রাজীব কুমার সাহা
ঘুণে ধরা সমাজ বা কাঁচা বাশে ঘুণে ধরার কথা দৈনন্দিন জীবনে আমরা কে না শুনেছি? আবার ঘুণাক্ষরে টের না পাওয়ার বিষয়টিও আমরা কমবেশি শুনেছি। নেতিবাচক অর্থে এই ঘুণে ধরার বিষয়টি আমাদের সমাজব্যবস্থায় যেন পাকাপোক্ত স্থান করে নিয়েছে। যদিও এই ঘুণে ধরার বিষয়টি আক্ষরিক এবং আলংকারিক উভয় অর্থেই নেতিবাচক। তেমনি আরেকটি শব্দ হলো ঘুণাক্ষর। আমরা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ অনুসারে প্রায়ই এই ঘুণাক্ষরে শব্দটির ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই ঘুণাক্ষর মানে কী? ঘুণপোকা কীভাবে অক্ষর তৈরি করে? ঘুণপোকার এই বর্ণমালা-জ্ঞান কি সহজাত? এইসব কৌতূহলকে মাথায় রেখে তবে চলুন আজ জানব ঘুণাক্ষরের সাতসতেরো।
সংস্কৃত ঘুণ এবং অক্ষর শব্দ সহযোগে ঘুণাক্ষর শব্দটি তৈরি হয়েছে। আভিধানিকভাবে ঘুণাক্ষর শব্দের মানে হলো ঘুণপোকা কাঠ বা কাগজ কুরে খাওয়ার ফলে সৃষ্ট অক্ষরসদৃশ ক্ষতচিহ্ন। আর আলংকারিকভাবে ঘুণাক্ষর মানে হলো সামান্যতম ইঙ্গিত বা আভাস। যে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলি, ‘বিষয়টি আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।’ এই ঘুণাক্ষরে টের না পাওয়ার মধ্যেও মাঝে মাঝে কিন্তু একধরনের নেতিবাচক ভাবের ইঙ্গিত রয়েছে। ঘুণাক্ষর শব্দের প্রচলিত এই অর্থগুলোর বাইরেও আরও কিছু অর্থ রয়েছে। সেগুলো হলো: আশ্চর্য ঘটনা; সৌভাগ্য; সুরতি বা জুয়া খেলা প্রভৃতি।
এবার আসি ঘুণাক্ষর শব্দের ব্যুৎপত্তি প্রসঙ্গে। কাঠের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র প্রভৃতি কুরে খেয়ে ধ্বংস করে এমন অতি ক্ষুদ্র অমেরুদণ্ডী কীট হলো ঘুণ, বজ্রকীট। এর মূল পরিচয় হলো এটি কাঠখেকো একধরনের পোকা। ইংরেজিতে একে বলে ‘উডওয়ার্ম’। জন্মের পর পরিণত বয়স থেকে এরা তিন থেকে চার বছর ধরে কাঠ গর্ত করে কাঠের মধ্যকার শর্করাযুক্ত অংশ খেয়ে বেঁচে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ ঘুণপোকা ২.৭ থেকে ৪.৫ মিলিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। ঘুণপোকার শরীর বাদামি এবং দেহের সামনের অংশটুকু মাথায় পরিহিত টুপির মতো। এই ঘুণ শব্দটির বিশেষণরূপে একটি আলংকারিক অর্থও রয়েছে। সেটি হলো অতি নিপুণ, সুদক্ষ, পরিপক্ব প্রভৃতি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায় আমরা ঘুণ শব্দটির আলংকারিক অর্থের প্রয়োগ পাই উপরিউক্ত অর্থে। যেমন: ‘তাস খেলায় ইহারা সব ঘুণ।’ আবার নেতিবাচক অর্থে (ক্ষতিকর) বিভূতিবাবুর রচনায় এর প্রয়োগ পাই। যেমন: ‘জমিদারীর ঘুণ কর্মচারী আমরা চাই না।’ আর জীর্ণতা-সাধক কীট অর্থে বিশেষ্য রূপে ইসমাইল হোসেন শিরাজীর রচনায়ও এর প্রয়োগ পাই। যেমন: ‘চরিত্রবাণ জাতিতে কখনও অধঃপতনের ঘুণ ধরে না।’ মীর মশাররফ হোসেনের রচনায় আমরা ঘুণাক্ষর শব্দের আলংকারিক প্রয়োগ (সামান্যতম ইঙ্গিত) লক্ষ করি। যেমন: ‘ঘুণাক্ষরেও যদি টের পাইয়া থাকেন।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিবিধ রচনায় প্রচলিত অর্থেই ঘুণ শব্দটির ব্যবহার করেছেন কিন্তু ঘুণাক্ষর শব্দটি ব্যবহার করেননি। অপরদিকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাসের নামই হলো ‘ঘুণপোকা’।
ঘুণাক্ষর শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো ঘুণপোকা কর্তৃক তৈরি করা অক্ষর। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ঘুণপোকা কি বর্ণমালা জানে? যদি না জানে তবে ঘুণপোকা কীভাবে অক্ষর তৈরি করে? মানুষের ব্যবহৃত ভাষার অক্ষর তৈরির জ্ঞান বা সচেতনতা কোনোটাই ঘুণপোকার নেই। ঘুণপোকা নিরন্তর কাঠ কেটে চলে এবং বিচিত্র ধরনের নকশার মতো করে আদল তৈরি হয়। কখনো কখনো তা কোনো কোনো অক্ষরের রূপও পরিগ্রহ করে। ঘুণপোকা কাটার কাকতালীয়ভাবে এই অক্ষরাকৃতি ধারণ করার বিষয়টিই ঘুণাক্ষর হিসেবে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে এটি ঘুণপোকার অসচেতন প্রয়াস থেকে জাত। সুতরাং আলংকারিক অর্থটির ব্যাখ্যায় বলা যায়, যে বিষয়টি ঘটবে বলে কখনো চিন্তা করা যায়নি কিন্তু অকস্মাৎ বা দৈবাৎ যদি ঘটে যায় তখনই বিষয়টিকে ঘুণাক্ষর বলে অভিহিত করা হয়।
ঘুণপোকারা খুব দ্রুত কাঠ কাটতে পারে তথা ঘুণাক্ষর তৈরি করতে পারে। সেটি যদি কোনো ধরনের কাগজ বা বইয়ের ওপর সাধিত হয় তাহলে তো ঘুণাক্ষর শব্দটি আক্ষরিক অর্থেই আরও বেশি জোর পায়। ঘুণপোকারা কাঠ বা কাগজ কুরে কুরে যখন কাটে, তখন সচেতনভাবে কান পাতলে এর শব্দও শোনা যায়! কিন্তু যাপিত জীবনে আমাদের চারপাশে যাঁরা ঘুণপোকা হয়ে নানা কিছু কেটে চলেছেন তাঁদের এই নেতিবাচক কর্মযোগ সাধিত হচ্ছে অনেকটা নিঃশব্দেই।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
ঘুণে ধরা সমাজ বা কাঁচা বাশে ঘুণে ধরার কথা দৈনন্দিন জীবনে আমরা কে না শুনেছি? আবার ঘুণাক্ষরে টের না পাওয়ার বিষয়টিও আমরা কমবেশি শুনেছি। নেতিবাচক অর্থে এই ঘুণে ধরার বিষয়টি আমাদের সমাজব্যবস্থায় যেন পাকাপোক্ত স্থান করে নিয়েছে। যদিও এই ঘুণে ধরার বিষয়টি আক্ষরিক এবং আলংকারিক উভয় অর্থেই নেতিবাচক। তেমনি আরেকটি শব্দ হলো ঘুণাক্ষর। আমরা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ অনুসারে প্রায়ই এই ঘুণাক্ষরে শব্দটির ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই ঘুণাক্ষর মানে কী? ঘুণপোকা কীভাবে অক্ষর তৈরি করে? ঘুণপোকার এই বর্ণমালা-জ্ঞান কি সহজাত? এইসব কৌতূহলকে মাথায় রেখে তবে চলুন আজ জানব ঘুণাক্ষরের সাতসতেরো।
সংস্কৃত ঘুণ এবং অক্ষর শব্দ সহযোগে ঘুণাক্ষর শব্দটি তৈরি হয়েছে। আভিধানিকভাবে ঘুণাক্ষর শব্দের মানে হলো ঘুণপোকা কাঠ বা কাগজ কুরে খাওয়ার ফলে সৃষ্ট অক্ষরসদৃশ ক্ষতচিহ্ন। আর আলংকারিকভাবে ঘুণাক্ষর মানে হলো সামান্যতম ইঙ্গিত বা আভাস। যে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলি, ‘বিষয়টি আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।’ এই ঘুণাক্ষরে টের না পাওয়ার মধ্যেও মাঝে মাঝে কিন্তু একধরনের নেতিবাচক ভাবের ইঙ্গিত রয়েছে। ঘুণাক্ষর শব্দের প্রচলিত এই অর্থগুলোর বাইরেও আরও কিছু অর্থ রয়েছে। সেগুলো হলো: আশ্চর্য ঘটনা; সৌভাগ্য; সুরতি বা জুয়া খেলা প্রভৃতি।
এবার আসি ঘুণাক্ষর শব্দের ব্যুৎপত্তি প্রসঙ্গে। কাঠের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র প্রভৃতি কুরে খেয়ে ধ্বংস করে এমন অতি ক্ষুদ্র অমেরুদণ্ডী কীট হলো ঘুণ, বজ্রকীট। এর মূল পরিচয় হলো এটি কাঠখেকো একধরনের পোকা। ইংরেজিতে একে বলে ‘উডওয়ার্ম’। জন্মের পর পরিণত বয়স থেকে এরা তিন থেকে চার বছর ধরে কাঠ গর্ত করে কাঠের মধ্যকার শর্করাযুক্ত অংশ খেয়ে বেঁচে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ ঘুণপোকা ২.৭ থেকে ৪.৫ মিলিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। ঘুণপোকার শরীর বাদামি এবং দেহের সামনের অংশটুকু মাথায় পরিহিত টুপির মতো। এই ঘুণ শব্দটির বিশেষণরূপে একটি আলংকারিক অর্থও রয়েছে। সেটি হলো অতি নিপুণ, সুদক্ষ, পরিপক্ব প্রভৃতি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায় আমরা ঘুণ শব্দটির আলংকারিক অর্থের প্রয়োগ পাই উপরিউক্ত অর্থে। যেমন: ‘তাস খেলায় ইহারা সব ঘুণ।’ আবার নেতিবাচক অর্থে (ক্ষতিকর) বিভূতিবাবুর রচনায় এর প্রয়োগ পাই। যেমন: ‘জমিদারীর ঘুণ কর্মচারী আমরা চাই না।’ আর জীর্ণতা-সাধক কীট অর্থে বিশেষ্য রূপে ইসমাইল হোসেন শিরাজীর রচনায়ও এর প্রয়োগ পাই। যেমন: ‘চরিত্রবাণ জাতিতে কখনও অধঃপতনের ঘুণ ধরে না।’ মীর মশাররফ হোসেনের রচনায় আমরা ঘুণাক্ষর শব্দের আলংকারিক প্রয়োগ (সামান্যতম ইঙ্গিত) লক্ষ করি। যেমন: ‘ঘুণাক্ষরেও যদি টের পাইয়া থাকেন।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিবিধ রচনায় প্রচলিত অর্থেই ঘুণ শব্দটির ব্যবহার করেছেন কিন্তু ঘুণাক্ষর শব্দটি ব্যবহার করেননি। অপরদিকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাসের নামই হলো ‘ঘুণপোকা’।
ঘুণাক্ষর শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো ঘুণপোকা কর্তৃক তৈরি করা অক্ষর। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ঘুণপোকা কি বর্ণমালা জানে? যদি না জানে তবে ঘুণপোকা কীভাবে অক্ষর তৈরি করে? মানুষের ব্যবহৃত ভাষার অক্ষর তৈরির জ্ঞান বা সচেতনতা কোনোটাই ঘুণপোকার নেই। ঘুণপোকা নিরন্তর কাঠ কেটে চলে এবং বিচিত্র ধরনের নকশার মতো করে আদল তৈরি হয়। কখনো কখনো তা কোনো কোনো অক্ষরের রূপও পরিগ্রহ করে। ঘুণপোকা কাটার কাকতালীয়ভাবে এই অক্ষরাকৃতি ধারণ করার বিষয়টিই ঘুণাক্ষর হিসেবে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে এটি ঘুণপোকার অসচেতন প্রয়াস থেকে জাত। সুতরাং আলংকারিক অর্থটির ব্যাখ্যায় বলা যায়, যে বিষয়টি ঘটবে বলে কখনো চিন্তা করা যায়নি কিন্তু অকস্মাৎ বা দৈবাৎ যদি ঘটে যায় তখনই বিষয়টিকে ঘুণাক্ষর বলে অভিহিত করা হয়।
ঘুণপোকারা খুব দ্রুত কাঠ কাটতে পারে তথা ঘুণাক্ষর তৈরি করতে পারে। সেটি যদি কোনো ধরনের কাগজ বা বইয়ের ওপর সাধিত হয় তাহলে তো ঘুণাক্ষর শব্দটি আক্ষরিক অর্থেই আরও বেশি জোর পায়। ঘুণপোকারা কাঠ বা কাগজ কুরে কুরে যখন কাটে, তখন সচেতনভাবে কান পাতলে এর শব্দও শোনা যায়! কিন্তু যাপিত জীবনে আমাদের চারপাশে যাঁরা ঘুণপোকা হয়ে নানা কিছু কেটে চলেছেন তাঁদের এই নেতিবাচক কর্মযোগ সাধিত হচ্ছে অনেকটা নিঃশব্দেই।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলাদেশ যখন সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী তখন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশে তার ভূমিকা কার্যত পরিত্যাগ করে সে ক্ষেত্রে ঢাকা চীনের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠতে পারে এবং তাহলে বেইজিং নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশকে আরও বেশি অর্থায়ন ও ঋণ দেবে।
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের জাতীয় জনসংখ্যা দিবস প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এই দিবসটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব, পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যসেবা এবং টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পালন করা হয়। ২০২৫ সালে এই দিবসটি আমাদের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত
৭ ঘণ্টা আগেযোদ্ধা ও ভিক্ষুকের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব এবং চরিত্র নিয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি অসাধারণ লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটি নানা কারণেই একটা বড় চিন্তার বিষয় হয়ে পড়েছে। যদিও এসব কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এমন তুলনামূলক বিশ্লেষণ কখনোই সেভাবে আসেনি।
১৭ ঘণ্টা আগেঅভূতপূর্ব এক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সামনে প্রকৃত অর্থেই এক নবযাত্রার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। মনে হয়েছিল এক নতুন ভোরের সূর্যোদয়। কিন্তু ছয় মাস না পেরোতেই আশা ফিকে হয়ে আসছে। ঈষান কোণের কালো মেঘ তার বিস্তার ঘটাচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে