মো. গোলাম রহমান
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ৩ মে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত দীর্ঘকাল থেকে, কিন্তু ১৯৯১ সালে প্রবর্তিত হয় এই দিনটি। ১৯৪৮ সালে গৃহীত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আর্টিকেল ১৯-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আফ্রিকার সাংবাদিকেরা উইন্ডহোয়েক ডিক্লারেশন নামে এই দিবসের ঘোষণা দেন। জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশে এই দিবসকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস হিসেবে অভিহিত করে।
এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্লোগান হচ্ছে, ‘ডিজিটাল অবরোধে সাংবাদিকতা’, কেউ কেউ বলছেন ‘ডিজিটাল শৃঙ্খলে গণমাধ্যম’। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই) রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ১০-দফা আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, নিজ দেশে, তথা তাবৎ বিশ্বে সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যেন নিজ দেশে নজর দিতে পারে, যাতে সঠিকভাবে গণমাধ্যমের দায়িত্ব পালন সম্ভব হয়। দিনটি সাধারণভাবে দেশে দেশে সরকার ও প্রশাসনকে স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পেশাদারি ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতাকে স্বাধীনভাবে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের তাগিদ দেওয়া হয় এই বিশেষ দিনটিতে। এই দিনে তাই প্রতিটি দেশে সাংবাদিকতা পেশায় নিবেদিত সংগ্রামীদের স্মরণ করা হয়। সাংবাদিকতা পেশায় হত্যা, নানা ধরনের অবরোধ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য হুমকি, রাজনৈতিক কিংবা পেশি শক্তির চাপ, আইনের অপব্যবহার করে পেশাজীবীদের ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ, পেশার ওপর অগণতান্ত্রিক আচরণ ইত্যাদি মুখ্য আলোচ্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
আমাদের দেশের সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাক্স্বাধীনতা ও মানুষের গণতন্ত্র চর্চার অন্যতম উপযোগ হিসেবে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু এই চেতনার পুরো বাস্তবায়ন আমরা দেখি না। রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রতিবেদনে আমাদের দেশের সাংবাদিকতা পেশার ওপর যে পর্যবেক্ষণ দেখি, তাতে ১৮০টি দেশের মধ্যে তা ১৬২তম স্থানে। তারা তাদের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করেছে—
‘...the government now has a tailor-made judicial weapon for silencing troublesome journalists–the 2018 digital security law, under which ‘negative propaganda’ is punishable by up to 14 years in prison...Journalists have been subjected to violence by party activists, they have been arrested arbitrarily, and news sites have been blocked.’ (RSF website, 29 April 2022)
এদিকে সারা বিশ্বে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হুমকির মুখে বলে উল্লেখ করে বলেছে যে ৭৩টি দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরোপুরি ‘ব্লকড’ এবং ৫৯টি দেশে আংশিক ‘ব্লকড’। সংবাদপত্র ছাপানো ও বিলির ক্ষেত্রে অনেক দেশেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক কারণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় বলে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।
আমাদের দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিচার সমাধা হয়নি এবং এগুলোর সঙ্গে জড়িত ৩১ জন এখন কারাগারে রয়েছেন বলে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রয়েছেন নিখোঁজ। বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৮৮বার পেছানো হয়েছে। সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়েছিল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা এখনো করতে পারেনি।
নতুন প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করে সাংবাদিকেরা উপকৃত হবেন—এটা প্রত্যাশা করা অনিবার্য। শুধু সাংবাদিকেরাই নন, জনগণ ইন্টারনেটে সংযুক্ত থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে। এটাই তো স্বাভাবিক। এর বাইরে কি কিছু চিন্তা করার সুযোগ আছে? একই সঙ্গে যুগের দাবি হচ্ছে—ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে নানা পেশার লোকজন সমৃদ্ধ হবে এবং বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিজেকে সম্পৃক্ত করবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুকূলে দেশে জনবান্ধব আইন প্রণীত হবে—এও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর স্বীকৃতি দেখা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে। এসব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে প্রণীত হয় না। জনগণের স্বার্থে ব্যবহৃতও হয় না। এটাই হচ্ছে জনগণের জন্য সবচেয়ে বড় পরিহাস।
একটি দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে নিশ্চিত করতে স্বাধীন গণমাধ্যমের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো দেশের গণতন্ত্রের মানকে উন্নত স্তরে নেওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে সেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। দেশের সংবাদপত্র, তথা গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বলতে আমরা সঠিক ভোটার তালিকা, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দল, দলের আর্থিক লেনদেন ইত্যাদিকে বুঝে থাকি। তবে এটা এখন স্বীকৃত যে, একটি দেশের গণতন্ত্রের মান কিংবা তার প্রায়োগিক পরিমাপের গভীরতা বুঝতে গেলে সেই দেশের সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে নির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করা যায়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ ও তার প্রতিফলন অবশ্যম্ভাবী। এই দায়িত্বশীলতাকে সরকার বা কোনো পক্ষ তাদের বিপরীত অবস্থান বিবেচনা করে গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ ভাবার সুযোগ নেই।
গণমাধ্যম এবং জনগণের আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা এবং এসব থেকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশে কতিপয় আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০২০। ছাপা পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনলাইন সংস্করণের জন্য নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রেখে এই নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে। গত ২৮ মার্চ ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির) আইন ২০২২’ সংসদে উপস্থাপিত হয়। এই আইন বিশ্লেষণ করে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, এই আইনের ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকবান্ধব নয়। এই আইনগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চালু আছে। এই আইনগুলো দেশের সকল নাগরিককে নিরাপত্তা ও সুবিধা প্রদানে পুরোপুরি সফল হয়নি। কোনো কোনো আইনের অপপ্রয়োগ এবং ভুল ব্যবহারের কারণে সাংবাদিকসহ অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কেউ কেউ কারাবরণ করছেন বলেও আলোচনা আছে। বিচার শুরুর আগেই কেউ কেউ শাস্তি ভোগ করছেন, যা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় কাম্য নয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, একটি সমাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের মান ও সামর্থ্যের সঙ্গে সেই সমাজের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু, তথা আধেয়ের উৎকর্ষের মান নির্ভর করে। তার মানে হচ্ছে, গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে শুধু বাক্স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের বিষয়টিই জড়িত নয়। এর সঙ্গে গণমাধ্যমের গুণগত মানের বিষয়টিও জড়িত। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবার অনুধাবন করা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ৬০টি আন্তর্জাতিক অংশীদার সম্প্রতি ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স, পলিটিকস অব ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স, ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ে এক ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণায় জনগণের ডিজিটাল প্রযুক্তি উন্নয়নের লক্ষ্যে কানেকটিভিটির শক্তিমত্তা, গণতন্ত্র, শান্তি, আইনের শাসন, স্থায়ী উন্নয়ন, মৌলিক ও মানবাধিকার ভোগ ও স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রযুক্তি গ্রহণ ও তাকে কল্যাণমুখী করে ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। এসবের সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে, তেমনি নতুনতর বিপদও দেখা দিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রভাব ব্যক্তিবিশেষ এবং পেশায় সংশ্লিষ্টদের ওপর পড়ছে। এটি দ্রুতই যন্ত্রনির্ভর কর্মকাণ্ডে মানুষের স্বাভাবিক প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটি হয়ে যাচ্ছে শিথিল। ব্যক্তিবিশেষের নিজস্ব ‘ডেটা প্রাইভেসি’, তার স্বত্ব বা মালিকানা, তথ্যের স্বচ্ছতা, জনগণের নাগরিক অধিকার ও সচেতনতা, পেশাজীবীদের সাংগঠনিক স্বীকৃতি ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা—এসব চ্যালেঞ্জ নতুনভাবে দেখা দিচ্ছে। এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু কথা বলা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নয়। গণমাধ্যমের ‘কনটেন্ট’ বা আধেয় ও বিষয়বস্তুর গুণগত মান নির্ধারণেও ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অবাধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল অবরোধ নয়, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে উদারনৈতিক মনোভাব দেখাতে হবে। সাংবাদিকতা, তথা গণমাধ্যমের মান উন্নয়নের স্বার্থে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা এবং জনগণকে প্রযুক্তিবান্ধব আইন প্রয়োগ করে তাদের সহায়তা করাই সংশ্লিষ্ট মহলের কর্তব্য হওয়া উচিত।
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ৩ মে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত দীর্ঘকাল থেকে, কিন্তু ১৯৯১ সালে প্রবর্তিত হয় এই দিনটি। ১৯৪৮ সালে গৃহীত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আর্টিকেল ১৯-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আফ্রিকার সাংবাদিকেরা উইন্ডহোয়েক ডিক্লারেশন নামে এই দিবসের ঘোষণা দেন। জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশে এই দিবসকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস হিসেবে অভিহিত করে।
এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্লোগান হচ্ছে, ‘ডিজিটাল অবরোধে সাংবাদিকতা’, কেউ কেউ বলছেন ‘ডিজিটাল শৃঙ্খলে গণমাধ্যম’। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই) রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ১০-দফা আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, নিজ দেশে, তথা তাবৎ বিশ্বে সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যেন নিজ দেশে নজর দিতে পারে, যাতে সঠিকভাবে গণমাধ্যমের দায়িত্ব পালন সম্ভব হয়। দিনটি সাধারণভাবে দেশে দেশে সরকার ও প্রশাসনকে স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পেশাদারি ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতাকে স্বাধীনভাবে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের তাগিদ দেওয়া হয় এই বিশেষ দিনটিতে। এই দিনে তাই প্রতিটি দেশে সাংবাদিকতা পেশায় নিবেদিত সংগ্রামীদের স্মরণ করা হয়। সাংবাদিকতা পেশায় হত্যা, নানা ধরনের অবরোধ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য হুমকি, রাজনৈতিক কিংবা পেশি শক্তির চাপ, আইনের অপব্যবহার করে পেশাজীবীদের ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ, পেশার ওপর অগণতান্ত্রিক আচরণ ইত্যাদি মুখ্য আলোচ্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
আমাদের দেশের সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাক্স্বাধীনতা ও মানুষের গণতন্ত্র চর্চার অন্যতম উপযোগ হিসেবে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু এই চেতনার পুরো বাস্তবায়ন আমরা দেখি না। রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রতিবেদনে আমাদের দেশের সাংবাদিকতা পেশার ওপর যে পর্যবেক্ষণ দেখি, তাতে ১৮০টি দেশের মধ্যে তা ১৬২তম স্থানে। তারা তাদের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করেছে—
‘...the government now has a tailor-made judicial weapon for silencing troublesome journalists–the 2018 digital security law, under which ‘negative propaganda’ is punishable by up to 14 years in prison...Journalists have been subjected to violence by party activists, they have been arrested arbitrarily, and news sites have been blocked.’ (RSF website, 29 April 2022)
এদিকে সারা বিশ্বে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হুমকির মুখে বলে উল্লেখ করে বলেছে যে ৭৩টি দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরোপুরি ‘ব্লকড’ এবং ৫৯টি দেশে আংশিক ‘ব্লকড’। সংবাদপত্র ছাপানো ও বিলির ক্ষেত্রে অনেক দেশেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক কারণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় বলে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।
আমাদের দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিচার সমাধা হয়নি এবং এগুলোর সঙ্গে জড়িত ৩১ জন এখন কারাগারে রয়েছেন বলে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রয়েছেন নিখোঁজ। বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৮৮বার পেছানো হয়েছে। সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়েছিল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা এখনো করতে পারেনি।
নতুন প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করে সাংবাদিকেরা উপকৃত হবেন—এটা প্রত্যাশা করা অনিবার্য। শুধু সাংবাদিকেরাই নন, জনগণ ইন্টারনেটে সংযুক্ত থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে। এটাই তো স্বাভাবিক। এর বাইরে কি কিছু চিন্তা করার সুযোগ আছে? একই সঙ্গে যুগের দাবি হচ্ছে—ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে নানা পেশার লোকজন সমৃদ্ধ হবে এবং বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিজেকে সম্পৃক্ত করবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুকূলে দেশে জনবান্ধব আইন প্রণীত হবে—এও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর স্বীকৃতি দেখা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে। এসব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে প্রণীত হয় না। জনগণের স্বার্থে ব্যবহৃতও হয় না। এটাই হচ্ছে জনগণের জন্য সবচেয়ে বড় পরিহাস।
একটি দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে নিশ্চিত করতে স্বাধীন গণমাধ্যমের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো দেশের গণতন্ত্রের মানকে উন্নত স্তরে নেওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে সেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। দেশের সংবাদপত্র, তথা গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বলতে আমরা সঠিক ভোটার তালিকা, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দল, দলের আর্থিক লেনদেন ইত্যাদিকে বুঝে থাকি। তবে এটা এখন স্বীকৃত যে, একটি দেশের গণতন্ত্রের মান কিংবা তার প্রায়োগিক পরিমাপের গভীরতা বুঝতে গেলে সেই দেশের সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে নির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করা যায়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ ও তার প্রতিফলন অবশ্যম্ভাবী। এই দায়িত্বশীলতাকে সরকার বা কোনো পক্ষ তাদের বিপরীত অবস্থান বিবেচনা করে গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ ভাবার সুযোগ নেই।
গণমাধ্যম এবং জনগণের আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা এবং এসব থেকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশে কতিপয় আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০২০। ছাপা পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনলাইন সংস্করণের জন্য নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রেখে এই নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে। গত ২৮ মার্চ ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির) আইন ২০২২’ সংসদে উপস্থাপিত হয়। এই আইন বিশ্লেষণ করে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, এই আইনের ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকবান্ধব নয়। এই আইনগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চালু আছে। এই আইনগুলো দেশের সকল নাগরিককে নিরাপত্তা ও সুবিধা প্রদানে পুরোপুরি সফল হয়নি। কোনো কোনো আইনের অপপ্রয়োগ এবং ভুল ব্যবহারের কারণে সাংবাদিকসহ অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কেউ কেউ কারাবরণ করছেন বলেও আলোচনা আছে। বিচার শুরুর আগেই কেউ কেউ শাস্তি ভোগ করছেন, যা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় কাম্য নয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, একটি সমাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের মান ও সামর্থ্যের সঙ্গে সেই সমাজের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু, তথা আধেয়ের উৎকর্ষের মান নির্ভর করে। তার মানে হচ্ছে, গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে শুধু বাক্স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের বিষয়টিই জড়িত নয়। এর সঙ্গে গণমাধ্যমের গুণগত মানের বিষয়টিও জড়িত। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবার অনুধাবন করা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ৬০টি আন্তর্জাতিক অংশীদার সম্প্রতি ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স, পলিটিকস অব ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স, ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ে এক ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণায় জনগণের ডিজিটাল প্রযুক্তি উন্নয়নের লক্ষ্যে কানেকটিভিটির শক্তিমত্তা, গণতন্ত্র, শান্তি, আইনের শাসন, স্থায়ী উন্নয়ন, মৌলিক ও মানবাধিকার ভোগ ও স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রযুক্তি গ্রহণ ও তাকে কল্যাণমুখী করে ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। এসবের সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে, তেমনি নতুনতর বিপদও দেখা দিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রভাব ব্যক্তিবিশেষ এবং পেশায় সংশ্লিষ্টদের ওপর পড়ছে। এটি দ্রুতই যন্ত্রনির্ভর কর্মকাণ্ডে মানুষের স্বাভাবিক প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটি হয়ে যাচ্ছে শিথিল। ব্যক্তিবিশেষের নিজস্ব ‘ডেটা প্রাইভেসি’, তার স্বত্ব বা মালিকানা, তথ্যের স্বচ্ছতা, জনগণের নাগরিক অধিকার ও সচেতনতা, পেশাজীবীদের সাংগঠনিক স্বীকৃতি ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা—এসব চ্যালেঞ্জ নতুনভাবে দেখা দিচ্ছে। এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু কথা বলা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নয়। গণমাধ্যমের ‘কনটেন্ট’ বা আধেয় ও বিষয়বস্তুর গুণগত মান নির্ধারণেও ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অবাধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল অবরোধ নয়, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে উদারনৈতিক মনোভাব দেখাতে হবে। সাংবাদিকতা, তথা গণমাধ্যমের মান উন্নয়নের স্বার্থে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা এবং জনগণকে প্রযুক্তিবান্ধব আইন প্রয়োগ করে তাদের সহায়তা করাই সংশ্লিষ্ট মহলের কর্তব্য হওয়া উচিত।
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র অন্যতম নেতা সাইফুল হক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা ছিলেন। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। এখন পর্যন্ত ২০টি বই লিখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে...
৪ ঘণ্টা আগেসদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে নানা মাত্রিক আলোচনার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ‘গণহত্যার বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।’
৪ ঘণ্টা আগেতিন মাস পার হলো, আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলের অধীনে আছি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের অবসান ঘটেছে। অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছিল—সামাজিক সব বৈষম্যের অবসান ঘটবে, আমাদের সামগ্রিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে, প্রকৃত স্বাধীনতা..
৪ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার নাছিয়াঘোনা এলাকায় যাওয়া-আসা করতে গেলে বোঝা যায় সেটি দুর্গম এলাকা। এ কারণেই সেখানে বসানো হয়েছিল ফাঁড়ি। কিন্তু ৫ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পুলিশের থানা ও ফাঁড়িগুলোয় যখন আক্রমণ করা হচ্ছিল, তখন নুরু আলম নুরু নামের এক সন্ত্রাসীও সে সুযোগ নেন। তিনি পুলিশের ফাঁড়ি দখল করে...
৫ ঘণ্টা আগে