মহিউদ্দিন আহমদ
করোনা ক্রাইসিসে আক্রান্ত দুনিয়াটা এখন একটা ওলটপালটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও যে খবরটি গুরুত্ব নিয়ে বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে সেটি হলো, আফগানিস্তানে কিছুদিনের মধ্যেই তালেবানরা ক্ষমতা দখল করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই খবরটি প্রতিবেশী এবং দূরবর্তী অনেক দেশের জন্য চিন্তা-দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০ বছর পর আফগানিস্তান ছেড়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তালেবানরা আফগানিস্তানের প্রায় ৮৫ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে এবং তারা ছোট-বড় শহরগুলোর দিকেও এগোচ্ছে।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব লক্ষ্য ছিল, তার কোনোটিই তারা অর্জন করতে পারেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানের পর দেশটিতে বর্তমানে যে সরকার আছে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির নেতৃত্বে, তার মেয়াদ মাত্র কয়েক মাসের হবে–এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে। আশরাফ ঘানির পতনের পর তালেবানরা যদি কাবুল দখল করে নেয়, তাহলে তারা কী নীতি-আদর্শ নিয়ে আফগানিস্তানকে চালাবে, তা একটি গুরুতর বিষয় হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে পাকিস্তান, ইরান, চীন এবং রাশিয়া ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে চলেছে।
আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর তালেবানরা কয়েক বছর দেশটি শাসন করেছিল। তখন তারা ইসলামের নামে বিভিন্ন কঠোর নিয়মকানুন চালু করেছিল; তা দুনিয়ার অনেক মানুষকে তাদের এসব নিয়মকানুনে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল এবং শাসক তালেবানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য করেছিল।
আফগানিস্তানে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার পর ৭ অক্টোবর ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য নামায়। তার পর থেকেই আমেরিকানরা তো আছেই, সঙ্গে ন্যাটোভুক্ত আরও কয়েকটি দেশ আমেরিকার নেতৃত্বে এই তালেবানবিরোধী অভিযানে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ২০ বছর পর দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা ভিয়েতনামের মতো এখানেও কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
১০ জুলাই লন্ডন থেকে প্রকাশিত মশহুর ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ আমেরিকার এই পরাজয়কে প্রচ্ছদ কাহিনি করেছে। তারা আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারকে ‘আমেরিকা’স ওয়ার ইন আফগানিস্তান এন্ডিং ইন ক্রাশিং ডিফিট’ (আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধ চরম পরাজয়ে শেষ হতে যাচ্ছে) বলেও বর্ণনা করেছে। আর ইকোনমিস্টের মূল প্রচ্ছদ কাহিনির শিরোনামটি হচ্ছে ‘অ্যাবাউনডিং আফগানিস্তান’।
আমেরিকার এই ১৮ বছরের অবস্থানকালে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো আফগানিস্তানে খরচ করেছে (১ হাজার মিলিয়নে ১ বিলিয়ন, ১ হাজার বিলিয়নে ১ ট্রিলিয়ন)। কিন্তু আমেরিকান সৈন্য যদিও ভিয়েতনামের তুলনায় আফগানিস্তানে অনেক কম মারা গেছে, আড়াই হাজারের মতো; কিন্তু আমেরিকার প্রস্থানের পর আফগানিস্তানই আবার ইসলামের নামে চরম সব আদর্শ-উদ্দেশ্য অনুসরণ করতে থাকবে, নাকি তাদের কর্মকাণ্ড এবং কূটনীতিতে কিছু মডারেশন দেখা যাবে, তা নিয়েই এখনকার চিন্তা এবং দুশ্চিন্তাগুলো। ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের নারীরা ভয় পাচ্ছেন–স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাঁরা নিজেদের পছন্দমতো পোশাক-আশাক পরতে পারবেন না, গান শুনতে পারবেন না, বাইরে কোথাও হাঁটতে বা বেড়াতেও যেতে পারবেন না। তারপর এই ২০ বছর ধরে যেসব আফগান আমেরিকার সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন রকমের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের কী হবে? তাঁদের যদি তালেবানরা আমেরিকার পক্ষে ‘রাজাকার’ হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া শুরু করে, তাহলে তো আবার সংঘাত-সংঘর্ষ চলতে থাকবে।
ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের জন্য আমেরিকার বিশেষ দূত জালমে খলিল জাত ৯ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তালেবানরা যদি বর্তমানে কাবুলে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে আপস ফর্মুলায় আফগানিস্তান শাসনে রাজি না হয়, তাহলে সংঘাত-সংঘর্ষ তো অনিবার্য হয়ে উঠবেই।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আফগানিস্তানে অনেক রকমের বড় বড় জাতিগোষ্ঠী রয়েছে এবং তাদের সবার আদর্শ-উদ্দেশ্য এক নয়। সুতরাং আফগানিস্তানের বর্তমান দুরবস্থা নিরসনের জন্য যে ধরনের সমঝোতা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রয়োজন, তা কতটুকু তালেবানরা বুঝতে পারবে বা গ্রহণ করবে, তার ওপর নির্ভর করে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎও।
ইতিমধ্যে আফগানিস্তান প্রায় চল্লিশ বছর একটানা সহিংসতা, সংঘাত, সংঘর্ষের মধ্যে কাটিয়েছে। প্রথমে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখল করে নেয় এবং এখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন সুবিধা করতে না পেরে আফগানিস্তান ত্যাগ করে নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে। বলা হয়ে থাকে, আফগানিস্তানের ভার বহন করতে পারেনি বলেই সোভিয়েত ইউনিয়নও ভেঙে পড়ে। এর পরে কিছুদিন চলল তালেবানদের শাসন। তখন নানা রকমের উচ্ছৃঙ্খলতায় সারা দুনিয়া তাদের শাসনকে অবৈধ এবং অগ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখেছে। এখানে উল্লেখ করা যায়, বানিয়ান নামের একটি পাহাড়ে গৌতম বুদ্ধের যে মূর্তিটা কয়েক হাজার বছর ধরে ছিল, তালেবানরা সেটি কামান দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। এ তো মাত্র একটি উদাহরণ। সবচেয়ে বড় যে কারণটির জন্য আমেরিকা আফগানিস্তানে অভিযান চালাল সেটি হচ্ছে, যেমনটি আগেই বলেছি, ওসামা বিন লাদেনকে আমেরিকার দাবিমতো তাদের হাতে প্রত্যর্পণ না করা। আমেরিকা ওসামা বিন লাদেন এবং তাঁর সংগঠন আল–কায়েদাকে নিউইয়র্কের ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার জন্য সরাসরি দায়ী করে থাকে। ওসামা বিন লাদেনকে তাই আমেরিকা যেকোনো মূল্যে পেতে চেয়েছিল; কিন্তু তালেবানরা তাতে রাজি হয়নি বলে তালেবানদের আক্রমণ করে আমেরিকা–২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার কিছুদিন পর।
তালেবানদের নিয়ে পাকিস্তান খুব দোটানায় আছে বলে মনে হয়। এক. তালেবানরা যদি কাবুলে ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং পাকিস্তানের পরামর্শমতো শাসনকাজ চালায়, তাহলে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের বন্ধু চীন আফগানিস্তানকে উন্নয়নকাজসহ আরও নানাবিধ উপায়ে সাহায্য করবে। এতে ভারত দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হবে ধরে নেওয়া যায়। পাকিস্তান ও চীন একদিকে, অন্যদিকে ভারত এবং দূরের রাশিয়া ও পাশের ইরান সবাই আফগানিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং সুসম্পর্ক পেতে চায়। কিন্তু পাকিস্তান যদি আফগানিস্তানে প্রাধান্য পেয়ে যায়, তার বড় একটা রিস্ক এ-ও হতে পারে যে, তখন আফগানিস্তানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তালেবানরা ভারতের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে কাশ্মীরেও হামলা চালাতে উৎসাহিত হতে পারে। চীন আফগানিস্তানকে গুরুত্ব দেবে। কারণ, চীন ৫০ বিলিয়ন ডলারের যে ইকোনমিক করিডর পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে আরব সাগরে নিয়ে যেতে চাইছে, তার নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের পশ্চিম পাশে প্রতিবেশী ইরান। এটি একটি শিয়াপ্রধান দেশ; বলতে গেলে এটিই ইসলামিক দুনিয়ার একমাত্র শিয়াপ্রধান দেশ। এই সম্প্রদায়ের প্রাধান্য বিশ্বস্বীকৃত। আফগানিস্তানেও হাজারা সম্প্রদায়ের লোকজন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। সুতরাং ইরান চাইবে শিয়াদের ওপর যেন কোনো রকমের বৈষম্য সুন্নি তালেবানরা না দেখায়। ইরানকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ, আফগানিস্তানের এই প্রতিবেশী দেশটি আবার পারস্য উপসাগরের আশপাশে সুন্নিপ্রধান দেশগুলোর জন্যও ইরান একটি বড় হুমকি। সৌদি আরব, আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত–এসব দেশ যদি আফগানিস্তানের তালেবানদের টার্গেটে পরিণত হয়, তখন এসব দেশ আত্মরক্ষার জন্য তালেবানদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে–তা এখনো পরিষ্কার নয়। কিন্তু তালেবানদের হুমকি তো থাকতেই পারে এবং তাদের যদি ইরান এতটুকু উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দেয়, তাহলে তারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের আদর্শ-উদ্দেশ্য এবং যে অর্থে তারা ইসলামকে ব্যাখ্যা করতে চায়, তা ছড়িয়ে পড়বে।
এখানেই বাংলাদেশের প্রসঙ্গটা এসে যায়। আমাদের দেশে বেশ কিছু জঙ্গি হামলা হয়ে গেছে। জঙ্গিদের উপস্থিতিও আমাদের সরকার স্বীকার করে। গত ৩০ জুন আমাদের র্যাবের ডিজি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর দেড় হাজার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানে, গত পাঁচ বছরে দেড় হাজার জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে। দেড় হাজার তো কোনো ছোট সংখ্যা নয়। সুতরাং, জঙ্গিদের বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করা যায়নি। এটি আমাদের সরকারের উচ্চ মহলেও স্বীকৃত। এ বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে সদা তৎপর, সে সম্পর্কেও আমরা অবহিত আছি; কিন্তু জঙ্গিরা যখন আক্রমণ করে, তাদের আক্রমণটা সাধারণত হয়ে থাকে গেরিলা কায়দায়। সুতরাং বাংলাদেশে দেড় হাজার জঙ্গি গ্রেপ্তার করা হয়েছে–সেটা তো জানলাম; কিন্তু কত হাজার জঙ্গি এখনো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমরা তো তা জানি না। সুতরাং তালেবানরা যদি আফগানিস্তান দখল করে নিতে পারে, কাবুলে যদি তারা শাসনব্যবস্থা চালু করতে পারে, তাতে বাংলাদেশের জঙ্গিরা কোনোই অনুপ্রেরণা বা উৎসাহ পাবে না? এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় তা নয়, সারা দুনিয়ায় এ আশঙ্কাটা প্রবলভবে বিরাজ করবে। যদিও বলা হয়ে থাকে, তালেবানরা সাধারণত আফগানিস্তানের বাইরে এমন কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে না। কিন্তু মেহমান হিসেবে আল–কায়েদার যে অবশিষ্ট অংশ এখনো আফগানিস্তানে আছে, তারা তো দুনিয়ার কতগুলো জায়গায় তাদের হামলা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ প্রসঙ্গে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বোকো হারাম নামের জঙ্গি সংগঠনটি প্রায় প্রতি মাসে, দুই মাসে একবার করে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এটি তো তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একটা বড় ভয়ংকর এবং নগ্ন উদাহরণ। এমনিভাবে আফ্রিকার পূর্বাঞ্চল সোমালিয়া, কেনিয়ায়ও আল শাবাব নামে যে জঙ্গি গোষ্ঠীটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, তা ওই অঞ্চলের কতগুলো দেশের জন্য বড় হুমকির কারণ হয়ে পড়েছে।
এমন সব কর্মকাণ্ড তালেবানরা সরাসরি না করলেও তাদের অঙ্গসংগঠন হিসেবে ওসামা বিন লাদেনসৃষ্ট আল–কায়েদা যে বাংলাদেশ, ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কতগুলো দেশে অপতৎপরতা চালাবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
পাকিস্তান এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলে একটু আগে উল্লেখ করেছি। তার অন্যদিক হলো, তালেবানরা খুব ক্ষমতাবান হয়ে উঠলে পাকিস্তানের জন্যও তো তা ভয় এবং হুমকির কারণ হয়ে উঠবে। তখন তো তালেবান এবং আল–কায়েদা পাকিস্তানেও তার প্রভাব এবং অপতৎপরতা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে উদ্বুদ্ধ হবে।
পাকিস্তান আফগানিস্তানের সরাসরি প্রতিবেশী। পাকিস্তান আফগানিস্তানকে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে এসেছে অনেক বছর ধরে। পাকিস্তান তালেবানদের নিয়ে কী করবে–সেটি পাকিস্তানেরই সমস্যা। তবে আমরা আফগানিস্তান থেকে অনেক দূরে থাকলেও আফগানদের সঙ্গে এক সময় আমাদের খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই ছোটকালেই আমরা ঝোলা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কাবুলিদের সুদ ব্যবসা করতে দেখেছি আমাদের গ্রামগঞ্জে। তারপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘কাবুলিওয়ালা’ নামের যে অসাধারণ গল্পটা লিখে গেছেন, তা আমাদের কিশোর বয়সে অনেককে কাঁদিয়েছে। আর এই প্রসঙ্গে বলতে হয়, সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘দেশে বিদেশে’ বইয়ে কাবুলের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা আমরা পড়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক কিছু শিখেছি এবং জেনেছি। কাবুল বা আফগানিস্তানের সঙ্গে এখন আমাদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তালেবান মানে মাদ্রাসার ছাত্র। এই তালেবানরা আফগানিস্তানের মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলোতে লেখাপড়া শিখে তালেবান হয়েছে, যোদ্ধা হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তান থেকে তাড়িয়েছে। বাংলাদেশেও লাখ লাখ ছাত্র একই ধ্যানধারণা ও আদর্শ-উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবছর আমাদের মাদ্রাসাগুলো থেকে বেরিয়ে আসছে। এদের সবাইকে শান্তি-সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা কোনো সহজ কাজ নয়। কিন্তু তারপরও আমাদের কোনো রকমের গাফিলতি বা শিথিলতা দেখানোর অবকাশ নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই বাংলাদেশেই নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে যখন তালেবানরা প্রথমবার আফগানিস্তানের শাসন দখল করে নেয়, তখন একটি স্লোগান ছিল: ‘আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’।
‘শিউলিতলা’, উত্তরা; ১০ জুলাই, শনিবার, ২০২১
লেখক: সাবেক সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কলামিস্ট
করোনা ক্রাইসিসে আক্রান্ত দুনিয়াটা এখন একটা ওলটপালটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও যে খবরটি গুরুত্ব নিয়ে বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে সেটি হলো, আফগানিস্তানে কিছুদিনের মধ্যেই তালেবানরা ক্ষমতা দখল করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই খবরটি প্রতিবেশী এবং দূরবর্তী অনেক দেশের জন্য চিন্তা-দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০ বছর পর আফগানিস্তান ছেড়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তালেবানরা আফগানিস্তানের প্রায় ৮৫ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে এবং তারা ছোট-বড় শহরগুলোর দিকেও এগোচ্ছে।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব লক্ষ্য ছিল, তার কোনোটিই তারা অর্জন করতে পারেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানের পর দেশটিতে বর্তমানে যে সরকার আছে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির নেতৃত্বে, তার মেয়াদ মাত্র কয়েক মাসের হবে–এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে। আশরাফ ঘানির পতনের পর তালেবানরা যদি কাবুল দখল করে নেয়, তাহলে তারা কী নীতি-আদর্শ নিয়ে আফগানিস্তানকে চালাবে, তা একটি গুরুতর বিষয় হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে পাকিস্তান, ইরান, চীন এবং রাশিয়া ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে চলেছে।
আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর তালেবানরা কয়েক বছর দেশটি শাসন করেছিল। তখন তারা ইসলামের নামে বিভিন্ন কঠোর নিয়মকানুন চালু করেছিল; তা দুনিয়ার অনেক মানুষকে তাদের এসব নিয়মকানুনে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল এবং শাসক তালেবানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য করেছিল।
আফগানিস্তানে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার পর ৭ অক্টোবর ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য নামায়। তার পর থেকেই আমেরিকানরা তো আছেই, সঙ্গে ন্যাটোভুক্ত আরও কয়েকটি দেশ আমেরিকার নেতৃত্বে এই তালেবানবিরোধী অভিযানে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ২০ বছর পর দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা ভিয়েতনামের মতো এখানেও কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
১০ জুলাই লন্ডন থেকে প্রকাশিত মশহুর ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ আমেরিকার এই পরাজয়কে প্রচ্ছদ কাহিনি করেছে। তারা আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারকে ‘আমেরিকা’স ওয়ার ইন আফগানিস্তান এন্ডিং ইন ক্রাশিং ডিফিট’ (আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধ চরম পরাজয়ে শেষ হতে যাচ্ছে) বলেও বর্ণনা করেছে। আর ইকোনমিস্টের মূল প্রচ্ছদ কাহিনির শিরোনামটি হচ্ছে ‘অ্যাবাউনডিং আফগানিস্তান’।
আমেরিকার এই ১৮ বছরের অবস্থানকালে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো আফগানিস্তানে খরচ করেছে (১ হাজার মিলিয়নে ১ বিলিয়ন, ১ হাজার বিলিয়নে ১ ট্রিলিয়ন)। কিন্তু আমেরিকান সৈন্য যদিও ভিয়েতনামের তুলনায় আফগানিস্তানে অনেক কম মারা গেছে, আড়াই হাজারের মতো; কিন্তু আমেরিকার প্রস্থানের পর আফগানিস্তানই আবার ইসলামের নামে চরম সব আদর্শ-উদ্দেশ্য অনুসরণ করতে থাকবে, নাকি তাদের কর্মকাণ্ড এবং কূটনীতিতে কিছু মডারেশন দেখা যাবে, তা নিয়েই এখনকার চিন্তা এবং দুশ্চিন্তাগুলো। ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের নারীরা ভয় পাচ্ছেন–স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাঁরা নিজেদের পছন্দমতো পোশাক-আশাক পরতে পারবেন না, গান শুনতে পারবেন না, বাইরে কোথাও হাঁটতে বা বেড়াতেও যেতে পারবেন না। তারপর এই ২০ বছর ধরে যেসব আফগান আমেরিকার সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন রকমের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের কী হবে? তাঁদের যদি তালেবানরা আমেরিকার পক্ষে ‘রাজাকার’ হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া শুরু করে, তাহলে তো আবার সংঘাত-সংঘর্ষ চলতে থাকবে।
ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের জন্য আমেরিকার বিশেষ দূত জালমে খলিল জাত ৯ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তালেবানরা যদি বর্তমানে কাবুলে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে আপস ফর্মুলায় আফগানিস্তান শাসনে রাজি না হয়, তাহলে সংঘাত-সংঘর্ষ তো অনিবার্য হয়ে উঠবেই।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আফগানিস্তানে অনেক রকমের বড় বড় জাতিগোষ্ঠী রয়েছে এবং তাদের সবার আদর্শ-উদ্দেশ্য এক নয়। সুতরাং আফগানিস্তানের বর্তমান দুরবস্থা নিরসনের জন্য যে ধরনের সমঝোতা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রয়োজন, তা কতটুকু তালেবানরা বুঝতে পারবে বা গ্রহণ করবে, তার ওপর নির্ভর করে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎও।
ইতিমধ্যে আফগানিস্তান প্রায় চল্লিশ বছর একটানা সহিংসতা, সংঘাত, সংঘর্ষের মধ্যে কাটিয়েছে। প্রথমে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখল করে নেয় এবং এখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন সুবিধা করতে না পেরে আফগানিস্তান ত্যাগ করে নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে। বলা হয়ে থাকে, আফগানিস্তানের ভার বহন করতে পারেনি বলেই সোভিয়েত ইউনিয়নও ভেঙে পড়ে। এর পরে কিছুদিন চলল তালেবানদের শাসন। তখন নানা রকমের উচ্ছৃঙ্খলতায় সারা দুনিয়া তাদের শাসনকে অবৈধ এবং অগ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখেছে। এখানে উল্লেখ করা যায়, বানিয়ান নামের একটি পাহাড়ে গৌতম বুদ্ধের যে মূর্তিটা কয়েক হাজার বছর ধরে ছিল, তালেবানরা সেটি কামান দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। এ তো মাত্র একটি উদাহরণ। সবচেয়ে বড় যে কারণটির জন্য আমেরিকা আফগানিস্তানে অভিযান চালাল সেটি হচ্ছে, যেমনটি আগেই বলেছি, ওসামা বিন লাদেনকে আমেরিকার দাবিমতো তাদের হাতে প্রত্যর্পণ না করা। আমেরিকা ওসামা বিন লাদেন এবং তাঁর সংগঠন আল–কায়েদাকে নিউইয়র্কের ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার জন্য সরাসরি দায়ী করে থাকে। ওসামা বিন লাদেনকে তাই আমেরিকা যেকোনো মূল্যে পেতে চেয়েছিল; কিন্তু তালেবানরা তাতে রাজি হয়নি বলে তালেবানদের আক্রমণ করে আমেরিকা–২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার কিছুদিন পর।
তালেবানদের নিয়ে পাকিস্তান খুব দোটানায় আছে বলে মনে হয়। এক. তালেবানরা যদি কাবুলে ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং পাকিস্তানের পরামর্শমতো শাসনকাজ চালায়, তাহলে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের বন্ধু চীন আফগানিস্তানকে উন্নয়নকাজসহ আরও নানাবিধ উপায়ে সাহায্য করবে। এতে ভারত দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হবে ধরে নেওয়া যায়। পাকিস্তান ও চীন একদিকে, অন্যদিকে ভারত এবং দূরের রাশিয়া ও পাশের ইরান সবাই আফগানিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং সুসম্পর্ক পেতে চায়। কিন্তু পাকিস্তান যদি আফগানিস্তানে প্রাধান্য পেয়ে যায়, তার বড় একটা রিস্ক এ-ও হতে পারে যে, তখন আফগানিস্তানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তালেবানরা ভারতের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে কাশ্মীরেও হামলা চালাতে উৎসাহিত হতে পারে। চীন আফগানিস্তানকে গুরুত্ব দেবে। কারণ, চীন ৫০ বিলিয়ন ডলারের যে ইকোনমিক করিডর পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে আরব সাগরে নিয়ে যেতে চাইছে, তার নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের পশ্চিম পাশে প্রতিবেশী ইরান। এটি একটি শিয়াপ্রধান দেশ; বলতে গেলে এটিই ইসলামিক দুনিয়ার একমাত্র শিয়াপ্রধান দেশ। এই সম্প্রদায়ের প্রাধান্য বিশ্বস্বীকৃত। আফগানিস্তানেও হাজারা সম্প্রদায়ের লোকজন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। সুতরাং ইরান চাইবে শিয়াদের ওপর যেন কোনো রকমের বৈষম্য সুন্নি তালেবানরা না দেখায়। ইরানকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ, আফগানিস্তানের এই প্রতিবেশী দেশটি আবার পারস্য উপসাগরের আশপাশে সুন্নিপ্রধান দেশগুলোর জন্যও ইরান একটি বড় হুমকি। সৌদি আরব, আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত–এসব দেশ যদি আফগানিস্তানের তালেবানদের টার্গেটে পরিণত হয়, তখন এসব দেশ আত্মরক্ষার জন্য তালেবানদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে–তা এখনো পরিষ্কার নয়। কিন্তু তালেবানদের হুমকি তো থাকতেই পারে এবং তাদের যদি ইরান এতটুকু উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দেয়, তাহলে তারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের আদর্শ-উদ্দেশ্য এবং যে অর্থে তারা ইসলামকে ব্যাখ্যা করতে চায়, তা ছড়িয়ে পড়বে।
এখানেই বাংলাদেশের প্রসঙ্গটা এসে যায়। আমাদের দেশে বেশ কিছু জঙ্গি হামলা হয়ে গেছে। জঙ্গিদের উপস্থিতিও আমাদের সরকার স্বীকার করে। গত ৩০ জুন আমাদের র্যাবের ডিজি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর দেড় হাজার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানে, গত পাঁচ বছরে দেড় হাজার জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে। দেড় হাজার তো কোনো ছোট সংখ্যা নয়। সুতরাং, জঙ্গিদের বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করা যায়নি। এটি আমাদের সরকারের উচ্চ মহলেও স্বীকৃত। এ বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে সদা তৎপর, সে সম্পর্কেও আমরা অবহিত আছি; কিন্তু জঙ্গিরা যখন আক্রমণ করে, তাদের আক্রমণটা সাধারণত হয়ে থাকে গেরিলা কায়দায়। সুতরাং বাংলাদেশে দেড় হাজার জঙ্গি গ্রেপ্তার করা হয়েছে–সেটা তো জানলাম; কিন্তু কত হাজার জঙ্গি এখনো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমরা তো তা জানি না। সুতরাং তালেবানরা যদি আফগানিস্তান দখল করে নিতে পারে, কাবুলে যদি তারা শাসনব্যবস্থা চালু করতে পারে, তাতে বাংলাদেশের জঙ্গিরা কোনোই অনুপ্রেরণা বা উৎসাহ পাবে না? এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় তা নয়, সারা দুনিয়ায় এ আশঙ্কাটা প্রবলভবে বিরাজ করবে। যদিও বলা হয়ে থাকে, তালেবানরা সাধারণত আফগানিস্তানের বাইরে এমন কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে না। কিন্তু মেহমান হিসেবে আল–কায়েদার যে অবশিষ্ট অংশ এখনো আফগানিস্তানে আছে, তারা তো দুনিয়ার কতগুলো জায়গায় তাদের হামলা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ প্রসঙ্গে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বোকো হারাম নামের জঙ্গি সংগঠনটি প্রায় প্রতি মাসে, দুই মাসে একবার করে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এটি তো তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একটা বড় ভয়ংকর এবং নগ্ন উদাহরণ। এমনিভাবে আফ্রিকার পূর্বাঞ্চল সোমালিয়া, কেনিয়ায়ও আল শাবাব নামে যে জঙ্গি গোষ্ঠীটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, তা ওই অঞ্চলের কতগুলো দেশের জন্য বড় হুমকির কারণ হয়ে পড়েছে।
এমন সব কর্মকাণ্ড তালেবানরা সরাসরি না করলেও তাদের অঙ্গসংগঠন হিসেবে ওসামা বিন লাদেনসৃষ্ট আল–কায়েদা যে বাংলাদেশ, ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কতগুলো দেশে অপতৎপরতা চালাবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
পাকিস্তান এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলে একটু আগে উল্লেখ করেছি। তার অন্যদিক হলো, তালেবানরা খুব ক্ষমতাবান হয়ে উঠলে পাকিস্তানের জন্যও তো তা ভয় এবং হুমকির কারণ হয়ে উঠবে। তখন তো তালেবান এবং আল–কায়েদা পাকিস্তানেও তার প্রভাব এবং অপতৎপরতা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে উদ্বুদ্ধ হবে।
পাকিস্তান আফগানিস্তানের সরাসরি প্রতিবেশী। পাকিস্তান আফগানিস্তানকে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে এসেছে অনেক বছর ধরে। পাকিস্তান তালেবানদের নিয়ে কী করবে–সেটি পাকিস্তানেরই সমস্যা। তবে আমরা আফগানিস্তান থেকে অনেক দূরে থাকলেও আফগানদের সঙ্গে এক সময় আমাদের খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই ছোটকালেই আমরা ঝোলা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কাবুলিদের সুদ ব্যবসা করতে দেখেছি আমাদের গ্রামগঞ্জে। তারপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘কাবুলিওয়ালা’ নামের যে অসাধারণ গল্পটা লিখে গেছেন, তা আমাদের কিশোর বয়সে অনেককে কাঁদিয়েছে। আর এই প্রসঙ্গে বলতে হয়, সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘দেশে বিদেশে’ বইয়ে কাবুলের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা আমরা পড়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক কিছু শিখেছি এবং জেনেছি। কাবুল বা আফগানিস্তানের সঙ্গে এখন আমাদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তালেবান মানে মাদ্রাসার ছাত্র। এই তালেবানরা আফগানিস্তানের মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলোতে লেখাপড়া শিখে তালেবান হয়েছে, যোদ্ধা হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তান থেকে তাড়িয়েছে। বাংলাদেশেও লাখ লাখ ছাত্র একই ধ্যানধারণা ও আদর্শ-উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবছর আমাদের মাদ্রাসাগুলো থেকে বেরিয়ে আসছে। এদের সবাইকে শান্তি-সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা কোনো সহজ কাজ নয়। কিন্তু তারপরও আমাদের কোনো রকমের গাফিলতি বা শিথিলতা দেখানোর অবকাশ নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই বাংলাদেশেই নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে যখন তালেবানরা প্রথমবার আফগানিস্তানের শাসন দখল করে নেয়, তখন একটি স্লোগান ছিল: ‘আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’।
‘শিউলিতলা’, উত্তরা; ১০ জুলাই, শনিবার, ২০২১
লেখক: সাবেক সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কলামিস্ট
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নাম জুড়ে দিয়ে ওই তিন দলসহ মোট ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে রিট করার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। ১১টি দলের তালিকায় এলডিপির নামও
১৫ ঘণ্টা আগেঅত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই লেখাটা লিখছি। রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে অন্য একটি প্রবন্ধ লিখব বলে ভেবেছিলাম। গত রোববার থেকেই বুকের মধ্যে কেমন যেন পাথরচাপা একটা কষ্ট অনুভব করছি। প্রথমে টেলিভিশনে খবরে দেখলাম, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তিন ছাত্র মারা গেছেন। যে তিন ছাত্র মারা গেছেন, তাঁদের সমবয়সী হবে
১৫ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় বহুল পরিচিত একটি শব্দ হলো কালাজ্বর। শব্দটি কমবেশি আমরা সবাই শুনেছি। এমনকি কেউ কেউ কালাজ্বরে আক্রান্তও হয়েছি। কিন্তু এই জ্বরকে কালাজ্বর কেন বলা হয়? কালো রঙের সঙ্গে এর কি কোনো সম্পর্ক রয়েছে? জ্বরের প্রকারভেদে রঙের কি আদৌ কোনো ভূমিকা রয়েছে? যদি না থাকে তাহলে প্রশ্ন হলো, কেন এ জ্বরকে কালাজ্ব
১৫ ঘণ্টা আগেসাংবাদিকদের হয়রানি করা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থল ও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের ইমিগ্রেশনে যেভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, তা কেবল পেশাগত বাধার উদাহরণ নয়, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার ওপর একধরনের চাপ। এই ধরনের আচরণ রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনা ও মানব
১৫ ঘণ্টা আগে