, তারা ভাষণটি সরাসরি দেখতে বা শুনতে পারিনি। কিন্তু আজও যখন এই ভাষণ শুনি, আমরা উজ্জীবিত হই। নব-উদ্যমে এগিয়ে চলার প্রেরণা পাই। ভাষণটি বর্তমান প্রজন্মকে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিবাদী হতে হয় সেই শিক্ষা দেয়। কীভাবে মাথা নত না করে অবিচল থাকতে হয় আর কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়, সে বিষয়গুলোও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস। সম্ভবত পৃথিবীতে অন্য কোনো ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনকের ওই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিল এই ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটি জনগোষ্ঠীর মুক্তির কালজয়ী এক মহাকাব্য। এই ভাষণে তাঁর তেজস্বিতা ও সম্মোহনী ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। এই ভাষণ পাল্টে দিয়েছে একটি দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। এই ভাষণ মানুষকে স্বাধীনতাকামী করে তোলে। শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্বমানবতার জন্যও অবিস্মরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল এই ভাষণ।
লেখক: যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
বাঙালির জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন ৭ মার্চ। কারণ সেদিনের রেসকোর্স ময়দান থেকেই সূচিত হয়েছিল বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির নবযাত্রা। আর সেই যাত্রার কান্ডারি ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ১৮ মিনিটের ভাষণে বাঙালিকে শোষণের জাঁতাকল ভেঙে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ডাক দিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার। উদাত্ত আহ্বান জানালেন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকার। রেসকোর্স ময়দানে জনতার অগ্নিগর্ভের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণ শেষ করলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে। সেদিনের সেই মঞ্চ থেকে ওঠা এই রণধ্বনি অব্যাহত ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে। এই স্লোগান বুকে ধরেই মুক্তিসংগ্রামে লড়ে গেছে বাঙালি।
‘জয় বাংলা’ নামের এই সাধারণ একটি স্লোগান বুকে ধরে স্বাধীনতাকামী বাঙালি কাঁপিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের ভিত্তি, সত্যি করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জয় বাংলা’ শব্দ দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাঙালির ইতিহাস তো বটেই, বাংলা ও বাঙালির রাজনীতি ও সংস্কৃতির একটি অন্যতম স্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। বঙ্গবন্ধু ছাড়া ‘জয় বাংলা’ যেমন অর্থহীন, তেমনি ‘জয় বাংলা’ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শব্দটি পূর্ণতা পায় না। অন্ততপক্ষে স্লোগানের ক্ষেত্রে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ধারণ করেই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সবাই।
‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ পঙ্ক্তি একটি কবিতার মতো । আর এই কবিতার সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে ঘিরেই। এ ছাড়া ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বঙ্গবন্ধুরই আবিষ্কার। কবি নজরুল ইসলামের একটি কবিতা থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন।
কোনো জাতির জীবনে যখন স্বাধিকার ও মুক্তির প্রসব বেদনা শুরু হয়, তখন সেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একজন নেতার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময়কাল থেকেই ধীরে ধীরে সেই নেতৃত্বের জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমান (পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা) নিজের অবস্থানটি পোক্ত করছিলেন।
জীবনের ৪০ শতাংশ সময় (আবুল বারকাত, বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ, পৃষ্ঠা ৭৩) জেলখানায় কাটালেও, যে সময়টুকু বাইরে ছিলেন, তার সবটুকুই বলা চলে তিনি ব্যয় করেছেন বাঙালি জাতির স্বাধিকার এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য (দেখুন ৭ মার্চের ভাষণ)। ড. বারকাতের হিসাবে, বঙ্গবন্ধু সারা জীবনে মাত্র ১২ শতাংশ সময় (গড়ে দৈনিক ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা) ঘুমিয়েছেন।
তবে এটা ঠিক, একটি জাতিকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু একজন নেতাই যথেষ্ট নন, যদি সেই নেতা তাঁর জাতির সামনে লড়াইয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে না পারেন এবং তাঁর রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনায় অস্পষ্টতা থাকে। এ কারণে যুগে যুগে সারা পৃথিবীর স্বাধিকার আন্দোলনে কোনো একটি বা কয়েকটি নির্দিষ্ট স্লোগান সেই লড়াই-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় থেকেই এই বাংলার পুরো জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করা তথা তাদের স্বাধিকারের পথে নিয়ে যেতে একটি অভিন্ন স্লোগানের খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর সেটিই হলো জাতির পিতার দেওয়া ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
বাঙালি জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। তবে এই স্বাধীনতা কিন্তু এক দিনে অর্জিত হয়নি। ’৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের এই দীর্ঘ বন্ধুর পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে লাখো জনতার উদ্দেশে বজ্রকণ্ঠে ১৮ মিনিটব্যাপী যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন, তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। যদিও বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের নির্দিষ্ট সময় ছিল বেলা ২টা, কিন্তু বেলা ১১টা বাজতেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান। তবে জনতার ভিড়ে ৩২ নম্বর থেকে সভামঞ্চে আসতে বঙ্গবন্ধুর ঘণ্টাখানেক দেরি হয়।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পরতে পরতে মিশে আছে জাতির পিতার অসামান্য অবদান। তাঁর অনন্য বাগ্মিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ভাস্বর ওই ভাষণে তিনি তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাঙালির আবেগ, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা এক সূত্রে গেঁথে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক।
ঐতিহাসিক ভাষণের সেই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। সংগত কারণে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কারণ ৭ মার্চের ভাষণের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। কোনো ধরনের আপসের পথে না গিয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৩০ লাখ মানুষ জীবন উৎসর্গ করে, যা বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই ভাষণের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নেতৃত্বের সর্বোচ্চ দেশাত্মবোধ, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির এবং লক্ষ্য অর্জনে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তি। এই ভাষণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সময়ের পরিসীমায় গণ্ডিবদ্ধ না থেকে তা হয় কালোত্তীর্ণ ও প্রেরণাদায়ী। এই ভাষণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর কাব্যিক গুণ-শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাস, যা হয়ে ওঠে গীতিময় ও চতুর্দিকে অনুরণিত। যেকোনো শ্রেষ্ঠ ভাষণই উত্থিত হয় বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে, ফলে তা তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও হৃদয় উৎসারিত বলা যায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও ছিল তাই, যা লিখিত ছিল না। এই ভাষণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটি আকারে ছিল নাতিদীর্ঘ।
১৮৬৩ সালে আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের শব্দসংখ্যা ২৭২, সময় ৩ মিনিটের কম। ভাষণটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও লিখিত, যা ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে আফ্রো-আমেরিকান মানবাধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি বিখ্যাত ভাষণের সময়কাল ছিল ১৭ মিনিট, শব্দসংখ্যা ১ হাজার ৬৬৭। ভাষণটির প্রথমাংশ লিখিত ও পঠিত, যার শ্রোতাসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ। পক্ষান্তরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল ১৮ মিনিট ব্যাপী, শব্দসংখ্যা ১ হাজার ১৩৫। যেটি ছিল তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও অলিখিত। এই ভাষণের প্রতিটি শব্দ নির্বাচন করা হয়েছিল অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনের নিরিখে। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল তাঁর হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এই ভাষণ ছিল অত্যন্ত কৌশলী। পৃথিবীর বহু সমাজবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ করেছেন। এই ভাষণ বিশ্বসম্প্রদায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল। লন্ডনের অবজারভার পত্রিকার তখনকার বিখ্যাত কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিরিল ডান বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেন, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন নেতা এলেন, যিনি চারিত্রিক, নৃতাত্ত্বিক, ভাষা, পোশাক-আশাক, গায়ের রং ও আচার-আচরণে একজন নিখুঁত বাঙালি। তাঁর বজ্রকণ্ঠের ঘোষণা দেশের মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনে এবং মান্য করে।
১৯৭৪ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শন ভ্যাকব্রাইড বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, কেবল ভৌগোলিক স্বাধীনতাই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন মানুষের মুক্তি, বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। সাম্য ও সম্পদের বৈষম্য দূর করাই স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। আর এই সত্যের প্রকাশ ঘটে ৭ মার্চের ভাষণে।
ভারতীয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক। তাঁর সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সমস্ত পৃথিবী স্বীকার করবে।’
পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ একটি অনন্য দলিল। এতে একদিকে আছে মুক্তির প্রেরণা, অন্যদিকে আছে স্বাধীনতার পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা।’ আর কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছেন, ‘৭ মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধু ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।’
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যত দিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, তত দিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিকামী মানুষের মনে চিরজাগরুক থাকবে। এই ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস।’
গুরুত্ব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি (আইএসি)। ২০১৭ সালের ২৮ থেকে ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চার দিনের বৈঠকে ৭ মার্চের ভাষণকে এই স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইএসি।
ইউনেসকো তার ওয়েবসাইটে আরও লিখেছে, উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়া জাতি-রাষ্ট্রগুলো অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে ব্যর্থ হয়ে কীভাবে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জনগণকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, তার যথার্থ প্রামাণ্য দলিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।
৭ মার্চের ঐতিহাসিক এই ভাষণ বিশ্ববাসীর জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। এই একটি মাত্র ভাষণ পাল্টে দিয়েছে একটি দেশের মানচিত্র, জন্ম দিয়েছে একটি জাতীয় পতাকা আর তৈরি করেছে নতুন এক জাতীয় সংগীত। ৭ মার্চের এই ভাষণ শুধু বাঙালি জাতির জন্যই নয়, বরং বিশ্বমানবতার জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।
বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে এই ভাষণ প্রেরণার উৎস। যত দিন যাবে, নতুন প্রজন্মের কাছে ৭ মার্চের ভাষণ অনুপ্রেরণার সারথি হিসেবে কাজ করবে। তরুণ প্রজন্ম এই ভাষণের প্রেরণায় জাতির জনকের সোনার বাংলাকে বিশ্বের বুকে একদিন উজ্জ্বল-ভাস্বর হিসেবে তুলে ধরবে।
আমরা যারা স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছি, তারা ভাষণটি সরাসরি দেখতে বা শুনতে পারিনি। কিন্তু আজও যখন এই ভাষণ শুনি, আমরা উজ্জীবিত হই। নব-উদ্যমে এগিয়ে চলার প্রেরণা পাই। ভাষণটি বর্তমান প্রজন্মকে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিবাদী হতে হয় সেই শিক্ষা দেয়। কীভাবে মাথা নত না করে অবিচল থাকতে হয় আর কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়, সে বিষয়গুলোও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস। সম্ভবত পৃথিবীতে অন্য কোনো ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনকের ওই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিল এই ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটি জনগোষ্ঠীর মুক্তির কালজয়ী এক মহাকাব্য। এই ভাষণে তাঁর তেজস্বিতা ও সম্মোহনী ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। এই ভাষণ পাল্টে দিয়েছে একটি দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। এই ভাষণ মানুষকে স্বাধীনতাকামী করে তোলে। শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্বমানবতার জন্যও অবিস্মরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল এই ভাষণ।
লেখক: যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে নীতিনির্ধারণী একটি বিষয় অগ্রাধিকার বিবেচনার জন্য অপেক্ষমাণ আছে, আর তা হলো, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন করা, নাকি যথাশিগগির নির্বাচন আয়োজন করা? অনেক ধরনের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য জাতীয় সংসদের বিকল্প কিছু আছে বলে মনে হয় না।
১৯ ঘণ্টা আগেকিছু কিছু বিতর্ক তৈরি করা হয় সমসাময়িক বিষয় থেকে দৃষ্টি দূরে সরিয়ে রাখার জন্য। পুরো পাকিস্তান আমলেই রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে বিতর্ক জারি রাখা হয়েছিল। আমলাতন্ত্র আর সামরিক আমলাতন্ত্র মিলে পাকিস্তান নামক দেশটায় যে স্বৈরশাসন কায়েম করে রেখেছিল, সেদিকে যেন সচেতন মানুষের চোখ না যায়, সে অভিসন্ধি থেকেই রবীন্দ্রনাথ
১৯ ঘণ্টা আগেএকটি কলা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। একটি সাধারণ কলা, যা নিলামে বিক্রি হলো ৭৪ কোটি টাকায়। এটি শিল্প, না কৌতুক, না সামাজিক শ্লেষ—নাকি তিনটির মিশেল? ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটালানের এই ‘কমেডিয়ান’ আমাদের শিল্পের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আর বাজারজাত সৃজনশীলতার প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।
১৯ ঘণ্টা আগে‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র অন্যতম নেতা সাইফুল হক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা ছিলেন। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। এখন পর্যন্ত ২০টি বই লিখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে...
২ দিন আগে